দুধ দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায় - ত্বকের যত্নে দুধের দুধের সরের উপকারিতা

আপনি কি দুধ দিয়ে কিভাবে ফর্সা হওয়া যায় সেই উপায় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনাকে এ বিষয়ে জানতে সাহায্য করবে। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে দুধ দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায় এবং ত্বকের যত্নে দুধের সরের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে গেলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগসহকারে পড়ুন।
দুধ দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়
এই আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন দুধের সরে কি ভিটামিন রয়েছে এ সম্পর্কে। তাহলে দুধ ও দুধের সর সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য জানতে পারবেন এই আর্টিকেলের মাধ্যমে।

ভূমিকা

দুধ একটি আদর্শ খাদ্য। যার স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে জানেনা এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। দুধ শুধুমাত্র স্বাস্থ্যের জন্য উপকারিতা না বরং এটি ত্বকের জন্যও অত্যন্ত কার্যকরী। প্রাচীনকাল থেকেই রূপচর্চায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে দুধ। রূপচর্চায় কাঁচা দুধ ব্যবহার করার প্রধান কারণ হচ্ছে দুধের মধ্যে থাকা উপাদানগুলো।
এই উপাদানগুলো ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ত্বককে মসৃণ ও লাবণ্যময় করে তুলতে দুধে রয়েছে অন্যান্য ক্ষমতা। আপনি যদি নিয়মিত কাঁচা দুধ বিভিন্ন উপাদানের সাথে ব্যবহার করে থাকে তাহলে আপনার ত্বককে খুবই তাড়াতাড়ি জৌলুস ফিরিয়ে দিবে। দুধ হচ্ছে প্রাকৃতিক উপাদান যা ব্যবহারের কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে না।

ত্বকের যত্নে দুধের উপকারিতা সম্পর্কে যারা জানের না তারা অবশ্যই জেনে নেবে। এছাড়াও দুধের সাথে অন্যান্য উপাদান মিশিয়ে তৈরি করা হয় বিভিন্ন ধরনের প্যাক। এ প্যাকগুলো ব্যবহারের কারণে দ্রুত উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। আমরা এখানে দুধের সাথে অন্যান্য উপাদান মিশিয়ে কি কি প্যাক তৈরি করা যায় সে নিয়ে আপনাদের সামনে আলোচনা করব।

দুধ দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়

দুধ ব্যবহার করে কিভাবে ফর্সা হওয়া যায় তা আপনাদের সামনে তুলে ধরব। তাহলে চলুন দুধ দিয়ে ফর্সা হওয়ার কয়েকটি উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক-

কাঁচা দুধ মুলতানি মাটি ও বেসনঃ কাঁচা দুধের সাথে মুলতানি মাটি ও বেসন একসাথে মিশে প্যাক তৈরি করে মুখে ব্যবহার করলে দ্রুত ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। এটি ত্বকের জন্য অনেক বেশি উপকারী। দুধে রয়েছে ল্যাকটিক এসিড যা প্রাকৃতিক ব্লিচের কাজ করে থাকে। যার ফলে ত্বকের রং হালকা হয় এবং সুন্দর রং ধারণ করে। আপনার ত্বক যদি তৈলাক্ত হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই এই প্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন।

ব্যবহারবিধিঃ কাঁচা দুধের সাথে মুলতানি মাটি ও বেসন দিয়ে ভালোভাবে পেস্ট করতে হবে। তারপর এই পেস্টটি মুখে লাগাতে হবে। ২০ থেকে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে তারপরে পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে।


কাঁচা দুধ ও কলার প্যাকঃ কাঁচা দুধ ও কলার প্যাক মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে এবং ত্বককে মশ্চারাইজ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি ব্যবহারের ফলে ত্বক কোমল ও মসৃণ হয়ে ওঠে।

ব্যবহার বিধিঃ এই প্যাকটি তৈরি করতে প্রথমে অর্ধেক পাকা কলা এবং দুই চা চামচ কাঁচা দুধ। এরপর দুটিকে ভালোভাবে পেস্ট করে নিতে হবে। তারপর এই মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর্যন্ত রেখে দিতে হবে। তারপর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।

কাঁচা দুধ পেঁপে ও মধুর প্যাকঃ এ প্যাকটি ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। বিশেষ করে এটি বয়স্কদের ত্বকের জন্য বেশি কার্যকরী। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে যাদের ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি হয় বা বিভিন্ন ধরনের দাগ ছোপ তৈরি হয় তাদের জন্য এটি ভালো কাজ দিয়ে থাকে।

ব্যবহার বিধিঃ পেঁপের সাথে মিশাতে হবে কাঁচা দুধ ২ চা চামচ, একটা চামচ মধু। এরপর এগুলোকে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর এই পেস্টটি মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। এভাবে নিয়মিত ব্যবহার করলে অনেক সমস্যা দূর হয়ে যাবে

দুধ ও কাঁচা হলুদের প্যাকঃ দুধ ও কাঁচা হলুদ চোখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। এটি ব্যবহারে ত্বকের বিভিন্ন ধরনের দাগ দূর হয়ে যায়। সেজন্য এটি নিয়মিত ব্যবহার করা উচিত।

ব্যবহার বিধিঃ প্রথমে কাঁচা হলুদ ভালো করে পেস্ট করে নিতে হবে তার মধ্যে পরিমাণ মতো কাঁচা দুধ নেশাতে হবে। এরপর এই মিশ্রণটিকে মুখে ভালো করে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে দিতে হবে। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।

দুধ, মধু ও লেবুর রসঃ দুধ, মধু ও লেবুর রস দিয়ে তৈরি করা হয় ত্বকের জন্য উপকারী এই প্যাকটি। দুধ, মধু ও লেবুর রস একসাথে মিশালে ন্যাচারাল ব্লিস এর কাজ করে থাকে। ত্বকের রং দ্রুত উজ্জ্বল করতে চাইলে এই প্যাকটি যথেষ্ট কার্যকরী।

ব্যবহারবিধিঃ প্রথমে পরিমিত পরিমাণ মতো কাঁচা দুধ নিয়ে নিতে হবে এবং তার মধ্যে মধু ও লেবুর রস নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর এটি মুখে ও গলায় ভালোভাবে লাগাতে হবে। ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে এটিকে ধুয়ে ফেলতে হবে।

এই প্যাকগুলো ছাড়াও শুধুমাত্র কাঁচা দুধ দিয়েই ত্বকের পরিচর্যা করা যায়। সেজন্য প্রতিদিন কাঁচা দুধ হাতে নিয়ে মুখে মেখে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে দিতে হবে। তারপর ভালো ভাবে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে ব্যবহার করলেও ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। কারণ দুধে রয়েছে ল্যাকটিড অ্যাসিড যা ত্বকের সুরক্ষায় কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।

ত্বকের যত্নে দুধের সরের উপকারিতা

ত্বকের যত্নে দুধ যেমন উপকারী তেমনি দুধের সর ত্বকের যত্নে অনেক উপকারী। নিয়মিত দুধের সর ত্বকে মাখলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। তাহলে চলুন দুধের সর ব্যবহারে ত্বকের কি কি উপকারিতা পাওয়া যায় জেনে নেওয়া যাক-
  • রোদে পুড়ে যাওয়া ত্বকের জেল্লা ফিরিয়ে আনতে দুধের সর অত্যন্ত কার্যকরী। বিভিন্ন কারণে আমাদের প্রতিনিয়ত ঘরের বাইরে বের হতে হয়। সেজন্য রোদের তাপমাত্রায় ত্বকের রং কালো হয়ে যায় এবং ত্বকের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। এই হারানো সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে চাইলে দুধের সর এবং বেসন একসাথে মিশিয়ে ব্যবহার করতে হবে। তাহলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
  • দুধের সর ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দুধের সর হচ্ছে প্রাকৃতিক ময়শ্চারাইজার যা ত্বকের হারিয়ে যাওয়া আদ্রতা ধরে রাখতে সক্ষম। এছাড়াও এটি স্কিন সেলের জন্য অনেক উপকারী। ত্বকের সেলের ক্ষতি হওয়া থেকে রক্ষা করে দুধের সর।
  • দুধের সর ত্বককে নরম ও তুলতুলে করতে সাহায্য করে। সেজন্য দুধের সাথে হলুদের গুড়া ভালোভাবে পেস্ট করে নিয়ে মুখে লাগাতে হবে। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে ত্বক নরম ও তুলতুলে হয়ে ওঠে।
  • দুধের সর ত্বকের যত্নে স্ক্রাব হিসেবে ব্যবহার করা যায়। প্রতিনিয়ত আমাদের ত্বকের উপর মৃতকোষ জমতে থাকে যে কারণে ত্বকের সৌন্দর্য ও জেল্লা কমে যেতে থাকে। ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে হলে সেই মৃত কোষগুলোকে দূর করতে হয়। দুধের সর ব্যবহারের মাধ্যমে তা করা সম্ভব।
  • ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে দুধের সর। অনেকের অল্প বয়সে ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ পড়ে যায় যা সৌন্দর্যে পরিপন্থী। দুধের সর ব্যবহার করলে অল্প বয়সে ত্বকের বার্ধক্যের ছাপ দেবে না অপরদিকে ত্বকের সৌন্দর্য ধরে রাখতে সাহায্য করবে।
  • দুধের সর নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বকের বিভিন্ন দাগ দূর হবে সেই সাথে ত্বকের উজ্জ্বলতা দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাবে। এটি ব্যবহারের ফলে ত্বকের কোন ক্ষতি হয় না বরং অনেক উপকার হচ্ছে। দুধের সর প্রাকৃতিক উপাদান যার কোন পার্শ্ববর্তী কেউ থাকেনা।

দুধের সরে কি ভিটামিন আছে

দুধের সর প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ ও ভিটামিনে ভরপুর। যেমন প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি-২, অ্যামিনো অ্যাসিডসহ আরো অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদান। দুধের সরে যে সকল পুষ্টি উপাদান থাকে তা শরীরের জন্য যেমন উপকারি তেমনি ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। দুধের সর পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে এটি নিয়মিত ত্বকে মাখলে ত্বকের বিভিন্ন ধরনের উপকার সাধিত হয়।

লেখক এর মন্তব্য

দুধ ও দুধের সর উভয় ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। তবে কিছু কিছু সংবেদনশীল ত্বকের জন্য এগুলো অতিরিক্ত ব্যবহার না করাই ভালো। পরিমিত পরিমাণ ব্যবহার করলে ত্বকের জন্য অনেক উপকার পাওয়া যাবে বিধায় অতিরিক্ত ব্যবহার করার ফলে ত্বকের অন্যান্য সমস্যা হতে পারে।


প্রিয় পাঠক, এ আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব এবং পরিবার-পরিজনের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url