ঘরোয়া উপায়ে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা যায় কিভাবে - প্রেগন্যান্সি টেস্ট করার সঠিক সময়

প্রিয় পাঠক, আপনি কি ঘরোয়া উপায় প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা যায় কিভাবে এ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আর্টিকেলটি আপনাকে এ বিষয়ে জানতে সাহায্য করবে। এ আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমরা আপনাকে ঘরোয়া উপায়ে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করার নিয়ম এবং প্রেগন্যান্সি টেস্ট করার সঠিক সময় সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ঘরোয়া উপায়ে প্রেগনেন্সি টেস্ট
এই আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেনগর্ভবতী হওয়ার ১ম সপ্তাহের লক্ষণ, গর্ভাবস্থায় বিপদ চিহ্নগুলো কি কি, প্রেগন্যান্সি কতদিন পর বুঝা যায় ইত্যাদি।

ভূমিকা

পিরিয়ড পার হতে না হতে বিভিন্ন ধরনের দুশ্চিন্তা আমাদের মাথার মধ্যে বাসা বাঁধে। যে চিন্তা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খায় সেটি হচ্ছে মা হওয়া। সন্তান সম্ভবা কিনা এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য সবাই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়। আবার বিভিন্ন ফার্মেসিতে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করার কিট পাওয়া যায় তার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় যে তিনি প্রেগন্যান্ট কিনা।


ঘরোয়া উপায়ে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা যায়। কিন্তু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করেও যে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা যায় এ বিষয়ে অনেকেই জানেন না। আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে ঘরোয়া পদ্ধতিতে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করার কয়েকটি উপায় আপনাদের সামনে তুলে ধরব। এগুলো উপায় প্রয়োগ করে আপনি প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হতে পারবেন যে আপনি প্রেগন্যান্ট কিনা।

বিশেষ করে এ উপাগুলো আপনাকে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত করতে সাহায্য করবে। মা হওয়া সবার কাছে আনন্দের। তবে বর্তমান সময়ের বিভিন্ন কারণে অনেক মহিলার গর্ভে সন্তান ধারণ সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ করে তাদের জন্য গর্ভবতী নিশ্চিত হওয়া বেশি উদ্যোগের।

ঘরোয়া উপায়ে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করবেন কিভাবে

কয়েকটি প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে ঘরোয়া উপায়ে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা যায়। সেই উপায়গুলো আপনাদের সামনে আলোকপাত করবো। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক-

টুথপেস্টঃ টুথপেস্ট ব্যবহার করে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা যায়। একটি বাটিতে টুথপেস্ট এবং পরিমাণ মতো প্রস্রাব মিশাতে হবে। টুথপেস্ট এর রং যদি নীল রং হয় তাহলে বুঝতে হবে আপনি গর্ভবতী।

ব্লিচঃ ব্লিচ ব্যবহার করে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা যায় সেজন্য প্রস্রাবের সাথে ব্লিচ মিশাতে হবে। যদি প্রস্রাবটি ফেনা হতে শুরু করে তাহলে বুঝবেন আপনি মা হতে চলেছেন।

ভিনেগারঃ প্রস্রাবের সাথে ভিনেগার মিশিয়েও গর্ভবতী কিনা নিশ্চিত হওয়া যায়। সেজন্য প্রস্রাব ও ভিনেগার একসাথে মিশাতে হবে। যদি দেখেন মিশ্রণটির রং পরিবর্তন হয়েছে এবং বুদবুদ তৈরি হচ্ছে তাহলে বুঝবেন আপনি প্রেগন্যান্ট।

চিনিঃ চিনি দিয়েও গর্ভবতী কিনা তা পরীক্ষা করা যায়। চিনি দিয়ে পরীক্ষা করতে হলে প্রসবের মধ্যে কয়েকটি চিনি দিতে হবে। চিনি যদি গলে না যায় তাহলে বুঝতে হবে আপনি গর্ভবতী।

লবণঃ লবণ ব্যবহার করে ঘরোয়া উপায়ে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা যায়। একটি পাত্রে কয়েক ফোঁটা প্রসব নিতে হবে তার মধ্যে এক চিমটি পরিমাণ লবণ নিতে হবে। মিশ্রনের যদি কোন পরিবর্তন ঘটে বা বুদবুদ তৈরি হয় তাহলে বুঝবেন আপনি মা হতে চলেছেন। আর কোন পরিবর্তন না হলে আপনার রিপোর্ট নেগেটিভ।

সরিষার গুঁড়াঃ উষ্ণ গরম পানির সাথে সরিষার গুড়া মিশিয়ে ২০ থেকে ৩০ শরীর ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর ফলাফলের জন্য তিন থেকে চার দিন অপেক্ষা করতে হবে। সরিষার গুড়া হালকা গরম পানি মাসিক চক্রের প্রবাহের সহায়তা করে। এই উপায় অবলম্বন করে দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে যদি মাসিক হয়ে যায় তাহলে বুঝবেন আপনি গর্ভবতী না আর যদি না হয় তাহলে বুঝবেন আপনি গর্ভবতী।

শ্যাম্পুঃ সাবান বা শ্যাম্পু ব্যবহার করে ঘরে বসেই প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা যায়। সেজন্য একটি পাত্রে শ্যাম্পু বা সাবান মিশ্রিত পানি এবং প্রস্রাব মিশাতে হবে। এ মিশ্রণটি যদি ফেঁপে উঠে বা বুদবুদ তৈরি হয় তাহলে বুঝবেন আপনি গর্ভবতী।

গম ও বার্লি দিয়েঃ গম ও বার্লি বীজ দিয়ে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা যায়। একটি বাটিতে গম বা বার্লির বীজ নিতে হবে তার মধ্যে সকালে ওঠার পর প্রথম প্রস্রাব বীজের মধ্যে দিয়ে দিতে হবে। এরপর তিন থেকে চারদিন অপেক্ষা করতে হবে। তিন থেকে চারদিন পর যদি দেখেন বীজ অঙ্কিত হয়েছে তাহলে বুঝে নিবেন আপনি প্রেগনেন্ট।

বেকিং সোডাঃ সকালে প্রথম হওয়া প্রস্রাব ধরে নিতে হবে তার মধ্যে বেকিং সোডা মেশাতে হবে যদি দেখেন মিশ্রণটি পরিবর্তন হচ্ছে বা বুদবুদ তৈরি হচ্ছে বা ফেঁপে উঠছে তাহলে বুঝবেন আপনি গর্ভবতী।

এ উপাদানগুলো দিয়ে প্রাথমিকভাবে ঘরোয়া উপায়ে নিশ্চিত হওয়া যায়। পরবর্তী সময়ে অবশ্যই কিট ব্যবহার করে পরীক্ষা করে নেবেন বা চিকিৎসকের কাছে গিয়ে নিশ্চিত হয়ে নিবেন।

প্রেগন্যান্সি টেস্ট করার সঠিক সময়

প্রেগন্যান্সি টেস্ট করার একটি নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। সে সময়ের পূর্বে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করলে সঠিক ফলাফল নাও পেতে পারেন। প্রেগন্যান্সি টেস্ট করার সঠিক সময় হচ্ছে পিরিয়ডের সম্ভাব্য তারিখ পার হয়ে গেলে বা জন্মনিয়ন্ত্রণ পীল, কনডম, জন্মনিয়ন্ত্রণ ইঞ্জেকশন ইত্যাদি ছাড়া স্বামী সাথে মিলন করলে এই টেস্ট করতে পারেন।


সে ক্ষেত্রে গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে। সন্তান সম্ভবা কিনা তা মহিলাদের প্রস্রাবের একটি হরমোন এর উপস্থিতির মাধ্যমে নির্ণয় করা হয়। প্রথম দিকে হরমোনের পরিমাণ কম থাকে এবং পরবর্তীতে এটি বেড়ে যায়। সেজন্য প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে হলে পিরিয়ডের সম্ভাব্য ডেটের কিছুদিন পর করায় সবচেয়ে ভালো।

প্রেগন্যান্সি কতদিন পর বুঝা যায়

প্রেগন্যান্সি ঠিক কতদিন পর বুঝা যায় এ সম্পর্কে অনেকে প্রশ্ন করে থাকে। পিরিয়ডের পরবর্তী ডেটের পর থেকে ১০ দিনের মধ্যে পরীক্ষা করলে বুঝা যায়। এক্ষেত্রে সব ধরনের মহিলাদের ফলাফল তাড়াতাড়ি পাওয়া যাবে। যাদের পিরিয়ডের সমস্যা নেই বা নির্দিষ্ট ডেটে শুরু হয় তাদের ক্ষেত্রে পরবর্তী ডেটে পরিক্ষা করলে বা দু একদিনের মধ্যে পরীক্ষা করলে বোঝা যায়।


আর যাদের পিরিয়ডের সমস্যা রয়েছে তারা পিরিয়ডের সম্ভাব্য ডেটের আট থেকে দশ দিন পর করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। তবে পিরিয়ডের সম্ভাব্য ডেটের ৮ থেকে ১০ দিন বা ১৫ দিন পর পরীক্ষা করলে ভালোভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়।

গর্ভবতী হওয়ার ১ম সপ্তাহের লক্ষণ

গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহে মধ্যে কিছু কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। তাহলে চলুন লক্ষণগুলো জেনে নেওয়া যাক-
  • চরম ক্লান্তি বোধ অনুভূত হওয়া বা ঘুম হওয়া।
  • স্তন নরম হয়ে যাওয়া।
  • এসিডিটি পরিমাণ বেড়ে যাওয়া।
  • খাবারে অরুচি হওয়া।
  • ক্ষুধা ক্ষুধা ভাব বেড়ে যাওয়া।
  • বমি বমি ভাব হওয়া বা বমি হওয়া।
  • মেজাজের অনেক পরিবর্তন হওয়া।
  • মাথা ঘুরা বা মাথাব্যথা হওয়া।
  • ঘন ঘন প্রস্রাব করা।
  • কিছু খাবারের প্রতি অপছন্দ তৈরি হওয়া বা গন্ধ সহ্য করতে না পারা।
  • কিছু খাবারের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়।

গর্ভাবস্থায় বিপদ চিহ্নগুলো কি কি

গর্ভাবস্থায় কি কি বিপদ চিহ্ন সম্পর্কে প্রত্যেকেরই জানা অতি জরুরী। এ বিষয়ে সম্পর্কে জানা থাকলে লক্ষণগুলি দেখা মাত্রই সতর্কতা বা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া যাবে। তাহলে চলুন গর্ভাবস্থায় বিপন চিহ্নগুলো কি কি জেনে নেওয়া যাক-
  • প্রথম তিন মাসের মধ্যে বা দ্বিতীয় তিন মাসের মধ্যে পেট ব্যথা বা রক্তচাপ দেখা দিলে এটি হচ্ছে গর্ভবতী মহিলাদের অন্যতম বিপদ চিহ্ন।
  • গর্ভাবস্থায় প্রচন্ড পরিমাণে মাথাব্যথা বা চোখে ঝাপসা দেখলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। কারণ এটিও বিপদ চিহ্নগুলোর মধ্যে একটি।
  • গর্ভাবস্থায় প্রচন্ড জ্বর হলে বা এই জ্বর তিন দিনের বেশি থাকলে গর্ভবতী মহিলাদের সমস্যা হতে পারে। গর্ব অবস্থায় ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর উপরে তাপমাত্রা উঠে গেলে সেটিকে বিপদ চিহ্নর মধ্যে ধরা হয়।
  • ডেলিভারি ডেটের আগেই পানি ভাঙ্গা শুরু হলো গর্ভবতী মায়েদের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বিশেষ করে গর্ভে থাকা বাচ্চার।
  • গর্ভে থাকা বাচ্চা কম নড়াচড়া করা বা একেবারে নড়াচড়া বন্ধ করা এক ধরনের সমস্যা।
এ সমস্যাগুলো দেখা দিলে অবশ্যই নিকটস্থ চিকিৎসকের কাছে পরামর্শ নিবেন। এই লক্ষণগুলো গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খুবই বিপদজনক হতে পারে।

লেখকের মন্তব্য

গর্ভবতী হওয়া বা মা হওয়া মহিলাদের সবচেয়ে আনন্দের একটি মুহূর্ত। এই আনন্দের মুহূর্তকে আরো আনন্দময় করতে অবশ্যই সচেতন থাকা জরুরী। গর্ভবতী মহিলাদের জন্য বাড়তি যত্নের প্রয়োজন হয়। সেজন্য পরিবারকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব এবং পরিবার পরিজনের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url