চুলের যত্নে নিম তেলের উপকারিতা - নিম তেল তৈরির নিয়ম

প্রিয় পাঠক, আপনি কি চুলের যত্নে নিম তেলের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। এ আর্টিকেলটি আপনাকে জানতে সাহায্য করবে। এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমরা আপনাকে চুলের যত্নে নিম তেলের উপকারিতা এবং নিম তেল তৈরির নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
চুলের যত্নে নিম তেলের উপকারিতা
এ আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন গাছের জন্য নিম তেলের ব্যবহার, নিম তেলের দাম, ত্বকে নিম তেল ব্যবহার করলে কি হয় ইত্যাদি।

ভূমিকা

সুন্দর ও ঝলমলে চুল আমরা সবাই চাই। চুলের যত্নে বা চুল সুন্দর রাখতে স্ক্যাল্প ভালো রাখা অতিব জরুরী। স্ক্যাল্প ভালো থাকলে চুল সুন্দর ও স্বাস্থ্যজ্জ্বল হবে। চুলের সুস্থতা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নির্ভর করে স্ক্যাল্পের উপর। প্রায় সময় বেশিরভাগ মানুষের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা লেগেই থাকে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে স্ক্যাল্পে চুলকানি বা জ্বালা জ্বালা ভাব।


স্ক্যাল্প যদি অতিরিক্ত পরিমাণ শুষ্ক হয় তাহলে বিভিন্ন ধরনের সংক্রম বেড়ে যায়। আর এইসব সমস্যার কারণে চুলের অনেক ক্ষতি হয়। স্ক্যাল্প ভালো রাখতে হলে ব্যবহার করতে হবে নিম তেল। এটি চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী বিশেষ করে স্ক্যাল্পের জন্য। নিম তেল একদিকে যেমন স্ক্যাল্পের সংক্রমণ রোধ করে অপরদিকে চুলের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে থাকে।

কারণ নিমের তেলে রয়েছে অ্যান্টিসেপটিক গুনাগুণ যা চুলে সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। আপনি কি জানেন নিমের তেল চুলার জন্য কত উপকারী যদি না জেনে থাকেন তাহলে এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণভাবে পড়ুন। কারণ নিমের তেলের গুনাগুণ সম্পর্কে জানা আপনার জন্য অবশ্যক।

কারণ বেশিরভাগ মানুষেরই চুলের কোন না কোন সমস্যা লেগেই থাকে। আর এই তেলে দূর হবে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা।

নিম তেলের উপকারিতা

নিমের উপকারিতা জানলেও নিম তেলের উপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদের সামনে নিম তেলের উপকারিতা সম্পর্কে তুলে ধরব। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক-

উকুনের সমস্যায়ঃ অনেক মেয়েদের চুলে উকুনের সমস্যা দেখা দেয়। আর এই সমস্যা একজনের মাথায় থাকলে পুরো বাড়ীর মানুষের মধ্যেও তৈরি হয়। একজনের মাথা থেকে আরেকজনের মাথায় খুব সহজে পার হয়ে যায় এই উকুন। উকুন তাড়ানোর ঘরোয়া উপায় হিসেবে অনেকেই নিমের পাতা ব্যবহার করে থাকেন।

তবে উকুনের সমস্যা দূর করতে হলে নিম তেল ব্যবহার করতে হবে। এটি নিয়মিত কয়েকদিন ব্যবহার করলে ধীরে ধীরে সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

খুশকি দূর করেঃ খুশকি সমস্যায় অনেকে নাজেহাল থাকে। খুশকি এমন পর্যায়ে চলে যায় যে চুল নাড়াচাড়া করলে মাথা থেকে  খুশকি ঝরে পড়ে যা অনেক সময় বিব্রত কর অবস্থা তৈরি করে। এই সমস্যা দূর করতে হলে নিম তেল ব্যবহার করতে পারেন। নিম তেল খুশকি দূর করতে অত্যন্ত কার্যকরী। খুশকি সাধারণত স্ক্যাল্পের সমস্যার কারণে হয়ে থাকে। আর নিম তেল স্ক্যাল্পের সমস্যা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

চুল পড়া কমায়ঃ চুল পড়া সমস্যা প্রায় মানুষের মধ্যে দেখা যায় বিশেষ করে বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এ সমস্যার বেশি প্রবল হয়। স্ক্যাল্পের সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলে চুল পড়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। নিম তেল নিয়মিত ব্যবহার করলে স্ক্যাল্পের সমস্যা দূর হয়ে যায় এবং চুল পড়া সমস্যা কমে যায়।

চুলের বৃদ্ধিতেঃ নিম তেলে রয়েছে উপকারি ফাটি এসিড যা মাথার ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

স্ক্যাল্পের চুলকানি দূর করেঃ নিম তেলে রয়েছে এন্টিফাঙ্গাল ও এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা স্ক্যাল্পের সংক্রমণ সারিয়ে তুলে এবং চুলকানির সমস্যা দূর হয়ে যায়। এছাড়াও এই তেলের মাধ্যমে স্ক্যাল্পের অন্যান্য সমস্যা ও দূর হয়ে যায়।

চুলের গোড়া মজবুত করেঃ নিম তেলে প্রচুর পরিমাণে ফাটি এসিড রয়েছে যা চুলের গোড়ায় পুষ্টি যোগাতে সাহায্য করে। যে কারণে রুক্ষ শুষ্ক ও ড্যামেজ হয়ে যাওয়া চুলকে স্বাস্থ্যজ্জল চুলে পরিণত করতে বেশি সময় লাগে না। নিম তেল চুলের গোড়া মজবুত করে যে কারণে চুল পড়া ও কমে যায়।

চুল ফাটা রোধ করেঃ চুলের পুষ্টির অভাবে চুল ভেঙ্গে যায় বা ফেটে যায়। নিম তেল চুলের গোড়ায় পুষ্টি যুগিয়ে চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখে। যার ফলে চুল ভেঙে যাওয়া বা চুল ফাটা দূর হয়ে যায়।

স্ক্যাল্পে রক্তে সঞ্চালন বৃদ্ধি করেঃ নিম তেল দিয়ে মাথায় মেসেজ করলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পেলে চুলের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়ে যায়। নতুন, চুল গজায় এবং চুল দ্রুত গতিতে বেড়ে ওঠে।

ঘরোয়া উপায়ে নিম তেল তৈরির পদ্ধতি

নিম তেল চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি চুলের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে চুলের সুস্থ্যতা বজায় রাখে। নিম তেল বাজারে বিভিন্ন দোকানে কিনতে পাওয়া যায়। তবে আপনি চাইলে ঘরোয়া উপায়ে বাড়িতে বসেই তৈরি করতে পারেন এই নিম তেল। নিম তেল তৈরি করার জন্য প্রথমে আপনাকে নিতে হবে ১৫০ গ্রাম পরিমাণ নিমপাতা ও তার সাথে কিছু পরিমাণ নিম ফল।


এরপর এগুলোকে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে এবং গ্রাইন্ডার এর মাধ্যমে গ্রাইন্ড করতে হবে। নিম তেল তৈরি করার জন্য নারিকেল তেল নিতে হবে ৫০০ গ্রাম। নিম পাতা গ্র্যান্ড করা হয়ে গেলে একটি চুলায় প্যান বসিয়ে তার মধ্যে ৫০০ গ্রাম নারিকেল তেল দিয়ে দিতে হবে। চুলাটি সব সময় হাই হিটে রাখতে হবে।

কিছুক্ষণ জ্বাল দেওয়ার পর তেলের মধ্যে থেকে ফেনা বের হয়ে আসবে তখন পেস্ট করে রাখা নিমপাতাগুলো তেলের মধ্যে দিয়ে দিতে হবে। একইভাবে রাখতে হবে চুলার তাপমাত্রা। এরপর ১৫ মিনিট ধরে জ্বাল দিতে হবে এবং মাঝে মাঝে নেড়ে দিতে হবে। ১৫ মিনিট হয়ে গেলে তারপর চুলা বন্ধ করে দিতে হবে এবং প্যানটি ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে।

এরপর তৈরি করা তেলটি ঠান্ডা হওয়ার পর ছেঁকে নিয়ে কাচের বোতলে সংরক্ষণ করতে হবে। এভাবে ঘরে বসে তৈরি করা হয় নিম তেল। এই তেলটি স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখলে ৫ থেকে ৬ মাস ব্যবহার করতে পারবেন তবে ফ্রিজে রাখলে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করা যাবে।

গাছের জন্য নিম তেলের ব্যবহার

নিম তেল শুধুমাত্র চুলের জন্য উপকারিতা নয় বরং এটি গাছের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। নিমের পাতা ও ফল দিয়ে তৈরি করার তেল কীটনাশক হিসেবে অত্যন্ত কার্যকরী। এটি এক দিকে কার্যকরী জৈব কীটনাশক অপরদিকে এটি ছত্রাকনাশক হিসেবে কাজ করে থাকে। নিম তেল সব ধরনের পোকা পোকার ডিম এবং লাভা দমন করতে অত্যন্ত কার্যকরী।


যেসব পোকা গাছের পাতা ও ডাল খেয়ে বেঁচে থাকে সেগুলো পোকা দমন করতেও এই নিম তেল খুবই কার্যকরী। এগুলো সুবিধা পেতে হলে অবশ্যই নিম তেল সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে। গাছে ব্যবহারের জন্য প্রতি লিটার পানিতে ২ থেকে ৩ এমএল নিম তেল দিতে হবে। এ তেল ব্যবহার করার পরেও যদি গাছে পোকা ধরে থাকে সে ক্ষেত্রে তেলের পরিমাণ একটু বাড়িয়ে দিতে হবে।

তখন ১ লিটার পানিতে ৫ থেকে ৬ মিলি নিম তেল ব্যবহার করতে হবে। এ পরিমাণে যদি কিছুদিন ব্যবহার করা যায় তাহলে গাছের পোকামাকড় কমে আসবে।

নিম তেলের দাম

বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ব্যান্ডের নিম তেল বের হয়েছে। প্রতিটি ব্যান্ডের তেলের দাম আলাদা আলাদা। নিম তেলের বর্তমান বাজার মূল্যে প্রতি ১০০ মিলিতে আপনাকে খরচ করতে হবে ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা। তবে এর দামের কিছুটা তারতম্য হতে পারে। কারণ আমি এখানে এই তেলের দামের কিছুটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি মাত্র।

নিম তেল কিনতে হলে দেখেশুনে কিনতে হবে। কারণ বাজারে বিভিন্ন ধরনের ভেজাল নিম তেল বের হয়েছে। আসল নিম তেল চিনতে না পারলে নকল তেল কিনে ঠকে যেতে পারেন। এজন্য অবশ্যই নিম তেল কেনার আগে আসল তেল চেনার উপায় গুলো জেনে তারপর কিনবেন।

ত্বকে নিম তেল ব্যবহার করলে কি হয়

নিম তেল চুলের জন্য যেমন উপকারী তেমনি এটি ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এই তেল ব্যবহারের ফলে অনুজ্জ্বল ত্বক বা কালো ছোপ ছোপ দাগ, বলিরেখা, শুষ্ক ত্বক এবং ত্বকের মলিনাতা দূর করতে সাহায্য করে। নিম তেলে উপস্থিত থাকা ফ্যাটি এসিড, ট্রাই গ্লিসারাইড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন ই ও ক্যালসিয়াম ত্বকের কোলাজনের উৎপাদন বৃদ্ধি করে যার ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।

সেজন্য ত্বকের যত্ন নিতে ব্যবহার করতে পারেন নিম তেল। নিম তেল সবার ত্বকে ভালো ফলাফল নাও দিতে পারে সেজন্য এটি সরাসরি ত্বকে ব্যবহার না করে প্রথমে হাতের উপরে ব্যবহার করে ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। ২৪ ঘন্টা পর এটি কোন সমস্যা না হলে তারপরে ত্বকের ব্যবহার করুন।

মন্তব্য

নিম তেলের যে সব গুনাগুণ রয়েছে তা উপরের আলোচনার মাধ্যমে কিছুটা ধারণা পেয়েছেন। আপনি নিম তেলের সম্পূর্ণ উপকারিতা পেতে হলে সঠিক নিয়ম মেনে ব্যবহার করতে হবে। প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনার বন্ধু বান্ধব ও আত্বীয়-স্বজনের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url