ভালো ও সুস্বাদু আম চেনার উপায় - শিশুদের জন্য আম কতটা উপকারী

প্রিয় পাঠক, আপনি কি ভাল সুস্বাদু আনতেন আর উপায় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনাকে এই বিষয়ে জানতে সাহায্য করবে। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে ভালো ও সুস্বাদু আম চেনার কয়েকটি উপায় এবং শিশুদের জন্য আম কতটা উপকারী এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেল মনোযোগ সহকারে করুন পড়ুন।
ভালো ও সুস্বাদু আম চেনার উপায়
এই আর্টিকেল পড়লে আরো জানতে পারেন আম খাওয়ার উপকারিতা এবং কত মাস বয়স থেকে শিশুকে আম খাওয়ানো যাবে এ সম্পর্কে।

ভূমিকা

বৈশাখ শেষ হতে না হতে চলে আসে আমের মৌসুম। আম পাকা শুরু না হতে বিক্রেতারা বাজারে আম নিয়ে ভিড় করছে। সেই সাথে ক্রেতারাও আম কেনার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। কারণ এমন একটি ফল যা সকলের পছন্দের। আম পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আম খেতে অনেক সুস্বাদু এবং মিষ্টি।


তবে কিছু কিছু আম পরিপক্ক হওয়ার পূর্বে নামানো হলে সেগুলো খেতে তেম ন স্বাদ বা মিষ্টি লাগে না। বাজারে গিয়ে আম কিনতে হলে অবশ্যই ভালো আম চিনে কিনতে হবে। ভালো আম চিনে কিনতে না পারলে পুরোপুরি আম কিনে ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পছন্দের ফল যদি খেতে ভালো না লাগে তাহলে অনেক খারাপ লাগে।


সেজন্য আপনি বাজারে আম কিনতে যা যাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ভালো বা পাকা আম চেনার কয়েকটি উপায় জেনে তারপরে যাবেন। যাতে করে টক আম কিনে ঠকতে না হয়।

সুস্বাদু ও ভালো আম চেনার উপায়

যারা আম দেখলে ভালো না খারাপ চিনতে পারেনা তাদের জন্য আমরা এখানে সুস্বাদু ভালো আম চেনার কয়েকটি উপায় তুলে ধরেছি, যা পড়লে কিছুটা ভালো আম চেনা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। তাহলে চলুন ভালো আম চেনার কয়েকটা উপায় জেনে নেওয়া যাক-

সুগন্ধঃ আমের সুগন্ধ দেখে বোঝা যায় এ আম ভালো কিনা। যেগুলো আম সুস্বাদু এবং মিষ্টি সেগুলো নাকে ধরলে সুন্দর গন্ধ বের হয়। খারাপ বা টক আমগুলো থেকে সুন্দর গন্ধ বের হয় না। সেজন্য আম চিনতে হলে অবশ্যই নাকের কাছে গন্ধ নিয়ে বুঝে নিতে হবে আমটি ভালো না খারাপ।

রং দেখেঃ আমের রং দেখে অনেক সময় বোঝা যায় ভালো না খারাপ। মিষ্টি ও সুস্বাদু আমের বোাটার পাকা রং দেখা যায়। তবে কিছু কিছু আমের রং সুন্দর হলোও খেতে ভালো লাগে না। যেগুলো পরিপক্ষ বা পাকা আম সেগুলোর এক ধরনের আলাদা রঙের হয় যেগুলো দেখেই বোঝা যায়।

আমের গায়ে স্পর্শ করেঃ পাকা আমের গায়ে টিপ দিলে বোঝা যায় সেটি পাকা কি না। পাকা ও ভালো আম সুন্দরভাবে নরম হয়ে যাবে। যেগুলো আম আঙ্গুল দিয়ে টিপ দিলে বসে যায় সেগুলো আম ভালো হয় না।

আমের গঠন দেখেঃ আমের গঠন দেখে বোঝা যায় সেগুলো পরিপক্ক বা পাকা আম কিনা। যেগুলো আম পরিপক্ক না হতেই গাছ থেকে নামিয়ে পাকানো হয় সেগুলো আমের চামড়া কুঁচকে যায় বা কাঁচা রঙ থেকে যায়। পরিপক্ক আম সবসময় অন্য রঙ হয়ে থাকে।

আমের চামড়া দেখেঃ কার্বাইড বা অন্য কিছু দিয়ে পাকানো আমের গায়ে কোন দাগ থাকে না এবং মোলায়েম হয়। ভালো ও গাছপাকা আম এর গায়ে কোন না কোন দাগ থাকবে একবারে মোলায়েম হবে না।

আম খাওয়ার উপকারিতা

আমে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ যা শরীরের জন্য অনেক উপকারী। আম অনেক সুস্বাদু সেজন্য আমরা খাই। কিন্তু এই সুস্বাদু ফলের যে উপকারিতা রয়েছে সে সম্পর্কে আমরা অনেকেই ধারণা রাখিনা। তাহলে চলুন আম খেলে কি কি উপকারিতা পাওয়া যায় জেনে নেওয়া যাক-

ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ আমে রয়েছে কুয়ার সেটিন, ফাইসেটিন, আইসোকুয়ার সেটিন, আ্যাস্ট্রাগালিন, গ্যালিক আসিড, মিথাইল গ্যালেট নামক আন্টি অক্সিডেন্ট যা ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সেজন্য বলতেই পারি আম খেলে শরীরে ক্যান্সার প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ আমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ফাইবার এবং পেকটিন যা কোলেস্টরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। সেজন্য রক্তের কোলেস্ট্রল নিয়ন্ত্রণ রাখতে চাইলে পরিমিত পরিমাণ আম খাবেন।

দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখেঃ পাকা আম চোখের জন্য অনেক উপকারী। কারণ আমে থাকে ভিটামিন এ যা চোখের দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখতে এবং চোখের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যারা চোখের বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য অতি উপকারী একটি ফল হচ্ছে আম। পরিমাণ মতো আম খেলে চোখের সমস্যা দূর করা সম্ভব হয়।

হিট স্ট্রোকে বিরুদ্ধে লড়াই করেঃ আম দিয়ে তৈরি করা জুস খেলে শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। যার ফলে বাইরের অতিরিক্ত তাপমাত্রায় শরীরের কোন ক্ষতি হয় না। আমের জুস খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে বলে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যায়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ আমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ এবং বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। আম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করায় শরীর শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আম। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত আম খেতে পারেন। তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়ে যাবে এবং পেট পরিষ্কার হবে।

ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করেঃ আমে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন যা খাওয়ার ফলে শরীরে ভিটামিনের চাহিদা পূরণ হয়ে যায়।

শিশুদের জন্য আম খাওয়া কথাটা উপকারী

আম আপনার শিশুর খাবারের তালিকায় যুক্ত করা একটি উপযুক্ত খাবার। যখন শিশু বাড়তি খাবার খাওয়া শুরু করে তখন পুষ্টিকর ফলগুলো সুস্বাদু বিকল্প খাবার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আম যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিকর যা শিশুর জন্য অনেক উপকারী। আম খেলে শিশুর কি কি স্বাস্থ্য উপকারিতা ঘটে সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-

  • আম শিশুর হজমে সহায়তা করে। যেহেতু এটি কঠিন খাবার নয় সেহেতু কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকে না। সহজে হজমযোগ্য বলে এটি শিশুর জন্য অনেক উপকারী।
  • আমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ যা শিশু দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি চোখের বিভিন্ন সমস্যা থেকে চোখ রক্ষা করতে সহায়তা করে।
  • শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশের জন্য অন্যতম ফল হতে পারে আম। এটি পরিমাণমতো শিশুকে খাওয়ালে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে ভূমিকা রাখে।
  • আমে থাকা ভিটামিন এ যেমনি চোখের জন্য ভালো তেমনি ত্বকের জন্য এটি অত্যন্ত ভালো। নিয়মিত আম খেলে শিশুর ত্বক উজ্জ্বল ও সুন্দর রং ধারণ করে।
  • প্রতিটি আমে ০.৫ মিলি আয়রন থাকে যা লোহিত কণিকা তৈরি করার জন্য অতি প্রয়োজন। সেজন্য আম খেলে রক্তস্বল্পতার ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
  • শিশুর ওজন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে আম। আমে অত্যন্ত কম পরিমাণে ক্যালরি থাকে যা আপনার শিশুর স্বাস্থ্যকর ওজন বাড়াতে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করবে।

কয় মাস বয়স থেকে শিশুকে আম খাওয়ানো যায়

অনেকের প্রশ্ন করেন কয় মাস বয়স থেকে শিশুদের আম খাওয়ানো যায়। শিশুদের যখন থেকে বাড়তি খাবার দেওয়ার প্রয়োজন হবে তখন থেকে আম খাওয়ানো যাবে। তবে সে সময় অত্যন্ত কম পরিমাণে খাওয়াতে হবে। প্রথম অবস্থাতে খুবই কম খাওয়াতে হবে এবং দেখতে হবে যে আম খাওয়ার পরে শিশুর শরীরের কোন সমস্যা তৈরি হচ্ছে কিনা।


যদি কোন সমস্যা তৈরি না হয় তাহলে পরিমাণ একটু একটু করে বাড়াতে পারেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে অতিরিক্ত পরিমাণ যেন আম খাওয়ানো না হয়। পরিমাণমতো আম খেলে শিশুর যতটা উপকার হবে ঠিক ততটাই পরিমাণের বাইরে খাওয়ালে ক্ষতিও হতে পারে।

লেখকের মন্তব্য

আম সকলের কাছে সু-পরিচিত এবং পছন্দের একটি ফল। এটি যেমন কেনার সময় অবশ্যই দেখে শুনে কিনতে হবে তেমনি খাওয়ার কিন্তু কিছু নিয়ম মানতে হবে। সব সময় পরিমাণমতো খেতে হবে। পরিমাণের অতিরিক্ত খেয়ে নিজের শরীরের বিপদ ডেকে আনার থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url