ত্বকের যত্নে কারি পাতার উপকারিতা - চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার

প্রিয় পাঠক, আপনি কি ত্বকের যত্নে কারি পাতার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনাকে জানতে সাহায্য করবে। এ আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমরা আপনাকে ত্বকের যত্নে কারি পাতার উপকারিতা এবং চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ত্বকের যত্নে কারি পাতার উপকারিতা
এই আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন কারি পাতা খাওয়ার উপকারিতা, কারি পাতা খাওয়ার নিয়ম এবং কারি পাতা কোথায় পাওয়া যায়।

ভূমিকা

আমাদের চারপাশে এমন অনেকগুলো গাছ রয়েছে যেগুলোর গুনাগুণ উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই অজানা। আজ আমরা এখানে ঠিক সেরকম একটি গাছ নিয়ে আপনাদের সামনে আলোচনা করব। যে গাছে রয়েছে অনেক গুনাগুণ। সেই বিশেষ গুণে ভরা গাছটির নাম হচ্ছে কারি পাতা। এই পাতার রয়েছে নানা ধরনের ঔষধি গুনাগুণ যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগের মোকাবেলা করতে সক্ষম।


এটি নিয়মিত খেলে শরীরের সুস্থতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বাড়ির পাশের বাগানে এই গাছ চাষ করা অতি সহজ। এছাড়াও টবে চাষ করা যায় কারি পাতার গাছ। এর কয়েকটি পাতা তুলে রোদে শুকিয়ে অনায়াসে যে কোনো তরকারিতে ব্যবহার করা যায়। বিশেষজ্ঞরা এই পাতার দুর্দান্ত উপকারিতার কথা বলেছেন।

নিয়মিত এই পাতা খাওয়ার ফলে পা থেকে শুরু করে মাথা পর্যন্ত সমস্ত অঙ্গ ভালো রাখতে সহায়তা করে। কারি পাতা বাংলাদেশের মানুষে ব্যবহার করে। তবে ভারতবর্ষে অনেক বেশি ব্যবহার করে থাকে।

কারি পাতার উপকারিতা

কারি পাতার মধ্যে রয়েছে ঔষুধি গুনাগুণ যা আমাদের শরীরের অনেক উপকারে আসে। তাহলে চলুন কারি পাতার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-

ওজন কমায়ঃ কারি পাতা শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে। এই পাতা নিয়মিত খেলে পেটের চর্বি গলে ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে। কারি পাতার রস প্রতিদিন খেলে দ্রুত শরীরের ওজন কমে যায়।

ক্ষত সারাতে সাহায্য করেঃ শরীরের কোন জায়গায় কেটে গেলে বা ছিড়ে গেলে সেই জায়গায় কারি পাতার রস লাগালে খুব ভালো ফল পাওয়া যায়। কারি পাতা দিয়ে পানি ফুটিয়া সেই পানি চুলকানি বা ক্ষতস্থানে লাগালে তাড়াতাড়ি ঘা শুকিয়ে যায়। কারি পাতায় এন্টি সেপটিক বৈশিষ্ট্য থাকায় ক্ষত সারাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

হার্ট সুস্থ রাখেঃ কারি পাতা হার্টের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এই পাতার রস নিয়মিত খেলে হার্টের বিভিন্ন সমস্যা থেকে হাটকে সুস্থ রাখে। যার ফলে হার্ট এ্যাটাকের ঝুঁকি কমে যায়

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যঃ কারি পাতা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী এতে থাকা ফাইবার রক্তের ব্লাড সুগার কমিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।

পেটের সমস্যা দূর করেঃ কারি পাতা পেটের সমস্যা দূর করে পেট সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারি পাতার রস নির্মিত খেলে পেট ঠান্ডা থাকে এবং পেটের বিভিন্ন রোগের আক্রান্ত হওয়া থেকে মুক্ত থাকে। এটি ডায়রিয়ার প্রকোপ কমাতেও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

ক্যান্সার প্রতিরোধে সক্ষমঃ কারি পাতায় রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধ করার ক্ষমতা। কারণ এই পাতায় রয়েছে ফেনলস নামক একটি উপাদান যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে লিউকোমিয়া ও প্রোস্টেট ক্যান্সারের মতো সমস্যা দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

চুল পড়া কমাতেঃ কারি পাতা যেমন শরীরের জন্য উপকারী তেমনি চুলের জন্যও অনেক উপকারী। কারি পাতায় রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা সব ধরনের সংক্রমণ রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও কারি পাতায় রয়েছে ভিটামিন এ ও ভিটামিন সি যা চুলের গোড়া শক্ত করে এবং চুল পড়া কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

সর্দি কাশি দূর করেঃ কারি পাতায় রয়েছে সর্দি কাশি দূর করার ক্ষমতা। এ পাতার রস সর্দি কাশি উপশম এ কার্যকরী। এছাড়াও এই পাতার দ্বারা সংক্রমণজনিত রোগ থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।

হজম শক্তি বৃদ্ধি করেঃ কারি পাতা হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে খুবই কার্যকরী। এটি খালি পেটে খেলে এসিডিটি গ্যাস এবং পেটের অন্যান্য সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এই পাতা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে হজম শক্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কারি পাতা কিভাবে খেতে হয়

কারি পাতা বিভিন্ন উপায়ে খাওয়া যায়। কারি পাতা রান্নার স্বাদ বাড়াতে ব্যবহার করা হয়। এই পাতা সরাসরি চিবিয়ে খাওয়া যায়। এ পাতার রস করেও খাওয়া যায়। এই পাতা শুকিয়ে সেটি পানিতে দিয়ে ফুটিয়ে সেই পানি পান করলে শরীরের অনেক সমস্যা দূর হয়ে যায়। সকালে খালি পেটে কারি পাতা চিবিয়ে খেলে পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়ে যায়।

চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার

চুলের যত্নে কারি পাতার রয়েছে অনন্য ক্ষমতা। কারি পাতার মধ্যে এমন গুনাগুণ রয়েছে যা চুলের জন্য অতি উপকারী। এটি ব্যবহারের ফলে চুলের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে চুলের বৃদ্ধি ঘটায়। চুলের বৃদ্ধি ঘটানোর পাশাপাশি চুল পড়া কমায়, খুশকি দূর করে, চুলের অকালপক্ষতা রোধ করে, চুলের গোড়া মজবুত করে, চুল ঝলমলে উজ্জল করে ইত্যাদি ফলাফল দিয়ে থাকে কারি পাতা।


কারি পাতায় রয়েছে অ্যান্টিফাঙ্গাল ও এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা চুলের গোড়ার সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে। চুলের খুশকি দূর করতে হলে কারি পাতা তেল অত্যন্ত কার্যকরী। কারি পাতা তেল তৈরি করতে হলে প্রথমে কারি পাতাগুলো ভালোভাবে বেটে নিতে হবে তারপর সেগুলো নারিকেল তেলের সাথে মিশিয়ে ফুটিয়ে নিতে হবে। তারপর এই তেল চুলের গোড়ায় মালিশ করতে পারেন

চুল পড়া কমাতে হলে আমলকি মেথি এবং কারি পাতা একসাথে বেটে নিতে হবে। তারপর সেই মিশ্রণটিকে চুলে এবং স্ক্যাল্পে ভালোভাবে লাগিয়ে নিতে হবে। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। চুলের বৃদ্ধির জন্য কারি পাতার সাথে পেঁয়াজ বেটে নিয়ে চুলের গোড়ায় লাগাতে পারেন। এতে করে চুল পড়া কমে যাবে এবং চুলের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটবে।

ত্বকের যাতে কারি পাতার ব্যবহার

কারি পাতা শরীরের জন্য অনেক উপকারী সেই সাথে ত্বক ও চুলের জন্যও। কারি পাতার মধ্যে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, আয়রন এবং একাধিক এন্টি মাইক্রোব্রিয়াল উপাদান। যা ত্বকের জন্য অধিক উপকারী। কারি পাতার মধ্যে রয়েছে হিলিং উপাদান যা একাধিক সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম। কারি পাতা ত্বকের ফ্রি রেডিক্যাল এর বিরুদ্ধে লড়াই করে বার্ধক্যের ছাপ করা প্রতিরোধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।


এছাড়াও এটি ব্যবহারের ফলে ত্বকের বলিরেখা দূর হয়ে যায়। কারি পাতার ফেসপ্যাক তৈরি করে ব্যবহার করলে ব্রোনের সমস্যা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়। সেজন্য ত্বকের সৌন্দর্য ধরে রাখতে হলে কারি পাতা ব্যবহার করতে হবে।

কারি পাতা বাংলাদেশ কোথায় পাওয়া যায়

কারি পাতা বাংলাদেশের যে কোন বড় সবজির দোকানে পাওয়া যেতে পারে। তবে বাংলাদেশে রান্না-বান্নায় কারি পাতা তেমন একটা ব্যবহার করা হয় না বলে এটি সব জায়গায় নাও পাওয়া যেতে পারে। তবে কারি পাতা যদি নিতে চান তাহলে অবশ্যই সবজি যেখানে খোঁজ করবেন সেখানে পেলেও পেয়ে যেতে পারেন।

লেখকের মন্তব্য

কারি পাতার রয়েছে বহুমুখী উপকারিতা যা উপরে আলোচনার মাধ্যমে কিছুটা ধারণা পেয়েছেন। কারি পাতা ব্যবহার করে আপনি যে উপকারই পেতে চান না কেন সে ক্ষেত্রে অবশ্যই সঠিক নিয়ম জেনে বুঝে ব্যবহার করবেন। প্রিয় পাঠক, এ আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধু বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনের সাথে শেয়ার করুন৷

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url