শিশুদের জন্য সবচেয়ে বেশি ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার ও ক্যালসিয়ামের ওষুধ খেলে কি ওজন বাড়ে

প্রিয় পাঠক, আপনি কি শিশুদের জন্য সবচেয়ে বেশি ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনাকে এ বিষয়ে জানতে সাহায্য করবে। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে শিশুদের জন্য সবচেয়ে বেশি ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার এবং ক্যালসিয়ামের ওষুধ খেলে ওজন বাড়ে কিনা এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করবেন। এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
শিশুদের জন্য সবচেয়ে বেশি ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার
আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন ক্যালসিয়াম ঘাটতির লক্ষণ, ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দিলে কি খাওয়া উচিত, ক্যালসিয়ামের ঘাটতি কেন দেখা দেয় ইত্যাদি।

ভূমিকা

শিশুদের হাড় ও পেশী শক্তিশালী গঠন এবং সুখী ও সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার জন্য নিখুঁত ভিত্তি স্থাপন করতে পারে ক্যালসিয়াম। সেজন্য প্রতিদিন খাবারের তালিকায় ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার রাখা অতিব জরুরী। যে সকল বাবা-মা সচেতন তারা শিশুর ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করার জন্য সর্বদা ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খাওয়াতে থাকে।


ক্যালসিয়াম শিশুর হাড় মজবুত এবং দাঁতের বৃদ্ধি ও বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ক্যালসিয়াম শিশুর পেশির ক্রিয়া-কলাপকে প্রভাবিত করে সেই সাথে হৃদয়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে। এছাড়াও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেলে শিশুদের রিকেট নামক রোগ থেকে মুক্ত থাকে।


একটি শিশু সুস্থ্যতার জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ৬০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা উচিত। যা আধা গ্লাস দুধের সমপরিমাণ। আমরা সবাই জানি দুধে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে। তবে দুধ সহ আর কোন খাবারে ক্যালসিয়াম রয়েছে সে সম্পর্কে আপনাদের সামনে আলোকপাত করবো।

সবচেয়ে বেশি ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার

কোন কোন খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম রয়েছে তা আমাদের জানা অত্যন্ত প্রয়োজন। কারণ একটি শিশুর বাড়ন্ত বয়সে পেশির গঠন এবং হাড় মজবুত করে গড়ে তোলার জন্য ক্যালসিয়াম সরবরাহের প্রয়োজন হয়। তাহলে চলুন কোন খাবারে সবচেয়ে বেশি ক্যালসিয়াম রয়েছে সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-

দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারঃ দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে যা দেহ দ্বারা সহজে শোষিত হয়ে থাকে। ক্যালসিয়াম ছাড়াও দুধে আরও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান আছে যেমন পটাশিয়াম, প্রোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি এবং ভিটামিন বি টুয়েলভ। একটি শিশুকে নিয়মিত দুধ এবং দুগ্ধজাত খাবার খাওয়ালে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ হয় সেই সাথে শারীরিক সুস্থতা বজায় থাকে। যার ফলে যে কোন রোগ সহজে কাছে ঘেষতে পারে না।

সবুজ শাকসবজিঃ সবুজ শাকসবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম যেমন সরিষা শাক, বিট শাক, মটরশুটি, ইত্যাদি। এগুলো শাকসবজিতে ক্যালসিয়াম ছাড়াও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার আইরন ভিটামিন এ ভিটামিন সি এবং ফলের। শিশুদের নিয়মিত সবুজ শাকসবজি খাওয়ানোর অভ্যাস তৈরি করলে শারীরিক সুস্থতা বজায় থাকবে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাবৃদ্ধি পাবে।

সয়াবিনঃ সয়াবিনযুক্ত খাবার যেমন ছয়মিল টফু এবং সয়াবিনের পিসগুলিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। এগুলোতে উচ্চমাত্রায় প্রোটিন থাকে এবং দুধের সমান ক্যালসিয়াম থাকে সয়া মিলকে। এগুলো শিশুদের খাওয়ালে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ হবে।

মাছঃ রুই মাছ, ইলিশ মাছ এবং আহি মাছ কে ক্যালসিয়ামের গুরুত্বপূর্ণ উৎস বলা হয়। এসব মাছ প্রোটিন, ওমেগা সিক্স, ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি ক্যালসিয়ামের পরিমাণও প্রচুর থাকে। এসব মাছের হাড়ের মধ্যেও ক্যালসিয়াম থাকার কারণে সহজে হজম করা সম্ভব হয়। এসব মাছের হাড়গুলি ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

সেজন্য শিশুদের নিয়মিত মাছ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে যাতে করে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন আরো পুষ্টি উপাদান ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়।

ছোলাঃ ছোলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম। ছোলাকে ক্যালসিয়ামের গুরুত্বপূর্ণ উৎস বলা হয়ে থাকে। ক্যালসিয়াম ছাড়াও ছোলাতে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন ই, ভিটামিন সি, ফাইবার ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, ফোলেট ইত্যাদি। যেকোনো উপায়ে শিশুদের ছোলা খাওয়ালে প্রয়োজনীয় ভিটামিনগুলো ঘাটতি পড়েনা শিশুর শরীরে।

বাদামঃ আমরা সবাই জানি বাদাম ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস। ১০০ গ্রাম বাদামে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ রয়েছে ২২৮ মিলিগ্রাম। এছাড়াও বাদামে রয়েছে অন্যান্য পুষ্টি উপাদান যেমন ভিটামিন ই, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফাইবার। সেজন্য প্রতিদিন শিশুকে কয়েকটি করে বাদাম খাওয়ানোর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

বিন্স এবং গুটি জাতীয় খাবারঃ বিন জাতীয় খাবার যেমন রাজমা, সবুজ ছোলা এবং ব্ল্যাক বিন্স ইত্যাদি এগুলোতে প্রোটিন, ফাইবার ভিটামিন এবং মিনারেল এর সাথে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। বিন ভেজে বা ভাপা বা সেদ্ধ অবস্থায় খাওয়া যায়। ডাল এবং তরকারিতে এগুলো খাওয়ার প্রচলন রয়েছে।

ফলঃ বিভিন্ন ধরনের ফলমূলের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। শুকনো ডুমুর ও ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস। একটি শিশুর সুস্থতার জন্য প্রতিদিন ফল খাওয়ানো উচিত। বিশেষ করে দেশী ফল। অন্যান্য ফলের চেয়ে দেশি ফলে পুষ্টিগুণের পরিমাণ রয়েছে অনেক কম।

কোন মাছে ক্যালসিয়াম বেশি

প্রায় সব মাছেই ক্যালসিয়াম রয়েছে। তবে কিছু কিছু মাছে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বেশি রয়েছে। ক্যালসিয়ামে ভরপুর মাছের মধ্যে উল্লেখযোগ্য রুই মাছ, কাতল মাছ, শিং মাছ, ইলিশ মাছ, টুনা মাছ, স্যালমন এবং সার্ডিন মাছ ইত্যাদি। এছাড়াও আরো অনেক মাছ রয়েছে যেগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।


যেমন শ্রীমান, মাগুর, চিংড়ি ইত্যাদি। তবে সব ধরনের মাছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে না। ক্যালসিয়ামযুক্ত মাছ খেলে শরীরের ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়। সেজন্য খাবারের তালিকায় ক্যালসিয়ামযুক্ত মাছ রাখা অতি প্রয়োজন।

ক্যালসিয়াম ঘাটটির লক্ষণ

ক্যালসিয়াম শরীরের জন্য অতি প্রয়োজন। শরীরে প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দিলে যে সব লক্ষণ দেখা যায় সেগুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করব। তাহলে চলুন তা জেনে নেওয়া যাক-
  • ক্যালসিয়াম ঘাটতি হলে হাড়ের ঘনত্ব কমে যেতে পারে।
  • হাতে ও পায়ে অসাড়তা দেখা যায়।
  • শারীরিক দুর্বলতা দেখা যায়।
  • সারাদিন কাজ করার সামর্থ্য থাকে না এবং অল্প কাজে শরীর ক্লান্ত হয়ে যায়।
  • ক্যালসিয়ামের ঘাটতির ফলে পেশীতে ব্যথা ও খিচুনি শুরু হয়।
  • হাটাহাটির সময় হাটুতে ব্যথা অনুভব হয়।
  • হাত পা এবং বাহুতে অসারতা অনুভব হয়।
  • ক্যালসিয়ামের সমস্যা দেখা দিলে অনেক সময় ঘুমের সমস্যাও তৈরি হয়।
  • মাড়ির ক্ষয় ও দাঁতের সমস্যা দেখা দেয় ক্যালসিয়ামের অভাবে।
  • ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দিলে পেশি স্বাভাবিক অবস্থায় থাকতে পারে না।
  • উপরের লক্ষণগুলো দেখা দিলে অবশ্যই আপনার নিকটস্থ চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

ক্যালসিয়ামের অভাব হলে কি খাওয়া উচিত

বর্তমান সময়ে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি প্রায় মানুষের মধ্যে দেখা যায়। ক্যালসিয়াম ঘাটতির মূল কারণ হচ্ছে ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার না খাওয়া। আবার অনেকে জানে না কোন কোন খাবারে ক্যালসিয়াম রয়েছে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দিলে প্রথমত ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন। যেসব খাবারে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে সেগুলো খাবার নিয়মিত খাওয়া।

কেননা খাবার খাওয়ার মাধ্যমে একমাত্র ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ হবে। আবার অনেক সময় খাবার খাওয়ার পরেও ক্যালসিয়ামের ঘাটতি সম্পূর্ণভাবে পূরণ হয় না সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মেডিসিন গ্রহণ করা। তবে যেকোন মেডিসিন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে গ্রহণ করা উচিত। শরীরের বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হয় ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দিলে।

সেজন্য ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হওয়ার পূর্ব থেকে ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার গ্রহণ করা আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত।

ক্যালসিয়ামের ঘাটতি কেন হয়

ক্যালসিয়ামের ঘাটতির মূল কারণ হচ্ছে ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার না খাওয়া। শিশু থেকে বয়স্ক পর্যন্ত ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খাওয়া প্রত্যেকেরই প্রয়োজন। ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার গ্রহণ না করলে শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি ফলে তৈরি হয় বিভিন্ন সমস্যা। এ সমস্যা যেমন বড়দের হয় তেমনি শিশুদেরও হয়ে থাকে। পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খেলে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পরে না।

ক্যালসিয়ামের ওষুধ খেলে কি ওজন বাড়ে

ক্যালসিয়ামের ওষুধ নিয়ে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন রকম প্রশ্ন থাকে। এগুলোর মধ্যে যে প্রশ্ন প্রায় দেখা যায় সেটি হচ্ছে ক্যালসিয়ামের ওষুধ খেলে ওজন বাড়ে কিনা। ক্যালসিয়ামের ওষুধ খেলে ওজন বাড়ে এরকম কোন ভিত্তি বা সত্যতা পাওয়া যায়নি। ক্যালসিয়ামের ওষুধ শুধুমাত্র ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণের জন্য চিকিৎসকরা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

ক্যালসিয়ামের ওষুধ খাওয়ার সাথে ওজনের কোন সম্পর্ক নেই। ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খাওয়ার পরেও যখন ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দেয় সে ক্ষেত্রে ক্যালসিয়াম ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে। এই ওষুধ শরীরের ক্যালসিয়াম সরবরাহ করে থাকে।

লেখক এর মন্তব্য

ক্যালসিয়াম ঘাটতি সমস্যা যে কোন মানুষের হতে পারে। সেজন্য প্রতিদিন খাবারের তালিকায় ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার রাখুন। নিজে সচেতন হন এবং অন্যকে সচেতন হতে সাহায্য করুন। কারণ শরীরে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম না থাকলে নানা ধরনের সমস্যায় পড়ে যেতে পারেন। প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url