গোলাপজল কিভাবে বানায় - ব্রণ দূর করতে গোলাপজলের ব্যবহার

প্রিয় পাঠক, আপনি কি গোলাপজল কিভাবে বানায় এ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনাকে এ বিষয়ে জানতে সাহায্য করবে। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে গোলাপজল কিভাবে বানায় এবং গোলাপ জল দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণাদেয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
গোলাপজল কিভাবে বানায়
এই আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন গোলাপজল দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়, গোলাপজলের দাম এবং গোলাপজল মুখে কিভাবে ব্যবহার করা যায়।

ভূমিকা

গোলাপজল আমাদের সবার কাছে অনেক সুপরিচিত একটি পণ্য যা রূপচর্চায় বেশি ব্যবহৃত হয়। গোলাপজল তৈরি হয় সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে সেজন্য এটি ত্বকের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উপকারী। এটি প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি করার কারণে ত্বকের পিএইচ বজায় রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।


সাধারণত ত্বকের ময়লা পরিষ্কার করতে, ফেসপ্যাকের সাথে এবং টোনার হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। গোলাপজল সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেশি থাকার কারণে এটি বাজারে পাওয়া দুষ্কর হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এটি বাজারে না পাওয়া গেল চিন্তার কোন কারণ নেই কারণ আপনি একটু কষ্ট করলেই ঘরে বসে তৈরি করতে পারবেন গোলাপজল।

বাজারে কেনা গোলাপজলের তুলনায় ঘরে বসে তৈরি করা গোলাপজল ত্বকের জন্যবেশি নিরাপদ। আপনি যদি ঘরে বসে গোলাপজল তৈরি করতে চান তাহলে সেটা কিভাবে বানাতে হবে তা এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়লে জানতে পারবেন।

গোলাপজল কিভাবে বানায়

বিশুদ্ধ গোলাপজল যদি পেতে চান তাহলে অবশ্যই একটু কষ্ট করে ঘরে বসেই তৈরি করুন গোলাপজল। তাহলে চলুন গোলাপজল কিভাবে বানায় সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-

গোলাপজল তৈরি করতে প্রয়োজনে উপকরণ

দুইটি ফ্রেশ গোলাপ এর পাপড়ি
২ কাপ ডিসট্রিল ওয়াটার

যেভাবে তৈরি করতে হবে

প্রথমে ফ্রেশ গোলাপ থেকে পাপড়িগুলো ছাড়িয়ে নিতে হবে। গোলাপ যত ফ্রেশ হবে গোলাপজল তত ভালো কোয়ালিটি সম্পন্ন হবে। গোলাপজল তৈরি করার সময় আলাদা আলাদা গোলাপ না নেওয়াই ভালো। যে জাতের গোলাপ নিবেন সে জাতের দুটি ফেসগুলা দিয়ে তৈরি করবেন। কারণ দুই জাতের গোলাপ নিলে কোনটির সুগন্ধ ভালোভাবে পাওয়া যাবে না।

পাপড়িগুলো ভালোভাবে ছfড়িয়ে নিয়ে একটি পরিষ্কার পাতিলে পাপড়িগুলো রেখে তার ওপর পানি ঢালতে হবে। এরপর পাত্রটির মুখ ঢেকে খুব অল্প আছে চুলায় বসিয়ে দিতে হবে। মনে রাখবেন কোন সময় যেন পানি ফোটা শুরু না হয় বা গোলাপ পাপড়ি সিদ্ধ না হয়ে যায়। তাড়াতাড়ি গোলাপের পাপড়ি সিদ্ধ করা হয়ে গেলে পানির রং নীল হয়ে যাবে এবং গোলাপ জল তৈরি করতে ব্যর্থ হবেন।


হালকা গরম পানিতে ১০ থেকে ১৫ মিনিট গোলাপ পাত্রে রেখে দিতে হবে তারপর চুলা থেকে নামিয়ে নিতে হবে। এভাবে গোলাপজল তৈরি করলে গোলাপজলের রং গোলাপি বা লাল হতে পারে। সবশেষে পানি থেকে গোলাপের পাপড়িগুলো ছাকনির সাহায্যে তুলে নিতে হবে। তারপর সেই পানিকে ঠান্ডা করে ভালো একটি পাত্রে রেখে দিতে হবে আপনি চাইলে ফ্রিজেও রেখে দিতে পারেন।

ঘরে বসে এভাবে তৈরি করা গোলাপজল আপনি সর্বোচ্চ সাত দিন ব্যবহার করতে পারবেন।

গোলাপজল মুখে কিভাবে ব্যবহার করব

গোলাপজল ত্বকের জন্য অনেক উপকারী তা আমরা সবাই জানি। কিন্তু কিভাবে ব্যবহার করলে বেশি উপকারিতা পাওয়া যায় তা অনেকেরই অজানা। গোলাপজলের ভালো ফলাফল পেতে হলে জানতে হবে ব্যবহারের সঠিক নিয়ম। তাহলে চলুন গোলাপ জল মুখে কিভাবে ব্যবহার করা যায় এই সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-

গোলাপজল টোনার এবং ফেসিয়াল ক্লিনজার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। মুখ ধোয়ার জন্য প্রতিদিন এই গোলাপজল ব্যবহার করতে পারেন। সেজন্য প্রথমে গোলাপজল হাতের তালুতে নিয়ে মুখে এবং ঘাড়ে লাগিয়ে নেই। এরপর আপনার প্রয়োজনীয় ফেসপ্যাক বা ত্বকের চর্চায় অন্যান্য উপাদান লাগিয়ে নিতে পারেন। তারপর সেটি শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন।


এছাড়াও বেসন এর সাথেও গোলাপজল মিশিয়ে মুখে লাগাতে পারেন। কোন কিছু ছাড়াই গোলাপজল সরাসরি ব্যবহার করে বেশ উপকার পাওয়া যায়। অনেকেই ত্বকে কিছু ব্যবহার করলে পানির বিকল্প হিসেবে গোলাপজল ব্যবহার করে থাকে।

ব্রণ দূর করতে গোলাপ জলের ব্যবহার

বেশিরভাগ মানুষের ত্বকের ব্রণের সমস্যায় ভুগে থাকে। এই ব্রণ দূর করতে যারা কৃত্রিম প্রসাধনে ব্যবহার করতে না চান তারা নিশ্চিন্তে গোলাপজল ব্যবহার করতে পারেন। সাধারণত রাসায়নিক ভরা পারফিউমের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করে থাকে যা ত্বকে তেলের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং ত্বক মসৃণ ও কমল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এগুলো ছাড়াও ত্বকের উজ্জ্বলতা দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি করে এই গোলাপজল। গোলাপজলে রয়েছে আন্টি ব্যাকটেরিয়ার উপাদান যা ভেতর থেকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করার পাশাপাশি সংক্রমণ রোধ এবং হরমোনের ভারসাম্যহীনতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শুধুমাত্র গোলাপজল মেখে ত্বকের ব্রুন দূর করা যায় না সেজন্য তার সাথে কিছু অন্যান্য উপাদান যোগ করতে হয়।

কি কি উপাদান গোলাপজলের সাথে ব্যবহার করে মুখের ব্রণ কিভাবে দ্রুত দূর করা যায় তা আমরা এখানে সে বিষয়ে আপনাদের সামনে আলোকপাত করব তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক-
  • গোলাপজল ও কমলা লেবুর খোসা একসাথে ব্যবহার করে মুখের ব্রণ দূর করা সম্ভব। সেজন্য প্রথমে কমলালেবুর খোসা রোদে শুকিয়ে নিতে হবে, শুকানো হয়ে গেলে সেগুলো গুড়া করতে হবে। সেই গুড়ার সাথে গোলাপজল মিশিয়ে ভালোভাবে পেস্ট করে নিতে হবে এবং এই পেস্ট মুখে লাগাতে হবে। ১৫ থেকে ২০ মিনিট রাখার পর সেটিকে কুসুম কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। ভালো ফলাফলের জন্য দুই থেকে তিন দিন ব্যবহার করতে পারেন।
  • গোলাপজল ও চন্দনের গুড়া একসাথে মিশিয়ে মুখের ব্রণ দূর করা যায়। সেজন্য পরিমাণমতো চন্দনগুড়ার সাথে গোলাপজল পেস্ট করে মুখে লাগাতে হবে তারপর শুকিয়ে গেলে সেটিকে পানি দিয়ে মুখ পরিস্কার করতে হবে।
  • মুলতানি মাটির সাথে গোলাপজল মিশিয়ে ব্যবহার করলে ত্বকের ব্রণ অনেক ক্ষেত্রেই দূর হয়ে যায়। সেজন্য মুলতানি মাটি ও গোলাপজল মিশিয়ে একটি ফেসপ্যাক তৈরি করতে হবে এবং সেই ফেসব্যাক মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। তারপর ধুয়ে ফেলতে হবে।

গোলাপজল দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়

গোলাপজল দিয়ে কিভাবে ফর্সা হওয়া যায় সে বিষয়ে আপনারা অবশ্যই জানার চেষ্টা করছেন। গোলাপজল দিয়ে কিভাবে ফর্সা হওয়া যায় এ বিষয়ে আপনাদের বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার জন্যই এই আর্টিকেলটি প্রকাশ করেছি। তাহলে চলুন এই বিষয় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-
  • গোলাপজল ব্যবহার করে ফর্সা হওয়ার প্রথম উপায় হচ্ছে এলোভেরার সাথে গোলাপজল মিশিয়ে ব্যবহার করা। সেজন্য প্রথমে আপনাকে এলোভেরা থেকে জেল বের করে নিতে হবে এবং সেগুলোর সাথে মিশিয়ে ভালোভাবে পেস্ট তৈরি করতে হবে। তারপর সেই মিশ্রণটিকে মুখে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে।
  • এগুলো ছাড়াও মুখ ধোয়ার পর গোলাপজল মুখে স্প্রে করে রেখে দিতে পারেন এতে করে মুখ উজ্জ্বল ও ফর্সা দেখাবে। এভাবে ব্যবহার করলে ত্বকের অনেক সমস্যা দূর হয়ে যায়।
  • আপনার ত্বক যদি শুষ্ক হয়ে থাকে তাহলে গোলাপজলের সাথে দুই চা চামচ গ্লিসারিন মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। এভাবে ব্যবহার করলে ত্বকের শুষ্কতা দূর হয়ে যাবে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।
  • বেসন, কাঁচা হলুদ ও গোলাপজল একসাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে ত্বকের রং উজ্জ্বল হবে। সেজন্য এই তিনটি উপাদান একসাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে তারপর এই পেস্ট মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। তারপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।

গোলাপজলের দাম

গোলাপজল কেনার জন্য অনেকে গোলাপজলের দাম জিজ্ঞেস করে। আমরা এখানে পরিমাণ অনুযায়ী গোলাপজলের দাম উল্লেখ করার চেষ্টা করেছি। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক-
  • ১০০ মিলি গোলাপ জলের দাম ৮০ থেকে ২০০ টাকা
  • ২৫০ মিলি গোলাপ জলের দাম ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা
  • ৫০০ মিলি গোলাপ জলের দাম ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা
  • ১ লিটার গোলাপ জলের দাম ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা

গোলাপজল সম্পর্কিত কয়েকটি প্রশ্ন এবং উত্তর

প্রশ্নঃ গোলাপজল খেলে কি ত্বক সাদা হয়?

উত্তরঃ না গোলাপজল খেলে বা ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বক সাদা হয় না কারণ এতে কোন ব্লিচিং এজেন্ট থাকে না। এটি ত্বককে ভেতর থেকে পরিষ্কার করে এবং ত্বক মোলায়েম ও উজ্জ্বল করে।

প্রশ্নঃ গোলাপজল কি ছেলেদের মুখের জন্য ভালো?

উত্তরঃ গোলাপজল নিঃসন্দেহে সব ধরনের ত্বকের জন্যই উপকারী কারণ এটি প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি যা বিশুদ্ধ এবং খাঁটি। এটি ব্যবহারের ফলে মুখের বিভিন্ন উপকার পাওয়া যায়।

প্রশ্নঃ সরাসরি গোলাপ জল মুখে লাগানো যায়?

উত্তরঃ হ্যাঁ গোলাপ জল সরাসরি মুখে লাগানো যায়। এটি টোনার হিসেবে ব্যবহার করা যায় সেজন্য একটি তুলো প্যাডে গোলাপজল দিয়ে আলতো করে ত্বকে ঘষলে ত্বকের ময়লা পরিষ্কার হয়ে যায়।

প্রশ্নঃ রাতে গোলাপজল মুখে দিয়ে সারারাত রাখা যায় কি?

উত্তরঃ হ্যাঁ গোলাপজল মুখে দিয়ে সারারাত রাখা যায়। এতে ত্বকের উপকারী পুষ্টি গ্রহণ করতে পারে এবং ত্বককে হাইড্রেড রাখতে সাহায্য করে। গোলাপজল যেহেতু প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি সে হতো এটি ত্বকে ব্যবহার করে সারারাত রাখলে কোনরূপ ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।

লেখক এর মন্তব্য

গোলাপজল আমরা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করে থাকি এগুলোর মধ্যে বেশি ব্যবহার করা হয় রূপচর্চায়। গোলাপজল যেহেতু একটি প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি ধনের পানীয় এটি অনেক ক্ষেত্রে পানির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আপনি আপনার ত্বকে গোলাপজল নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারেন।

তবে ঘরে বসে তৈরি করা গোলাপ জল ব্যবহার করলে ত্বকের ক্ষেত্রে বেশি উপকারিতা পাওয়া যায়। প্রিয় পাঠক, আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব এবং পরিবারের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url