শিশুদের সাবু খাওয়ার উপকারিতা - সাবুদানা খেলে কি বাচ্চার ঠান্ডা লাগে

প্রিয় পাঠক, আপনি কি শিশুদের সাবু খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনাকে জানতে সাহায্য করবে। আমরা আপনাকে শিশুদের সাবু খাওয়ানোর উপকারিতা এবং সাবুদানা খেলে ঠান্ডা লাগে কিনা এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
শিশুদের সাবু খাওয়ার উপকারিতা
এ আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন শিশুদের জন্য সাবুদানার খিচুড়ি তৈরি রেসিপি, আসল সাবুদানা চেনার উপায়, সাবুদানা খেলে কি মোটা হয় এবং চুলের জন্য সাবুদানার উপকারীতা।

ভূমিকা

সাবুদানা পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং স্বাস্থ্যকর এটি খাদ্য যা ছোট বড় সকলেই খেয়ে থাকে। এই খাবারটি বিশেষ করে শিশুদের বেশি খাওয়ানো হয়। কারণ বাড়ন্ত বয়সে শিশুর অধিক পুষ্টির প্রয়োজন হয়। শিশুদের স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ানো বেশি জরুরী কারণ তাদের দৈহিক বৃদ্ধি এবং মানসিক বিকাশ ছোটবেলাতেই থেকে হয়ে থাকে।


সাবুদানা মূলত স্টার্চ জাতীয় খাবার যেটি স্বাস্থ্যকর খাবারের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই খাবারটি যেমন শিশুদের জন্য অত্যন্ত উপকারী তেমনি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য অনেক উপকারী। কারণ এই খাবার সহজে হজম করা যায় জন্য চিকিৎসকরা রোগীদেরও এটি খাওয়ার কথা বলে থাকেন।

সাবুদানা দেখতে বীজের মত হওয়ার কারণে অনেকে মনে করেন এটি কোন ফল বা গাছে ধরে। সাবুদানা কোন ফল না। পাম জাতীয় গাছের মূল থেকে এক ধরনের রস নিষ্কাশন করা হয় যা শুকানোর পর ময়দার মত দেখা যায়। তারপর সেটিকে যান্ত্রিক উপায়ে ছোট ছোট দানায় পরিণত করা হয়। এভাবে তৈরি করা হয় সাবুদানা। সাবুদানা শিশু ও বড় প্রত্যেকের জন্যই অনেক উপকারী।

শিশুদের সাবু খাওয়ার উপকারিতা

সাবুদানা পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং অনেক স্বাস্থ্যকারী খাদ্য যা শিশুদের শারীরিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাহলে চলুন শিশুদের শারীরিক উন্নয়নে কি ধরনের ভূমিকা পালন করে এবং শিশুদের সাবুদানা খাওয়ায় কি ধরনের উপকারিতা রয়েছে সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-

পেশির বৃদ্ধিতেঃ সাবুদানা হচ্ছে প্রোটিনের সবচেয়ে ভালো এবং অন্যতম একটি উৎস। এটির নিরামিষ প্রোটিনের প্রাকৃতিক উৎসগুলোর মধ্যে একটি। অনেক শিশু রয়েছে বা অনেক লোক রয়েছে যারা নিরামিষ ভোজী সেজন্য তাদের মধ্যে প্রোটিনের অভাব বেশি দেখা দেয়। নিয়মিত সাবুদানা খেলে সেই প্রোটিনের অভাব পূরণ হয়ে যায়। প্রোটিনের সম্পূর্ণ চাহিদা পূরণ করে পেশী বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

হাড়ের উন্নয়নেঃ সাবুদানাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম যা হাড়ের জন্য খুবই উপকারী। ক্যালসিয়াম শিশুদের প্রাথমিক অবস্থা থেকে প্রয়োজনীয় কারণ সে সময় শিশু তার শরীরের শক্তির ব্যবহার শিখে। সেজন্য প্রতিদিন সাবুদানা খাওয়ানো হলে শিশুর ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ হয় এবং হাড়ের বিকাশে সহায়তা করে।

ওজন বৃদ্ধিতেঃ সাবুদানা স্টার্চ এবং শর্করা সমৃদ্ধ খাদ্য যা শিশুকে ভালো চর্বি ও বেশি ওজন লাভ করতে সাহায্য করবে। সেজন্য আপনি যদি মনে করেন আপনার বাচ্চার বয়সের তুলনায় ওজন কম তাহলে আপনি আপনার বাচ্চাকে প্রধান খাদ্য হিসেবে সাবুদানা খাওয়াতে পারেন। এটি বাচ্চার ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।

রক্ত সঞ্চালনঃ উচ্চ পটাশিয়ামের স্তর রয়েছে এই সাবুদানায়। সেজন্য ক্যারেডিও ভাস্কুলার সিস্টেমের কার্যকারিতায় সহায়তা করে থাকে। প্রতিদিন শিশুকে সাবুদানা খাওয়ানো হলে এটি শিশুর রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক করে এবং শরীরকে সুস্থ রাখে।

হজম শক্তি বৃদ্ধি করেঃ সাবুদানা সহজে হজম করা যায় বলে এটি বাচ্চাদের জন্য অনেক ভালো। এই খাবারটি যদি বাচ্চাদের ঠিকমতো খাওয়ানো হয় তাহলে হজম প্রক্রিয়া সহজ হবে এবং পাঁচক সিস্টেমকেও উন্নত করবে। শিশুদের হজম প্রক্রিয়া বৃদ্ধি করতে সাবুদানা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

শরীরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখেঃ সাবুদানা শিশুদের শরীরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এটি শিশুদের শরীরের উপর শীতল প্রভাব ফেলে এবং গরম ও অস্বস্তিকর হওয়া থেকে বিরত রাখে।

শারীরিক শক্তি বৃদ্ধিতেঃ সাবুদানা শিশুদের শারীরিক শক্তি বৃদ্ধিতে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে। এতে শরীরের ক্লান্তিভাব দূর করে শক্তির মাত্রা বাড়াতে অধিক কার্যকরী। সাবুদানা সহজে হজম করা যায় কিন্তু এর হজম প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে বলে সহজে খিদে লাগে না।

শিশুদের জন্য সাবুদানার খিচুড়ি তৈরি রেসিপি

একটি শিশুর বাড়ন্ত বয়সে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া অতি প্রয়োজন। সেজন্য প্রতিটি শিশুর মায়েরা বাচ্চাদের খাবার নিয়ে অত্যন্ত সচেতন। বাচ্চাদের যেসব পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো হয় সেগুলোর মধ্যে সাবুদানার খিচুড়ি একটি। সেজন্য আজ আমরা এখানে সাবুদানা দিয়ে কিভাবে খিচুড়ি তৈরি করে হয় সেই রেসিপি আপনাদের সামনে তুলে ধরবো তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক-

প্রয়োজনীয় উপকরণ

  • এক কাপের চার ভাগের এক ভাগ সাবুদানা
  • একটি ছোট করে কাটা সেদ্ধ আলু
  • একটি সেদ্ধ গাজর ছোট করে কাটা
  • আধা চা চামচ জিরা
  • এক চিমটি পরিমাণ হিং
  • আধা চা চামচ ঘি

প্রস্তুত প্রণালী

প্রথমে সাবুদানাগুলোকে প্রস্তুত করুন। তারপর চুলায় প্যান বসিয়ে ঘি গরম করে নিন এবং তার মধ্যে জিরা ও হিং আলাদা করে যোগ করুন। এরপর কিছুক্ষণ নেড়েচেড়ে তার মধ্যে সেদ্ধ করে রাখা আলু ও গাজর যোগ করুন। এরপর স্বচ্ছ সাবুদানা তার সাথে যোগ করে কয়েক মিনিট ভালোভাবে নেড়েচেড়ে নিন।


এটি বেশি শুষ্ক করতে না চাইলে তার সাথে পরিমাণ মতো পানি যোগ করুন। তারপর কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে চুলা থেকে নামিয়ে নিন। এভাবেই তৈরি করা হয় সাবুদানা দিয়ে খিচুড়ি।

আসল সাবুদানা চেনার উপায়

বাজারে অনেক সাবুদানা বের হয়েছে সেজন্য আসল নকল চিনা নিয়ে বেশ আশঙ্কায় রয়েছেন ক্রেতারা। অনেকেই নকল সাবুদানা আসল সাবুদানা মনে করে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন এবং বাচ্চাদের খাওয়াচ্ছেন। এতে করে বাচ্চার উপকার তো হচ্ছে না বরং বাচ্চার শরীরকে ক্ষতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আজ আমরা এখানে আসল সাবুদানা চেনার কয়েকটি উপায় আপনাদের সামনে আলোকপাত করব।
  • আসল বা নকল সাবুদানা চেনার প্রথম পদ্ধতি হচ্ছে রং দেখে। আসল সাবুদানা দেখতে পানির রংয়ের মতো বা স্বচ্ছ হয়ে থাকে। আর নকল সাবুদানা দেখতে একবারে ধবধবে সাদা হয়।
  • আসল সাবুদানার সব ধরনের আকার থাকে ছোট এবং বড় কিন্তু নকল সাবুদানার আকার একই রকমের বা সবগুলো দানায় সমান সমান।
  • নকল সাবুদানা তৈরি করা হয় ময়দা থেকে যা ভিজিয়ে রাখলে গলে যায় বা রান্না করলে গোটা গোটা ভাব থাকে না। কিন্তু আসল সাবুদানা তৈরি হয় শেকড় থেকে যা ভিজিয়ে রাখলেও গোটা থাকে এবং রান্না করার পরও গোটা থাকে।
  • চেনার সুবিধার্থে কিনে নিয়ে আসা সাবুদানা এক ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন তারপর যদি আসল হয় তাহলে পানির রংয়ের কোনো পরিবর্তন হবে না এবং নকল হলে পানি ঘোলাটে হয়ে যাবে এবং হাত দিয়ে চাপ দিলে গলে যাবে।

সাবুদানা খেলে কি বাচ্চার ঠান্ডা লাগে

সাবুদানা খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে বলে অনেক মায়ের প্রশ্ন করেন সাবুদানা খেলে বাচ্চার ঠান্ডা লাগে কিনা ও বর্ষাকালে বা শীতকালে সাবুদানা খেলে ঠান্ডা লাগে কিনা। সাবুদানা খেলে বাচ্চার ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা নেই। তবে সাবুদানায় যদি আপনার বাচ্চার এলার্জি থাকে সে ক্ষেত্রে ঠান্ডা লাগতে পারে। সেজন্য আপনি সচেতন মা হিসেবে সর্বপ্রথম দেখবেন সাবুদানায় আপনার বাচ্চার এলার্জি হচ্ছে কিনা।

যদি হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে সাবুদানা না খাওয়ানোই ভালো কারণ এতে বাচ্চার ঠান্ডা লাগতে পারে। তার সাথে পেটে ও পিঠে ঘামাচির মত লাল রেশ বের হতে পারে। এলার্জি না থাকলে সাবুদানা খেলে শিশুদের কোনভাবেই ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা নেই। কারণ সাবুদানা সহজে শিশুরা হজম করতে পারে জন্য কোন রোগ বা সমস্যা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

সাবুদানা খেলে কি মোটা হয়

বেশিরভাগ মানুষ প্রশ্ন করে থাকেন সাবুদানা খেলে মোটা হয় কিনা। সাবুদানা খেলে মোটা হয় এরকম কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এটি পরিমাণমতো খেলে ওজন স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। যাদের কম ওজন রয়েছে তাদের ওজন ঠিক মাপে নিয়ে আসে। কিন্তু পরিমাণমতো সাবুদানা খেলে অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পায় এ কথা ঠিক নয়।


পরিমাণের অতিরিক্ত সাবুদানা খেলে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। শুধুমাত্র সাবুদানায় না যে কোন খাবার প্রয়োজনের অতিরিক্ত খেলে ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণ থাকে। সেজন্য সাবুদানা যদি আপনি পরিমাণমতো খেয়ে থাকেন তাহলে ওজন অতিরিক্ত বৃদ্ধি পাবে না। কিন্তু পরিমাণের অতিরিক্ত খেয়ে ফেললে আপনার ওজন অনেক বেড়ে যেতে পারে।

সাবুদানা খেলে কি হয়

আমরা জানি সাবুদানা পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং স্বাস্থ্যকর একটি খাবার। যা শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবাই নিশ্চিন্তে খেতে পারেন। যারা শক্ত খাবার খেতে পারেন না বা কোন কারণে শক্ত খাবার না খাওয়া নির্দেশনা রয়েছে তারা এই সাবুদানা নিশ্চিন্তে খেতে পারেন। কারণ সাবুদানা সহজে হজম করা যায় এবং শরীরের অন্য কোনকোন সমস্যা হয় না। এ সাবুদানা খেলে পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয়।

সাবুদানাতে রয়েছে প্রোটিন. ক্যালসিয়াম ইত্যাদি পুষ্টি উপাদান যা শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং শারীরিক বিকাশে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে। সাবুদানা বিশেষ করে শিশুদের খাওয়ানো হয়। কারণ এই খাবারটি সহজে হজম করা যায় এবং শিশুদের পরিপূর্ণ পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

চুলের জন্য সাবুদানা উপকারী

সাবুদানাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন যা চুলের জন্য অনেক উপকারী। এটি অকালে চুল পাকা এবং চুল পড়া রোধ করে, খুশকির হাত থেকে চুলকে রক্ষা করে এবং চুলের বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত সাবুদানা খেলে চুলের গোড়ায় পরিপূর্ণ পুষ্টি যুগিয়ে চুলের গোড়া মজবুত করে। যার ফলে চুল পড়া কমে যায় এবং নতুন চুল গজাবে।

এটি চুলের ঘনত্ব ও উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। স্বাস্থ্যকর চুল পেতে হলে নিয়মিত সাবুদানা খাওয়া উচিত।

মন্তব্য

সাবুদানার অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে বিশেষ করে শিশুদের। শিশুদের সুস্বাস্থ্যের জন্য এটি খুবই উপকারী। তবে আপনি সচেতন মা হিসেবে আপনার উচিত সাবুদানা খাওয়ানোর পর আপনার শিশুর শারীরিক প্রতিক্রিয়া দেখা। কোন রকম সমস্যা দেখা দিলে সাবুদানা খাওয়ানো উচিত নয়।

প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধু বান্ধব এবং কাছের মানুষদের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url