পিরিয়ডের ব্যথা কমায় যেসব খাবার - পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়

প্রিয় পাঠক, আপনি কি পিরিয়ডের ব্যথা কমায় যেসব খাবার সে সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনাকে এ বিষয়ে জানতে সাহায্য করবে। এ আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে পিরিয়ডের ব্যথা কমায় যেসব খাবার এবং পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পিরিয়ডের ব্যথা কমায় যেসব খাবার
এ আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ওষুধ, পিরিয়ডের ব্যথা কোথায় হয় এবং ব্যথা কমানোর ওষুধে সতর্কতা।

ভূমিকা

প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিটি মেয়ের একমাস পরপর ঋতুচক্র দেখা দেয় ৷ প্রতি এক মাস পর পর যাদের ঋতুচক্র দেখা দেয় তাকে নিয়মিত ঋতুচক্র বলে। আবার দুই বা তিন মাস পরপর যাদের ঋতুচক্র দেখা দেয় এগুলোকে অনিয়মিত ঋতুচক্র বলা হয়ে থাকে। এ ঋতুচক্র দেখা দিলে বিভিন্ন সমস্যা হয় যেমন প্রচন্ড পেট ব্যথা বমি বমি ভাব ইত্যাদি।


এই ব্যথা কখনো কখনো অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক হয়ে থাকে। এই ব্যথা কমানোর জন্য মেয়েরা অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয় বা অনেকেই অন্যান্য উপায় অবলম্বন করেন। তবে ঘরোয়া উপায়ে অনেক সময় এই ব্যথা দূর করা সম্ভব হয়। ঘরোয়া উপায় সব সময় সুবিধাজনক সে জন্য প্রাথমিক অবস্থায় এ উপায় প্রয়োগ করা উচিত।

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায়

পিরিয়ডের ব্যথা অনেক সময় অসহ্য যন্ত্রণাদায়ক হয়ে থাকে। সব সময় চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া সম্ভব হয় না সে কারণে আমাদের প্রত্যেক নারীদের পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর কয়েকটি ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত। তাহলে চলুন পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর কয়েকটি ঘরোয়া উপায় জেনে নেওয়া যাক-

গরম পানির সেক

পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে গরম পানির সেক অত্যন্ত কার্যকরী। সেজন্য প্রয়োজন একটি হট ওয়াটার ব্যাগের মধ্যে গরম পানি নিয়ে পেটে শেক দিলে ব্যথা ধীরে ধীরে কমে যায়। তবে গরম পানি দিয়ে গোসল করা যায় সে ক্ষেত্রে অনেক উপকার পাওয়া যায়। প্রচন্ড ব্যথা শুরু হলে এই উপায়টি প্রয়োগ করে দেখবেন ব্যথায় অনেক স্বস্তি দিবে।

কাঁচা পেঁপে

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর জন্য কাঁচা পেঁপে ওষুধের মত কাজ করে থাকে। পিরিয়ডের সময় প্রতিদিন নিয়ম করে কাঁচা পেঁপে খেলে পিরিয়ডের ব্যথা হয় না এমনকি ব্যথা শুরু হলেও কমে যায় কারণ কাঁচা পেঁপের রয়েছে ব্যথা কমানোর ক্ষমতা।

আদা

পেটের যেকোনো ধরনের ব্যথা কমাতে আদার রস অনেক উপকারী। পিরিয়ডের ব্যথাতেও অত্যন্ত কার্যকরী আদার রস। পিরিয়ড শুরু হলে যদি ব্যথা হয় তাহলে আদার রস খেতে পারেন ব্যথায় অনেক উপশম পাওয়া যাবে। আদা দিয়ে চা তৈরি করে খেলেও এ সময় ভালো ফল পাওয়া যাবে অথবা আদার টুকরা সাথে মধু চিনি ও গরম পানি মিশিয়ে দিনে তিন থেকে চার বার পান করলে ব্যথায় ভালো উপশম পাওয়া যাবে।

এলোভেরা

অ্যালোভেরার মধ্যে রয়েছে ঔষধি গুনাগুন। পিরিয়ডের সময় এলোভেরার রস এবং মধু একসাথে মিশিয়ে জুস তৈরি করে খেলে ব্যথায় ভালো উপশম পাওয়া যায়। ভালো ফলাফলের জন্য এটি দিনে দুইবার খেতে পারেন। এটা যেমন ব্যথায় উপশম দিবে তেমনি শরীরের অন্যান্য উপকারও বয়ে আনবে।

পর্যাপ্ত পানি পান করা

পিরিয়ডের সময় চিকিৎসকরা পর্যাপ্ত পানি বা পানি জাতীয় খাবার বেশি বেশি খাওয়ার কথা বলে থাকেন। কেন না পিরিয়ডের সময় শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দেয়। শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দিলে পিরিয়ডের ব্যথা আরো বেড়ে যায় সেজন্য আমাদের প্রত্যেক মহিলাদের এই সময়টা পানি পান করা এবং পানীয় জাতীয় খাবার গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরী।

হালকা ব্যায়াম করা

এ সময় হালকা ব্যায়াম করলে ব্যথা থেকে অনেক মুক্তি পাওয়া যায় কিন্তু এই ব্যথা যখন অনেক বেশি যন্ত্রণা দেয় হয়ে থাকে তখন ব্যায়াম করা সম্ভব হয় না। সহজ সরল যোগব্যায়াম বা স্বাভাবিক হাঁটাচলা করলে ব্যথা কমে যায় তবে এই সময় চিকিৎসকরা ভারি কাজ করতে নিষেধ করে।

পেট ম্যাসাজ করা

পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে পেট মেসেজ করতে পারেন। পিরিয়ডের ব্যথা যখন শুরু হবে তলপেট ও তার আশেপাশে আলতো ভাবে মেসেজ করুন তাতে ভালো ফল পাবেন।

বিশ্রাম নেওয়া

পিরিয়ডের সময় বিশ্রাম নেয়া অত্যন্ত জরুরী। এ সময় যতটা কম কাজ করতে পারা যায় ততটাই ভালো। পিরিয়ডের সময় মানসিক চাপমুক্ত থাকতে হবে সেজন্য যোগ ব্যায়াম অথবা মেডিটেশন করতে পারেন যা আপনার মানসিক চাপ থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করবে।

নরম খাবার খাওয়া

যাদের পিরিয়ডের সময় পেটে অত্যন্ত ব্যথা হয় তাদের খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকা উচিত। নারীদের এ সময় শক্ত খাবার পরিহার করে নরম নরম খাবার খাওয়া প্রয়োজন।

পিরিয়ডের ব্যথা কমানো খাবার

কিছু কিছু খাবার রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে পিরিয়ডের ব্যথা কমে যায়। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন কোন খাবার খেলে পিরিয়ডের ব্যথা কমে যায়-

দারুচিনিঃ দারুচিনি একটি ব্যথা উপশমকারী খাবার যা ব্যাথা দূর করতে সাহায্য করে। এর একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব যা ব্যথা ও মাসিকের রক্তপাত কমাতে সাহায্য করে।

মৌরি বীজঃ মৌরি বীজে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ থাইটোকেমিক্যাল উপাদান যা ব্যাথার সংবেদন গ্রাস করতে সাহায্য করে। পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে খাদ্য তালিকায় এই খাবারটি যুক্ত করতে পারেন তাহলে এই সময় ভালো ফল পাবেন।

ডার্ক চকলেটঃ পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে ডার্ক চকলেট অত্যন্ত কার্যকরী এবং সেরা খাবার হিসেবে বিবেচিত। ডার্ক চকলেট ম্যাগনেসিয়ামের সবচেয়ে ভালো উৎস যা ব্যথা উপশমের জন্য দায়ী হয়ে থাকে।

হলুদঃ হলুদের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান যা যেকোনো ব্যাথা নাশক হিসেবে কাজ করে থাকে। হলুদের মধ্যে থাকা বায়ো অ্যাক্টিভ উপাদানগুলি কারকিউমিনের ব্যথা উপশমকারী বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

আয়রন যুক্ত খাবারঃ পিরিয়ডের সময় প্রচুর পরিমাণে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। এতে করে শরীরের রক্তশূন্যতা হ্রাস পাবে এবং শারীরিক সুস্থতা বজায় থাকবে।

পিরিয়ডের ব্যথা কোথায় হয়

পৃথিবীর বেশিরভাগ নারীদেরই পিরিয়ডের সময় ব্যথা অনুভব হয়। এই ব্যথাটি সর্বপ্রথম তলপেট থেকে শুরু হয় পরবর্তীতে কোমর পিট উরু পা এবং শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে যায়। পিরিয়ড শেষ হওয়া অব্দি এ ব্যথা থাকে। প্রথমদিকে এই ব্যথা প্রচণ্ড তীব্র হয় এবং পরবর্তীতে ধীরে ধীরে কমে যায়।


তবে কারো কারো ক্ষেত্রে পিরিয়ডের ব্যথা প্রচণ্ড আকারে হয় যার ফলে খিচুনির সমস্যাও তৈরি হতে পারে। পিরিয়ডের সময় বমি বমি ভাব ডায়রিয়া এবং মাথা ব্যথার সমস্যাও হতে পারে।

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঔষধ

ব্যথা কমানোর জন্য যে ওষুধটি প্রয়োগ করা যেতে পারে তার নাম হচ্ছে আই বুক প্রফেন ৪০০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট৷ ব্যথা কমানোর জন্য এই ট্যাবলেটটি দিনে তিন থেকে চারটা খাওয়া যেতে পারে। এই ট্যাবলেটটি খাওয়ার ২০ থেকে ২৫ মিনিটের মধ্যেই ব্যথা দূর হয়ে যাবে। এই ট্যাবলেটটি সবসময় ভরা পেটে খেতে হবে। ১২ বছর বয়সের উর্ধ্বে যাদের বয়স তারা এই ট্যাবলেটটি গ্রহণ করতে পারবে।


আই বুক প্রফেন এনএসএআইবি গ্রুপের একটি ঔষধ। এই গ্রুপের ব্যাথা নাশক আরো একটি ওষুধের নাম হচ্ছে অ্যাসপিরিন। এই ওষুধটি ১৬ বছর কম বয়সীদের খাওয়া একেবারে উচিত নয়। এই ব্যাথা নাশক ওষুধগুলো এক থেকে দুই দিন খাওয়া যেতে পারে এর উর্ধ্বে খাওয়া উচিত নয়। কারণ ব্যথা নাশক ঔষধ শরীরে বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করতে পারে

আইবুপ্রোফেন ওষুধ খাওয়ার সতর্কতা

ব্যথা কমানোর জন্য এ ওষুধ প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই ওষুধ প্রয়োগের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যে সমস্যা থাকলে এই ওষুধ প্রয়োগ করা যাবে না সেগুলো হচ্ছে-
  • হাঁপানি বা এ্যাজমা সমস্যা
  • লিভার, কিডনি, পাকস্থলী ও হার্টের সমস্যা থাকলে
  • পেপটিক আলসার ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থাকলে
এ সকল সমস্যা থাকলে এ ধরনের ব্যাথা নাশক ওষুধ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। তবে ব্যথা নাষক ঔষধ সেবন করার পূর্বে অবশ্যই সতর্কতার সাথে সেবন করতে হবে। কারণ ব্যথা-নাশক ওষুধ শরীরে বিভিন্ন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া তৈরি করে।

লেখকের মন্তব্য

পিরিয়ডকালীন সময়ে প্রায় মেয়েদের পেটে ব্যথা বা শরীরের কোন অংশ ব্যাথা শুরু হয়। এসব ব্যথা প্রচণ্ড আকার ধারণ করে যা সহ্য সীমার বাইরে। এই ব্যথার প্রাথমিক অবস্থায় ঘরোয়াভাবে উপশম করার চেষ্টা করতে হবে আর তা না হলে অবশ্যই নিকটস্থ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্যাথা নাশক ওষুধ সেবন করতে হবে।

চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনভাবেই ব্যাথা নাশক ওষুধ সেবন করা উচিত নয়। প্রিয় পাঠক, এ আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনের সাথে শেয়ার করুন৷

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url