মিলিবাগ পোকা দূর করার ঘরোয়া উপায় - মিলিবাগ পোকা দূর করার কীটনাশক

প্রিয় পাঠক, আপনি কি মিলিবাগ পোকা দমন করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনাকে সাহায্য করবে। এ আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে মিলিবাগ পোকা দমন করার ঘরোয়া উপায় এবং মিলিবাগ পোকা দমন করার কীটনাশক ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
মিলিবাগ পোকা দূর করার ঘরোয়া উপায়
আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন মিলিবাগ পোকার পরিচয় এবং মিলিবাগ পোকা কিভাবে দমন করা যায়।

ভূমিকা

গাছে সাদা এক ধরনের পোকা দেখা যায়। সেই পোকার নাম মিলিবাগ। এই পোকাটি গাছের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। এই পোকা যে গাছে লাগে সেই গাছ একেবারে নষ্ট করে দেয় এবং মেরে ফেলে। এই পোকা যে গাছে লাগে সেই গাছে আবার পিপড়ার উৎপাত বেড়ে যায়। কারণ এই পোকা থেকে মিষ্টি এক ধরনের রস নির্গত হয়। যে কারণে পিঁপড়াও সেই গাছে চলে আসে।


এ পিঁপড়ার মাধ্যমে একটি গাছের মিলিবাগ পোকা অন্য গাছে ছড়িয়ে দেয়। সেজন্য মিলিবাগ পোকা কোন গাছে দেখলে সেটি দমন করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়ে। কীটনাশক ব্যবহার করার ফলে এই পোকা দমন করা যায়। কিন্তু ঘরোয়া উপায়েও এ পোকা দমন করা সম্ভব। ঘরে থাকা কিছু উপাদান রয়েছে যেগুলো ব্যবহার করে খুব সহজেই দমন করা যায়।

মিলিবাগ পোকার পরিচয়

মিলিবাগ পোকাটি হচ্ছে আফ্রিকান। এই পোকাটি বিভিন্ন গাছে আক্রমণ করে। যে গাছে আক্রমণ করে সেই গাছ একেবারে নষ্ট করে দেয়। প্রচুর পরিমাণে পানি ব্যবহার করলে এই পোকার উপদ্রপ কমানো যায়। এই পোকাটি ফসল ও গাছপালার জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। মানুষের জন্যও এটি কিছুটা ক্ষতিকর বটে। এই পোকাটি মানুষের সংস্পর্শে আসলে চুলকানি এলার্জি এবং শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।

মিলিবাগ পোকা দমন করার ঘরোয়া উপায়

বাগান করা যাদের নেশা তাদের জন্য এই আর্টিকেলটি। কারণ বাগান করলে বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগাতে হয় এবং সেখানে বিভিন্ন ধরনের পোকা আক্রমণ করে। এ পোকা বলে দমন করার কয়েকটি উপায় জানা অত্যন্ত জরুরী। আমরা এখানে মিলিবাগ নামক এক প্রকার পোকা দমন করা উপায় সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব।


এই পোকাটি গাছের অনেক ক্ষতি করে। এই পোকা দূর না করলে গাছ মারা যায়। তাহলে চলুন এই পোকা দমন করার কয়েকটি ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-
  • প্রথমে নিয়ে নিতে হবে এক মুঠো ভাত এবং হাফ লিটার পরিমাণ পানি। সেগুলো একসাথে মিশিয়ে কাছ থেকে সাত দিন পচানোর জন্য রেখে দিতে হবে। পচানো হয়ে গেলে সেটি থেকে নিতে হবে। ভাত পচা এই পানিতে অ্যালকোহল তৈরি হয়। এরপর এই পানির সাথে চার ফোটা শ্যাম্পু নিয়ে নিতে হবে। তারপর এই পানিটিকে ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে নিতে হবে এবং যেখানে মিলিবাগ পোকা আক্রমণ করেছে সেখানে স্প্রে করে দিয়ে দিতে হবে।
  • শুধুমাত্র শ্যাম্পু দিয়ে এই পোকা দমন করা যায়। সে ক্ষেত্রে ৫০০ গ্রাম পানির সাথে এক প্যাকেট শ্যাম্পু ভালোভাবে গুলিয়ে নিতে হবে। তারপর পানির সাথে সেই শ্যাম্পু ভালোভাবে মিশে গেলে মিশ্রণটি একটি বোতলে ঢেলে নিতে হবে। তারপর মিলিবাগ পোকায় আক্রান্ত গাছটিতে প্রয়োগ করতে হবে। যেখানে এই পোকা বেশি আক্রমণ করেছে সেখান থেকে স্প্রে করা শুরু করতে হবে। এই মিশ্রণটি দিয়ে স্প্রে করলে মিলিবাগ পোকা অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে মারা যাবে এবং গাছ থেকে ঝরে পড়ে যাবে।
  • মিলিবাগ পোকা দমন করার জন্য ঘরোয়া এই উপায়টি অবলম্বন করতে পারেন। সেজন্য ১ লিটার পানিতে এক টাকা পাতার এক প্যাকেট শ্যাম্পু মিশাতে হবে এবং তার সাথে হাফ চামচ ডিটারজেন্ট অথবা হাফ চামচ হ্যান্ডওয়াশ এবং তার সাথে এক চামচ পরিমাণ হলুদ গুঁড়ো। এই তিনটি উপাদান একসাথে নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে মিলিবাগ পোকা আক্রান্ত হওয়ার স্থানে স্প্রে করতে হবে। বেশি পোকা দেখা দিলে তিনদিন পর পর এটি ব্যবহার করতে পারেন। তবে এক সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করা সবচেয়ে উত্তম।
  • মরিচের গুঁড়া ব্যবহার করেও মিলিবাগ পোকা দমন করা যায়। ২ টেবিল চামচ মরিচের গুড়া ৩ লিটার পানির সাথে ভালোভাবে মেশাতে হবে এবং তার সাথে কয়েক ফোঁটা শ্যাম্পু বা সাবানের পানি মিশাতে হবে। তারপর এটি মিলিবাগ আক্রান্ত স্থানে লাগালে মিলিবাগ ধ্বংস হয়ে যাবে।
  • বাড়িতে থাকা রসুন পোকা দমন করা যায়। পুরনো রসুন এক্ষেত্রে বেশ কার্যকরী। রসুনের ঝাঁঝালো গন্ধ পোকামাকড় সহ্য করতে পারেনা। রসুন ভালোভাবে বেটে মিলিবাগ আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে দিলে দ্রুত পালাবে।
  • নিম তেল পোকামাকড় দমনে অন্যতম একটি উপাদান। এটি এন্টিসেপ্টিক হিসেবেও কাজ করে থাকে। নিম তেল পানির সাথে মিশিয়ে মিলিবাগ আক্রান্ত স্থান স্প্রে করলে অল্প সময়ের মধ্যে পোকা দমন হয়ে যায়৷ এছাড়াও ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া দমনেও নিম তেলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

মিলিবাগ পোকা দমনে কীটনাশক

কম পরিমাণ মিলিবাগ পোকা আক্রমণ করলে সেটি ঘরোয়া উপায়ে দমন করা সম্ভব হয়। কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণ মিলিবাগ পোকা আক্রমণ করলে তা ঘরোয়া উপায়ে দমন করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। এজন্য এই পোকা দমন করতে ব্যবহার করতে হয় কীটনাশকের। কীটনাশক আবার সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে। সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারলে মিলিবাগ পোকা দমন করা সম্ভব নয়।

প্রথমে ক্লোরাপাইরিস (ডারসবান ২০ ইসি) বা এ জাতীয় কীটনাশক প্রতি লিটার পরিমাণ পানিতে তিন এমএল করে মিশাতে হবে। তারপর এটিকে গাছে স্প্রে করতে হবে। এ জাতীয় কীটনাশক ব্যবহারের তিন থেকে চারদিন পর কারবারাইল (সেভিন৮৫ এসপি) এ জাতীয় কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২ এমএল পরিমান মিশাতে হবে।

এই কীটনাশকটি ১৫ দিন পর পর ব্যবহার করতে হবে। এ জাতীয় কীটনাশক ব্যবহার করলে মিলিবাগ পোকা খুব তাড়াতাড়ি দূর হয়ে যাবে এবং গাছ সবুজ ও সতেজ হয়ে উঠবে।

মিলিবাগ পোকা কিভাবে দমন করা যায়

মিলিবাগ পোকা ঘরোয়া উপায়ে বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করে দূর করা যায়। মিলিবাগ পোকা যখন গাছে কেবল আক্রান্ত করে বা কম পরিমাণ আক্রান্ত করেছে সে সময় এই উপায়ের ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। মিলিবাগ পোকা দ্বারা গাছ অল্প পরিমাণ আক্রান্ত হলে তা দূর করা অতি সহজ। সে ক্ষেত্রে ঘরোয় উপয়ের যেকোনো একটি উপাদান ব্যবহার করতে পারেন।


কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণ মিলিবাগ পোকা গাছে আক্রমণ করলে ঘরোয়া টোটকায় ভালো ফল পাওয়া যায় না। সেজন্য কীটনাশক এর ওপর নির্ভরশীল হতে হয়। ভালো মানের কীটনাশক ব্যবহার করলে একবারেই এই বোকা দমন হয়ে যায়। মিলিবাগ পোকা আক্রান্ত পাতা বা ডাল কেটে ফেলেও এই পোকা দমন করা যায়।

মিলিবাগ পোকার ডিম মাটিতে সুপ্ত অবস্থায় থাকে। তারপর ডিম ফুটে এই পোকা বিভিন্ন গাছের ছড়িয়ে দেয়।

লেখক এর মন্তব্য

মিলিবাগ পোকা দ্বারা গাছ আক্রান্ত ভুল হলে অল্পতেই ঘরোয়া টোটকা ব্যবহার করে দূর করতে হবে। এতে করে কীটনাশক ব্যবহার করার প্রয়োজন হবে না। সেজন্য আপনার শখের বাগানের কোনো গাছে যদি দেখেন এই পোকা আক্রমণ করেছে সেখানে সাথে সাথেই এই উপায়গুলো অবলম্বন করবেন।

প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধু বান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url