কালো গোলমরিচ খাওয়ার উপকারিতা এবং গোলমরিচ খাওয়ার ক্ষতিকর দিক জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, আপনি কি কালো গোলমরিচ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনাকে এই বিষয়ে জানতে সাহায্য করবে। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে কালো গোলমরিচ খাওয়ার উপকারিতা এবং গোলমরিচ খাওয়ার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
কালো গোলমরিচ খাওয়ার উপকারিতা
এ আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন গোলমরিচ খাওয়ার নিয়ম, প্রতিদিন গোলমরিচ খেলে কি হয় এবং গোলমরিচ খেলে কি ওজন কমে।

ভূমিকা

রান্নায় যেগুলো মসলা ব্যবহৃত হয় সেগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি মসলা হচ্ছে গোলমরিচ। ঝাঁঝাঁলো গন্ধযুক্ত এই গোলমরিচ রান্নার স্বাদ বাড়িয়ে দিতে ব্যবহার করা হয়। গোলমরিচ শুধুমাত্র রান্নায় ব্যবহৃত হয় এমনটি কিন্তু নয়। মসলা জাতীয় এই খাবারটি বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে। শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে গোলমরিচের ভূমিকা অনেক।


যেগুলো দীর্ঘস্থায়ী রোগ রয়েছে সেগুলো কমাতে এই গোলমরিচ ব্যবহার করে থাকে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকগণ। আমরা অনেকেই এই গোলমরিচ শুধুমাত্র রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয় বলে জানি। কিন্তু এ ধারণা ভুল। এটি রান্না ব্যতীত শরীরের বিভিন্ন উপকারে আসে। গোলমরিচে রয়েছে ভিটামিন কে, ভিটামিন ই, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি সিক্স, থায়ামিন রিবোফ্লেভিন, আইরন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, সেলেনিয়াম ও জিংক। এই উপাদানগুলো আমাদের শারীরিক সুস্থতার জন্য যথেষ্ট কার্যকরী।

কালো গোলমরিচের উপকারিতা

কাল গোলমরিচের অনেক উপকারিতা রয়েছে এ সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। তাহলে চলুন গোলমরিচের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-

সর্দি কাশি দূর করে

প্রাকৃতিক এন্টি ব্যাকটেরিয়াল হিসেবে কাজ করে থাকে গোলমরিচ। সেজন্য ঠান্ডাজনিত সমস্যা এবং কাশি নিরাময় করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই গোলমরিচ। ভিটামিন সি যা এন্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে থাকে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

গোলমরিচ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর সঙ্গে যৌগগুলো শ্বেত রক্তকণিকা বাড়াতে ভূমিকা রাখছে যা শরীরে আক্রমণকারী ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া সাথে লড়াই করে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে

গোলমরিচের উপস্থিত পাইপেরিন ক্যান্সার প্রতিরোধের সহায়তা করে। এছাড়াও গোলমরিচে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ফ্ল্যাবোনয়েডস, ক্যারোটিন এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ক্ষতিকর ফ্রি রেডিকেল সরাতে সাহায্য করে এবং ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধিতে বাধা প্রয়োগ করে।

হজম শক্তি বৃদ্ধি করে

হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে গোলমরিচের রয়েছে অনন্য ক্ষমতা|। খাবার খাওয়ার সময় কিছুটা গোলমরিচ মিশিয়ে নিলে সে খাবার খুব সহজেই হজম হয়ে যায়।

স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে

গোলমরিচের রয়েছে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করার ক্ষমতা। যাদের স্মৃতিশক্তি দুর্বল তারা এই গোলমরিচ খেতে পারেন তাহলে স্মৃতিশক্তি অনেক বৃদ্ধি পাবে এবং ভালো থাকবে।

কোলেস্টরলের মাত্র নিয়ন্ত্রণে রাখে

ক্ষতিকারক কোলেস্টরেল শরীরকে বিভিন্ন ভাবে মৃত্যুঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়। গোলমরিচ শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে যার ফলে শরীর সুস্থ থাকে।

দাঁতের ক্ষয় এবং ব্যথা দূর করে

গোলমরিচ দাঁতের ক্ষয় এবং ব্যথা দূর করতে অত্যন্ত কার্যকরী। দাঁতের ক্ষয়জনিত সমস্যা এবং দাঁতে ব্যথা হলে গোলমরিচ মুখে রাখলে ভালো হয়ে যায়।

ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে

কালো গোলমরিচ রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। অন্যতম সেরা উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে গোলমরিচকে। এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি মসলা।

পেটের সুস্থতা বজায় রাখে

পেটের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। গোলমরিচ খাদ্য তালিকায় যদি রাখেন তাহলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং গ্যাস ও এসিডিটির সমস্যা কমে যাবে।

ত্বকের সমস্যা দূর করে

গোলমরিচ ত্বকের বিভিন্ন রোগ দূর করতে সাহায্য করে। এছারাও ত্বকের মৃত কোষ অপসারণ করে ত্বক সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। অনেক সময় গোলমরিচের গুড়া স্ক্রাব হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যার ফলে ময়লা দূর হয়ে যায়।

মেদ ঝরাতে সাহায্য করে

গোলমরিচ শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে সাহায্য করে। শরীরের মেদ কমাতে চাইলে খাবারের সাথে গোলমরিচের গুড়া খেতে পারে।

গোলমরিচ খাওয়ার নিয়ম

গোলমরিচ খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। তবে এর সঠিক উপকারিতা যদি আপনি পেতে চান তাহলে অবশ্যই গোলমরিচ কিভাবে খেতে হবে এ সম্পর্কে জেনে নিন। তাহলে চলুন গোলমরিচ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-
  • গোলমরিচ সরাসরি খাওয়া যায়। তবে সরাসরি খেলে এর ঝাঝালো স্বাদ গ্রহণে অভ্যস্ত থাকতে হবে। এ এই স্বাদ সইতে পারলে সরাসরি খেতে পারবেন। খালি পেটে দুই থেকে তিনটি গোলমরি মুখে নিয়ে চিবিয়ে খেয়ে নিতে পারবেন।
  • গোলমরিচের গুঁড়া মধুর সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়। এভাবে খেতে চাইলে এক চা চামচ মধুর সাথে আধা চা চামচের গুড়া ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর খেয়ে নিতে পারবেন। ভালো ফলাফল পেতে সকালে খালি পেটে খেয়ে নিতে পারবে।
  • গোলমরিচের তেলও খাওয়া যায়। দোকান থেকে বিশুদ্ধ তেল কিনে এনে পানির সাথে মিশিয়ে সকালে নাস্তার আগে খেয়ে নিতে হবে। তাহলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। এগুলো ছাড়াও গোলমরিচ রান্না করে খেতে পারবেন। এতে করে রান্নার স্বাদ বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।

প্রতিদিন গোলমরিচ খেলে কি হয়

শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে বা শরীরকে সুস্থ রাখতে গোলমরিচ খাওয়া যায়। অনেকে প্রশ্ন করেন প্রতিদিন গোলমরিচ খাওয়ার যাবে কিনা বা প্রতিদিন গোলমরিচ খেলে কি হয়। গোলমরিচের স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে অনেক। আপনি যে সমস্যার জন্য গোলমরিচ ব্যবহার করছেন সে সমস্যা সমাধান হয়ে গেলে গোলমরিচ খাওয়া বন্ধ করে দিতে পারেন। কারণ গোলমরিচের কোন নির্দিষ্ট ডোজ নেই।


তবে প্রতিদিন গোলমরিচ খেতে পারবেন নির্দিষ্ট পরিমাণ। পর্যাপ্ত গোলমরিচ খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর হতে পারে। তবে আমাদের উচিত যে কারণে আমরা গোলমরিচ খাব সে সমস্যা সমাধান হয়ে গেলে খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া। দীর্ঘদিন খাবার খেলে শরীরে সমস্যা কোন না কোন দেখা দিতে পারে।

গোলমরিচ খেলে কি ওজন কমে

অতিরিক্ত ওজন নিয়ে প্রায় মানুষের ভুগে থাকেন। এই ওজন কমানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি প্রয়োগ করে থাকে। অনেকে ব্যায়াম করে ওজন কমাতে চায় বা অনেকে খাবার খেয়ে। গোলমরিচ খেলে ওজন কমে কিনা এ সম্পর্কে অনেকেরই অজানা। গোলমরিচের ঝাঁঝাঁলো গন্ধ শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে যথেষ্ট কার্যকরী। নিয়ম করে গোলমরিচের গুড়া খেলে শরীরের অতিরিক্ত ওজন অনেকটাই কমে যাবে।

গোলমরিচ খাওয়ার ক্ষতিকর দিক

গোলমরিচ মসলা জাতীয় খাদ্য যা শরীরের বিভিন্ন উপকারে আসে। গোলমরিচের তেমন কোন ক্ষতিকারক দিক নেই। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর সামান্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমন অতিরিক্ত গোলমরিচ খেলে পেটে বদহজম বা এসিডিটির সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। এমন কি পেট ব্যথার সমস্যা দেখা দিতে পারে। গর্ভবতী মহিলাদের গোলমরিচ খাওয়া শরীরের জন্য একেবারেই ঠিক নয়।


গর্ভাবস্থায় গোলমরিচ খেলে গর্ভপাতের সম্ভাবনা থাকে। সেজন্য গর্ভাবস্থায় এসময় গোলমরিচ না খাওয়াই উত্তম। গোলমরিচ খাওয়ার পর আধাকাপ পানি পান করতে হবে। কারণ এর রয়েছে ঝাঁঝাঁলো গন্ধযুক্ত এক ধরনের স্বাদ। গোলমরিচ খাওয়ার পর সমস্যা দেখা দিলে ততখানাৎ খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে। এগুলো সাবধানতা অবলম্বন করে গোলমরিচ খেলে কোন সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।

লেখক এর মন্তব্য

প্রতিটি খাদ্যের উপকারিতা এবং অপকারিতা রয়েছে। সুস্থ সবল থাকতে হলে আমাদের অবশ্যই যা খাব সেটি সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা। উল্লেখযোগ্য আরেকটি বিষয় হচ্ছে সে খাবারের সঠিক পরিমাণ জানা এবং নিয়ম কানুন জানা। তাহলে দেখবেন আমাদের শরীরের সুস্থতা বজায় থাকবে এবং ভুল খাদ্যাভ্যাসের কারণে শরীরে ক্ষতি হবে না।

প্রিয় পাঠক, এ আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url