কিভাবে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা হয় - পটাশ সার ব্যবহারের নিয়ম

প্রিয় পাঠক, আপনি কি কিভাবে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা হয় এবং বিভিন্ন সারের নাম ও কাজ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনাকে সম্পর্কে জানতে সাহায্য করবে। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে কিভাবে ইউরিয়া আসার প্রয়োগ করা হয় এবং পটাশ সার ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
কিভাবে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা হয়
এই আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন বিভিন্ন ধরনের সারের নাম এবং প্রতিটি স্যারের কাজ, টবে ইউরিয়া সার দেওয়ার নিয়ম, ভেজাল পটাস সার চেনার উপায় ইত্যাদি।

ভূমিকা

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের কৃষি সম্পূর্ণভাবে রাসায়নিক সারের উপর নির্ভরশীল। জৈব সারের ঘাটতি থাকার কারণে বেশিরভাগ মানুষ চাষাবাদ করতে ঝুঁকে পড়েছে রাসায়নিক সারের দিকে। রাসায়নিক সার কয়েক ধরনের রয়েছে যেমন ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি, এমওপি, জিপসাম, জিংক, সালফেট এবং বোরিক অ্যাসিড অথবা বরণ সার।


প্রতিটি সারের কার্যকারিতা আলাদা আলাদা। বাংলাদেশের চাষাবাদ পদ্ধতিতে মূলত এই সারগুলো ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যারা অনেক আগে থেকে চাষাবাদ করেন তারা জানেন কোন সার কি কাজে লাগে। কিন্তু যারা নতুন চাষাবাদ শুরু করেছেন তাদের মধ্যে অনেকেই জানেন না কোন সার কি কাজে ব্যবহার করা হয়।

কোন কোন সার কোন কোন কাজে ব্যবহার করা হয় সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে আমাদের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে। তাহলে প্রিয় পাঠক, আপনি যদি এই বিষয়ে জানার আগ্রহ থাকে তাহলে সম্পূর্ণভাবে মনোযোগ সহকারে আর্টিকালটি পড়ুন।

বিভিন্ন ধরনের স্যারের নাম এবং প্রতিটি সারের কাজ

আমরা এখানে কয়েক ধরনের সারের নাম উল্লেখ করব যার প্রত্যেকটি আলাদা কাজে ব্যবহার করা হয়। তাহলে চলুন সারের নাম এবং এর ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-

ইউরিয়াঃ নাইট্রোজেন সম্বলিত রাসায়নিক সার হচ্ছে ইউরিয়া সার। এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয় ফসলের জমিতে। এই সারে নাইট্রোজেনের পরিমাণ থাকে ৪৬ পার্সেন্ট যা স্বাভাবিকভাবে নাইট্রোজেন সরবরাহ করে থাকে। সে জন্য এটি গাছের শিকড়ের বৃদ্ধি বিস্তারের সাহায্য করে। এটি গাছের প্রচুর পরিমাণে পাতা ডালপালা ও কাণ্ড উৎপাদন করে থাকে।


ইউরিয়ার সার ক্লোরোফিল উৎপাদন করার মাধ্যমে গাছের পাতার সবুজ রঙের তৈরি করে। উদ্ভিদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন এবং শর্করা উৎপাদন করতে সাহায্য করে ইউরিয়া সার।

ডিএপি এবং টিএসপি সারের কাজঃ ডিএপি ও টিএসপি এই দুই ধরনের সার হচ্ছে ফসফেট জাতীয় সার। এই সারগুলোতে শতকরা 20% ফসফরাস বিদ্যমান থাকে এবং ক্যালসিয়াম থাকে ১৩ ভাগ। ডিএপি সারে ফসফরাস ছাড়াও ১৮ ভাগ নাইট্রোজেন উপস্থিত থাকে। ফসফরাস জাতীয় সারগুলো কোষ বিভাজনে অংশগ্রহণ করে থাকে।

গাছের মূল ও শিকড় দ্রুত বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে ফসফেট জাতীয় সার। গাছকে শক্তিশালী করে তুলে এবং অল্পতেই নেতিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। এটি গাছের ফুল ও ফল ধরতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি ফুল ফলের গুণগত মান বজায় রাখতে সহায়তা করে।

এমওপি সার বা পটাস সারের কাজঃ এমওপি সার হচ্ছে পটাসিয়াম যুক্ত সার যেখানে পটাশিয়ামের পরিমাণ থাকে ৫০%। এই সারটি উদ্ভিদের জন্য অতি উপকারী। উদ্ভিদের জন্য শর্করা দব্য পরিবহনে সহায়তা করে। লৌহ ও ম্যাঙ্গানিজের কার্যকারিতা অনেকগুণ বৃদ্ধি করে এমওপি সার। উদ্ভিদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন উৎপাদন করে থাকে এই সার।

এটি গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং গাছের অবকাঠামো শক্ত করে। এছাড়াও এটি নাইট্রোজেন ও ফসফরাসের ভারসাম্য বজায় রাখে।

জিংক সালফেট সারের কাজঃ জিংক সালফেট সারে শতকরা ৩৬% দস্তা এবং ১৭ থেকে ১৮% গন্ধক রয়েছে এই সারটিতে। এই সার মাটিতে সরাসরি ব্যবহার করা হয় এবং স্প্রে করে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। গাছের বিভিন্ন ধরনের হরমোন তৈরি করতে জিংক সালফেট সারের ভূমিকা অত্যাধিক।

এই সারটি ক্লোরোফিল উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং ফলন বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।

বোরণ সারের কাজঃ বোরণ সার গাছের কলবি দিতে সাহায্য করে এবং গাছের পাতা ও ফুল আকর্ষণীয় করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি গাছের পরাগরেনু সুস্থ রাখে এবং বীজ উৎপাদনে সাহায্য করে। যে কোন ফসল চিটা হওয়া থেকে প্রতিরোধ করে এবং ফলের স্বাভাবিক আকৃতি তৈরি করে।

কিভাবে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা হয়

ইউরিয়া সার কিভাবে ব্যবহার করলে গাছের জন্য ভালো হবে সে সম্পর্কে জানা অতিব জরুরি। সরাসরি ক্ষেতে প্রয়োগ না করে বিশেষ পদ্ধতিতে প্রয়োগ করলে সারের পরিমাণ অনেক কম লাগে। যার ফলে চাষাবাদের খরচ অনেকাংশে কমে যায়। ফসলের ফলন অনেকগুণ বেড়ে যায়। সরাসরি প্রয়োগে সার অপচয় হয় কিন্তু স্প্রে করে দিলে ১০ শতাংশ অপচয় হয়।

স্প্রে করে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করলে সারের পরিমাণও কম লাগে এবং উপকারিতাও অনেক বেশি পাওয়া য়ায়। মাটিতে সরাসরি ইউরিয়া সার প্রয়োগ করলে স্প্রে করার তুলনায় চার গুণ বেশি সার লাগে। ইউরিয়া সারের ভালো গুনাগুণ পাওয়ার জন্য কিভাবে স্প্রে করে সার প্রয়োগ করতে হবে সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-
  • প্রথমে প্রতি লিটার পানিতে ৫০ গ্রাম ইউরিয়া ও ৫ গ্রাম পটাশ মিশাতে হবে। প্রথমবারে এটি প্রথম স্প্রে ৪০ দিনে ব্যবহার করতে হবে তারপর দ্বিতীয় স্প্রে ৫৫ দিনে এবং তৃতীয় স্প্রে করতে হবে ৭৫ থেকে ৭৭ দিনের মধ্যে। এভাবে স্প্রে করলে ইউরিয়া সারের অপচয় কম হয় এবং ফলন ভালো পাওয়া যায়।

টবে ইউরিয়া সার দেওয়ার নিয়ম

বর্তমানে ছাদ বাগানে বিভিন্ন ধরনের গাছ চাষ করা হয়ে থাকে। অনেকে এই গাছ শক্তিশালী করতে বা ভালো রাখতে রাসায়নিক সার ব্যবহার করে থাকেন। এই সারগুলোর মধ্যে ইউরিয়া বেশি ব্যবহার করা হয়। তবে টবের গাছে কি পরিমাণ ইউরিয়া সার ব্যবহার করতে হয় এ সম্পর্কে জানা অনেক প্রয়োজন। টবের গাছে ইউরিয়া সার দেওয়ার জন্য প্রথমে এক লিটার পানি নিতে হবে।

তারপর পানিতে হাফ চা চামচ করে ইউরিয়া, এমওপি, পিএসপি এবং এক চিমটি করে সালফার অথবা বরুণ একটু করে নিতে হবে। এগুলো পানিতে ভালোভাবে মিশে না যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সম্পূর্ণভাবে গলে গেলে এই পানি গাছের গোড়ায় ঢেলে দিতে হবে।

পটাশ সার ব্যবহারের নিয়ম

উদ্ভিদ কোষের ভেদ্যতা রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে পটাশিয়াম। পটাশিয়াম গাছের জন্য অতি প্রয়োজন কারণ পটাশিয়ামের অভাব দেখা দিলে পুরাতন পাতার রং পরিবর্তন হতে শুরু করে। পাতার শিরার মধ্যে বাদামী রঙের টিস্যু তৈরি হতে দেখা যায় এবং গাছের বৃদ্ধি কমে যায়। গাছ মাটির দিকে ন্যুয়ে পড়ে এবং পোকামাকড়ের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়।

৬ ইঞ্চি টব এর জন্য হাফ চামচ করে পটাশ স্যার দিতে হবে। ১২ ইঞ্চি টবে এর ক্ষেত্রে দুই চামচ পটাশ সার ব্যবহার করা যাবে। বড় ড্রাম বা বালতির ক্ষেত্রে এটি চার থেকে পাঁচ চামচ ব্যবহার করতে হবে। এটি গাছ থেকে একটু দূরে ছিটিয়ে দিতে হবে এবং তারপর পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি দিতে হবে। এছাড়াও পটাশ পানিতে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় ব্যবহার করা যাবে সেজন্য এক লিটার পানিতে এক চামচ পটাশ দিতে হবে।

পটাশ সার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করে গাছের পাতায় দেওয়া যায় সে ক্ষেত্রে সাদা পটাশ ভালো কাজ দিয়ে থাকে। পটাশ সার প্রতি মাসে একবার ব্যবহার করতে হয়। তাহলে গাছে ফুল ও ফল ভালো ধরে।

ভেজাল পটাস সার চেনার উপায়

ফসলের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সার হচ্ছে এমওপি সার বা পটাশ সার। গাছের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যতম উপাদান হচ্ছে পটাশিয়াম যা যোগান দিয়ে থাকে এই সার। বহু বছর ধরে কৃষক ভাইয়েরা পটাশার ব্যবহার করে ভালো ফলন পাচ্ছে। সেজন্য এর চাহিদা অন্যান্য সারের তুলনায় অনেক বেশি। কিন্তু বর্তমান সময়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা এই সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য বাজারে বিভিন্ন ধরনের ভেজাল পটাশ সার তৈরি করেছে যেগুলো ফসলের জন্য অনেক ক্ষতিকারক।

আপনি যদি ভালো ফসল পেতে চান তাহলে অবশ্যই আসল পটাশ সার চিনে ব্যবহার করতে হবে। আমরা এখানে ভেজাল পটাশ সার চেনার কয়েকটি উপায় সম্পর্কে আপনাদের সামনে তুলে ধরবো। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক-
  • ভালো পটাশ সার সব সময় ঝরঝরে হয়ে থাকে এটি কখনো দলা বেঁধে থাকে না এবং শুষ্ক প্রকৃতির হয়ে থাকে। কিন্তু ভেজাল পটসার ভেজা বা দলা বেঁধে থাকে।
  • আসল এমওপি সার বা পটাশ সার এক চামচ পরিমাণ নিয়ে এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রাখলে পাঁচ মিনিট পর গ্লাস ঠান্ডা হয়ে যায় কিন্তু ভেজাল পটাশার কম ঠান্ডা হয়।
  • স্বচ্ছ পানিতে এক চামচ পটাশ সার ব্যবহার করলে সম্পূর্ণভাবে গলে যায় এবং পানির সাথে মিশে যায় কিন্তু ভেজাল সার সম্পূর্ণভাবে পানির সাথে মিশে যায় না এর ভেজাল দ্রব্যগুলো পানির তলায় পড়ে থাকে।
  • মাটি বা অন্যান্য উপাদানের সাথে রং মিশিয়ে ভেজাল তৈরি পটাশ সার তৈরি করা হয়। ভেজাল সার চেনার ক্ষেত্রে এটি পানিতে ডুবিয়ে রাখলে এর রংগুলো পানির উপরে ভেসে ওঠে।
  • ভেজাল এমওপি সার বাইরে রাখলে বাতাসে সংস্পর্শে এটি ভিজে ওঠে কিন্তু আসল এমওপি বা পটাশ সার বাতাসে সংস্পর্শে ভিজে উঠে না।

লেখকের মন্তব্য

আপনি যদি গাছপ্রেমী হয়ে থাকেন তাহলে কোন গাছে কোন সার প্রয়োগ করতে হবে এবং কোন সার প্রয়োগ করার পরিমাণ কতটুকু এ বিষয়ে জেনে বুঝে প্রয়োগ করবেন। কারণ অতিরিক্ত সার প্রয়োগ করলে গাছের জন্য ক্ষতি হতে পারে বা কম সার প্রয়োগ করলেও গাছ শক্তিশালী বা ভালো নাও হতে পারে।

প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধু বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url