অল্প বয়সে চুল পাকার কারণ - ঘরোয়া উপায়ে চুল কালো করার উপায়

প্রিয় পাঠক, আপনি কি অল্প বয়সে চুল পাকার কারণ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনাকে জানতে সাহায্য করবে। এ আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমরা আপনাকে অল্প বয়সে চুল পাকার কারণ ও ঘরোয়া উপায়ে চুল কালো করার উপায় সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
অল্প বয়সে চুল পাকার কারণ
এ আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন চুল কালো করার ঘরোয়া উপায়, কালোজিরা দিয়ে চুল কালো করার উপায়, চা পাতা দিয়ে চুল কালো করার উপায়

ভূমিকা

মানুষের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে চুল পেকে যায় এটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু অনেকের অল্প বয়সে চুলে পাক ধরা শুরু করে। বিশেষজ্ঞরা অল্প বয়সে চুল পাকার কারণ হিসেবে ভিটামিন এর অভাবকে দায়ী করেছেন। ভিটামিন বি সিক্স, ভিটামিন বি টুয়েলভ, বায়োটিন, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই ইত্যাদির অভাবে অল্প বয়সে চুল পেকে যায়। এছাড়াও জিনগত কারণেও অল্প বয়সে চুল পাকে।


আবার মানুষের অভ্যাসগত কারণেও চুলপাকে যেমন অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ধূমপান ইত্যাদি। অল্প বয়সে চুল পাকলে তা কালো করার জন্য মানুষ নানা ধরনের কৃত্রিম হেয়ার কালার ব্যবহার করে থাকে। কৃত্রিম হেয়ার কালার ব্যবহারের ফলে দ্রুত ফলাফল পাওয়া গেলেও এটি স্থায়ী হয় না বা এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে।


সেজন্য আমরা এখানে ঘরোয়া উপায়ে চুল কালো করার কয়েকটি পদ্ধতি আপনাদের সামনে তুলে ধরবো। যেগুলো ব্যবহার করা সম্পূর্ণ নিরাপদ। এগুলোর মাধ্যমে চুল কালো করলে স্থায়িত্ব দীর্ঘদিন থাকে।

অল্প বয়সে চুল পাকার কারণ

শরীরে কোনো না কোনো সমস্যার কারণে অল্প বয়সে চুল পেকে যায়। তাহলে চলুন কি কি সমস্যার কারণে অল্প বয়সে চুল পাকে সেগুলো জেনে নেওয়া যাক। শরীরে এমন কিছু রোগ রয়েছে যেগুলোর কারণে বুড়ো হওয়ার আগে চুল পেকে যায় সেগুলো হলো থাইরয়েডের সমস্যা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জনিত সমস্যা, রক্তশূন্যতা, রোজেরিয়া, প্রাঞ্জেরিয়া ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হলে কম বয়সে চুল পেকে যায়।


এগুলো ছাড়াও এমন কতগুলো ভিটামিন রয়েছে সেগুলোর অভাব হলে চুল পেকে যায় যেমন ভিটামিন বি সিক্স, ভিটামিন বি টুয়েলভ, ভিটামিন ই, ভিটামিন ডি, বায়োটিন, আয়রন ও কপার ইত্যাদি ঘাটতি হলে অল্প বয়সে চুল পেকে যায়।

চুল কালো করার ঘরোয়া উপায়

ঘরোয়া উপায়ে চুল কালো করা যায় এ সম্পর্কে অনেকেই জানেনা বিধায় তারা হেয়ার কালার ব্যবহার করে চুল কালো করে। তাহলে চলুন চুল কালো করার ঘরোয়া উপায়গুলো জেনে নেওয়া যাক-

আমলকি ও নারিকেল তেলঃ আমলকি ও নারিকেল তেল চুল কালো করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ আমলকিতে রয়েছে ভিটামিন সি যা কোলাজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে সক্ষম। সেজন্য এই আমলকি নারিকেল তেলের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে চুল কালো হয়ে যায়। আমলকি দিয়ে চুল কালো করতে হলে প্রথমে নিতে হবে দুই চা চামচ আমলকির গুড়া এবং হালকা গরম নারিকেল তেল।

এই উপাদানগুলো একসাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে তারপর ঠান্ডা করে চুলে লাগাতে হবে। এগুলো চুলে ব্যবহারের পর একঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে তারপর শ্যাম্পু দিয়ে ফেলতে হবে। এ তেল সপ্তাহে তিন দিন ব্যবহার করতে হবে। এটি ব্যবহার করলে প্রাকৃতিকভাবে আপনার চুল কালো হয়ে যাবে।

কারি পাতা ও নারিকেল তেলঃ চুল কালো করতে কারি পাতার রয়েছে যথেষ্ট গুনাগুণ। চুল কালো করতে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপাদান হলো মেলানিন যা প্রচুর পরিমাণে রয়েছে এই কারি পাতার মধ্যে। কারি পাতা যেমন চুল কালো করে তেমনি নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। এর কার্যকারিতা পাওয়ার জন্য প্রথমে নিতে হবে তিন চামচ তেল এবং পাঁচ থেকে ছয়টি কারি পাতা।

তারপর এটি চুলাতে বসিয়ে গরম করে নিতে হবে যতক্ষণ না পর্যন্ত তেলের রং কালো হয়ে যায়। তেলের রং কালো ধারণ করলে চুলা থেকে নামিয়ে ঠান্ডা করে নিতে হবে। তারপরে চুলের গোড়ায় ব্যবহার করতে হবে। ব্যবহার করার পর এক ঘণ্টা অপেক্ষা করে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। ভালো ফলাফল পেতে হলে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন ব্যবহার করতে হবে এই উপাদানগুলো।

লেবুর রস ওনারিকেল তেলঃ নারিকেল তেলের সাথে লেবুর রস মিশিয়ে চুল কালো করা সম্ভব। কারণ লেবুর রসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও ফসফরাস। সেজন্য এটি চুলের পিগমেন্টেশন বজায় রাখতে সাহায্য করে। লেবু খেলে যেমন উপকারী পাওয়া যায় তেমনি চুলে ব্যবহার করলেও অনেক উপকারী।

২ চা চামচ লেবুর রসের সাথে ২ চা চামচ হালকা গরম নারিকেল তেল মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর ঠান্ডা হলে এটি চুলের গোড়ায় ব্যবহার করতে হবে। এটিও ঘন্টাখানিক রেখে তারপর শ্যাম্পু দিয়ে ফেলতে হবে।

পেঁয়াজ বাটাঃ পেঁয়াজ বাটা ব্যবহারের ফলে যেমন চুল পড়া কমায় তেমনি চুল কালো করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সে জন্য পেঁয়াজ ভালো করে পেস্ট করে চুলে লাগিয়ে রাখতে হবে এবং শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে কয়েকদিন ব্যবহার করলে পাকা চুলের সংখ্যা কমতে থাকবে।

ঝিঙ্গে ও নারিকেল তেলঃ ঝিঙ্গে ও নারিকেল তেল ব্যবহার করলে চুল কালো হয়ে যায়। সেজন্য নারিকেল তেলের মধ্যে তিন দিন ঝিঙে ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর সেটি চুলায় দিয়ে ফুটাতে হবে যতক্ষণ না পর্যন্ত কালো রং ধারণ করে ততক্ষণ পর্যন্ত। তারপর এটি চুলে দিয়ে ভালোভাবে মেসেজ করতে হবে এবং এক ঘন্টা পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

তিলঃ চুল কালো করতে তিল বাদাম হচ্ছে খুবই কার্যকরী। এটি নিয়মিত খেলে চুল পাকা কমে যাবে সেই সাথে চুল কালো ও ঝলমলে করে তুলবে। সেজন্য সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন তিন খেতে হবে।

জবা ফুলঃ জবা ফুল পাকা চুল কালো করতে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে। সেজন্য কয়েকটি জবা ফুল তার সাথে পাতা নিয়ে একসাথে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। তারপর এ পেস্টটিকে নারিকেল তেলের সাথে মিশিয়ে নিতে হবে। পরবর্তীতে সামান্য পরিমাণ পানি যোগ করতে হবে এই মিশ্রণটিতে। তারপর এটি চুলে মেখে আধা ঘন্টা রেখে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

কালোজিরা দিয়ে পাকা চুল কালো করার উপায়

অনেক সময় বয়স কম থাকা সত্ত্বেও চুল পেকে যায়। চুল পাকা নিয়ে বিশেষজ্ঞগণ বলেন, চুল একবার পেকে গেলে কালো হবে না এরকম কোন কথা নেই। অল্প বয়সে চুল পাকলে সেই চুল কালো করা সম্ভব। কালোজিরা দিয়ে খুব সহজেই পাকা চুল কালো করা যায়। কালোজিরায় রয়েছে এমন গুনাগুন যা চুলের জন্য যেমন উপকারী তেমনি স্বাস্থ্যের জন্যও।

কেননা কালোজিরায় রয়েছে এন্টিহিস্টামিন ও অ্যান্টি ফাঙ্গাস উপাদান যা স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত উপকারী। স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এটি অনেকেই জানেন কিন্তু অনেকেই জানেন না এটি চুলের জন্য অনেক উপকারী। কালোজিরা তেল ব্যবহার করার মাধ্যমে পাকা চুল কালো করা, চুলের গোড়া মজবুত করা, খুশকি দূর করা এবং মাথার ত্বক ভালো রাখা ইত্যাদি ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

সেজন্য চুল কালো করতে অন্যান্য উপাদানের উপর ভরসা না করে ব্যবহার করতে পারেন কালোজিরা বা কালোজিরা তেল। চুলে মেলানিনের পরিমাণ কম হলে চুল পাকা শুরু হয়। কিন্তু কালোজিরায় মেলানিনের উৎপাদন বৃদ্ধি করে যার ফলে চুল পাকা কমায় এবং চুল কালো করে। কালোজিরার তেল সরাসরি ব্যবহার না করে নারিকেল তেলের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

এই তেল ব্যবহারের ফলে মাথার ত্বকের সংক্রমন দূর হয়ে যায়। চুলের জন্য ভালো ফলাফল পেতে হলে সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করতে হবে।

চা পাতা দিয়ে চুল কালো করার উপায়

অনেকের অল্প বয়সে চুল পেকে থাকে এবং সেই চুল কালো করা অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়ে। পাকা চুল কালো করা যায় প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে। পাকা চুল কালো করতে প্রাকৃতিক যে উপাদান ব্যবহার করা হয় সেগুলোর মধ্যে চা পাতা একটি অন্যতম উপাদান। চা পাতার সাথে হেনা প্যাক মিশিয়ে ব্যবহার করলে চুল দ্রুত কালো হয়ে যায়।

চা পাতা ব্যবহার করে চুল কালো করতে চাইলে চা পাতার রস হেনা প্যাক এর সাথে মিশিয়ে চুলে লাগাতে হবে তারপর আধা ঘন্টা রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে।

চুল কালো করার তেল

চুল কালো করার জন্য বাজারে বিভিন্ন ধরনের তেল পাওয়া যায়। কিন্তু সে তেলগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কেমিক্যালযুক্ত। এগুলো তেল ব্যবহার করার ফলে চুল কালো হলেও এগুলোর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে যা চুলের জন্য অনেক ক্ষতিকর হবে। চুল কালো করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সরিষার তেল।

এটি চুলের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং প্রাকৃতিক উপাদান। এছাড়াও তিলের তেল ব্যবহারের ফলে চুল কালো হয়। সেক্ষেত্রে তিলে তেলের সাথে গাজরের রস মিশিয়ে ব্যবহার করতে হবে। তিলের তেল ও গাজরের রস একসাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে চুল পাকা কমে যায় এবং চুলের গোড়া মজবুত হয়।

চুলের পাকা বন্ধ করবে যেসব খাবারে

চুল পাকা দূর করতে বা চুল কালো করতে শুধুমাত্র তেল শ্যাম্পু বা অন্যান্য উপাদানের উপর নির্ভর না করে সঠিক খাবার খাওয়া প্রয়োজন। কেননা ভিটামিনের অভাবে চুল পাকা শুরু হয়। আর এই ভিটামিন পাওয়া যায় খাবার খাওয়া থেকে। চুল পাকা বন্ধ করার খাবারগুলো হল দুধের ছানা, পায়েস, বড় ধরনের মাছ, গরুর মাংস, খাসির মাংস ইত্যাদি। এগুলো খাবার খেলে মাথার চুল পাকতে বাধা তৈরি করে।

এছাড়াও চুল পাকারোধ করতে আরো কয়েকটি শাকসবজি খেতে পারেন, যেমন লালশাক, পুইশাক, গাজর, মটরশুটি ইত্যাদি৷ চুল পাকা কমাতে যেগুলো ফল খেতে হবে সেগুলো হলো তরমুজ, কমলা, আপেল, আঙ্গুর, বেদনা ইত্যাদি৷ এগুলো খাবার খাওয়ার ফলে চুল পাকা কমবে তেমনি চুলের গোড়ায় পুষ্টি যোগাতেও সাহায্য করবে।

লেখকের মন্তব্য

চুলের অকালপক্কতা বাহ্যিক সৌন্দর্য নষ্ট করতে সক্ষম। সেজন্য পাকা চুল কালো করতে সবসময় প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করবেন এবং পুষ্টিকর খাবার খাবেন। কেননা প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করলে চুলের কোন ক্ষতি হয় না এবং পুষ্টিকর খাবার খেলে চুলের অকালপক্কতা রোধ হয় এবং শরীরও সুস্থ থাকে।

প্রিয় পাঠক, এ আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধু বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url