গর্ভাবস্থায় করলা খাওয়ার উপকারিতা - করলার সাথে যে খাবারগুলো খাওয়া ক্ষতিকর

প্রিয় পাঠক, আপনি কি গর্ভাবস্থায় করলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনাকে জানতে সাহায্য করবে। এ আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমরা আপনাকে গর্ভাবস্থায় করলা খাওয়ার উপকারিতা এবং করলার সাথে যে খাবারগুলো খাওয়া ক্ষতিকর এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
গর্ভাবস্থায় করলা খাওয়ার উপকারিতা
এ আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন গর্ভাবস্থায় করোলা খাওয়ার অপকারিতা, করলার পুষ্টিগুণ, করলার রসের উপকারিতা ইত্যাদি।

ভূমিকা

গর্ভাবস্থা একজন নারীর কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময় গর্ভবতী মহিলাদের বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয়। এ সময় স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখার জন্য খাবার খাওয়ার বিষয়ে বিশেষভাবে নজর দিতে হয়। কারণ খাবার খাওয়ার মাধ্যমেই গর্ভবতী নারীদের এবং তার গর্ভে থাকা বাচ্চার পুষ্টির যোগান পেয়ে থাকে। গর্ভবতী মায়েদের সুষম খাদ্য গর্ভে থাকা বাচ্চার স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশ নিশ্চিত করে।


এসময় পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ কয়েক ধরনের সবজি খাওয়া যায় এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হচ্ছে করলা। করলা খেতে স্বাদে তেঁতো হলো এটি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। গর্ভাবস্থায় নিয়মিত করলা খেলে নানাবিধ উপকারিতা পাওয়া যায়। তবে করলা খেতে খুব তেঁতো সেজন্য এটি পরিমাণমতো খেতে হবে।

গর্ভাবস্থায় করলা খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভকালীন সময়ে মহিলাদের খাবার খাওয়ার বিষয়ে বেশি নজর দিতে হয়। যেগুলো খাবার খেলে তাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো এবং গর্ভে থাকা বাচ্চার জন্য ভালো সে খাবারগুলো জেনে বুঝে খাওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। করলা একটি তেঁতো সাধের সবজি হলেও গর্ভবতী মহিলাদের জন্য অনেক উপকারী। তাহলে চলুন গর্ভাবস্থায় করলা খাওয়ার উপকারিতাগুলো জেনে নেওয়া যাক-

রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ করলা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। গর্ভকালীন সময়ে যেসব মহিলাদের ডায়াবেটিস হয় তাদের জন্য এটি চমৎকার খাবার। রক্তের শর্করা মাত্রা কমাতে সাহায্য করে করলা।

হজমের সমস্যা দূর করেঃ গর্ভাবস্থায় বেশিরভাগ মহিলাদের হজমের সমস্যা দেখা দেয় বিশেষ করে কোষ্ঠকাঠিন্য। সেই সাথে পেট ফোলা ভাব বা বদহজমের সমস্যাও দেখা দেয়। বদহজমের সমস্যা দূর করতে একটি উপায় হতে পারে করলা। কারণ করলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ করলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এটি ইমিউনিটি সিস্টেমকে উন্নত করে যার ফলে সহজেই কোন রোগ কাছে ঘেষতে পারে না।

ত্বকের সুস্থতা বজায় রাখেঃ মহিলাদের গর্ভকালীন সময়ে ত্বকের মধ্যে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। সেজন্য এই সমস্যা দূর করতে আপনার খাবারের তালিকায় রেখে দিতে পারেন করলা। করলা ত্বকের সুস্থতা বজায় রাখে এবং ব্রণের সমস্যা কমাতেও সাহায্য করে।

জন্মগত ত্রুটি কমায়ঃ শরীরে ফলিক এসিডের পরিমাণ কম হলে গর্ভে থাকা বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরনের জন্মগত ত্রুটি দেখা দেয়। কিন্তু করলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড যা গর্ভাবস্থায় শিশুর সুস্থ্যভাবে বৃদ্ধি ও বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং জন্মগত ত্রুটি কমিয়ে আনে।

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিক ওজন অতিব জরুরী। অতিরিক্ত ওজন বা অনেক কম ওজন কোনটাই স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। করলাতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে যা শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে পেটের ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে।

পুষ্টির চাহিদা পূরণ করেঃ একজন নারীর গর্ভকালীন সময়ে পর্যাপ্ত পুষ্টি প্রয়োজন হয়। আর এটি পূরণ করা হয় খাবার খাওয়ার মাধ্যমে। করলাতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণ যা গর্ভাবস্থায় পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম।

করলার পুষ্টিগুণ

করলাতে রয়েছে অনেকগুলো পুষ্টিগুণ যেগুলো সুস্বাস্থ্যের জন্য অতি প্রয়োজন। যেগুলো পুষ্টিগুণ রয়েছে এই করলাতে সেগুলো হল আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন এ এর মত পুষ্টি উপাদান। এই উপাদানগুলো সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।


গর্ভকালীন সময়ে আপনি যদি পরিপূর্ণ পুষ্টি পেতে চান তাহলে আপনার খাবারের তালিকায় রেখে দিতে পারেন এই তেঁতো স্বাদযুক্ত করলা। কারন এটি একদিকে পুষ্টি চাহিদা ও পূরণ করবে অপরদিকে শরীরকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

গর্ভাবস্থায় করলা খাওয়ার অপকারিতা

উপরে আমরা গর্ভাবস্থায় করলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে তুলে ধরেছি। তবে এখন আমরা গর্ভাবস্থায় করোলা খেলে কি কি অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে সে সম্পর্কে আপনাদের সামনে আলোকপাত করবো। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক করোলার অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়গুলো-
  • গর্ভাবস্থায় করলা খাওয়া অত্যন্ত উপকারী কারণ এটি গর্ভকালীন সময়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে বা রক্তের শর্করা মাত্র কমাতে সাহায্য করে। তবে আপনি যদি রক্তের শর্করার মাত্র কমাতে কোন ওষুধ সেবন করে থাকেন তাহলে করলা খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। শর্করার মাত্রা অতিরিক্ত পরিমাণ কমে গেলে যেকোন সময় শরীরকে হুমকির দিকে ঠেলে দিতে পারে।
  • করলা খেতে হলে নিয়মমত খেতে হবে। অতিরিক্ত করোলা খেলে অনিয়মিত হার্টবিট তৈরি হবে।
  • শিশুদের করলা খাওয়ানো উচিত নয়। এদের করলা বেশি খাওয়ালে পেট ফাঁপা, পেট ব্যাথা, বমি বমি ভাব এবং পেটের বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হতে পারে‌।
  • গর্ভবতী মহিলাদের অতিরিক্ত পরিমাণ করলা খাওয়া গর্ভপাতের সমস্যা তৈরি হতে পারে। কারণ এটি প্রচন্ড পরিমাণ তিঁতা। গর্ভকালীন সময়ে অতিরিক্ত খাবার না খেতে দেওয়াই উত্তম।

করলার জুসের উপকারিতা

করলা যেমন পুষ্টিগুণে ভরপুর তেমনি রয়েছে নানা ধরনের ঔষধি গুনাগুণ। এই করলা অনেকে পছন্দ করেন না বলে খাওয়া থেকে বিরত থাকেন। তবে তারা করোলার গুনাগুণ সম্পর্কে জানেনা। তাহলে চলুন করলা জুসের উপকারিতাগুলো জেনে নেয়া যাক-
  • করলার জুস ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক উপকারী। কারণ করলাতে রয়েছে পলি পেপটাইম নামের যৌগ যা রক্তের শর্করার মাত্রা কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।
  • করলার রস পেটের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর করতে সক্ষম। নিয়মিত সকালে খালি পেটে করলার রস খেলে পেট পরিষ্কার হয় এবং কোষ্ঠোকাঠিন্য হতে শরীরকে রক্ষা করা যায়। এছাড়াও হজমে সমস্যা দূর করতে এটি অনেক কার্যকরী।
  • করলার জুসে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন ও ভিটামিন এ যা চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • করলার জুসে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
  • করলার জুসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে শরীরকে সুস্থ করে।
  • করলার জুসে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি ত্বক ও চুলের জন্য অত্যন্ত ভালো। চুল বৃদ্ধি করে এবং চুল স্বাস্থ্য উজ্জ্বল করে ও চর্মরোগ সারাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

করলার সাথে যেগুলো খাবার খাওয়া ক্ষতিকর

করলা একটি তিঁতা স্বাদযুক্ত এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ সবজি। তিঁতা হবার কারণে অনেকে এটি অপছন্দ করেন। অপছন্দ করলেও এই সবজিতে রয়েছে নানা ধরনের গুনাগুন। তবে কয়েকটি খাবারের সাথে খাওয়া ক্ষতিকর। কোন কোন খাবারের সাথে করোলা খেলে ক্ষতি হতে পারে চলুন সে সম্পর্কে জেনে নেই-

দুধঃ দুধ একটি আদর্শ এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য। এ খাবারটির সাথে করোলা বা করলার রস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। দুধের সাথে করোলা খেলে শরীরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে যেমন পেট জ্বালাপোড়া, কোষ্ঠকাঠিন্য বা পেট ব্যথা ইত্যাদি।


দইঃ করলা এবং দই এই ২টি খাবারই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তবে এই দুটি খাবার একসাথে খেলে সমস্যা হতে পারে। এই খাবারগুলো একসাথে খেলে ত্বকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেজন্য এই খাবারগুলো একসাথে খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

মুলাঃ মুলা ও করলার দুটিই সবজি। তবে এ সবজি দুটোর কাজ আলাদা আলাদা। সেজন্য এই দুটি সবজি একসাথে খাওয়া উচিত নয়। এই সবজিগুলো একসাথে খেলে পেটের সমস্যা তৈরি হতে পারে।

ঢেঁড়সঃ ঢেঁড়স ও করলা একসাথে খাওয়া যায় না। কারণ এই দুটি সব দিয়ে দুই ধরনের। এই সবজিগুলো একসাথে খেলে পেটে সমস্যা তৈরি হতে পারে।

আমঃ আম হচ্ছে স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ সুস্বাদু ফল। করলা আমের সাথে খাওয়া যায় না। এই দুটি খাবার একসাথে খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে সেইসাথে পেটে জ্বালাপোড়া তৈরি হতে পারে।

লেখকের মন্তব্য

করলা তেঁতো স্বাদযুক্ত হলেও এতে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। তবে এটি খেতে হবে পরিমাণমতো যাতে করে পরিপূর্ণ পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়। এটা তিঁতা হওয়ার কারণে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বেশি খেলে শরীরের অন্যান্য সমস্যা হতে পারে। প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধু বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url