ব্যথার ওষুধ খেলে যেসব ক্ষতি হতে পারে - শরীরের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়

প্রিয় পাঠক, আপনি কি ব্যথার ওষুধ খেলে কি ক্ষতি হতে পারে এ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে এই আর্টিকেলটি আমাকে জানতে সাহায্য করবে। এর মাধ্যমে আমরা আপনাকে ব্যথার ওষুধ খেলে কি ক্ষতি হয় এবং শরীরের ব্যথা দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ব্যথার ওষুধ খেলে যেসব ক্ষতি হতে পারে
এ আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হলে করণীয়, শরীরের ব্যথা কমানোর খাবার ও বাতের ব্যথা দূর করার ঘরোয়া উপায়।

ভূমিকা

শরীরের যে কোন অংশে ব্যথা হওয়ার সাথে সাথে আমরা ব্যথার ওষুধ খেয়ে থাকি। এই ওষুধ সাময়িকভাবে কোন ক্ষতি না করলেও পরবর্তীতে শরীরের বড় ধরণের ক্ষতি হতে পারে। বিশেষ করে দীর্ঘদিন এই ব্যাথা নাশক ওষুধ সেবন করলে শরীরের অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমন অনেকে রয়েছেন যারা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই শরীরে ব্যথা হলে ব্যথার ওষুধ কিনে খেয়ে ফেলে।


আমাদের জানতে হবে যে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ সেবন করা উচিত নয়। কিছু কিছু রোগ রয়েছে যেগুলোর কারণে প্রায় প্রতিদিনই ব্যথার ওষুধ খেতে হয়। দীর্ঘদিন ব্যাথা নাশক ওষুধ খাওয়ার ফলে শরীরের অন্যান্য সমস্যাও শুরু হয়। শরীরকে সুস্থ রাখতে হলে ব্যথা নাশক ওষুধ সেবন না করে কিভাবে ব্যথা কমানো যায় সে সম্পর্কে পরামর্শ নেওয়া উচিত।

ব্যাথা নাশক ওষুধ খেলে যেসব ক্ষতি হয়

পরিমাণমতো বা অল্প সময়ের জন্য বেদনাশক ওষুধ খেলে তেমন কোন ক্ষতি হয় না। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবৎ ব্যাথা নাশক ওষুধ সেবন করলে শরীরের অনেক ক্ষতি হয় যেমন কিডনি লিভারসহ পাকস্থলীরও নানা ক্ষতি হতে পারে। এগুলো দেখা দিলে শরীরের কিছু কিছু উপসর্গ দেখা দেয় রক্ত বমি, পায়খানার রাস্তা দিয়ে রক্ত যাওয়া, প্রচন্ড পেট ব্যথা, প্রস্রাব কমে যাওয়া বা বন্ধ হওয়া, চোখ ও মুখ ফুলে যাওয়া, চোখের নিচে পানি জমা ইত্যাদি।


ব্যাথা নাশক ওষুধ সেবন করা শরীরের দিয়ে মারাত্মক ক্ষতি হয় তা পরবর্তীতে সুস্থতার হার অনেক ক্ষেত্রে কমে যায়। দীর্ঘ দিন ব্যথার ওষুধ খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে যা পরবর্তীতে অনেক বড় আকার ধারণ করে। ব্যাথা নাশক ওষুধে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যেগুলোর কারণে হরমোনের সমস্যাও তৈরি হয়।

ব্যথা দূর করার অন্যান্য উপায়

দীর্ঘদিন ব্যাথা নাশক ওষুধ খেলে শরীরের বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হয়। সেজন্য ব্যাথা নাশক ওষুধ সেবন না করে কিভাবে ব্যথা দূর করা যায় সে সম্পর্কে শরণাপন্ন হওয়া অত্যন্ত জরুরী। কিছু কিছু রোগী রয়েছে তাদের প্রতিদিনই ব্যথা হয় যেমন বাতের রোগী। এসব রোগীদের সম্পূর্ণভাবে ব্যথা নাশক ওষুধের উপর নির্ভরশীল হতে হয়। একদিন ওষুধ খাওয়া বাদ দিলে কোন ভাবে চলাফেরা করতে পারে না।


এসব রোগীদের বাধ্যতামূলকই ব্যথার ওষুধ খেতে হয়। কিন্তু ব্যাথা নাশক ওষুধ ছাড়াও অনেক উপায় রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে ব্যথা দূর করা সম্ভব হয়। সেগুলো উপায়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হচ্ছে ফিজিওথেরাপি। ফিজিওথেরাপীর মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা কমানো সম্ভব হয়।

শরীরের ব্যথা দূর করার ঘরোয়া উপায়

বহু যুগ আগে মানুষের ব্যথা দূর করার জন্য কোন ওষুধ ছিল না। শুধুমাত্র প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে ঘরোয়া উপায়ে ব্যথা দূর করার চেষ্টা করত। ঘরোয়া উপায়ে অনেক ক্ষেত্রে ব্যথা সহজেই দূর হয়ে যায়। আমরা এখানে ওষুধ ছাড়া ঘরোয়া উপায় কিভাবে ব্যথা দূর করা যায় সে বিষয়ে আপনাদের সামনে আলোকপাত করব। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক-

রোজমেরি তেলঃ রোজমেরি তেল ব্যথা উপশম এ অনেকটা কার্যকরী। গবেষকদের মতানুসারে রোজমেরি তেল হাড়ের ব্যথা মাথা ব্যথা বেশি ব্যথা এবং খিচুনি উপশম করতে অত্যন্ত কার্যকরী। এই তেল স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে এই তেল সরাসরি ব্যবহার না করে অলিভ অয়েলের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করার কথা বলে থাকেন। এতে ভালো উপকার পাওয়া যায়।

হলুদঃ ব্যথা উপশমে প্রাচীনকাল থেকে হলুদের ব্যবহার হয়ে আসছে। হলুদে থাকা কারকিউমিন উপাদান ব্যথা অবসময় অত্যন্ত কার্যকরী। ব্যথা উপশমে হলুদের ব্যবহার আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বেশি উল্লেখ করা হয়েছে।

আদাঃ হলুদের মত আদাও ব্যথা উপশম করতে অত্যন্ত কার্যকরী। আদা খেলে মাংস পেশীর ব্যথা দূর হয়ে যায়। আদা দিয়ে ব্যাথা দূর করতে হলে আপনাকে একটানা পাঁচ দিন দুই গ্রাম করে আদা খেতে হবে। আদা ব্যাথার ওষুধ হিসেবে অনেক কার্যকরী।

যৌগ চর্চাঃ যৌগ চর্চার মাধ্যমে অনেক সময় ব্যথা উপশম করা সম্ভব হয়। প্রাকৃতিক উপায়ে ব্যথা নিরাময় করতে খুবই উৎকৃষ্ট একটি প্রন্থা।

সরিষার তেলঃ ব্যাথার স্থানে সরিষার তেল মালিশ করলে ব্যথা অনেক ক্ষেত্রেই উপশম হয়ে যায়। প্রাচীনকালে মানুষ ব্যথা উপশম করার ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় সরিষার তেল ব্যবহার করত। এই সরিষার তেলে রয়েছে নানা ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা যা শরীরের অনেক উপকার করে থাকে।

ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হলে করণীয়

ওষুধ চিকিৎসার সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। ওষুধ বাজারে আসার পূর্বে অনেক ধাপ অতিক্রম করতে হয়। এসব ধাপ অতিক্রমের সময় ওষুধের যেসব পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ধরা পড়ে তার পরিমাণ অনেক কম। প্রত্যেকটি ওষুধের অসংখ্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে যার বেশিরভাগই অজানা। সেজন্য বিশ্বের প্রায় দেশেই ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া চিহ্নিত করার দায়িত্ব নিয়ে থাকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া চিহ্নিত করার জন্য রিপোর্ট ফরম। কোন ওষুধ সেবনের ফলে যদি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই রিপোর্ট করতে হবে। ওষুধের গুণগত মান বা মেয়াদ উত্তীর্ণ এবং ব্যবহারের নির্দেশনা অনুসরণ করতে সমস্যা হলে রিপোর্ট করতে হবে। এ রিপোর্টটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে ইয়েলো কার্ড বা রিপোর্ট ফরম ডাউনলোড করে পূরণ করার পরপরই মেইল করতে হবে।

ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট করা প্রযোজ্য। তবে খেয়াল রাখতে হবে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার দেখানোর পর বেশি দেরি যেন না হয় বিশেষ করে এক মাসের বেশি হওয়া যাবে না। যদি মারাত্মক আকার ধারণ করে থাকে তাহলে যত দ্রুত সম্ভব রিপোর্ট করা উচিত। সচেতন নাগরিক হিসেবে প্রত্যেক মানুষেরই ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে রিপোর্ট করা প্রয়োজন কারণ এ থেকে বোঝা যায় কি কারণে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে।

শরীরের ব্যথা কমানোর খাবার

ব্যথা কমানোর জন্য আমরা সাধারণত ব্যাথা নাশক ওষুধের উপর নির্ভরশীল। ওষুধ সেবনের মাধ্যমে ব্যাথা তাড়াতাড়ি কমে গেল এর রয়েছে অনেক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। সেজন্য ব্যাথা নাশক ওষুধ সেবন করা থেকে বিরত থাকা আমাদের জন্য শ্রেয়। আমরা এখানে কয়েকটি খাবার আপনাদের সামনে উল্লেখ করব যেগুলো খেলে শরীরের ব্যথা কমে যেতে পারে। তাহলে চলুন সেই খাবারগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-

মরিচঃ মরিচ প্রাকৃতিক ব্যথা নাশক হিসেবে কাজ করে থাকে। মরিচে রয়েছে ক্যাপসাইনের উপাদান যা ব্যথায় উপশমের অত্যন্ত কার্যকরী। একটি মরিচ খেলে শরীরের ক্যাপসাইনের ব্যথা কমানোর জন্য কার্যকরী হয়ে পড়ে। এ কারণে ব্যথা উপশমের ঔষধের উপাদান দেওয়া হয়।

পুদিনা পাতাঃ ব্যথা কমাতে অত্যন্ত কার্যকরী পাতা হিসেবে পুদিনা পাতার যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। এই পাতায় মেন্থল থাকার কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে কার্যকরী। পুদিনা পাতা খেলে হাড় ও জয়েন্টের ব্যথা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

টক দইঃ টক দই শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি শুধু পুষ্টির চাহিদা মেটায় তা না বরং এটি ব্যথা কমাতেও অত্যন্ত কার্যকরী। কারণ টক দই রয়েছে মাইক্রোফ্লোরাল নামক একটি বিশেষ ধরনের উপাদান যা শরীরের প্রদাহজনিত কারণে তৈরি হওয়া গ্যাস্ট্রিকের ব্যথাকে উপশম করতে সাহায্য করে।

অ্যালোভেরা জেলঃ অ্যালোভেরা জেল পোড়া ও ক্ষতস্থানের ব্যথা অপশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এলোভেরা জুস আলসারের ব্যথা উপশম করতে খুবই কার্যকরী।

পেঁপেঃ পেঁপেতে রয়েছে এক ধরনের এনজাইম যা প্রদাহ দূর করতে সহায়তা করে। যেকোনো সার্জারির ব্যথা দূর করে থাকে পেঁপের জুস। এ ছাড়াও অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন শরীরের অন্যান্য ব্যথা উপশময় অত্যন্ত কার্যকরী।

চেরিঃ যেসব ব্যথা নাশক খাবার রয়েছে সেগুলোর মধ্যে চেরি অন্যতম। এটি ব্যথা কমাতে অত্যন্ত উপকারী ঔষধ হিসেবে কাজ করে থাকে। জ্বালাপোড়া থেকে সৃষ্ট ব্যথা খুব সহজে উপশম করে থাকে কালো খেলে।

বাতের ব্যথা দূর করার ঘরোয়া উপায়

বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রায় মানুষের বাতের ব্যথা শুরু হয়ে যায়। এই ব্যথা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য অনেকে বিভিন্ন ধরনের ব্যাথা নাশক ওষুধ সেবন করে থাকে। আজ আপনাদের সামনে বাতের ব্যথা দূর করার জন্য কিছু ঘরোয়া উপায় তুলে ধরব। তাহলে চলুন তাহলে চলুন ঘরোয়া উপায়ে কিভাবে বাতের ব্যথা দূর করা যায় সে বিষয়ে জেনে নেওয়া যায়-
  • আদা চা বাতের ব্যাথার জন্য অত্যন্ত উপকারী। সেজন্য এক টুকরো আদা কুচি কুচি করে কেটে চা-পাতাসহ পানিতে দিয়ে ১৫ মিনিট ফুটিয়ে সেই চা পান করলে বাতের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
  • মরিচের গুড়ার মিশ্রণ দ্রুত ব্যথা কমাতে অধিক কার্যকরী। কয়েক চামচ মরিচের গুড়ের সাথে দুই থেকে তিন চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। ব্যথার টানে এই মিশ্রণ খুব ভালো কাজ দিয়ে থাকে। প্রথম অবস্থায় একটু জ্বালাপোড়া করলেও পরবর্তীতে ব্যথার স্থান ঠান্ডা হয়ে যায়।
  • ব্যথা দূর করতে ঠান্ডা ও গরম জল ভালো কাজ দিয়ে থাকে। সেজন্য দুটি পাত্রের প্রয়োজন। কারণ একটি পাত্রে থাকবে ঠান্ডা জল অপর পাত্রতে থাকবে গরম জল। প্রথমে ঠান্ডা পানিতে এক মিনিট ব্যথার জায়গা ডুবিয়ে রাখতে হবে। তারপর গরম পানিতে ৩০ সেকেন্ড ডুবাতে হবে। ১৫ থেকে ২০ মিনিট পরপর এইভাবে পানিতে ডুবিয়ে রাখলে ব্যথা খুব সহজ।

লেখক এর মন্তব্য

ব্যাথা নাশক ওষুধ সেবনের ফলে শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু এই ক্ষতির বিষয়ে অনেককেই অবগত নয়। সেজন্য দীর্ঘদিন ব্যথার ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। ব্যথার ওষুধ না খেয়ে ব্যথা কমানোর বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করতে হবে। প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধু বান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url