ঠোঁটের উপরে অবাঞ্ছিত লোম দূর করার উপায় - স্থায়ীভাবে মুখের লোম দূর করার উপায়

প্রিয় পাঠক, আপনি কি ঠোঁটের উপরে অবাঞ্ছিত লোম দূর করার উপায় খুঁজছেন। তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনাকে সাহায্য করবে। এ আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে ঠোঁটের উপরের অবাঞ্ছিত লোম দূর করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে হলে আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ঠোঁটের উপরে অবাঞ্ছিত লোম দূর করার উপায়
এই আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন স্থায়ীভাবে মুখের লোম দূর করার উপায়, মেয়েদের মুখে বাড়তি লোম অপসারণ করা কি জায়েজ এবং কানের লোম কাটা জায়েজ কিনা।

ভূমিকা

পুরুষ ও মহিলাদের অনেকেরই ত্বকে লোম থাকে। তবে এটি কারো স্বাভাবিক পরিমাণ থাকে আবার অনেকের অতিরিক্ত পরিমাণ থাকে। ত্বকে অতিরিক্ত পরিমাণ লোম থাকার কারণে ত্বকের সৌন্দর্য অনেক ক্ষেত্রেই কমে যায়। বিশেষ করে মেয়েদের ত্বকে বেশি লোম গজালে সেটি সৌন্দর্যের পরিপন্থী হয়ে দাঁড়ায়।


অধিকাংশ মহিলা এবং মেয়েদের শরীরে উচ্চ অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের উপস্থিতির কারণে বিভিন্ন জায়গায় চুল গজায়। পুরুষদের মুখে সাধারণত বেশি চুল গজায় কারণ তাদের দাড়ি এবং গোঁফ থাকে। কিন্তু মেয়েদের মুখে অতিরিক্ত চুল গজার কারণ হচ্ছে হরমোনের বা অন্যান্য সমস্যা। এই লোম তুলতে গেলে মহিলাদের অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়।

সেজন্য আমরা এখানে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে কিভাবে ঠোঁটের উপরে লোম তুলে ফেলা যায় সে বিষয়ে আপনাদের সামনে আলোকপাত করবো। সেজন্য মনোযোগ সহকারে এই আর্টিকেলটি পড়তে হবে।

ঠোঁটের ওপরে লোম দূর করার উপায়

ছেলেদের ক্ষেত্রে ঠোঁটের উপরে লোম থাকলে কোন সমস্যা নেই তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে ঠোঁটের উপরে লোম থাকলে দেখতে অনেকটা খারাপ লাগে। সেজন্য এটি তুলে ফেলতে হয়। আজ আমরা এখানে ঠোঁটের উপরে লোম কিভাবে প্রাকৃতিক উপায়ে দূর করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করব। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক-

জেলটিন ও গ্লিসারিন ব্যবহার করেঃ জেলটিন ও গ্লিসারিন ব্যবহার করলে ঠোঁটের ওপরে যেই লম্বা চুল থাকে সেগুলো অপসারণ করা যায়। সেজন্য একটি ছোট ওভেন প্রুফ বাটিতে এক টেবিল চামচ জেলটিন এবং হাফ টেবিল চামচ দুধ ও তার সাথে তিন ফোঁটা পরিমাণ ল্যােন্ডার তেল মেশাতে হবে। তারপর সেটিকে মাইক্রোওভেনে দিয়ে ১২ সেকেন্ড মত উচ্চ তাপের গরম করতে হবে।


তারপর এই মিশ্রণটি ঠান্ডা হয়ে গেলে ঠোঁটের উপরে চুল গজানোর স্থানে লাগাতে হবে। এটি শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে জায়গাটি ভালোভাবে হালকা ঘষে ধুয়ে ফেলুন।

হলুদ ও দুধ ব্যবহার করেঃ হলুদ ও দুধ ব্যবহার করার মাধ্যমে ঠোঁটের উপরের লোম দূর করা সম্ভব। প্রাকৃতিকভাবে এই লোমগুলো অপসারণ করতে চাইলে এই উপাদানগুলো অত্যন্ত কার্যকরী। সেজন্য একটি বাটিতে এক টেবিল চামচ পরিমাণ হলুদ গুঁড়ো এবং এক টেবিল চামচ পরিমাণ দুধ ভালো ভাবে পেস্ট করে নিতে হবে।

তারপর এই ঘন পেস্টটি ঠোঁটের উপরে লাগাতে হবে। সম্পূর্ণভাবে শুকিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত এভাবেই রেখে দিতে হবে। প্রায় ২০ মিনিট রাখার পর এদিকে ভেজা আঙ্গুল দিয়ে ধীরে ধীরে ঘষে তুলে ফেলতে হবে এবং ঘষতে হবে চুলের বিপরীত পাশ থেকে।

ডিমের সাদা অংশ ব্যবহার করেঃ ডিমের সাদা অংশ ব্যবহার করার মাধ্যমে ঠোঁটের উপরের লোম তুলে ফেলা যায়। কারণ ডিমের সাদা অংশে অনুযায়িন রয়েছে যা চুলের ফলিকন অপসারণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ডিমের সাদা অংশ ভালোভাবে পেস্ট করে নিয়ে ঠোঁটের ওপরে লাগিয়ে রেখে তিরিশ মিনিট পর ধুয়ে ফেললে ঠোটের উপরে লোম ধীরে ধীরে উঠে যাবে। ভালো ফলাফলের জন্য এই পেস্টটি সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করতে পারেন।

চিনি ব্যবহার করেঃ ঠোঁটের উপরে লোম দূর করতে চিনি ব্যবহার করতে পারেন। এটি ব্যবহারের ফলে লোমের বৃদ্ধি কমাতে সাহায্য করবে। একটি পাত্রের মধ্যে ২ টেবিল চামচ পরিমাণ চিনি এবং এক টেবিল চামচ পরিমাণ লেবুর রস দিয়ে ভালোভাবে পেস্ট বানাতে হবে‌। এটা তাপ দিয়ে ভালোভাবে পেস্ট বানাতে হবে।

 তারপর ঠান্ডা হলে ঠোঁটের উপর লাগাতে হবে। এরপর এই পেস্টটি যেখানে ব্যবহার করা হয়েছে সেখানে নরম সুতির কাপড়ের টুকরা রাখতে হবে। এই কাপড়টিকে যেখানে পেস্টটি লাগানো হয়েছে সেখানে আলতো করে চাপ দিয়ে লাগাতে হবে তারপর সেটিকে দ্রুত টান মেরে তুলে ফেলতে হবে।

আলুর রস ব্যবহার করেঃ আলুর রস ব্যবহার করে যেমন ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা যায় তেমনি অবাঞ্ছিত লোম খুব সহজেই দূর করা যায়। এটি ঠোঁটের উপর ব্যবহার করে সারারাত রেখে দিয়ে পরদিন সকালে ধুয়ে ফেললে দেখবেন ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। এভাবে প্রতি সপ্তাহে তিনবার ব্যবহার করতে পারেন।

হলুদ বেসন এবং টক দইঃ হলুদ ও টক দই ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এগুলো দিয়ে অবাঞ্ছিত লোম খুব সহজেই দূর করা যায়। সেজন্য এই তিনটি উপাদানকে একসাথে মিশিয়ে ভালোভাবে পেস্ট তৈরি করতে হবে। তারপর সেই পেজটিকে ঠোঁটের উপরে লাগাতে হবে। এরপর এটি শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। এই উপাদানগুলো মিশ্রণ সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করতে পারবেন।

মধু ও বেসনঃ মধু ও বেসন একসাথে মিশিয়ে ত্বকে লাগালে ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল হয় সেইসাথে ত্বকের অবন্তিত লোমও দূর হয়ে যায়। সে জন্য এক টেবিল চামচ বেসনের সাথে এক টেবিল চামচ মধু নিয়ে ভালোভাবে পেস্ট তৈরি করতে হবে এবং সেই পেস্টটি ঠোটের উপরে লাগাতে হবে। এরপর সেটি শুকিয়ে গেলে বা টানটান ভাব হলে ঠান্ডা পানি দিয়ে হালকাভাবে ঘষে তুলে ফেলতে হবে। এই মিশ্রণটি সপ্তাহে তিনবার ব্যবহার করতে পারবেন।

স্থায়ীভাবে মুখের লোম দূর করার উপায়

  • ত্বকে অবাঞ্ছিত লোম থাকলে ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধিতে বাধা তৈরি করে। সেজন্য অনেকে বিভিন্নভাবে এই লোমগুলো তুলে ফেলার চেষ্টা করে। ত্বকের অবাঞ্ছিত লোম দূর করার জন্য অনেকেই লেজার থেরাপি নিয়ে থাকে। তবে এইসব উপায় এর চেয়ে সবচেয়ে নিরাপদ হচ্ছে ঘরোয়া পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে অবাঞ্ছিত লোম দূর করা। কারণ প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করলে ত্বকের কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয় না বরং এটি ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী হবে।
  • স্থায়ীভাবে ত্বকের অবাঞ্ছিত লোম দূর করতে হলে চিনি ও লেবুর রস একসাথে ব্যবহার করে দেখতে পারেন। সেজন্য দুই টেবিল চামচ পরিমাণ চিনির সাথে আধা কাপ পানি মিশিয়ে ভালোভাবে ফুটাতে হবে। এরপর ঠান্ডা হলে সেটি ত্বকের যেখানে অবাঞ্ছিত লোম রয়েছে সেখানে লাগিয়ে ২০ থেকে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে তারপর হালকাভাবে ঘষে ধুয়ে ফেলতে হবে।
  • লেবু ও মধু একসাথে ব্যবহার করলে স্থায়ীভাবে ত্বকের অবাঞ্ছিত লোম দূর করা সম্ভব। এক টেবিল চামচ মধু, এক টেবিল চামচ চিনি এবং তার সাথে কয়েক ফোটা লেবুর রস মিশিয়ে তিন মিনিট ভালোভাবে ফুটাতে হবে। ধীরে ধীরে নাড়তে হবে যতক্ষণ না পর্যন্ত একটি ঘন না হয়ে যায়। ঘন পেস্ট করা হয়ে গেলে তারপর ঠান্ডা করতে হবে এবং ঠান্ডা করে অবাঞ্ছিত লোমের স্থানে লাগাতে হবে। তারপর এটি শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এই মিশ্রণটি প্রাকৃতিক ওয়াক্স হিসেবে কাজ করে থাকে।
  • ডিমের সাদা অংশ ও চালের আটা দিয়ে স্থায়ীভাবে অবাঞ্ছিত লোম দূর করা যায়। সেজন্য ডিমের সাদা অংশের সাথে চালের আটা ভালোভাবে মিশিয়ে নিয়ে পেস্ট তৈরি করতে হবে। তারপর সেটিকে অবাঞ্ছিত লোমের অংশে লাগাতে হবে এবং শুকানোর জন্য ২০ থেকে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এটি শুকিয়ে গেলে লোমের বিপরীত দিকে শুকিয়ে যাওয়া মিশ্রণটি ধীরে ধীরে টেনে তুলে পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।

মেয়েদের মুখের বাড়তি লোম অপসারণ করা কি জায়েজ

মহিলাদের মুখের অতিরিক্ত লোম সৌন্দর্য বর্ধনের প্রতিবন্ধক হয়ে যাবে। সেজন্য মহিলারা ইচ্ছা করলেই মুখের বা ত্বকের অবাঞ্ছিত লোম তুলতে পারে। মহিলাদের লোম তোলা বিষয়ক কোথাও কোনো স্পষ্টভাবে নিষেধ করা হয়নি। যেহেতু এটি নিষেধ করা হয়নি সেহেতু এটি তুলে ফেলতে পারবে। এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরাম তাদের তাহকিক এর মধ্যে বলেছেন এটি ক্ষমার যোগ্য বা নিষেধ করা হয়নি।

বেশিরভাগ ওলামায়ে কেরামগণ বলেন মহিলাদের মুখের অবাঞ্ছিত লোম যেহেতু সৌন্দর্যের পরিপন্থী সেজন্য এটি অপসারণ করা জায়েজ।

কানের লোম কাটা কি জায়েজ

কানের অবাঞ্ছিত লোম কাটা জায়েজ কিনা এ বিষয়ে অনেকে প্রশ্ন করে থাকেন। কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ মোতাবেক শরীরের যেগুলো জায়গার লোম কাটার কথা বলা হয়েছে সেগুলো ব্যতীত শরীরের অন্যান্য জায়গার লোম তোলা বা কাটার ব্যাপারে কোন বিধি-বিধান এখন পর্যন্ত আসেনি। অর্থাৎ এদিকে নির্দিষ্ট করে হালাল বা হারাম এ বিষয়ে কোন জায়গায় উল্লেখ নেই।


এ বিষয়ে বিভিন্ন ওলামায়ে কেরামগণ বলেছেন আপনি চাইলে একটি কেটে ফেলতে পারেন। কারণ এগুলো আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন হয় না।

লেখক এর মন্তব্য

পুরুষের ত্বকে অতিরিক্ত লোম থাকলে কোন সমস্যা হয় না। কিন্তু মেয়েদের ঠোঁটের অবাঞ্ছিত লোম থাকলে মেয়েদের ত্বকের সৌন্দর্যের প্রতিবন্ধী দাঁড়ায়। সেজন্য অনেক মহিলারা বা নারীরা বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে থাকে। তবে সবচেয়ে উপযুক্ত উপায় হচ্ছে প্রাকৃতিক উপায়ে অবাঞ্ছিত লোম দূর করা। প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধু বান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url