সরিষার খৈলের উপকারিতা - গাছের জন্য সরিষার খৈলের উপকারিতা

প্রিয় পাঠক, আপনি কি গাছের জন্য সরিষার খৈলের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনাকে তা জানতে সাহায্য করবে। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে গাছের জন্য সরিষার খৈলের উপকারিতা এবং গরুকে সরিষার খৈল খাওয়ানোর উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
সরিষা খৈলের উপকারিতা
এ আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন সরিষার খৈল গাছে ব্যবহারের নিয়ম, গরুকে সরিষার খৈল খাওয়ানোর উপকারিতা, আসল সরিষার খৈল চেনার উপায়, সরিষার খৈল দিয়ে জৈব সার তৈরির পদ্ধতি ইত্যাদি।

ভূমিকা

সরিষার তেল নিষ্কাশনের পর সাধারণত যে অংশটি থাকে সেটাকে সরিষার খৈল বলা হয় ৷ সরিষার খৈল সম্পূর্ণরূপে প্রাকৃতিক ও পরিবেশ বান্ধব একটি উন্নত মানের জৈব সার। সরিষার খৈলের বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা আছে। এটি বিভিন্ন উপায়ে নানা কাজের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমন গরুর খাদ্য হিসেবে, মাছের খাদ্য হিসেবে, চুলের যত্নে ইত্যাদি।


সরিষার খৈল গাছের জন্য অতি উপকারী। এই খৈল ব্যবহারের ফলে গাছ প্রয়োজনীয় ফসফরাসের যোগান পেয়ে থাকে। সরিষার খৈলে রয়েছে নাইট্রোজেন, পটাশিয়াম ,বিভিন্ন মাইক্রো ও মাইক্রো উপাদান ইত্যাদি। যা গাছের জন্য অপরিহার্য।

গাছে সরিষার খোল ব্যবহার করলে ফুল ফল এবং গাছের বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে এটি গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদের জন্য অতি উপকারী।

গাছের জন্য সরিষার খৈল উপকারিতা

সরিষার খৈল গাছের জন্য অনেক উপকারী। তাহলে চলুন সরিষার খৈল গাছে কি কি উপকার বয়ে আনে সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
  • সরিষার খৈল রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফসফরাস যা গাছের ফসফরাসের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম।
  • উদ্ভিদের জন্য প্রয়োজনীয় কতগুলো উপাদান যেমন নাইট্রোজেন পটাশিয়াম মাইক্রো ও ম্যাক্রো ইত্যাদি উপাদান সরিষার খৈলে রয়েছে।
  • সরিষার খৈলে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকায় গাছের পাতা হলুদ হওয়া থেকে রক্ষা করে। কারণ পটাশিয়ামের অভাবে গাছের পাতা হলুদ রং ধারণ করে। এছাড়াও পটাশিয়াম গাছের শিকড় বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
  • সরিষার খৈল ছাদবাগান বা টবে লাগানো গাছের জন্য বেশি উপকারী। কারণ এতে পরিমাণমতো এই সার প্রয়োগ করা যায়।
  • এটি গাছের ফুল ও ফল এবং গাছের বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • সরিষার খৈল সম্পূর্ণভাবে প্রাকৃতিক হাওয়ায় এবং এতে অন্য কোন উপাদান মেশানো না থাকায় এটি গাছের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব।
  • সরিষার খৈল ব্যবহার করার ফলে গাছের পাতার রং সবুজ থাকে এবং গাছ সতেজ হয়ে ওঠে।

সরিষার খোল গাছে ব্যবহারের নিয়ম

সরিষার খৈল বিভিন্ন উপায়ে গাছে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই খোল সরাসরি ব্যবহার করা যায়। সরাসরি ব্যবহার করার জন্য এটিকে ভালোভাবে গুড়া করে নিতে হবে। তারপর এই গুড়াকে ছোট গাছের ক্ষেত্রে গাছ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার দূরে খৈলের গুড়া দিয়ে ভালোভাবে মাটিতে ঢেকে দিতে হবে। আর বড় গাছের ক্ষেত্রে ৫০ সেন্টিমিটার দূরে খৈলের গুঁড়া দিয়ে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।


এর উপায় ছাড়াও পানিতে ভিজিয়ে সরিষার খৈল ব্যবহার করা যায়। প্রয়োজন মত সরিষার খৈল সাত দিন পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর যে পরিমাণ খৈলের পানি নেয়া হবে তার চেয়ে দশ গুণ পরিমাণ স্বাভাবিক পানির সাথে মিশিয়ে গাছে ব্যবহার করতে হবে। যেমন এক লিটার খৈল পচা পানির সাথে ১০ লিটার স্বাভাবিক পানি মিশিয়ে ব্যবহার করতে হবে।

গরুকে সরিষার খৈল খাওয়ানোর উপকারিতা

সরিষার খৈলে উচ্চমানের প্রোটিনের উপস্থিতি থাকার কারণে এটি বিশ্বব্যাপী গরুর জন্য অন্যতম খাদ্য হিসেবে বিবেচিত। গরুকে পরিমাণমতো খৈল খাওয়ালে গরুর দুধ বৃদ্ধি পায়। যে সকল গরুর হজমের সমস্যা রয়েছে বা বদ হজমের সমস্যা অথবা গরুর গোবর পাতলা হয় সে সকল গরুকে খৈল খাওয়ালে গোবর গাড় হয়ে যায়।


এছাড়াও সরিষার খৈল খাওয়ালে গরুর ওজন ও মাংস বৃদ্ধি পায়। গরুর চেহারার পরিবর্তন আসে খসখসে চামড়ার পরিবর্তে চামড়া তেলতেলে হয়ে যায়। সেজন্য গরুকে পরিমাণমতো খৈল খাওয়ালে গরুর পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয় অপরদিকে বেশি পরিমাণে দুধ দিয়ে থাকে।

গরুকে সরিষার খাওয়ানোর নিয়ম

সরিষার খৈল গরুকে গরুর ওজন অনুযায়ী খাওয়াতে হবে। ১০০ কেজি ওজনের গরুকে দুই থেকে আড়াইশো গ্রাম খৈল পানিতে ভিজিয়ে খাওয়ানো যাবে। সেজন্য প্রথমে দুই থেকে আড়াইশো গ্রাম খৈল একটি বালতিতে নিয়ে নিতে হবে এবং তার মধ্যে পরিমাণ মতো পানি দিতে হবে।

এরপর এই খৈলটিকে পানিতে সাত থেকে আট ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে দিতে হবে। তারপর এটি সম্পূর্ণভাবে গলে গেলে গরুর অন্যান্য দানাদার খাদ্যের সাথে মিশিয়ে খাওয়ানো যাবে।

আসল সরিষার খৈল চেনার উপায়

বাজারে বিভিন্ন ধরনের সরিষার খৈল বের হয়েছে তার মধ্যে আসল এবং ভেজাল দুটোই রয়েছে। আসল সরিষার খৈল না চিনলে সেটি কেনা আপনার জন্য দুষ্কর হয়ে পড়বে। কারণ আসল সরিষার খৈলে যে উপকারিতা রয়েছে ভেজাল খৈলে সে উপকারিতাগুলো নেই বরং এটি ব্যবহারে ক্ষতি হতে পারে। তাহলে চলুন আসল সরিষার খৈল চেনার কয়েকটি উপায় জেনে নেওয়া যাক-
  • আসল সরিষার খৈল চিনতে হলে তার রঙ দেখে দেখে চিনতে হবে। আসল সরিষার খৈলের রং লালচে ধরনের হয় এবং নকল সরিষার খোল কালচে ধরনের হয়ে থাকে।
  • আসল সরিষার খৈলে হাতে নিয়ে চাপ দিলে ভেঙ্গে যায় আর নকল সরিষার খৈলে চাপ দিলে ভেঙে যায় না এটি শক্ত দলা বেঁধে থাকে।
  • আসল সরিষার খৈল পানিতে ভেজালে সহজেই ভিজে গলে যায় কিন্তু নকল সরিষার সহজে পানিতে ভিজালে গলে না।
  • খাঁটি সরিষার খৈলে সরিষার একটি ঘ্রাণ বের হয় যা ভেজাল বা নকল হলে হয় না।
  • আসল সরিষার খৈল পানিতে ভিজিয়ে রাখলে পানির একটি সুন্দর সোনালী বা লালচে রং ধারণ করে আর ভেজাল খৈল হলে এরকম রং ধারণ করে না।

চুলের যত্নে সরিষার খোল

সরিষা তেল চুলের জন্য উপকারী তা আমরা সবাই জানি। কিন্তু সরিষার খৈল চুলের জন্য যে উপকারিতা রয়েছে তা আমরা কজন জানি। বহুযুগ আগে থেকে গ্রামের মেয়েরা সরিষার খৈল দিয়ে চুল ধুয়ে থাকতো। সে সময় তাদের চুল লম্বা ও ঝলমলে থাকতো। সেজন্য প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া উপায়ে চুলের যত্নে সরিষার খৈল ব্যবহার করলে চুলের অনেক উপকার হয়।

এটি নিয়মিত ব্যবহার করলে চুলের গোড়া মজবুত হয় এবং চুল ঝলমলে হয়ে ওঠে। চুলের যত্নে আমরা বিভিন্ন ধরনের শ্যাম্পু ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু সেগুলো ব্যবহারের ফলে চুল অনেক সময় ঝরে যায় বা নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু এই খৈল ব্যবহার করলে চুল পড়ার কোন আশঙ্কা থাকে না। কারণ এটি সম্পূর্ণভাবে প্রাকৃতিক উপায় তৈরি।

সরিষার খৈল চুলে ব্যবহার করার জন্য প্রথমে সরিষার খৈল পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরদিন নেস খৈল ভালোভাবে ছেঁকে সে পানি তুলে ব্যবহার করতে হবে। চুলে দেওয়ার কিছুক্ষণ পরে তা পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।

সরিষার খোল দিয়ে জৈব সার তৈরির পদ্ধতি

অনেক সময় সরিষার খৈল সরাসরি গাছে ব্যবহার করলে গাছের ক্ষতি হতে পারে। কারণ পরিমাণমতো খোল ব্যবহার না করলে গাছের পরিপূর্ণ উপকার পাওয়া যাবে না বা গাছের অন্যান্য ধরনের ক্ষতি হতে পারে। সেজন্য এর সাথে অন্যান্য উপাদানগুলো মিশিয়ে এক ধরনের জৈব সার তৈরি করতে পারেন এবং তা গাছের জন্য অনেক ভালো হবে। এভাবে সার তৈরি করতে হলে প্রথমে আপনাকে সরিষার খৈল নিতে হবে এবং তার সাথে সমপরিমাণ মাটির গুড়া ও চায়ের লিকার। এভাবে সবগুলো মিশিয়ে জৈব সার তৈরি করলে গাছের জন্য তা অনেক উপকারী হবে। এ জৈব সার গাছে ব্যবহার করলে গাছ যেমন সুরক্ষিত থাকবে তেমনি সতেজ ও সজীব হয়ে উঠবে। এই সার প্রতি মাসে একবার গাছের গোড়ায় ব্যবহার করতে পারবেন। এ নিয়মে সার ব্যবহার করলে গাছের কোন ক্ষতি হবে না বরং গাছের অনেক উপকার হবে।

লেখকের মন্তব্য

সরিষার খৈল এমন একটি জিনিস যা আমরা বিভিন্নভাবে ব্যবহার করতে পারি। সবগুলো ক্ষেত্রে এটি অনেক উপকারী। তবে এটি ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই জেনে নিবেন ব্যবহারে সঠিক নিয়ম। সঠিক নিয়মে ব্যবহার করলে সরিষার খৈলে ভালো উপকারিতা পাওয়া যাবে। প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে তাহলে ও আপনি আপনার বন্ধু বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url