কেন খাবেন পান্তা ভাত - পান্তা ভাত খেলে কি মোটা হয়

প্রিয় পাঠক, আপনি কি পান্তা ভাত খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনাকে এ বিষয়ে জানতে সাহায্য করবে। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে পান্ত ভাত খাওয়ার উপকারিতা এবং পান্তা ভাত খেলে মোটা হয় কিনা এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
কেন খাবেন পান্তা ভাত
এই আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন কিভাবে পান্তা ভাত বানাবেন, পান্তা ভাতের ক্ষতিকর দিক এবং প্রতিদিন পান্তা ভাত খেলে কি হয়।

ভূমিকা

পান্তা ভাত আমাদের দেশে ঐতিহ্যবাহী খাবার হিসেবে অনেক সুপরিচিত। পহেলা বৈশাখে পান্তা ইলিশ খেয়ে থাকি বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে। নববর্ষ ব্যতীত অন্যান্য সময় বিশেষ করে গরমের সময় এই পান্তা খাওয়ার প্রচলন অনেক বেশি। প্রচন্ড গরমে শরীরকে ঠান্ডা রাখতে আমরা সকলে খাবার হিসেবে পান্তা ভাত খেয়ে থাকি। আমরা পান্তা ভাত খাই পেটের ক্ষুধা এবং শরীরের শান্তির জন্য।


কিন্তু আমরা কি জানি পান্তা ভাত আমাদের শরীরের জন্য কতটা ভালো। গবেষকরা এই পান্তা ভাত নিয়ে বিভিন্ন ধরনের গবেষণা করেছেন। গবেষণা করে দেখা গেছে পান্তা ভাতে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। পান্তা ভাতে যেগুলো মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট বা পুষ্টিকর খনিজ পদার্থ রয়েছে সেগুলো হচ্ছে আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, জিংক, পটাশিয়াম, ফসফরাস ইত্যাদি।

সাধারণ ভাতের তুলনায় পান্তা ভাতে পুষ্টিগুণ অনেক বেশি রয়েছে। চিকিৎসকরা বলেন যাদের রক্তশূন্যতার সমস্যা রয়েছে তারা এই পান্তা ভাত নিয়মিত খেলে এই সমস্যা দূর হয়ে যায়। এছাড়াও পান্তা ভাত শরীরের জন্য অনেক উপকারী।

কেন খাবেন পান্তা ভাত

গরমে পান্তা ভাত খেতে আমরা অনেকেই পছন্দ করি। কিন্তু আমরা পান্তা ভাত এর উপকারিতা না জেনেই খেয়ে থাকি। পান্তা ভাত শরীরের জন্য অনেক উপকারী। পান্তা ভাত শরীরের কি কি উপকারে আসে এ সম্পর্কে আমরা আপনাদের সামনে আলোকপাত করব। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক-

এসিডিটি দূর করেঃ বর্তমান সময়ে প্রায় মানুষের মধ্যে সমস্যা দেখা যায়। পান্তা ভাতে রয়েছে এসিডিটি দূর করার ক্ষমতা। বিজ্ঞানীদের মতে পান্তা ভাত পিএইচ ব্যালেন্স করতে সাহায্য করে। যার ফলে এসিডিটিতে ভূগছেন সেসব রোগীদের জন্য এটি অনেক সুফল বয়ে আনে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ পান্তা ভাত ন্যাচারাল ল্যাগজেটিভ হিসেবে কাজ করে থাকে। যার ফলে নিয়মিত পান্তা ভাত খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা অনেক কমে যায়।

ক্লান্তি ও অনিদ্রা দূর করেঃ পান্তা ভাতে রয়েছে ভিটামিন বি-১২ যা শরীরের ক্লান্তি ও অনিদ্রা দূর করে থাকে। এছাড়াও ভিটামিন বি এর চাহিদা পূরণ হয়ে থাকে পান্তা ভাত খেলে।

রক্তশূন্যতা দূর করেঃ পান্তা ভাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন যা রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে। সাধারণ ভাতের তুলনায় পান্তা ভাতে আয়রনের মাত্রা অনেক বেশি রয়েছে। সেজন্য গবেষকরা বলেন পান্তা ভাত নিয়মত খেলে এনিমিয়ার সমস্যা দূর হয়ে যায়।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে পান্তা ভাত। সাধারণ ভাতের তুলনায় পান্তা ভাতে সোডিয়ামের পরিমাণ অনেক কম রয়েছে এবং পটাশিয়ামের পরিমাণ অনেক বেশি রয়েছে। যার ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রেখে শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ একটি অন্ত্র-বান্ধব খাবার হচ্ছে পান্তা ভাত। পান্তা ভাত প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে অন্ত্রের সংক্রমণ রোধ করে শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ পান্তা ভাত হচ্ছে হজম যোগ্য একটি খাবার। যা সাধারণ ভাতের তুলনায় হজম করা অনেক সহজ। এজন্য পান্তা ভাত হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

পানি শূন্যতা দূর করেঃ পান্তা ভাতে পানির পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। যার ফলে শরীরে পানি শূন্যতা দূর করে সাহায্য করে। পানি শূন্যতা দূর হয় বলে শরীর ঠান্ডা থাকে পান্তা ভাত খেলে।

ত্বক ও চুলের জন্য উপকারীঃ পান্তা ভাত শুধুমাত্র শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে না বরং এটি ত্বক ও চুলের জন্য অনেক উপকারী। পান্তা ভাত নিয়মিত খেলে ত্বক ও চুল সুন্দর হয়।

কোলেস্ট্রলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখেঃ পান্তা ভাতে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর কিছু উপাদান রয়েছে। যার ফলে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।

ওজন কমায়ঃ পান্তা ভাতে কার্বোহাইড্রেট এবং ফ্যাটের পরিমাণ অনেক কম। যে কারণে পান্তা ভাত ওজন কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

হাড় মজবুত করেঃ পান্তা ভাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম যা হাড় মজবুত ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও হাড়ের বিভিন্ন সমস্যা থেকে হাড়কে রক্ষা করে।

কিভাবে পান্তা ভাত বানাবেন

পান্তা ভাত শরীরের জন্য অনেক উপকারী তা আমরা উপরের আলোচনার মাধ্যমে কিছুটা ধারণা পেয়েছি। কিন্তু এই পান্তা ভাত কিভাবে তৈরি করলে সঠিক উপকারিতা পাওয়া যাবে এ সম্পর্কে আমরা কি জানি? কারণ পান্তা ভাত তৈরি করারও কিছু নিয়ম রয়েছে। পান্তা ভাত সাধারণত রাতে ভাত রান্না করে সে ভাত ঠান্ডা করে পানি দিয়ে রাখতে হয়।


যার ফলে সারা রাত পানিতে ভিজে সুন্দরভাবে পান্তা ভাত তৈরি হয়। এভাবে পান্তা ভাত তৈরি করে খেলে অনেক উপকারিতা পাওয়া যাবে। অনেকে মনে করেন যেকোন ভাবেই পান্তা ভাত তৈরি করে খেলে উপকার পাওয়া যায়। আসলে ব্যাপারটা তা না। আট থেকে দশ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে তৈরি করলে সেটি আসল পান্তা ভাত। গরম ভাতের পানি দিয়ে সাথে সাথে পান্তা ভাত তৈরি করা যায় না।

পান্তা ভাত খেলে কি মোটা হয়

পান্তা ভাত খাওয়া নিয়ে অনেকে অনেক রকম প্রশ্ন করে থাকেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি প্রশ্ন হচ্ছে পান্তা ভাত খেলে মোটা হয় কিনা। পান্তা ভাত খেলে কোন ভাবেই মোটা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। পান্তা ভাতে কার্বোহাইড্রট এবং ফ্যাটের পরিমাণ অনেক কম রয়েছে যা শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে।

এজন্য পান্তা ভাত খেলে মোটা হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই বরং ওজন কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যারা শরীরের অতিরিক্ত ওজন নিয়ে ভাবছেন তারা নিয়মিত পান্তা ভাত খেতে পারেন। এতে করে শরীরের ওজন কিছুটা হলেও কমবে।

পান্তা ভাতের ক্ষতিকর দিক

পান্তা ভাতের তেমন কোন ক্ষতিকর দিক নেই। এ ভাতের উপকারিতা অনেক বেশি রয়েছে। তবে গবেষকরা বললেন বারো ঘণ্টার বেশি সময় যদি পান্তা ভাত রাখা হয় তাহলে সেই পান্তা ভাত না খাওয়াই ভালো। এতে অ্যালকোহলের পরিমাণ বেড়ে যায় যার ফলে শরীর ম্যাজ-ম্যাজ করে এবং ঘুম ঘুম ভাব হয়।


এছাড়াও পান্তা তৈরি করতে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যেমন- পান্তা সব সময় পরিষ্কার পাত্রে তৈরি করতে হবে। পরিষ্কার পাত্রে পান্তা ভাত তৈরি না করলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ তৈরি হতে পারে এবং পেটের সমস্যাও তৈরি হতে পারে। যাদের ঠান্ডাজনিত সমস্যা রয়েছে তাদের ঠান্ডা আবহাওয়ায় পান্তা ভাত না খাওয়াই ভালো এতে করে ঠান্ডার সমস্যা দেখা দিতে পারে।

প্রতিদিন পান্তা ভাত খেলে কি হয়

পান্তা ভাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ যা শরীরের পুষ্টিঘাটতি পূরণ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন যা রক্তের অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও পান্তা ভাতে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম রয়েছে যা শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।

পান্তা ভাত শরীরের হাড়গুলোকে শক্ত ও মজবুত করতে সাহায্য করে এবং শরীরের ক্লান্তি ও অনিদ্রা দূর করে। সেজন্য প্রতিদিন পান্তা ভাত খেলে শরীরের অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়।

লেখকের মন্তব্য

গরমকালে পাতা ভাত খাওয়া শরীরের জন্য উপকারী। শরীরের জন্য পান্তা ভাত উপকারী হলেও সেটি পরিমিত পরিমাণ খাওয়া উচিত। অতিরিক্ত পরিমাণ কোন কিছু খাওয়াই ভালো না। প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url