চুল পাতলা হয়ে যাওয়ার কারণ ও চুল পাতলা হওয়া রোধ করার উপায়

প্রিয় পাঠক, আপনি কি চুল পাতলা হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনাকে এ বিষয়ে জানতে সাহায্য করবে। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে চুল পাতলা হওয়ার কারণ এবং চুল পাতলা হওয়া রোধ করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
চুল পাতলা হয়ে যাওয়ার কারণ
এ আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন চুল মজবুত করার উপায় এবং চুল মজবুত করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে।

ভূমিকা

সুন্দর এবং ঘন চুল সবাই চায়। তবে বর্তমান সময়ে ঘন চুল তেমন মানুষের মধ্যে দেখা যায় না। চুল পাতলা হয়ে যাওয়া এবং চুল পড়ার সমস্যা প্রায় মানুষের মধ্যে দেখা যায়। অতিরিক্ত চুল ওঠার কারণে চুল পাতলা হয়ে যায় এবং অনেক সময় মাথায় টাক পড়ে। অনেকে মনে করেন চুলের অযত্নের কারণে চুল পড়ে যায়। আসলে বিষয়টা এরকম নয়।


আজত্নের কারণে চুলের অন্যান্য সমস্যা দেখা দিলেও চুল পাতলা হয়ে যাওয়ার সমস্যা কম দেখা যায়। বিভিন্ন কারণে চুল পাতলা হয়ে যেতে পারে। এ সমস্যার সমাধান পেতে হলে জানতে হবে সমস্যার মূল কারণ। শরীরের বিভিন্ন সমস্যার কারণেও অনেক সময় চুল পড়ার সমস্যা দেখা যায়। চুল পড়ার পরিমাণ বেশী হলে তখন চুল এমনি এমনি পাতলা হয়ে যায়।

চুল পাতলা হওয়ার কারণ

চুল পাতলা হওয়ার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। যেগুলো আপনাদের সামনে আলোচনা করা হলো। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক-

মানসিক চাপঃ মানসিক চাপ চুল পড়ার অন্যতম একটি কারণ বলে বিবেচনা করা হয়। অতিরিক্ত মানসিক চাপ হলে তার প্রভাব গোটা শরীরের উপর দেখা যায়। মানসিক চাপ স্নায়ুতন্ত্র এবং পৌষ্টিকতন্ত্রের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই সমস্যার কারণে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয় না এবং পুষ্টির অভাব দেখা যায় যার কারণে চুল পড়া শুরু হয়। আর এই চুল পড়া দীর্ঘদিন ধরে হতে থাকলে চুল পাতলা হয়ে যায়।

খাদ্যাভ্যাসঃ সঠিক খাদ্যাভ্যাস মানুষের শরীরে ভালো প্রভাব ফেলে। খাদ্যাভ্যাস স্বাভাবিক না হলে সে প্রভাব সমস্ত শরীরের উপর পড়ে এমন কি চুলের উপরেও। আমরা অনেক সময় ক্ষুধা মিটানোর জন্য বা মুখরোচক খাবারের খাওয়ার দিকে ঝুকে পরি। কিন্তু কখনো চিন্তা করি না এ সকল খাবারে পুষ্টিগুণ কেমন রয়েছে।

যে সকল ভিটামিনের অভাবে চুল পড়া সমস্যা দেখা দেয় সেগুলো হচ্ছে বায়োডিন, জিঙ্ক এবং ভিটামিন ডি। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এই ভিটামিনযুক্ত খাবার না খাওয়ার ফলে চুল পড়া সমস্যা দেখা দেয়।

বয়স বৃদ্ধিঃ বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের শরীরে নানা ধরনেরপুষ্টির অভাব দেখা যায়। এসব কারণে চুল পড়ার সমস্যা দেখা দেয় এবং চুলের ঘনত্ব অনেক কমে যায়।

খুশকিঃ চুলের গোড়ায় খুশকির সমস্যা দেখা দিলে চুল পড়া শুরু হয়ে যায়। চুলের গোড়ায় যত ময়লা জমে ততই মাথার ত্বকের ক্ষতি হতে থাকে। মাথার ত্বকের ক্ষতি হলে চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে পড়ে এবং চুল পড়ার সমস্যা দেখা দেয়। চুলে খুশকি হওয়ার কারণে চুলের গোড়ায় পুষ্টি সম্পূর্ণভাবে পৌঁছাতে পারেনা।

ভেজাল তেলঃ বাজারে এমন অনেক তেল রয়েছে যেগুলো চুলের জন্য কিছুটা উপকারী। সেই সাথে নানা ধরনের ভেজাল তেল বের হয়েছে যেগুলো চুলের জন্য ক্ষতিকর। এই তেলগুলো ব্যবহারের ফলে চুল পড়া সমস্যা দেখা দেয়।

ভিটামিনের অভাবঃ শরীরে ভিটামিনের অভাব হলে চুল পড়ার সমস্যা দেখা দেয়। চুলের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি ভিটামিন যুক্ত এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার মাধ্যমে সরবরাহ হয়ে থাকে। কিন্তু ভিটামিনযুক্ত খাবার না খেলে শরীরে ভিটামিনের অভাব দেখা দেয় যার ফলে চুল পড়া সমস্যা তৈরি হয়।

প্রাকৃতিক দূষণঃ প্রাকৃতিক দূষণ অনেক সময় চুলের ড্যামেজ এর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিদিন ধুলাবালি বা অন্যান্য প্রাকৃতিক দূষণের কারণে ময়লা চুলের গোড়ায় আটকে যায় যার ফলে চুল পড়া সমস্যা দেখা দেয়। এভাবে চুল পড়তে থাকলে চুল পাতলা হয়ে যায়।

চুল পাতলা হওয়ার রোধ করার উপায়

আজকাল চুল পাতলা হওয়ার সমস্যা কমবেশি সবার রয়েছে। চুল পাতলা হলে চেহারার সৌন্দর্য কমে যায়। আমরা এখানে চুল পাতলা হওয়া থেকে মুক্তি পেতে কয়েকটি উপায় আপনাদের সামনে তুলে ধরবো। তাহলে চলুন চুল পাতলা হওয়ার রোধ করার কয়েকটি উপায় জেনে নেওয়া যাক-
  • সপ্তাহে দুইদিন শ্যাম্পু করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। শ্যাম্পু করার আগে হালকা গরম তেল দিয়ে চুলের গোড়ায় মেসেজ করতে হবে। নারিকেল তেল, অলিভ অয়েল ও অ্যাভোকাডোর মত প্রাকৃতিক তেল চুলের জন্য অত্যন্ত ভালো। এগুলো ব্যবহার করলে চুল পাতলা হয়ে যাওয়া থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
  • চুল পাতলা হওয়া থেকে মুক্তি পেতে ড্রাই মেসেজ করতে পারেন। এটি চুলের জন্য ভালো। সেজন্য প্রথমে চুল সামনের দিকে নিয়ে এসে আঙ্গুলের ডগা দিয়ে চুলের গোড়ায় মেসেজ করতে হবে।
  • চুল পাতলা হওয়ার রোধ করতে হলে ভালো মানের তেল, শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে। যেগুলো শ্যাম্পু ও তেল গুণগতমানের দিক থেকে ভালো সেগুলো ব্যবহার করলে চুলের উপকার পাওয়া যাবে।
  • চুল পাতলা হওয়ার রোধ করতে হলে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। ভিটামিন সি ও প্রোটিনযুক্ত খাদ্য বেশি বেশি খেতে হবে। এছাড়াও ভিটামিন ডি খেতে হবে, ভিটামিন ডি চুলের জন্য ভালো।
  • মাথায় খুশকি দেখা দিলে যে কোন উপায়ে তা নির্মূল করতে হবে। কেননা খুশকির কারণে মাথার চুল পড়ে চুল পাতলা হয়ে যায়।

চুল মজবুত করার উপায়

চুল পড়া কমাতে বা সুন্দর চুল তৈরি করতে চুলের গোড়া মজবুত করা অত্যন্ত প্রয়োজন। কি কি উপায়ে ফুল মজবুত করা যায় সে বিষয়ে আপনাদের সামনে তুলে ধরবো। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক-
  • চুল মজবুত করতে হলে চুলের প্রতি বাড়তি মনোযোগ দেওয়া খুবই জরুরী।
  • চুল আঁচড়ানোর সময় প্রশস্ত দাঁতওয়ালা চিরুনি ব্যবহার করতে হবে।
  • রোদে গেলে চুল ঢেকে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
  • ভিটামিন যুক্ত খাবার খেতে হবে।
  • সুন্দর ও মজবুত চুল পেতে হলে সঠিক শ্যাম্পু এবং তেল নির্বাচন করতে হবে।
  • যে তেল ব্যবহারে চুলের ক্ষতি হবে সেই তেল ব্যবহার বিরত থাকতে হবে।
  • মানসিক চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে। কারণ দুশ্চিন্তা বিভিন্ন রোগের কারণ সেই সাথে চুলের জন্যও ক্ষতিকর। পুষ্টিকর খাবার খাওয়া সত্বেও মানসিক চাপের কারণে চুলের অনেক ক্ষতি হয়।

চুল মজবুত রাখতে ঘরোয়া উপায়

ঘরোয়া উপায়ে চুল মজবুত করা যায়। এক্ষেত্রে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করতে হবে। তাহলে চলুন কিভাবে ঘরোয়া উপায়ে চুল মজবুত করা যায় জেনে নেওয়া যাক-

আমলকিঃ আমলকিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং এমাইনো এসিড। সেজন্য আমলকি চুল মজবুত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমলকির গুড়া ও মেথি ভেজানো পানি একসাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে চুলের গোড়া মজবুত হয়।

লেবুঃ লেবু ভিটামিন সি যুক্ত ফল। সেজন্য লেবু চুলের জন্য খুবই উপকারী। লেবুর রস তুলের গোড়ায় ভালোভাবে মাখিয়ে ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেললে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। লেবুর রস চুলের গোড়া মজবুত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।


পেঁয়াজের রসঃ পেঁয়াজের রস ব্যবহার করলে চুল ভালো হয়। পেঁয়াজের রস চুল মজবুত করে এবং চুল পড়া কমায় ও নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। কারণ পেঁয়াজের রসে রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান এবং সালফারের উপস্থিতি যা মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দেয়।

মেথির গুড়াঃ মেথির গুড়া চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি ব্যবহারের ফলে চুল নরম ও ঝলমলে হয়ে ওঠে। মেথির গুড়া চুলের গোড়া মজবুত করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

লেখক এর মন্তব্য

উপরের আলোচনার মাধ্যমে আপনারা চুল পাতলা হওয়ার কারণ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেয়েছেন। চুল পড়া বন্ধ করলে চুল পাতলা হওয়ার সমস্যা দূর হয়ে যাবে। সেজন্য আপনাকে প্রথমে চুল পড়া কমাতে হবে। প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধু বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url