ঘোল খাওয়ার উপকারিতা - ঘোল খেলে কি ওজন বাড়ে

প্রিয় পাঠক, আপনি কি ঘোল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনাকে এ বিষয়ে জানতে সাহায্য করবে। এ আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে ঘোল খাওয়ার উপকারিতা এবং ঘোল খেলে ওজন বাড়ে কি না এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ঘোল খাওয়ার উপকারিতা
এই আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন ঘোল তৈরির নিয়ম, ঘোলের পুষ্টিগুণ, ঘোল খাওয়ার নিয়ম এবং ঘোল খাওয়ায় সর্তকতা।

ভূমিকা

তীব্র গরমের ঘোল শরীরে অনেক আরাম এনে দেয়। প্রচন্ড গরমে যখন মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে যায় তখন শরীরে ঠান্ডা অনুভূতি এনে দিতে সাহায্য করে ঘোল। ঘোল একটি পুষ্টিকর পানীয়। খেতে অনেক মজাদার। ঘোলের কথা বললে অনেকে নেতিবাচক কথা বলে থাকে। নেতিবাচক কথা বললেও এটি শরীরের জন্য অনেক ভালো তা সকলের মানতেই হবে।


ঘোলে রয়েছে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ভিটামিন বি, প্রোটিনসহ আরো অনেক পুষ্টিকর উপাদান। ঘোল যেমন শরীরকে ঠান্ডা করে তেমনি শরীরে অনেক উপকার এনে দেয়। ঘোল শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করার সাথে সাথে শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে। ঘোল শরীরে বিভিন্ন উপায়ে উপকার এনে দেয়।

ঘোল শরীরের কি কি উপকার এনে দেয় এ সম্পর্কে অনেকেরই অজানা। ঘোল সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য আপনাদের সামনে আলোকপাত করার চেষ্টা করব। আপনি যদি ঘোলের উপকারিতা সম্পর্কে না জেনে থাকেন তাহলে অবশ্যই জেনে নেবেন।

ঘোল খাওয়ার উপকারিতা

ঘোল শরীরের জন্য অনেক উপকারী। শরীরকে ঠান্ডা রাখতে হলে গরমে ঘোল খাওয়া আমাদের প্রত্যেকেরই প্রয়োজন। তাহলে চলুন ল খেলে আর কি কি উপকার পাওয়া যায়-জেনে নেয়া যাক-

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ ঘোল শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করে। যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত ঘোল খেতে পারেন। তাহলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করবে।

এসিডিটি কমায়ঃ অনেকের সমস্যা এত পরিমাণ যে, যেকোন খাবার খাওয়ার সাথে সাথে এসিডিটির সমস্যা তৈরি হয়ে যায়। এই অ্যাসিডিটির সমস্যা দূর করতে চাইলে খাওয়ার পরে নিয়মিত ঘোল খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। তাহলে এসিডিটিতে ভালো উপকার পাওয়া যাবে।

হজম শক্তি বৃদ্ধি করেঃ ঘোলে রয়েছে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া ও ল্যাকটিড অ্যাসিড যা হজম শক্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ঘোল হচ্ছে দই জাতীয় খাবার যা হজমে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। ঘোল শরীর ঠান্ডা রাখে বলে এটি শরীরে তাপমাত্রা কমাতে সহায়তা করে। পুদিনা পাতার সমৃদ্ধ ঘোল খেলে পেট পরিষ্কার করে। নিয়মিত যদি ঘোল খেতে পারেন তাহলে পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর হবে এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে।

পানির শূন্যতা দূর করেঃ দই ও পানি মিশিয়ে ঘোল তৈরি করা হয় বলে এটি খেলে শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়। এটি পটাশিয়ামের মতো ইলেকট্রোলাইট ও ৯০% পানি সমৃদ্ধ। যা দেহের আদ্রতা বাড়াতে সাহায্য করে। আপনি যদি গরমের হাত থেকে বাঁচতে চান এবং শরীর ঠান্ডা রাখতে চান তাহলে ঘোলের মধ্যে পুদিনা পাতা মিশে খান।

শরীরের বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়ঃ ঘোলে রয়েছে রিভোফ্লাভিন যা খাদ্যকে ভেঙে শক্তি জোগাতে সহায়তা করে। ঘোলে উপস্থিত থাকা রিভোফ্লাভিন হজম সহায়ক হরমোন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। যার ফলে যকৃতের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরের বিষাক্ত পদার্থ অপসারণ করতে সাহায্য করে।

ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ ঘোল ওজন কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কারণ এতে রয়েছে ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম এবং আরো অন্যান্য খনিজ উপাদান। এতে ক্যালরির পরিমাণও রয়েছে অনেক কম। আপনি যদি শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে চান তাহলে অবশ্যই খাবারের আগে বা পরে নিয়মিত ঘোল খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করতে পারেন। এটি সুস্থতার সাথে ওজন কমাতে সাহায্য করবে।

দুধের বিকল্প হিসেবেঃ অনেকের দুধ খেলে বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হয় যেমন এলার্জি, ঠান্ডা, গ্যাস্টিকের সমস্যা ইত্যাদি। সেজন্য দুধের বিকল্প হিসেবে খেতে পারেন ঘোল। এটি যেমন শরীরকে ঠান্ডা রাখবে তেমনি শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখবে।

ত্বকের জন্য উপকারীঃ ঘোল শুধুমাত্র শরীরের জন্য উপকারী তা নয় বরং এটি ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে ত্বক সুন্দর করতে সাহায্য করে ঘোল। সুন্দর ও সুস্থ্য ত্বক গড়ে তুলতে সাহায্য করবে ঘোল।

দাঁত ও হাড়ের জন্য উপকারীঃ ঘোলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম যা হাড়ের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি হাড়ের সুস্থতা বজায় রাখে এবং হাড় ক্ষয় রোধ করে। এছাড়াও এটি দাঁতের জন্য অত্যন্ত উপকারী। প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকার কারণে এটি দাঁতের মাড়িশক্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ঘোলের পুষ্টিগুণ

ঘোল পুষ্টি উৎপাদনে ভরপুর। ২৫৪ মিলিগ্রাম ঘোলে থাকে ৮ গ্রাম পরিমাণ প্রোটিন, ৩ গ্রাম চর্বি ৯৮ কিলো ক্যালরি, ০ আঁশ এবং ১২ গ্রাম ক্যালোরি। এছাড়াও ঘোলের মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম. পটাশিয়াম. ফসফরাস. ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, প্রোবায়োটিক্স এবং কার্বোহাইড্রেট। ঘোলে থাকা প্রোটিন পেশি গঠনে, ত্বকের সুস্থতায় এবং হাড় মজবুত করতে সহায়তা করে।

ঘোল তৈরি করার নিয়ম

বাড়িতে বসে ঘোল তৈরি করা যায়। কিভাবে তৈরি করা যায় এ নিয়ম আপনাদের সামনে তুলে ধরবো। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক-

প্রয়োজনীয় উপকরণ

  • দুই কাপ দুই
  • চার কাপ পানি
  • সরিষা বীজ এক চা চামচ
  • কারি পাতা ১০ থেকে ১২টি
  • অথবা পুদিনা পাতা ১০ থেকে ১২ টি
  • ২ থেকে ৩টা কাঁচামরিচ কুচি
  • একটা চামচ আদা কুচি এবং
  • স্বাদমতো লবণ

প্রস্তুত প্রণালী

প্রথমে দুই কাপ দইয়ের সাথে চার কাপ পানি ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এরপর সরিষা ভেজে নিন সাথে পুদিনা পাতা বা কারিপাতা কাঁচামরিচ কুচি. আদা কুচি ইত্যাদি ভালোভাবে সরিষার সাথে মিশিয়ে ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ড কাপে রেখে দিন। এরপর এগুলোকে ভালো করে ধুয়ে পানির মিশ্রণের সাথে মিশিয়ে পরিমাণ মতো লবণ যোগ করলে তৈরি হয়ে যাবে সুস্বাদু ঘোল।

ঘোল খাওয়ার নিয়ম

ঘোল খাবার খাওয়ার পূর্বে এবং পরে দুই সময়ে খাওয়া যায়। তবে এটি খাবারের সাথে খাওয়া যেতে পারে। এটি যেভাবেই খান না কেন সেভাবেই ভালো উপকারিতা পাবেন। কারণ ঘোলে রয়েছে নানা ধরনের উপকারিতা। এটি শরীর ও পেট ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। এর উপকারিতা পেতে হলে অবশ্যই নিয়মিত খাওয়া উচিত। তীব্র গরমে ঘোল শরীরকে আরো আরামদায়ক করে। কারণ এটি শরীরের পানি শূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে।

ঘোল খেলে কি ওজন বাড়ে

ঘোল খেলে ওজন বাড়ে কিনা এ সম্পর্কে অনেকের প্রশ্ন করে। ঘোল খেলে ওজন বৃদ্ধি পায় না বরং ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করে। যারা ওজন কমানোর জন্য ডায়েট করছেন তারা খাবারের তালিকায় অনেক সময় ঘোল রাখেন। কারণ ঘোল খেলে শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমে, ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করে।


তবে ওজন কমানোর জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ খাওয়া উচিত। অতিরিক্ত পরিমাণ ঘোল খেলে শরীরের অন্যান্য সমস্যা তৈরি হতে পারে।

ঘোল খাওয়া সতর্কতা

ঘোলে রয়েছে নানা ধরনের উপকারী উপাদান। যা শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কিন্তু ঘোল সকল ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসম্মত বা উপকারী নাও হতে পারে। ঘোল ত্বক শুষ্ক করে তোলে। সে জন্য যাদের সমস্যা রয়েছে বিশেষ করে এক্সিমা রয়েছে তাদের ঘোল খাওয়া উচিত নয়। কারণ ঘোল খেলে এ সমস্যা আরো বাড়িয়ে দিতে পারে।

এছাড়া প্রয়োজনের অতিরিক্ত ঘোল খাওয়া কখনো স্বাস্থ্যসম্মত নয়। পরিমাণমতো ঘোল খেলে শরীরের সুস্থতা বজায় থাকবে। কিন্তু প্রয়োজনের অতিরিক্ত ঘোল খেলে শরীরকে বিপদের দিকে ঠেলে দিতে পারে।

লেখক এর মন্তব্য

ঘোল শরীরকে ঠান্ডা করতে কার্যকরী। যারা এর উপকারিতা সম্পর্কে জানে তারা সবাই ঘোল খেয়ে থাকেন। এটি শরীরকে বিভিন্নভাবে প্রশান্তি এনে দেয়। এসব উপকারিতা যদি আপনি পেতে চান তাহলে অবশ্যই নিয়মিত ঘোল খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করুন। নিয়মিত ঘোল খেলে শরীরের অনেক সমস্যা দূর হবে সেই সাথে শরীরকে সুস্থ বা শান্ত করতে সাহায্য করবে।

প্রিয় পাঠক. এই আর্টিকেলটি যদি আমরা ভালো লাগে এবং তাহলে তাহলে আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব এবং পরিবারের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url