মেহেদি পাতার ঔষধি গুনাগুণ জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, আপনি কি মেহেদী পাতার ঔষধি গুনাগুন জানার চেষ্টা করছেন। তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনাকে এ বিষয়ে জানতে সাহায্য করবে। এ আর্টিকেলটি পড়লে আমরা আপনাকে পাতার ঔষধি গুনাগুন এবং মেহেদী পাতার চা এর উপকারিতা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
মেহেদি পাতার ঔষধি গুনাগুণ
এই আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন মেহেদি পাতার রস চুলে দিলে কি হয়, পাকা চুলে মেহেদি ব্যবহারের নিয়ম এবং চুলে মেহেদী ব্যবহারে সর্তকতা।

ভূমিকা

প্রাচীনকাল থেকে মানুষের কাছে অনেক পরিচিত এই মেহেন্দি পাতা। এ পাতার রয়েছে অনেক গুনাগুণ। ছেলে ও মেয়ে উভয়েই এই পাতা ব্যবহার করে থাকে। এ পাতার বেশি ব্যবহার করা হয় যে কোন উৎসবে হাত রঙিন করার জন্য। ঈদের আনন্দে হাত রঙিন করতে ব্যবহার করে ঈদের আগের দিন মেহেদি পাতা।


এই পাতা শুধু হাত রঙিন করে না বরং এটি চুল বা দাড়িও রঙিন করে থাকে। এছাড়াও চুলের যত্নে অত্যন্ত উপকারী একটি পাতা বলে ভুল হবে না। মানব জীবনে এর উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না কারণ এর রয়েছে বহুমুখী উপকারিতা। এই পাতায় রয়েছে নানা ধরনের ঔষধিগুণ যা বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে সক্ষম।


মেহেদি সবাই ব্যবহার করে হাত বা চুল-দাড়ি রঙিন করার জন্য। কিন্তু এর যে ঔষধি গুনাগুণ রয়েছে এ সম্পর্কে অনেকেরই অজানা। যারা এই পাতার ঔষধি গুনাগুণ সম্পর্কে জানেন না তারা অবশ্যই জেনে নিবেন এই আর্টিকেল পড়ে।

মেহেদি পাতার ঔষধি গুনাগুণ

মেহেদি পাতার যেসব ঔষধি গুনাগুণ রয়েছে সেগুলো আমরা এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে সুন্দরভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। তাহলে চলুন এ পাতার উপকারিতা আর গুণ সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে জেনে নেওয়া যাক-

নতুন চুল গজায়ঃ মেহেদি পাতা নতুন চুল গজাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যাদের মাথায় টাক রয়েছে তারা এ মেহেদি পাতার রস সরিষার তেলের সঙ্গে মিশিয়ে গরম করে তারপর ঠান্ডা করে ব্যবহার করতে পারেন তাহলে টাক পড়া মাথায় নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে।

চুল পড়া কমাতেঃ চুল পড়া কমাতে মেহেদি পাতার রয়েছে অনন্য ক্ষমতা। পেঁয়াজের রসের সাথে মেহেদি পাতার রস চুলের গোড়ায় ব্যবহার করলে ধীরে ধীরে চুল পড়া সমস্যা কমে যায় এবং চুল ঘন ও স্বাস্থ্য উজ্জ্বল দেখায়।

পায়ের জ্বালাপোড়া রোধ করেঃ অনেকের বিভিন্ন কারণে পায়ের জ্বালাপোড়া হয়ে থাকে। মেহেদি পাতা ব্যবহারে পায়ের জ্বালাপোড়া রোধ হয়। সেজন্য মেহেদি পাতার সাথে ভিনেগার ভিজে মোজার ভিতর রেখে দিতে হবে তারপর সেই মোজাটি পড়ে সারারাত থাকতে হবে। এভাবে পায়ের জ্বালাপোড়া অনেক ক্ষেত্রেই কমে যাবে।

মাথা ব্যাথা দূর করেঃ মেহেদি গাছের ফুল মাথা ব্যাথা দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এ ফুল ভালোভাবে পেস্ট করে এর সঙ্গে ভিনেগার মিশিয়ে কপালে অথবা ব্যথার স্থানে লাগিয়ে রাখলে মাথা ব্যাথা দূর হয়ে যাবে। মাথা ব্যাথা দূর করতে মেহেদি পাতার কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এভাবে মেহেদি পাতা পেস্ট করে ব্যবহার করলে মাথা ব্যথা নিরাময় হয়ে যাবে।

পুরনো ক্ষত সারাতেঃ পুরনো ক্ষত অনেক সময় কিছুতেই ভালো হতে চাই না। এক্ষেত্রে মেহেদি পাতা কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। মেহেদী পাতা ভালোভাবে পেস্ট করে পুরনো ক্ষতস্থানে লাগালে ধীরে ধীরে সে ক্ষত সেরে উঠবে।

পানি পাচা রোগেঃ পানি ব্যবহারের ফলে এই রোগ হয়ে থাকে। অথবা দীর্ঘ সময় ধরে পচা পানিতে কাজ করার ফলে এই রোগ হয়ে থাকে। এই ঘা সারাতে বহু সময় লাগে। কিন্তু মেহেদি পাতা পেস্ট করে গায়ে লাগালে খুব দ্রুত এই ঘা সেরে ওঠে।

পা ফাটা প্রতিরোধ করেঃ শীতকালে পা হামেশাই ফাটে। কিন্তু কারো কারো ক্ষেত্রে সারা বছরই পা ফাটার সমস্যা দেখা যায়। মেহেদি পাতা পা ফাটা দূর করতে অতি কার্যকারি। পা ফাটা দূর করতে হলে ফাটা স্থানে পেস্ট করে লাগালে ধীরে ধীরে ফাটা দূর হয়ে যাবে। দ্রুত ফলাফল পেতে হলে এটি প্রতিদিন ব্যবহার করতে হবে।

ঘুমের সমস্যা দূর করেঃ মানুষের বিভিন্ন কারণে ঘুমের সমস্যা হয়ে থাকে। যেকোনো কারণে ঘুমের সমস্যা দূর করে মেহেদী পাতা। কোন সমস্যা দূর করতে হলে প্রতিদিন নিয়ম করে মেহেদি পাতার রস খেতে হবে। তাহলে ধীরে ধীরে এই ঘুমের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করেঃ মেহেদি পাতা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে বলে হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। মেহেদি পাতার রস খেলে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক অনেক কমিয়ে দেয়৷

নখের যত্নেঃ মেহেদি পাতা নখ আকর্ষণীয় করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সেজন্য মেহেদী পাতা সরাসরি নখে ব্যবহার করতে পারেন বা মেহেদি পাতার রস ব্যবহার করতে পারেন।

খুশকি দূর করেঃ খুশকি দূর করতে মেহেদি পাতা খুবই কার্যকরী। মেহেদি পাতা, সরিষার তেল ও মেথি একসাথে সিদ্ধ করে তারপর সেই তেল ঠান্ডা করে মাথায় ব্যবহার করতে হবে। কিছুক্ষণ পর শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেললে খুশকি দূর হয়ে যাবে। ভালো ফলাফলের জন্য প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার ব্যবহার করতে হবে।

মেহেদি পাতার রস চুলে দিলে কি হয়

মেহেদি পাতা চুলে দিলে চুলের অনেক উপকার হয়। যেমনঃ চুল পাকা রোধ করে, চুল পড়া কমায়, খুশকি দূর করে, নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে এবং মাথার ত্বকের স্বাস্থ্যও বজায় রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া মেহেদি পাতার রস ঔষধিগুণ সম্পন্ন হওয়ায় বিভিন্ন সমস্য দূর করে।

চুলে মেহেদি দিয়ে কত সময় রাখা যায়

চুলে মেহেদি পাতা কতক্ষণ রাখা যায় এ সম্পর্কে অনেকে প্রশ্ন করে থাকেন। চুলে মেহেদি দিয়ে সাধারণত ২ ধেতে ৩ ঘন্টা রাখা যায়। সর্বোচ্চ ৪ ঘন্টা পর্যন্ত রাখা যায় এর বেশি রাখলে চুল রুক্ষতা এবং পানি শূন্যতা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

পাকা চুলে মেহেদি ব্যবহারের নিয়ম

অনেকে পাকা চুলে রং করার নজ্য বিভিন্ন রাসায়নিক রং ব্যবহার করে থাকে। যেগুলো ব্যবহারের ফলে চুল শুষ্ক ও প্রাণহীন হয়ে ওঠে। চুলের সুস্বাস্থ্য রক্ষ করতে হলে সবচেয়ে অন্যতম উপায় হচ্ছে মেহেদি পাতা ব্যবহার করা। মেহেদি পাতার ব্যবহারে চুলের রং যেমন সুন্দর হবে তেমনি এই রং অনেক দীর্ঘস্থায়ী হবে।


সেই বিভিন্ন সমস্যা দূর করে চলকে প্রাণবন্ত করে তো যেখানে আবারলে। তবে এরূপ ফলাফলের জন্য জানতে হবে ব্যবহারের সঠিক নিয়ম। তাহলে চলুন কিভাবে ব্যবহার করলে চুলের স্বাস্থ্যও সুন্দর হবে জেনে নেয়া যাক-

প্রথমে চুলের জন্য পরিমাণমতো মেহেদি পাতা নিতে হবে। তারপর এই পাতাগুলোকে ভালোভাবে পেস্ট করে নিতে হবে। এই পেস্টের সাথে কালো চা পাতার গুড়া হাফ চামচ লেবুর রস এবং ২ থেকে ৩ কাপ পানি মিশিয়ে নিতে হবে। এর পর এই মিশ্রণটি চুলে ভালোভাবে লাগাতে হবে। কিছুক্ষণ রেখে তারপর শ্যাম্পু করে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে।

চুলে মেহেদি ব্যবহারে সতর্কতা

চুলে মেহেদি ব্যবহারে কয়েকটি সতর্কতা রয়েছে সেগুলো নিচে আলোচনা করা হল-
  • ১) মাথার ত্বকে যদি কোন সমস্যা থাকে বা এ্যালার্জি থাকে তাহলে চুলে মেহেদি দেয়া যাবে না।
  • ২) আপনার যদি ঠান্ডাজনিত কোন সমস্যা থাকে তাহলে মেহেদি ব্যবহার করা যাবে না।
  • ৩) মেহেদি ব্যবহার করতে হলে চুল প্রথমত ভালোভাবে ছড়িয়ে নিতে হবে। কারণ জটা চুলে মেহেদি ব্যবহার করা যাবে না।
  • ৪) মেহেদি পেস্ট করার সময় ধাতব বাটি এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ মেহেদির উপাদানগুলো ধাতব বাটির সাথে বিক্রিয়া করতে পারে।
  • ৫) মেহেদির তৈরি পেস্টকে চুলে সম্পূর্ণ ভাবে শুকাতে দেয়া যাবে না। এতে চুলের পানিশূণ্যতা বা রুক্ষতা বেড়ে যাবে।

মেহেদি পাতার চায়েরউপকারিতা

আমাদের সবার কাছে অনেক পরিচিত একটি পাতা হচ্ছে মেহেদি পাতা। এই পাতা হাত রঙিন করার জন্য ব্যবহার করা হলেও অনেক জায়গায় এটিকে চায়ের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যারা মেহেদি চা হিসেবে ব্যবহার করেন তারা বলেন যে এই যায়ে রয়েছে নানা ধরনের উপকারিতা। এই চায়ে রয়েছে ঔষধি গুনাগুণ যা বিভিন্ন রোগের মোকাবেলা করে শরীরকে সুস্থ্য রাখতে সহায়তা করে।

মেহেদি চা তৈরির জন্য প্রথমে মেহেদি পাতাকে ভালভাবে শুকিয়ে গুড়ো করে নিতে হবে। তারপর পানিতে সেদ্ধ করে গুড় বা চিনি মিশিয়ে পান করতে হবে। বেশির ভাগ মানুষ মেহেদি পাতার চা গুড় দিয়েই পান করে থাকেন। মেহেদি পাতার চা পান করলে শরীর অনেক সতেজ ও সজীব হয়ে ওঠে। কারণ এই পাতার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরণের ঔষধি গুনাগুণ।

লেখকের মন্তব্য

মেহেদীর কথা সকলের কাছে পরিচিত হলেও এর গুনাগুন বা সতর্কতা সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। আমাদের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে মেহেদি পাতার গুনাগুণ এবং যেগুলো ক্ষেত্রে সকল কথা অবলম্বন করা উচিত সেগুলো কিছুটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি ও আশা করছি এই এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ে কিছুটা ধারণাও পেয়েছে।

প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হলে আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব এবং পরিবারের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url