চোখে ময়লা পড়লে করণীয় এবং চোখের ব্যথা দূর করার ঘরোয়া উপায়

প্রিয় পাঠক, আপনি কি চোখে ময়লা পড়লে করণীয় কি এ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে এ আর্টিকেলটি আপনাকে এ বিষয়ে জানতে সাহায্য করবে। এ আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে চোখে ময়লা পড়লে করণীয় এবং চোখে ব্যথা দূর করার কয়েকটি ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
চোখে ময়লা পড়লে করণীয়
এ আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন চোখে ময়লা পড়লে যেগুলো করা যাবে না, চোখ সুরক্ষিত রাখার উপায়, চোখ ভালো রাখতে কোন ভিটামিন দরকার, চোখের ব্যথা দূর করার ঘরোয়া উপায় ইত্যাদি।

ভূমিকা

আমাদের শরীরের প্রতিটা অংশ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের শরীরের প্রতিটি অংশকে এমন ভাবে তৈরি করেছেন যে, কোন একটি ছাড়া স্বাভাবিকভাবে জীবন যাপন করা সম্ভব নয়। এ অংশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে চোখ। সেজন্য চোখ ভালো রাখতে চোখের সাথে ঘটে থাকা বিভিন্ন ধরনের সমস্যা মোকাবেলা সম্পর্কে জানা প্রতি মানুষেরই উচিত।

চোখ শুধুমাত্র বাইরের আলো নিভিয়ে দেয় না বরং এটি জীবনের আলোও নিভিয়ে দেয়। একজন অন্ধ ব্যক্তি জানে চোখ কত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি নিজেদের চোখ সম্পর্কে সচেতন থাকি তাহলে হয়তোবা চোখ ভালো রাখা সম্ভব। আমরা যখন বাইরে চলাফেরা করি তখন চোখের মধ্যে অনেক ধরনের ময়লা পড়ে যেমন ধুলোবালি, ইট পাথরের ছোট ছোট টুকরা এবং বিভিন্ন ধরনের ধাতব পদার্থ।

এগুলো চোখে পড়লে চোখের মারাত্মক ধরনের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এমন কি চোখের ইনফেকশনেরও সমস্যা হয়ে থাকে। চোখে এ ধরনের ময়লা বা কোন কিছু পরলে আমাদের কি করতে হবে এ সম্পর্কে আমাদের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে।

চোখে ময়লা পড়লে করণীয়

চোখে ময়লা পড়লে বা অন্য কিছু পড়লে করণীয় কি এ সম্পর্কে আমরা আপনাদের সামনে আলোকপাত করবো। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক-
  • চোখে ধুলাবালি বা ময়লা জাতীয় কিছু পড়লে বেশি বেশি করে পানির ঝাপটা দিয়ে চোখ ধুয়ে ফেলা।
  • চোখ ধোবার আগে অবশ্যই হাত ভালোভাবে সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে কারণ হাতের জীবাণু দ্বারা চোখের ইনফেকশন হতে পারে।
  • পোকামাকড় জাতীয় কোন কিছু হলে সেটি তুলে ফেলা।
  • নিজের তুলতে না পারলে অন্যের সহযোগিতা নিয়ে পোকামাকড় চোখ থেকে তুলে ফেলা।
  • বেশি পরিমাণ ময়লা পড়লে অনেক সময় পানি ঝাপটাতেও পরিষ্কার হয় না সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চোখের ড্রপ ব্যবহার করা।
  • চোখ থেকে পোকামাকড় বা ময়লা বের করতে হলে হাতের পরিবর্তে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ময়লা বের করে আনা।
  • চোখের কর্নিয়ায় বা সাদা অংশে যদি কোন ময়লা আটকে যায় তাহলে সেটি নিজে তোলার চেষ্টা না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া।
  • চোখে কিছু আটকে গেলে চোখের পাতা ঘষাঘষি না করে আলতোভাবে বের করার চেষ্টা করা।

চোখে ময়লা পড়লে যেগুলো করা যাবে না

  • চোখে পোকামাকড় বা ময়লা জাতীয় কোন কিছু পড়লে চোখ কচলানো বা ঘষাঘষি করা যাবে না সে ক্ষেত্রে চোখের ভিতর ঘা তৈরি হতে পারে।
  • চোখের মধ্যে কোন ময়লা আটকে গেলে তা বারবার বের করার চেষ্টা করা যাবে না সে ক্ষেত্রে চোখে ক্ষত তৈরি হতে পারে।
  • হাত পরিষ্কার না করে চোখে দেওয়া যাবে না।
  • চোখের কর্নিয়া বা সাদা অংশে কোন কিছু আটকে গেলে সেগুলোকে তোলার চেষ্টা না করাই ভালো, সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে যাওয়াই উত্তম।
  • চোখে পানির ঝাপটা দেওয়ার সময় অবশ্যই পরিষ্কার পানি ব্যবহার করতে হবে।
  • চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া চোখের কোন ড্রপ ব্যবহার করা যাবে না।

চোখে সমস্যায় যেগুলো উপসর্গ দেখা যায়

  • চোখ ফুলে যাওয়া।
  • চোখে ঝাপসা দেখা।
  • চোখ লাল হয়ে যাওয়া।
  • চোখে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করা।
  • আলোর দিকে তাকাতে না পারা।
  • চোখ দিয়ে সব সময় পানি পড়া।

চোখ সুরক্ষিত রাখার উপায়

চোখ শরীরের সবচেয়ে মূল্যবান অংশ। সেজন্য চোখ কিভাবে সুরক্ষিত থাকবে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট জ্ঞান থাকা জরুরী বা আবশ্যিক। তাহলে চলুন চোখের সুরক্ষার পদক্ষেপ গুলো জেনে নেয়া যাক-
  • ঘরের বাইরে বের হলে চোখে সানগ্লাস ব্যবহার করা।
  • শিশুদের হাতে ধারালো বা বিপদজনক কোন খেলনা দেওয়া যাবে না।
  • কৃষি কাজ করার সময় বিশেষ করে ধানের কাজ করার সময় চোখে সানগ্লাস ব্যবহার করা।
  • জমিতে কীটনাশক ব্যবহারের সময় চোখে গ্লাস ব্যবহার করা।
  • ওয়েল্ডিং এর কাজ করার সময় চোখে সানগ্লাস ব্যবহার করা।
  • কোন কারখানায় কাজ করতে হলে অবশ্যই হেলমেট বা সানগ্লাস ব্যবহার করতে হবে।

চোখ ভালো রাখতে কোন ভিটামিন দরকার

চোখ ভালো রাখে কোন ভিটামিন এ সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা নেই। চোখের দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখার জন্য ভিটামিন এ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন এ এর অভাবে চোখের দৃষ্টি শক্তি কমে যায়। কিছু কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো খেলে সেখান থেকে ভিটামিন এর চাহিদা পূরণ হবে। সবজি জাতীয় খাবার যেমন গাজর, ব্রকলি, পালং শাক, সবুজ শাকসবজি এবং কুমড়া।

এই সবজিগুলো চোখের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এছাড়াও ডিম এবং কড লিভার চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এর মধ্যে ভূমিকা রাখে ভিটামিন বি ওয়ান, বি টু, বি থ্রি, এবং বি টুয়েলভ। চোখ ভালো রাখতে ভিটামিন সিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন সি যুক্ত ফলমূল খেলে ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণ হয়‌।

ভিটামিন সি যুক্ত সবজি রয়েছে সেগুলো চোখের জ্যোতির জন্য ভালো যেমন সবুজ এবং লাল মরিচ, ব্রকলি, ফুলকপি, পালং শাক, মিষ্টি আলু, শালগম, বাঁধাকপি, সবুজ শাক এবং টমেটো। ভিটামিন ডি চোখের জন্য খুবই উপকারী কারণ এটিতে প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা রেটিনার অবক্ষয় থেকে চোখকে সুরক্ষিত রাখে।

সেজন্য চোখ ভালো রাখতে হলে ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া অধিক প্রয়োজন। চোখের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন হচ্ছে ভিটামিন ই। এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা চোখে ফ্রী রেডিকেল ক্ষতির বিরুদ্ধে চোখ রক্ষা করতে সাহায্য করে।

চোখের ব্যথা দূর করার ঘরোয়া উপায়

চোখ আমাদের সবচেয়ে সংবেদনশীল এবং গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। সেজন্য চোখ সবসময় ভালো রাখতে হয়। চোখের ব্যথা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। তবে চোখের ব্যথা দূর করার কয়েকটি ঘরোয়া উপায় জানা থাকলে খুব ভালো হয়। তাহলে চলুন চোখের ব্যাথা দূর করার কয়েকটি ঘরোয়া উপায় দেখে নেই-
  • চোখে যদি কোনো কারণে ব্যথা বা খতখচে ভাব অনুভূত হয় সে ক্ষেত্রে সর্ব প্রথমে পুরো মুখমণ্ডল সাবান বা ফেসওয়াশ দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর চোখের পাতা টেনে ধরে পরিষ্কার পানি দিয়ে চোখে ঝাপটা দিতে হবে। এভাবে অনেক ব্যথা বা খসখসে ভাব দূর হয়ে যায়।
  • চোখে ভালো করে পানির ঝাপটা দেওয়া হয়ে গেলে দুটি কটন বার্ড নিতে হবে। এরপর একটি পাত্রে কুসুম গরম পানি নিয়ে নিতে হবে এবং কটন বার্ড দুটিকে ভিজিয়ে রেখে চোখের ওয়াটার লাইন ও পাপড়ি পরিস্কার করতে হবে।
  • কুসুম গরম পানির মধ্যে সুতির কোন পরিষ্কার কাপড় ভিজিয়ে রেখে চোখের উপর হালকা গরম ভাব বা সেঁকও দিতে পারেন। এতে করে চোখের ব্যথা অনেক আছে উপশম হয়।
  • চোখের ব্যাথা দূর করার আরো একটি উপায় হচ্ছে দুই হাতের তালু ভালোভাবে ঘষে গরম করে নিতে হবে এরপর ব্যথা হওয়া চোখের উপর দুই হাতের তালু রেখে দিতে হবে তাহলে ব্যথায় ভালো আরাম পাওয়া যায়।
  • এছাড়াও ঘুম চোখের ব্যথা দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। উপরের পদ্ধতিগুলো প্রয়োগ করার পর ৮ থেকে ১০ ঘণ্টার মতো ঘুমাতে হবে।

লেখকের মন্তব্য

চোখ আমাদের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ সেজন্য চোখের প্রতি অত্যন্ত যত্নশীল হওয়া আমাদের প্রতিটি মানুষের খুবই জরুরী। চোখে কোন কারণে সমস্যা দেখা দিলে বা আঘাত জনিত সমস্য দেখা দিলে দেরি না করে খুবই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। মনে রাখবেন চোখ ভালো না থাকলে পুরো জীবনটাই অন্ধকার হয়ে যাবে।

প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url