গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা ও গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার নিয়ম

প্রিয় পাঠক, আপনি কি গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনাকে জানতে সাহায্য করবে। এই আর্টিকেলেরএর মাধ্যমে আমরা আপনাকে গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা ও গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা
এ আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন কলা খাওয়ার উপকারিতা, রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা, সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতা এবং কলা খাওয়ার অপকারিতা।

ভূমিকা

কলা খুবই অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং উপকারী একটি ফল। এই ফলটির জনপ্রিয়তা গোটা বিশ্ব জুড়ে। কলা উষ্ণ জলবায়ুপূর্ণ স্থানে বেশি জন্মে থাকে। এটি বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় অন্যতম প্রধান ফল হিসেবে বিবেচিত। এই কলায় রয়েছে পুষ্টিগুণ যা মানব শরীরের বিভিন্ন সমস্যার মোকাবেলা করতে সাহায্য করে।


শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবাই এই ফল খেতে পারবেন। এমনকি গর্ভাবস্থায় এই ফল খাওয়া অত্যন্ত উপকারী। গর্ভকালীন সময়ে নিয়মিত কলা খেলে যেমন অনেক সমস্যা সমাধান হয় তেমনি গর্ভে থাকা শিশুরও অনেক উন্নতি সাধিত হয়। গর্ভকালীন সময়ে ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়া অত্যন্ত জরুরী।


কলাতে থাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার সেজন্য চিকিৎসকরা এই সময় কলা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে। এছাড়াও কলা সাধারণ মানুষের জন্য অনেক উপকার বয়ে আনে।

কলা খাওয়ার উপকারিতা

কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ যা শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। তাহলে চলুন কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-

ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। কলা খাওয়ার পর ক্ষুধার অনুভূতি কম হয়। যার ফলে খাওয়ার প্রয়োজন হয় না। সেজন্য নিয়মিত কলা খেলে ওজন কমাতে সাহায্য করবে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের রাতে সহায়তা করে। নিয়মিত কলা খেলে রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকবে।

রক্তশূন্যতা দূর করেঃ কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন যা রক্তের হিমোগ্লোবিন বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রক্তের হিমোগ্লোবিন কমে গেলে রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া রোগ হয়। রক্তশূন্যতা দূর করতে প্রতিদিন অন্তত দুটি করে কলা খাওয়া প্রয়োজন। কারণ কলা রক্তের লোহিত কণিকা তৈরি করতে সহায়তা করে।

হজম ক্ষমতার বৃদ্ধি করেঃ কলা পরিপাকের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। নিয়মিত কলা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ডায়রিয়াকালীন সময়ে শরীর থেকে যেসব খনিজ পদার্থ বের হয়ে যায় তা পূরণ করতে সাহায্য করে কলা।

মানসিক চাপ কমায়ঃ কলাতে রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে ট্রিপ্টোফ্যান। যা সেরোটোনিন হরমোন তৈরি করতে সাহায্য করে। এই হরমোনের কারণে মানসিক চাপ অনেক কমে যায়। এছাড়াও কলাতে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম যা ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে। মন ভালো রাখতে ও ভালো ঘুম হতে ম্যাগনেসিয়ামের গুরুত্ব অপরিসীম।

ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করেঃ কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন যা ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করে শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। শরীর সুস্থ রাখার জন্য চিকিৎসকরা প্রতিদিন কলা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

দুর্বলতা দূর করেঃ শারীরিক দুর্বলতা দূর করে শরীরকে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে কলা। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যে পরিমাণ পুষ্টির প্রয়োজন হয় তার পাঁচ ভাগের একভাগ পূরণ হয়ে থাকে কলা খাওয়ার মাধ্যমে। তাহলে বুঝতেই পারছেন কলাতে কত গুনাগুণ রয়েছে।

গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভকালীন সময়ে এমন কিছু খাবার বা ফল খাওয়া উচিত যেগুলো শরীরের জন্য ভালো ফলাফল এনে দিবে। সেরকম একটি ফল হচ্ছে কলা। এটি পুষ্টিগুণে ভরপুর। কলা খেলে গর্ভবতী মায়েদের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করে গর্ভের বাচ্চার সুস্থতা নিশ্চিত করবে। তাহলে চলুন গর্ভাবস্থায় কলা খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায় জেনে নেওয়া যাক-
  • মর্নিংসিকনেস দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে বলা। ঘুম থেকে ওঠার পর অনেকের শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। এসব সমস্যা থেকে দূরে থাকতে হলে জানতে হবে কার্যকরী উপায়। কার্যকরী উপায় গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে নিয়মিত কলা খাওয়া।
  • নিয়মিত কলা খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। গর্ভকালীন সময়ে অনেক গর্ভবতী মায়েদের রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে না। কলা রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন।
  • রক্তশূন্যতা দূর করতে খুবই কার্যকরী কলা। গর্ভবতী মায়েদের রক্তস্বল্পতার সমস্যা প্রায় দেখা যায়। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে প্রতিদিন অন্তত একটি বা দুটি করে কলা খাওয়া খুবই প্রয়োজন।
  • কলা শুধুমাত্র গর্ভবতী মায়েদের জন্য উপকারী তা না বরং এটি গর্ভে থাকা বাচ্চার জন্যও অত্যন্ত উপকারী। কলা শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
  • গর্ভকালীন সময়ে অনেক মহিলাদের বুক জ্বালাপোড়া সমস্যা দেখা দেয়। নিয়মিত কলা খেলে বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
  • কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন। যা গর্ভাবস্থায় ভিটামিন ও পুষ্টির চাহিদা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। সেই সাথে গর্ভে থাকা বাচ্চারও পরিপূর্ণ পুষ্টি প্রদান করতে সহায়তা করে।

গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার নিয়ম

প্রতিটি খাবারের একটি নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। যে নিয়মানুসারে খেলে তার পরিপূর্ণ পুষ্টি লাভ করা যায়। কলা খাওয়ার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোন ধরা বাধা নিয়ম নেই। কলা যে কোনভাবে খেতে পারে গর্ভাবস্থায়। দিনে কতগুলো কলা খাওয়া যাবে এরকম কোন নিয়মও নেই। তবে চিকিৎসকরা প্রতিদিন দুটি থেকে তিনটি কলা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে।

এ পরিমাণ কলা খাওয়ার মাধ্যমে শরীরে যথাযথভাবে পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে। তবে গর্ভকালীন সময়ে প্রচুর পরিমাণে অন্যান্য ফল ও সবজি খাওয়া বিশেষ প্রয়োজন হয়ে থাকে।

রাতে কলা খাওয়া যাবে কি

কলা এমন একটি ফল যেটা যেকোনো সময় খাওয়া যেতে পারে। আমরা ছোটবেলা থেকেই রাতে ফল খাওয়া উচিত নয় এরকম চিন্তা ধারণা নিয়ে বড় হয়েছি। কিন্তু রাতে ফল খাওয়া বা কলা খাওয়া যাবে কিনা এ বিষয়ে সঠিক তথ্য জেনে নেওয়া যাক। কলাতে অনেকের সর্দি-কাশির সমস্যা দেখা দেয় সেজন্য যাদের এই সমস্যা রয়েছে তাদের রাতে কলা খাওয়ার নিষেধ করে।


এছাড়াও যাদের এলার্জি রয়েছে তাদের ক্ষেত্রেও রাতে কলা খাওয়া উচিত নয়। ফাইবার থাকায় এটি খাওয়ার পর সহজে হজম হয়। সেজন্য দিনের বেলা কলা খাওয়া সবচেয়ে উত্তম।

সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতা

কলা অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি ফল। কলা সকালে খেলে নানা ধরনের উপকারিতা পাওয়া যায়। সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতাগুলো তাহলে জেনে নেওয়া যাক-
  • সকালে কলা খেলে শরীরে দ্রুত গতিতে শক্তি তৈরি হয়। কলাতে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট যা শরীরে শক্তি জোগাতে সহায়তা করে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সকালে কলা খাওয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। কলার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে।
  • সকালে কলা খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তাদের সকলের কলা খাওয়ার সবচেয়ে উত্তম।
  • কলার মধ্যে রয়েছে টিপ্টোফ্যান নামক এমিনো অ্যাসিড যা ঘুমের হরমোন মেলাটোনিন তৈরি করতে সহায়তা করে। যার ফলে সকালে কলা খেলে ঘুম ভালো হয় এবং ক্লান্তি ও অবসাদ দূর হয়ে যায়।
  • কলার মধ্যে রয়েছে ভিটামিন বি সিক্স ও ম্যাগনেসিয়াম। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেজন্য প্রতিদিন সকালে কলা খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি হয় এবং শরীরকে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে।

কলা খাওয়ার অপকারিতা

কলা খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে সেই সাথে কিছু অপকারিতাও রয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কলা খেলে সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাহলে চলুন কলা খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-
  • কলা রাতে খাওয়া উচিত নয়। রাতে কলা খেলে অনেক সমস্যা তৈরি হতে পারে।
  • যদি ঠান্ডা লাগার সমস্যা থাকে তাহলে কলা খাওয়া উচিত নয়। তাহলে এ সমস্যা আরো বেড়ে যেতে পারে।
  • অতিরিক্ত কলা খাওয়া উচিত নয়। কলা খেলে যেমন ওজন কমে তেমনি অতিরিক্ত কলা খাওয়ার ফলে ওজন বেড়ে যেতে পারে।
  • কলাতে কার্বোহাইড্রেট রয়েছে যে কারণে বেশি কলা খেলে দাঁতের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • এছাড়াও খালি পেটে কলা খাওয়া উচিত নয়। খালি পেটে কলা খেলে এসিডিটির সমস্যা তৈরি হতে পারে।

লেখকের মন্তব্য

উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে কলা খাওয়ার গুনাগুণ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেয়েছে। তাহলে যেভাবে কলা খেলে এবং যে পরিমাণ খেলে উপকারিতা পাওয়া যাবে সে পরিমাণ কলা নিয়মিত খাওয়া উচিৎ। তাহলে দেখবেন শরীরের অনেক কিছুই পরিবর্তন সাধিত হবে। প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধু বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url