একজন সুস্থ মানুষের শরীরে কত পয়েন্ট রক্ত থাকে জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, আপনি কি একজন সুস্থ মানুষের শরীরে কত পয়েন্ট রক্ত থাকা প্রয়োজন এ সম্পর্কে বলে সার্চ করেছেন। তাহলে চলুন এ আর্টিকেলটি আপনাকে যে বিষয়ে সার্চ দিয়েছেন তা সম্পর্কে জানতে সাহায্য করবে। এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমরা আপনাকে একজন সুস্থ মানুষের শরীরে কত পয়েন্ট রক্ত থাকা প্রয়োজন এবং রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধির খাবার সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
একজন সুস্থ মানুষের শরীরে কত পয়েন্ট রক্ত থাকে
আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন মানুষের রক্তে ph কত, রক্তে হিমোগ্লোবিনে পরিমাণ কত থাকা উচিত, হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কি হয় এবং হিমোগ্লোবিন কমে গেলে করণীয়।

ভূমিকা

রক্ত হচ্ছে মানুষ ও অন্যান্য মেরুদন্ডী প্রাণীর সংবহন তন্ত্রের একটি দৈহিক তরল যা কোষের প্রয়োজনীয় পদার্থসমূহ যেমন পুষ্টিদায়ক পদার্থ অক্সিজেন সরবরাহ করে থাকে এবং কোষ থেকে বিপাকীয় রেচন পদার্থ ও কোষসমূহ থেকে দূরে বহন করে নিয়ে যায়। রক্ত মানব শরীরের সবচেয়ে অপরিহার্য উপাদান। যা ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না।


রক্তের প্রাথমিক কাজ হচ্ছে কোষগুলোতে অক্সিজেন সরবরাহ করা এবং পুষ্টি ও প্রয়োজনে উপাদান সরবরাহ করা। এছাড়াও মানুষের শরীরের বর্জ পদার্থ অপসারণ করা রক্তের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। শরীরের পিএইচ এর জন্য রক্ষক হিসেবে কাজ করে শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। রক্ত শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে যেমন পরিপাককৃত খাবার থেকে উদ্ভুত পুষ্টিকর পদার্থসমূহ পরিপাক নালী হতে শোষিত হয়ে রক্তের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংশে পরিবাহিত হয় এবং দেহের বৃদ্ধি ও শক্তি উৎপাদন কাজে লাগে।

এছাড়াও আরও গুরুত্বপূর্ণ কাজ যেমন শোষণমূলক কাজ, রেচনমূলক কাজ, হরমন ও উচ্ছেচক সমূহের পরিবহন, জলীয় সাম্য রক্ষা, অম্ল ক্ষার সাম্য রক্ষা, দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণসহ আরো অন্যান্য কাজ করে থাকে। একজন মানুষ সুস্থ থাকতে হলে পরিমাণমতো রক্ত শরীরে থাকতে হবে। রক্ত কম বা বেশি কোনটাই শরীরের জন্য ভালো নয়।


একজন সুস্থ মানুষের শরীরের রক্ত কতটুকু থাকে তা নির্দিষ্ট পরিমাপ রয়েছে। সেগুলো আমরা এ আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করব।

একজন সুস্থ মানুষের শরীরে কত পয়েন্ট রক্ত থাকে

মানুষকে সুস্থ ও সবল রাখতে রক্তের গুরুত্ব অপরিসীম। আপনি কি জানেন একজন সুস্থ মানুষের শরীরে কি পরিমান রক্ত থাকা উচিত? যদি না জেনে থাকেন তাহলে অবশ্যই এই বিষয়টি জেনে নিবেন। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরে সর্বনিম্ন ১০.৫ পৃন্ট রক্ত থাকা উচিত। চিকিৎসকরা বলেন এর চেয়ে নিচে রক্তের পরিমাণ থাকলে তা স্বাভাবিক পরিমাণ রক্তের আওতায় পড়ে না।

স্বাভাবিক পরিমাণ রক্তে লিটারে হিসাব করলে এর পরিমাণ দাঁড়ায় পাঁচ লিটার। অর্থাৎ বলা যায় যে প্রাপ্তবয়স্ক একজন সুস্থ মানুষের শরীরে ৫ লিটার পরিমাণ রক্ত থাকা প্রয়োজন। তবে বয়স ভেদে বা লিঙ্গ ভেদে এবং ওজন ভেদে এর পরিমাণ আলাদা আলাদা হতে পারে। চিকিৎসকরা আরো বলেন সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সর্বমোট ওজনের প্রায় ৮% রক্ত দেহে থাকা উচিত।

অর্থাৎ আপনার ওজন যদি হয় পঞ্চাশ কেজি তাহলে আপনার শরীরের রক্ত থাকা প্রয়োজন ৮%। পুরুষের তুলনায় মহিলাদের শরীরের রক্ত একটু কম থাকে। একটি সুস্থ্য মহিলার শরীরে চার থেকে সাড়ে চার লিটার রক্ত থাকা প্রয়োজন।

মানুষের রক্তের PH কত

রক্তে এক অস্বচ্ছ সামান্য ক্ষারীয় অন্তঃকোষীয় তরল যোজক কলা। একজন সুস্থ মানুষের রক্তে ৭.২ থেকে ৭.৪ পরিমাণ পিএইচ থাকা প্রয়োজন। রক্তে পিএইচ এর মান ৭.৪ এর গ্রহণযোগ্যতা সবচেয়ে বেশি। রক্ত পিএইচের রক্ষক হিসাবে কাজ করে শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। রক্তে আবার দুই ধরনের উপাদান থাকে যথা রক্ত রস ও রক্ত কণিকা।

রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কত থাকা উচিত

রক্তের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে হিমোগ্লোবিন বা লহিত কণিকা। সুস্থতার জন্য এর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ রয়েছে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের শরীরে ১৩.৮ থেকে ১৭.২ পর্যন্ত হিমোগ্লোবি থাকা প্রয়োজন। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ১২.১ থেকে ১৫.১ গ্রাম পর্যন্ত পর্যন্ত হিমোগ্লোবিন থাকা প্রয়োজন। এর নিচে থাকলে রক্তশূন্যতার সমস্যা দেখা দেয়।

রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে কি হয়

রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। স্বাভাবিকের তুলনায় হিমোগ্লোবিন বা লোহিত কণিকার পরিমাণ কমে গেলে রক্তের এই রোগ দেখা দেয়। রক্তশূন্যতা দেখা দিলে মানুষের রক্তের অক্সিজেন বহন করার ক্ষমতা অনেক কমে যায়। যার ফলে শরীরে রক্তশূন্যতার পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং শরীরে বিভিন্ন রোগ বাসা বাধে।


শরীরে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে যে সকল লক্ষণ দেখা যায় সেগুলো হল ক্লান্তিবোধ, দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, মাথা ব্যথা এবং ব্যায়াম করার অক্ষমতা। রক্তস্বল্পতার সমস্যায় পুরুষের তুলনায় মহিলারাই বেশি ভোগে থাকে।

রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে করণীয়

শরীরে পর্যাপ্ত পুষ্টি ভিটামিন সি এবং ভিটামিন বি টুয়েলভ এর ঘাটতি থাকলে রক্তের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যেতে পারে। পুরুষের তুলনায় নারীরা সমস্যায় বেশি ভোগেন। কোন কারণে যদি রাতে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যায় তাহলে অবশ্যই আয়রনযুক্ত খাবার খাওয়া অত্যাবশ্যকীয়। আয়রনযুক্ত খাবারের মধ্যে রয়েছে মটরশুঁটি, মসুর ডাল, শাক-সবজি, কলা, ব্রকলি ইত্যাদি।

এই খাবারগুলো প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় রাখলে রক্তশূন্যতা বা হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যাওয়া সম্ভাবনা কমে যাবে বা যাদের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম তাদের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ স্বাভাবিক মাত্রায় চলে আসবে। মহিলাদের আয়রনযুক্ত খাবার খাওয়া অনেক বেশি জরুরী। কেননা বেশিরভাগ মহিলাদের মধ্যেই হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার সমস্যা থাকে।

এছাড়াও খাবারের পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধির ওষুধ খেতে পারেন। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার মাধ্যমে শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। সেজন্য ভিটামিন সি যুক্ত ফল খাওয়া উচিত।

হিমোগ্লোবিন বাড়ায় যেসব খাবার

হিমোগ্লোবিন কমে গেলে খাবারের মাধ্যমে তা পূরণ করা যায়। তবে আমাদের অনেকেরই অজানা রয়েছে কোন কোন খাবার খেলে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি পায়। তাহলে চলুন জেনে নেই-

প্রাণীজ খাদ্যঃ প্রাণি থেকে খাওয়া খাদ্যকে বলা হয় প্রাণিজ খাদ্য। এই প্রাণীজ খাদ্যগুলোর মাধ্যমে হিমোগ্লোবি বৃদ্ধি করা সম্ভব। প্রাণীজ খাদ্যগুলো হল কলিজা, ডিম, দুধ, মাংস ইত্যাদি। এ খাদ্যগুলো থেকে খুব সহজেই হিমোগ্লোবিন তৈরি হয় এবং তা শরীরে শোষণ হয়ে থাকে। প্রাণিজ খাদ্য থেকে যে পরিমাণ হিমোগ্লোবিন তৈরি হয় উদ্ভিদের উৎস থেকে সে পরিমাণ হিমোগ্লোবিন তৈরি হতে পারে না সেজন্যে প্রাণীজ খাদ্যকে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধিতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।

ফল ও শাকসবজিঃ এমন কিছু কিছু ফল ও শাক-সবজি রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে বৃদ্ধি করা যায়। হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করার ফলগুলো হচ্ছে আম, লেবু, আপেল ও পেয়ারা। ওই ফলগুলোতে রয়েছে অতিমাত্রায় ভিটামিন সি। এই ভিটামিন সি শরীরে আয়রন শোষণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এবার চলুন আয়রন সমৃদ্ধ শাক-সবজিগুলো জানি।

আয়রন সমৃদ্ধ শাক-সবজিগুলো হলো টমেটো, কুমড়ো, ব্রকলি এবং পালক শাক। এই সবজিগুলো যদি নিয়মিত খাবারের তালিকায় রাখতে পারেন তাহলে শরীরে আয়রনের পরিমাণ শোষণ করে নিতে পারবে। যার ফলে শরীরের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে।

সামুদ্রিক মাছঃ সামুদ্রিক মাছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। সামুদ্রিক মাছ সেজন্য হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যাদের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ অনেক কম থাকে তারা নিয়মিত সামুদ্রিক মাছগুলো খেতে পারেন।

ড্রাই ফ্রুটসঃ হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করতে ড্রাই ফ্রুটস কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। ড্রাই ফুডস-এ রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করার ড্রাই ফ্রুটস যেমন কিসমিস, কাজু, খেজুর ইত্যাদি। এই খাবারগুলো নিয়মিত খেতে পারেন তাহলে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পাবে।

ডার্ক চকলেটঃ শরীরে আয়রন বৃদ্ধি করার অন্যতম ওষুধ হতে পারে ডার্ক চকলেট। ডার্ক চকলেটে যেমন আয়রন রয়েছে তেমনি শর্করার পরিমাণ অনেক কম রয়েছে। চকলেট খেলে যেমন হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি পায় তেমনি রক্তে শর্করার বৃদ্ধি পায় আশঙ্কা থাকে না।

ভিটামিন সি যুক্ত খাবারঃ আমরা জানি ভিটামিন সি এর অভাবের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যেতে পারে। সেজন্য ভিটামিন সি যুক্ত খাবার আয়রন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। যেগুলো ফলমূল বা শাকসবজিতে ভিটামিন সি রয়েছে সেগুলো খেলে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি পাবে। ভিটামিন সি শরীরে খাবার থেকে আয়রন শোষণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

লেখক এর মন্তব্য

একজন সুস্থ মানুষের যে পরিমাণ রক্ত প্রয়োজন সে পরিমাণ রক্ত না থাকলে শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয় তার সাথে রোগ বাধি বৃদ্ধি পায়। যে সকল খাবার খেলে শরীরের রক্তের পরিমাণ স্বাভাবিক থাকবে এবং হিমোগ্লোবিন ঠিক থাকবে সে সকল খাবার খাওয়া আমাদের প্রতিটি মানুষের উচিত।

প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url