ভিমরুল কামড়ালে করণীয় - ভিমরুল তাড়ানোর উপায়

প্রিয় পাঠক, আপনি কি ভিমরুল কামড়ালে করণীয় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনাকে জানতে সাহায্য করবে। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে ভিমরুল কামড়ালে করণীয় ও ভিমরুল তাড়ানোর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ভিমরুল কামড়ালে করণীয়
এ আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন ভিমরুল কামড়ালে কি হয়, ভিমরুল দেখতে কেমন, ভিমরুল কামড়ালে ঘরোয়া চিকিৎসা এবং ভিমরুল থেকে বিশেষ সতর্কতা।

ভূমিকা

ভিমরুল এটি পতঙ্গ যা দেখতে সাধারণ হলেও এটি অনেক ভয়ঙ্কর। এই ভিমরুল বিভিন্ন জায়গায় বাসা বাঁধে যেমন বাড়ির কোনায়, চিপা চাপায়, গাছের ডালে, ঝোপঝাড়ে। ভিমরুলের পিছনে যে হুল রয়েছে এটি ফোটালে মানুষ খুব যন্ত্রণায় কাতর হয়ে পড়ে এমনকি কয়েকটি ভিমরুল কামড়ালে মানুষ মারাও যেতে পারে।


সেজন্য এটিকে ভয়ংকর পতঙ্গ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ভিমরুল থেকে বাঁচার জন্য মানুষ বিভিন্ন রকম উপায় খুঁজে। কারণ এটি খুবই আতঙ্ক তৈরি করে। যেখানে ভিমরুলের বাসা রয়েছে সেখানে মানুষ স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারেনা। কেননা ভিমরুল কাউকে দেখা মাত্রই তাকে আক্রমণ করে বা হুল ফুটিয়ে থাকে।


ভিমরুল যেখানে বাসা করে তার থেকে দশ হাত দূর দিয়ে মানুষ চলাফেরা করে শুধুমাত্র ভিমরুলের হুল ফুটানোর ভয়ে। ভিমরুলের হুল ফোটালে অসহ্য যন্ত্রণায় কাতর হয়ে পড়ে। আবার অনেক সময় আছে ভিমরুলের বাসা নেই অথচ ভিমরুল ঘোরাফেরা করছে বা জানালার ফাঁক দিয়ে ঢুকে হুল ফোটাবে।

তাই ভিমরুলের বাসা দেখা মাত্রই এটি ধ্বংস করা বিশেষ প্রয়োজন। তাছাড়া যেকোনো সময় যেকোন মানুষকে আক্রমণ করতে পারে।

ভিমরুল তাড়ানোর উপায়

ভিমরুল তাড়ানোর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উপায় হচ্ছে ভিমরুলের বাসা পুড়িয়ে ফেলা। এ বাসা যতক্ষণ না পুড়ানো হবে ততক্ষণ ভিমরুল তাড়ানো সম্ভব হবে না। তবে মাথায় রাখতে হবে ভিমরুলের বাসা ধ্বংস করতে হলে বা পোড়াতে হলে সব সময় রাতের বেলা করতে হবে। অন্যথায় বাসা পোড়াতে গেলে সবগুলো ভিমরুল আক্রম আক্রমণ করবে এবং আপনাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিবে।


ভিমরুলের বাসা প্রথমে ভালোভাবে দেখে নিতে হবে যে কোথায় রয়েছে। তারপর সেটি পোড়ানোর জন্য সন্ধ্যে বা রাত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এটি পোড়ানোর জন্য একটি বাঁশের মাথায় খড় বেঁধে মশাল তৈরি করতে হবে। সেই মশাল দিয়েই ভিমরুলের বাসা পোড়ানো যাবে। সন্ধ্যে হয়ে যাওয়ার পর ভিমরুলের বাসার কাছে যেতে হবে এবং মশালে আগুন দিতে হবে।

তারপর সেটিকে ভিমরুলের বাসার মাঝখান দিয়ে ঢুকিয়ে দিতে হবে যাতে আগুন ধরে যায় এবং সমস্ত বাসা পুড়ে যায়। রাতের বেলা ভিমরুলের বাসা পোড়ালে কামড়ানোর ভয় থাকে না। কারণ সে সময় তারা কাউকে দেখতে পায় না। ভিমরুলের বাসা পুরানো হলে তার সাথে ভিমরুলগুলো পুড়ে যায়। এভাবে ভিমরুল তাড়ানোর জন্য কাজ করতে হয়।

ভিমরুল কামড়ালে কি হয়

ভিমরুল হচ্ছে ভয়ংকর যন্ত্রণাদায়ক একটি পতঙ্গ। এটি কামড়ালে শরীরে অসহ্য যন্ত্রনা শুরু হয়ে যায়। কারণ ভিমরুল কামড়ালে শরীরে বিষক্রিয়া তৈরি হয়। এমনকি জ্বর বা বমিও হতে পারে। এ যন্ত্রণা সহ্য করা সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। একেক জনের শরীরের প্রতিক্রিয়া একেক রকম। সেজন্য প্রত্যেকেরই আলাদা আলাদা প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

এই পতঙ্গ যদি শিশুদের কামড়ে থাকে তাহলে তাদের জন্য আরও মারাত্মক অবস্থা তৈরি করে। একটি ভিমরুল কামড়ালে শুধুমাত্র যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে কিন্তু একাধিক ভিমরুল কামড়ানোর ফলে মৃত ঘটে যেতে পারে। কারণ ভিমরুলে কামড়ানোর ফলে মানুষের শরীরে বিষক্রিয়া তৈরি হয় যা খুবই কষ্টদায়ক এবং ক্ষতিকর।

সেজন্য ভিমরুলের বাসার আশেপাশে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে এবং বাসা দেখতে পেলে ধ্বংস করে দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

ভিমরুল কামড়ানোর পর করণীয়

ভিমরুলে কামড়ালে সাথে সাথে ঘরোয়া উপায়ে কয়েকটি উপায় অবলম্বন করতে পারেন যেমন কামড়ানোর স্থানে লেবুর রস, তেতুল গুলানো পানি, স্যানিটাইজার, ভিনেগার ইত্যাদি ব্যবহার করে দেখতে পারেন। প্রাথমিক অবস্থায় এগুলো দিয়ে কাজ না হলে যেকোনো ধরনের অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম লাগাতে পারেন।

তারপর এন্টিহিস্টামিন এবং ব্যথা কমানোর জন্য নাপা খেয়ে নিতে পারেন। এই উপায়গুলো অবলম্বন করে যদি যন্ত্রণা বা ব্যথা উপশম না হয় তাহলে অবশ্যই আপনার নিকটস্থ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কেননা ভিমরুল কামড়ানোর যন্ত্রণায় খুবই মারাত্মক এটি সহ্য করা সবার পক্ষে সম্ভব হয় না।

ভিমরুল দেখতে কেমন

ভিমরুল দেখতে অনেকটা মৌমাছির মত কিন্তু আকারের দিক থেকে মৌমাছির তুলনায় বড়। ভিমরুলের গায়ের রং কালো এবং বোলতার গায়ের রং হলুদ। মৌমাছির চেয়ে ভিমরুলের ও বোলতার কামড় অনেক বেশি যন্ত্রণাদায়ক।
ভিমরুল

ভিমরুল কামড়ালে ঘরোয়া চিকিৎসা

ভিমরুল কামরানোর পর ঘরোয়া কিছু চিকিৎসা রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে ব্যথা উপশম করা সম্ভব হয়। তাহলে চলুন সেগুলো জেনে নেওয়া যাক-
  • ভিমরুল বা বোলতা কামড়ালে সেই কামড়ানোর স্থানে ভেজা মাটি লাগিয়ে দিন। ভেজা মাটি লাগালে ব্যথা অনেকটাই কমে যায়।
  • টুথপেস্ট ব্যাথার ঔষধ হিসেবে কাজ করে থাকে কারণ টুথপেস্টে এক ধরনের ব্যথা নাশক এবং জীবাণু নাশক। সেজন্য ভিমরুলে কামড়ালে সে স্থানে টুথপেস্ট লাগালে যন্ত্রণা খুব তাড়াতাড়ি উপশম হয়।
  • রসুন অনেক সময় অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে থাকে। সেজন্য মৌমাছি, বোলতা বা ভিমরুলে কামড়ালে সে স্থানে রসুন পেস্ট করে লাগিয়ে দিলে ব্যথা উপশম হয়ে যায়।
  • ভিমরুলের কামড় এর যন্ত্রণা থেকে দ্রুত উপশম পেতে হলে লেবুর রস ব্যবহার করা যেতে পারে। কারণ লেবুর রসে রয়েছে এসিড। এ এসিড ভিমরুলের কামড়ের বিষ থেকে রক্ষা করে।
  • বাড়িতে থাকা ভিনেগার ব্যবহার করলে ভিমরুল কামড়ানোর ব্যথা অনেক ক্ষেত্রেই কমে যায়।
  • ভিমরুল কামড়ানোর পর খেয়াল করে দেখতে হবে ভিমরুলের হুল কামড়ানোর স্থানে লেগে আছে কিনা। লেগে থাকলে সেটিকে টান মেরে তুলে ফেলতে হবে। এটি না তোলা পর্যন্ত ব্যথা বৃদ্ধি পেতেই থাকবে।
  • ভিমরুলে কামড়ানোর পর অ্যান্টিসেপটিক দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে বরফ নিয়ে ক্ষতস্থানে ধরে থাকলে যন্ত্রণা অনেকটা কমে যায়।

ভিমরুল থেকে বিশেষ সতর্কতা

  • ভিমরুলের বাসা দেখলে কোনভাবে বিমুল তাড়ানোর জন্য সেখানে ঢিল ছুড়া যাবেনা, বিশেষ করে দিনের বেলায়।
  • ভিমরুলের বাসায় সরাসরি কোন কিছু দিয়ে আঘাত করা যাবে না কারণ সেখানে আঘাত করলে ভিমরুল সবদিকে ছড়িয়ে যাবে এবং সবদিক থেকে আক্রমণ করবে।
  • ভিমরুল কোনভাবে আক্রমণ করলে বেশি দৌড়াদৌড়ি না করে সেখানে যদি পুকুর থাকে তাহলে পুকুরে নেমে যান এবং ডুব দেন।
  • যদি আশেপাশে পুকুর না থাকে তাহলে মাটিতে শুয়ে পড়তে হবে এবং হাত পায়ের যেসব অংশ খোলা থাকবে সেগুলোর কাপড় দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
  • ভিমরুল কামড়ালে আক্রান্ত স্থান সাবান পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। এরপর সেখানে বরফ ঘষতে থাকুন।
  • ভিমরুল কামড়ালে সে স্থান থেকে অবশ্যই হাতের নখ অথবা টুইজার বা চিমটা দিয়ে হুল তুলে ফেলুন এবং সতর্ক থাকুন যে আক্রান্ত স্থান যেন ঘষাঘষি না করা হয় কারণ ঘষাঘষি করলে বিষ সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়বে।

লেখক এর মন্তব্য

ভিমরুল কামড়ালে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। সেজন্য বসে না থেকে কামড়ানোর ব্যথা উপশম করার চেষ্টা করতে হবে। ঘরোয়াভাবে যদি সফল না হন বা কিছুটা সফল হলেও অবশ্যই নিকটস্থ চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। কারণ ভিমরুল কামড়ানো বিষ যে কোন সময় মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।

প্রিয় পাঠক, এ আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url