কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতি কি ও কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, আপনি কি কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতি কি এবং এর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনাকে জানতে সাহায্য করবে। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে কিন্ডারগার্ডেন শিক্ষা পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতি
এই আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন কিন্ডারগার্ডেন শিক্ষা পদ্ধতির সুবিধা এবং কিন্ডারগার্ডেন শিক্ষা পদ্ধতির অসুবিধা সম্পর্কে।

ভূমিকা

বর্তমান সময়ের বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা পদ্ধতি চালু হয়েছে। এই শিক্ষা পদ্ধতিগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে কিন্ডারগার্ডের শিক্ষা পদ্ধতি। কিন্ডারগার্ডেন একটি জার্মান শব্দ যার অর্থ হচ্ছে শিশুর বাগান বা শিশুদের জন্য বাগান। এই পদ্ধতিতে শিশুদের ছোট থেকেই অনেক বিষয় শিক্ষাদান করা হয়ে থাকে। শিক্ষা পদ্ধতি বর্তমান সময়ে অনেক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।


এই শিক্ষা পদ্ধতিতে বিভিন্নভাবে শিশুদের শিক্ষা প্রদান করা হয়। কিন্ডারগার্ডেন শিক্ষা পদ্ধতিতে শিশুদের আগ্রহ এবং স্বাধীনতার মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান করে থাকে বলে শিশুরা অনেক কিছু শিখতে পারে।

কিন্ডারগার্ডেন শিক্ষা পদ্ধতি কি

যে শিক্ষাব্যবস্থায় শিশু কেন্দ্রিক শিক্ষার উপর গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষা প্রদান করা হয়ে থাকে তাকে কিন্ডারগার্ডেন শিক্ষা পদ্ধতি বলা হয়ে থাকে। শিশুর চাহিদা, আগ্রহ এবং প্রবণতা উপর ভিত্তি করে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ফ্রয়েবেল ৪ থেকে ৬ বছর বয়সের শিশুদের জন্য যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয় সে শিক্ষা পদ্ধতিকে কিন্ডারগার্ডেন শিক্ষা পদ্ধতি বলা হয়ে থাকে।


বিশিষ্ট জার্মান শিক্ষাবিদ ফ্রয়েবেল ১৮৩৭ সালে ব্ল্যাংকেন বুর্গ গ্রামে শিশুদের উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করার উদ্দেশ্যে কিন্ডারগার্ডেন স্কুল স্থাপন করে। এই শিখা পদ্ধতি শিশুদের মেধা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিক্ষা ব্যতীত অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে পারদর্শী হয়ে ওঠে। কারণ এখানে বিভিন্ন উপায়ে শিক্ষাদান করা হয়।

কিন্ডারগার্ডেন শিক্ষা পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য

কিন্ডারগার্ডেন শিক্ষা পদ্ধতি কতগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে যেগুলো বিভিন্ন দিক থেকে পরিলক্ষিত হয়। আমরা এখানে কিন্ডারগার্ডেন শিক্ষা পদ্ধতির কয়েকটি বৈশিষ্ট্য আপনাদের সামনে তুলে ধরবো। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক-

শিশু কেন্দ্রিকতাঃ বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা শিশু কেন্দ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা পরিচালিত। শিক্ষা ক্ষেত্রে শিশু কেন্দ্রিকতার উপরে বিশেষভাবে গুরুত্ব আরোপ করা হয়ে থাকে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে শিশুর শিক্ষার প্রতি আগ্রহ, স্বাধীনতা, প্রবণতা ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে শিক্ষা প্রদান করা হয়ে থাকে।

ইন্দ্রের প্রশিক্ষণঃ কিন্ডারগার্ডেন শিক্ষা পদ্ধতি ব্যবস্থায় পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় খেলা ও কাজের মাধ্যমে। এভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বাইরের জগতের বা প্রাকৃতিক পরিবেশের বিভিন্ন জ্ঞান অর্জন করে থাকে। এ বৈশিষ্ট্যের ফলে শিক্ষার্থী একদিকে যেমন শিক্ষা ব্যবস্থায় আনন্দের সাথে গ্রহণ করে অন্যদিকে বাইরের জগত সম্পর্কে অনেক কিছু জ্ঞান লাভ করে।


আত্ম সক্রিয়তা মূলকঃ কিন্ডারগার্ডেন শিক্ষা ব্যবস্থা মূলত আত্ম সক্রিয়তামূলক শিক্ষা পদ্ধতি। এই পদ্ধতির আলোকে শিক্ষার্থী আত্ম সক্রিয়ভাবে শিক্ষা লাভ করে থাকে।

কর্মকেন্দ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থাঃ কিন্ডারগার্ডেন শিক্ষা পদ্ধতি হচ্ছে কর্মকেন্দ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থা। এই শিক্ষা ব্যবস্থায় শিশুদের বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান করার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। যেমন অঙ্কন, হাতের কাজ, বাক্স তৈরি ইত্যাদি। এভাবে শিক্ষা প্রদান করলে একজন শিশু কর্মের দিকেও মনোযোগী হতে পারে।

স্বাধীনতা ও আনন্দঃ স্বাধীনতা ও আনন্দের মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান করা হয় এই শিক্ষা পদ্ধতিতে। যার ফলে শিশু চাহিদা এবং আগ্রহের সাথে এই শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে। কিন্ডারগার্ডেন শিক্ষা পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীর স্বাধীনতা ও আনন্দের দিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়ে থাকে।

সমাজধর্মী শিক্ষা ব্যবস্থাঃ কিন্ডারগার্ডেন শিক্ষা পদ্ধতির উল্লেখযোগ্য আরও একটি বৈশিষ্ট্য হলো সমাজধর্মী শিক্ষা ব্যবস্থা। এই শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের দলগত কাজের মাধ্যমে সহযোগিতার মনোভাব তৈরি করা হয়। এ পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীর মধ্যে সহযোগিতা এবং সহানুভূতিমূলক মনোভাব তৈরি করার মাধ্যমে সামাজিক গুণাবলীর বিকাশ সাধন করা সম্ভব হয়ে থাকে।

আত্ম বিকাশ বৃদ্ধি করাঃ এ পদ্ধতির মাধ্যমে শিশুর আত্ম বিকাশ বৃদ্ধি করা হয়। কারণ এই শিক্ষা পদ্ধতি মূলত শিশুর আত্ম বিকাশ এর উপযোগী শিক্ষা পদ্ধতি। এই শিক্ষা ব্যবস্থায় শিশু তার আত্ম বিকাশের পথের সন্ধান পেয়ে থাকে।

সৃজনধর্মী শিক্ষা পদ্ধতিঃ কিন্ডারগার্ডেন শিক্ষা পদ্ধতি হচ্ছে সৃজনধর্মী শিক্ষা পদ্ধতি যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতার বিকাশ সাধিত হয়।

কিন্ডারগার্ডেন শিক্ষা পদ্ধতির সুবিধা

কিন্ডারগার্ডেন শিক্ষা পদ্ধতির কয়েকটি সুবিধা রয়েছে। যে সুবিধাগুলো শিক্ষার্থীর শিক্ষা গ্রহণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাহলে চলুন কিন্ডারগার্ডেন শিক্ষা পদ্ধতির সুবিধাগুলো জেনে নেওয়া যাক-
  • এ পদ্ধতির শিক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আনন্দের সাথে শিক্ষাদান করা হয়ে থাকে। যে কারণে শিক্ষার্থী ভালোভাবে শিক্ষা অর্জন করে থাকে।
  • শিশুর আগ্রহ ও চাহিদার ভিত্তিতে শিক্ষা দান করা হয়ে থাকে এ পদ্ধতির মাধ্যমে। কোন শিশু কি ধরনের শিক্ষায় আগ্রহ বা চাহিদা রয়েছে সেই দিকগুলোর উপর গুরুত্বারোপ করে শিক্ষা প্রদান করা হয়। যার ফলে শিক্ষার্থী সহজে জ্ঞান লাভ করতে সক্ষম হয়।
  • এ পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে ভালো ফলাফলের জন্য উপবৃত্তি বা উপহারের ব্যবস্থা করে থাকে। যে কারণে শিক্ষার্থী পড়াশুনার প্রতি আরো উৎসাহিত হয়।
  • সামাজিক গুণাবলীর বিকাশ সাধন হয়ে থাকে। একে অপরের প্রতি সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব তৈরি করা হয়। এ শিক্ষা পদ্ধতিতে অন্যের প্রতি সহানুভূতি কিভাবে দেখাতে হয় এ বিষয়ে বেশ গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
  • এ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীকে প্রাকৃতিক পরিবেশে শিক্ষা প্রদান করা হয়ে থাকে। শিক্ষা ব্যবস্থা চার দেওয়ালের মাধ্যমে সীমাবদ্ধ না রেখে বাহিরের বিভিন্ন জ্ঞান সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়ে থাকে।
  • এ শিক্ষা পদ্ধতিতে শিশু আত্মনির্ভরশীল এবং কর্মকেন্দ্রিক করে তুলে। যার ফলে শিশু ছোট থেকেই নিজের প্রতি নির্ভরশীল হতে শিখে এবং তার কর্মের প্রতি গুরুত্ব দিতে শিখে।

কিন্ডারগার্ডেন শিক্ষা পদ্ধতির অসুবিধা

কিন্ডারগার্ডেন শিক্ষা পদ্ধতির যেমন সুবিধা রয়েছে তেমনি এর কিছু অসুবিধাও রয়েছে। তাহলে চলুন এর অসুবিধাগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-
  • এই ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা শিক্ষককে আলাদাভাবে প্রশিক্ষণের দেওয়া হয় না। প্রশিক্ষণ ছাড়া একজন শিক্ষক ভালোভাবে শিক্ষাদান করতে সক্ষম হয় না। প্রশিক্ষণের অভাবে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষা পদ্ধতি অনেক ক্ষেত্রেই ভালোভাবে শিক্ষাদানের ব্যর্থ হয়।
  • এ শিক্ষা ব্যবস্থা উপবৃত্তি এবং উপহারের কথা উল্লেখ থাকলেও তা বাস্তবে প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হয়। এটা হচ্ছে এ শিক্ষা পদ্ধতির অসুবিধা।
  • কিন্ডারগার্ডেন শিক্ষা পদ্ধতি অনান্য শিক্ষা ব্যবস্থার তুলনায় ব্যয়বহুল। যে কারণে সবার পক্ষে এ পদ্ধতিতে শিক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব হয় না।
  • শিক্ষা পদ্ধতিতে আত্মসচেতনামূলক শিক্ষা পদ্ধতির জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রতীক ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যা শিশুদের বিমুর্ত ধারণা গঠনে সঠিক নয়। এটাই , কিন্ডারগার্ডেন শিক্ষা পদ্ধতির সবচেয়ে বড় অসুবিধা।

লেখকের মন্তব্য

কিন্ডারগার্ডেন পদ্ধতি শিক্ষা ব্যবস্থা শিক্ষার্থীর জন্য অসুবিধা তুলনায় সুবিধা বেশি। এই শিক্ষা ব্যবস্থায় শিশুরা ছোট থেকে অনেক কিছু শিখতে পারে। বর্তমান সময়ে এই শিক্ষা ব্যবস্থা সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে। প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধু বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url