নিম খৈলের উপকারিতা - নিম খৈল ব্যবহারের নিয়ম

প্রিয় পাঠক, আপনি কি নিম খৈলের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনাকে জানতে সাহায্য করবে। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে নিম খৈলের উপকারিতা এবং নিম খৈল ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
নিম খৈলের উপকারিতা
এই আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন নিম খৈলের পুষ্টি উপাদান, নিম খৈল তৈরির ঘরোয়া উপায়, নিম খৈলের দাম এবং নিম খৈল কোথায় পাওয়া যায়।

ভূমিকা

নিম খৈল প্রাকৃতিক কীটনাশক যা গাছের পোকা মাখা দমনে ব্যবহার করা হয়। প্রাকৃতিক কীটনাশক ও জৈব সার এই দুইয়ের সমন্বয়ের তৈরি করা হয় নিম খৈল। এটি মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে ক্ষতিকর পোকার দমন ও ছত্রাক নাশক এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ৷ এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি করা হয় যা রাসায়নিক কীটনাশকের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

ছাদ বাগানে জৈব পদ্ধতিতে কৃষি কাজে নিম খৈল ব্যবহারের গুরুত্ব অপরিসীম।মাটির সাথে এটি ব্যবহার করলে ক্ষতিকর পোকামাকড় গাছের কোন ক্ষতি করতে পারে না। যার ফলে গাছ ভালো হয় এবং ফুল বা ফল ভালো ধরে। নিমখলে থাকা উপাদান গাছের জন্য অপরিহার্য কারণ এতে জৈব সারের গুনাগুণ রয়েছে।

আপনি যদি ছাদ বাগানে করতে চান তাহলে মাটির সাথে অবশ্যই নিম খৈল ব্যবহার করতে পারেন। এটি ব্যবহারে একদিকে ক্ষতিকর পোকামাকড় থেকে গাছকে রক্ষা করা যাবে অপরদিকে গাছের জন্য পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে।

নিম খৈলের উপকারিতা

যারা গাছ ভালবাসেন বা চাষ করেন তাদের কাছে অতি সুপরিচিত নিম খৈল। এটি গাছের জন্য অনেক ভালো বিশেষ করে টবের গাছের জন্য। তাহলে চলুন নিম খৈলের উপকারিতাগুলো জেনে নেই-
  • নিমখোল মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে বহুগুণে এবং ক্ষতিকর পোকামাকড় হতে গাছকে রক্ষা করে। এছাড়াও এটি ছত্রাক নাশক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • নিম খৈল জৈব সার মাঠ ফসল ফুল ফল ও সবজি এবং শিকড় থেকে নিমটোডস দমনে এবং সাদা পিপড়ার হাত থেকে গাছকে রক্ষা করতে খুবই কার্যকরী। এছাড়াও মাটিতে থাকা ছয় প্রজাতির পোকা এবং উইপোকা দমনে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • গবেষণা করে দেখা গেছে নিম খৈলের মাটির বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া, নাইট্রোজেন, যৌগমূলকে নাইট্রোজেন গ্যাস হওয়া থেকে বাধা তৈরি করে যা ভালো গাছ তৈরিতে খুবই উপকারী।
  • নিম খৈল মাটি পরিশোধনের জন্য ব্যবহার করা হয় যা মাটিকে সমৃদ্ধ করে এবং নাইট্রোজেনের ক্ষতি কমায়।
  • নিম খৈল গাছের শিকড় বৃদ্ধি করার জন্য মাটির জমিন, মাটিতে পানি ধারণ ক্ষমতা এবং মাটিতে বায়ু চলাচল স্বাভাবিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • নিম খৈল শুধুমাত্র পোকামাকড়ে ধ্বংস করে থাকে গাছের ভালোর জন্য কিন্তু পরাগায়নবাহী মৌমাছি, পাখি, গবাদি পশু এবং মানুষের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ।
  • নিম খৈল পোকামাকড়ের বংশ বৃদ্ধিতে বাধা তৈরি করে। এছাড়াও এটি পোকামাকড়ের হরমোন প্রক্রিয়ারও বাধা তৈরি করে।
  • নিম খৈল সবচেয়ে বেশি কার্যকরী যখন পোকামাকড় বা ক্ষতিকর পতঙ্গগুলো ছোট থাকে তখন। এই সময় তারা তাদের নিয়ন্ত্রণ করে ধ্বংস করে ফেলে যার ফলে গাছের ক্ষতি হওয়া থেকে রক্ষা পায়।
  • নিম খৈল শুধুমাত্র গাছের গোড়ার পোকামাকড় ধ্বংস করে না বরং এটি গাছের পাতা বা গাছের উপরের অংশের পোকামাকড়ও ধ্বংস করে থাকে।
  • এটি এমন একটি প্রাকৃতিক কীটনাশক যা ব্যবহারে গাছের কোন ক্ষতি হয় না এমনকি এই কীটনাশক এর প্রভাব মানুষের শরীরেও কোন ক্ষতি করে না।
  • সবচেয়ে বেশি উপকার বয়ে আনে টবে লাগানো কাজগুলো। কারণ এই গাছগুলোতে নির্দিষ্ট পরিমাণ মাটি থাকে যা নিম খৈলের উপকারিতা ভালোভাবে পেয়ে থাকে।
  • এটি ব্যবহারের ফলে গাছের বৃদ্ধি স্বাভাবিক হয় এবং ফল বা ফুল ভালো ধরে এমনকি ফল বা ফুলে পোকামাকড় আক্রমণ করতে পারে না।

নিম খৈল ব্যবহারের নিয়ম

নিম খৈল গাছের জন্য অনেক উপকারী। তবে এটি ব্যবহারের সঠিক নিয়ম জানতে হবে। সঠিক পদ্ধতিতে ব্যবহার না করলে এর উপকারিতা সম্পূর্ণভাবে নাও পাওয়া যেতে পারে। তাহলে চলুন নিম খৈলের ব্যবহার পদ্ধতি বা ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-
  • নিম খৈল ১৫ দিন পর পর ব্যবহার করতে হবে। এর চেয়ে বেশি হলে কার্যকারিতা কমে যাবে।
  • ১২ ইঞ্চি টবের জন্য এক থেকে দুই মুঠো নিম খৈল মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে ঝরঝরে করে নিতে হবে এবং বড় ড্রামের ক্ষেত্রে পাঁচ থেকে ছয় মুঠো নিম খৈল ব্যবহার করতে হবে।
  • গাছের উপরে দেওয়ার জন্য দশ লিটার পানিতে এক কেজি নিম খৈল মিশিয়ে ৭ থেকে ১০ দিন রেখে দিতে হবে।
  • তারপর সেই পানিকে একটি কাঠির মাধ্যমে প্রতিদিন নেড়ে দিতে হবে।
  • ৮ থেকে ১০ দিন হয়ে গেলে সেই পচানো পানি এক লিটার পরিমাণ নিতে হবে এবং তার সাথে আরো ১০ লিটার ফ্রেশ পানি যুক্ত করে গাছে স্প্রে করতে হবে।
  • এভাবে ব্যবহার করলে গাছের উপরের পোকামাকড় ধ্বংস হয়ে যাবে।

নিম খৈলের পুষ্টি উপাদান

নিম খৈল বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত। সেজন্য এটি গাছের জন্য অনেক উপকারী। নিম খৈলে যে সকল পুষ্টি উপাদান রয়েছে সেগুলো হল ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, সালফার, কার্বন, নাইট্রোজেন ইত্যাদি। এ পুষ্টি উপাদান থাকার কারণে এটি গাছের জন্য অত্যন্ত উপকারী।


সেজন্য টবে গাছ লাগানোর পূর্বে অবশ্যই মাটির সাথে নিম খৈল মিশিয়ে নিন যাতে করে গাছ ভালো হয়।

নিম খৈল তৈরির ঘরোয়া উপায়

নিম খৈল সাধারণত বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। তবে আপনি ইচ্ছা করলে ঘরে বসে তৈরি করতে পারেন এই নিম খৈল। নিম খৈল তৈরি করার জন্য প্রথমে আপনাকে নিতে হবে নিম গাছের পাতা, নিম গাছের ফল এবং নিমের ডাল। এগুলো সব নেওয়ার পরে ৮ থেকে ১০ দিন রোদে ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে। এরপর শুকানো হয়ে গেলে সেগুলোকে ব্লেন্ডারের মাধ্যমে গুড়ো করে নিতে হবে।

সেগুলোর সাথে আবার কিছু পরিমাণ নিমের নির্যাস মেশাতে হবে। নিমের নির্যাস হচ্ছে সেই জিনিস নিম তেল তৈরি করার জন্য নিম পাতার পেস্টের যে অংশ তেল বের হওয়ার পর থেকে যায় সেটাকে বলা হয়। এই নির্যাসটি কয়েকদিন রোদে শুকিয়ে নিমের সাথে মিশাতে হবে। এভাবে ঘরে বসে তৈরি করতে পারেন নিম খৈল। গাছপালায় নিম খৈল ব্যবহারের ফলে গাছের ফুল ও ফল ভালো হয়।

নিম খৈলের দাম

আপনি যদি নিম খৈল কিনতে চান তাহলে অবশ্যই আগে জানতে হবে তার দাম। জায়গা ভেদে নিম খৈলের দাম আলাদা আলাদা হতে পারে। বর্তমান বাজারে নিম খৈল কিনতে গেলে প্রতি কেজিতে ১২০ থেকে ১৩৫ টাকা খরচ হবে। নিম খৈলের দামের চেয়ে উপকারিতা অনেক বেশি। কারণ টবে গাছ লাগাতে গেলে মাটির সাথে নিম খৈল মেশানো প্রয়োজন।

এটি মাটির উর্বর শক্তি অনেক বৃদ্ধি করে এবং ক্ষতিকারক পোকামাকড় ধ্বংস করে ও ছত্রাক দমনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কয়েক ধরনের পোকা দমন করতে অধিক কার্যকরী। সেজন্য নিম খৈল কিনতে গেলে অবশ্যই ভালো মানের নিম খৈল দেখে কিনবেন। ভালো মানের নিম খৈল না কিনলে উপকারিতা ভালো পাওয়া যাবে না।

নিম খৈল কোথায় পাওয়া যায়

নিম খৈল দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া যায় আপনি যদি নিম খৈল নিতে চান তাহলে যেকোন নার্সারিতে খোঁজ করলে পেয়ে যাবেন কিংবা সার ও কীটনাশকের দোকানে নিম খৈল পাওয়া যায়। এই নিম খৈল ব্যবহার করলে গাছ ক্ষতিকর পোকামাকড়ের দমনের হাত থেকে রক্ষা পায়। এটি ফল ফুল ও সবজির গাছে ব্যবহার করা হয়।


এমন অনেকে আছে যারা নিম খৈল চেনে না বা জানে না। যার ফলে গাছে ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়ে না। সেজন্য তারা রাসায়নিক সার ব্যবহার করে গাছের ফল এবং বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে। কিন্তু জৈব সার গুণ সম্পন্ন এবং প্রাকৃতিক কীটনাশক। যেটি ব্যবহার করলে গাছের জন্য ভালো এমন কি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো।

কারণ নিম খৈল যে গাছে ব্যবহার করা হয় সেই গাছ থেকে ফল বা সবজি খেলে মানুষের স্বার্থের জন্য ক্ষতিকারক হয় না। কেননা নিম খৈল সম্পূর্ণভাবে প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি হয়ে থাকে।

লেখকের মন্তব্য

অনেক বাগান প্রিয় মানুষ রয়েছে যারা গাছ লাগাতে অনেক পছন্দ করে। গাছ লাগানোর পূর্বে মাটি পরিশোধনের জন্য কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়। পদক্ষেপগুলো মেনে গাছ লাগালে গাছ ভালো হয় এবং ফুল ও ফলও ভালো ধরে। গাছ লাগানোর পদক্ষেপগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে নিম খৈলের ব্যবহার।

এটি ব্যবহারে গাছের অনেক উপকার সাধিত হয়। সেজন্য গাছ লাগানোর পূর্বে অবশ্যই মাটির সাথে নিম খৈল মিশিয়ে নিবেন, যাতে করে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায় এবং ক্ষতিকর পোকামাকড় ধ্বংস হয়ে যায়। প্রিয় পাঠক, এ আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধু বান্ধব ও আত্মীয় স্বজনের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url