করসল ফলের উপকারিতা - করসল ফল কি ক্যান্সার প্রতিরোধক

প্রিয় পাঠক, আপনি কি করসল ফলের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনাকে তা জানতে সাহায্য করবে। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে করসল ফলের উপকারিতা এবং করসল পাতার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
করসল ফলের উপকারিতা
এই আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন করসল ফল ক্যান্সার প্রতিরোধক কিনা, করসল ফল কোথায় পাওয়া যায়, করসল ফলের দাম এবং করসল ফলের অপকারিতা।

ভূমিকা

করসল দেখতে কাঁটাযুক্ত এবং সবুজ রঙের ফল। তবে এর ভিতরে সাদা নরম অংশ রয়েছে। করসল ফল খেতে মিষ্টি এবং টক। কাঁচা অবস্থাতেও এই ফল খাওয়া যায়। এই ফলে রয়েছে নানা ধরনের উপকারিতা। করলস ফল অনেকেই চেনে না। বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় এই ফল পাওয়া যাচ্ছে। এই ফলের যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি এর পাতারও রয়েছে নানা ধরনের উপকারিতা।


এটাই মানুষের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে খুবই কার্যকরী। এই ফলের গাছ বাংলাদেশের এখন চাষ করা হচ্ছে। বহু যুগ আগে থেকে এর পাতা ও ফল বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। আপনি যদি না চিনে থাকেন এ ফল এবং না জেনে থাকেন এর উপকারিতা সম্পর্কে তাহলে অবশ্যই জেনে নিন। কারণ এই গাছের পাতা ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে

করলস ফলের উপকারিতা

করসল ফল শরীরের জন্য অনেক উপকারী। আমরা এই ফলের উপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের সামনে আলোচনা করব। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক এ ফলের উপকারিতা-

প্রদাহজনিত রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়ঃ করসল ফলে রয়েছে প্রদাহ দূর করা বৈশিষ্ট্য। এটি খেলে শরীরের প্রদাহজনিত সকল সমস্যা দূর হয়ে যায়। করসল ফলে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য যা শরীরের অন্যান্য সমস্যা দূর করতে কার্যকরী।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেঃ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য করসল ফল অত্যন্ত উপকারী। করসল ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা রক্তের শর্করার মাত্রা কমিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে য়া সাহায্য করে।

পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর করেঃ পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে করসল ফল অত্যন্ত কার্যকরী।করসল ফলের নির্যাস পাকস্থলীকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। এছাড়াও পেটে আসার ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে এই ফলে রয়েছে অত্যন্ত গুণ।

হৃদপিণ্ড ও মস্তিষ্কের জন্য উপকারীঃ করসল ফলে রয়েছে পটাশিয়াম যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে হৃদপিণ্ড ভালো রাখতে সাহায্য করে। এটি মস্তিষ্কের বিভিন্ন ফাংশন ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ইমিউনিটি সিস্টেমকে উন্নত করেঃ করসল ফলে রয়েছে ভিটামিন সি এবং কোয়ার সেটিং নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে ইমিউনিটি সিস্টেমকে উন্নত করতে সাহায্য করে। যার ফলে শরীরের বিভিন্ন রোগ থেকে শরীরকে রক্ষা করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ করসল ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরকে বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষা করে।

হাড়ের জন্য ভালোঃ করসল ফলে রয়েছে ক্যালসিয়াম ভিটামিন কে, ভিটামিন সি ও ফসফরাস যা হাড়ের স্বাস্থ্যর উন্নত করে। এটি পেশি শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ করসল ফলে রয়েছে ক্যান্সার বিরোধী বৈশিষ্ট্য যা মরণঘাতি ক্যান্সার হতে শরীরটাকে রক্ষা করে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে ক্যান্সার হওয়ার পরেও এই ফল খেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

শরীরকে শক্তিশালী করেঃ করসল ফল শারীরিক দুর্বলতা দূর করে শরীরকে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি রক্তকে সধিত করতে খুবই কার্যকরী।

করসল ফলের পুষ্টিগুণ

করসল ফল ডিম্রাকৃতির এবং ১২ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে এর মাঝারি গঠন বিন্যাস রয়েছে এবং এই ফলটি অনেক রসালো। এই ফলের ভিতরের অংশ সাদাটে এবং সুগন্ধযুক্ত। এর স্বাদ হালকা মিষ্টি ও অম্লীয়। এই ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ। করসল ফলে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি ১ এবং ভিটামিন বি ২ সহ আরো অন্যান্য ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ।
এছাড়াও করসল ফলে প্রোটিন, ফাইবার, কার্বোহাইড্রেড, চর্বি ইত্যাদি উপাদানে ভরপুর। এর পুষ্টি উপাদানগুলো শরীরের সুস্থতা বজায় রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। যার ফলে শরীর একেবারে সুস্থ, স্বতেজ ও চাঙ্গা হয়ে ওঠে। করসল ফলের যে পুষ্টি উপাদান রয়েছে এগুলো ক্যান্সার প্রতিরোধেও সক্ষম।

করসল ফল কি ক্যান্সার প্রতিরোধক

করসল ফলে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান যা শরীরে বিভিন্ন সমস্যা দূর করে এবং শরীরকে সুস্থ রাখতে সক্ষম। তবে এটাতে ক্যান্সার প্রতিরোধক গুণাগুণ রয়েছে কিনা এ বিষয়ে অনেকেই প্রশ্ন করেন। করসল ফলে যে উপাদান রয়েছে তা কেমোথেরাপির চেয়ে অনেক গুণ বেশি শক্তিশালী। এই ফলটি মূলতঃ কেমোথেরাপির বিকল্প হিসেবে কাজ করে থাকে।

তবে করসল ফল ক্যান্সার প্রতিরোধক কিনা এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতোভেদ রয়েছে। বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশেও করসল ফলকে ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে জানে বা পরিচিত। বিজ্ঞানীরা এই ফল নিয়ে গবেষণা করে বলেছেন এই ফলের গুণ এতটাই বেশি যে এই ফল খেলে ক্যান্সার রোগীর কেমোথেরাপির প্রয়োজন হয় না এবং শারীরিক দুর্বলতা কাছে ঘেষতে পারে না।

এসব থেকে বোঝা যায় করসল সম্পূর্ণভাবে ক্যান্সার প্রতিরোধক না হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে থাকে। কারণ মরণঘাতি এই ক্যান্সার রোগ বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। কিছু কিছু ক্যান্সার রোগের ক্ষেত্রে এটি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

করসল ফল কোথায় পাওয়া যায়

করসল ফল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাওয়া যায়। বর্তমানে এই ফলটি বাংলাদেশেও চাষ করা হচ্ছে। ভারত থেকে চারা আমদানি করে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় চাষ করছে ক্যান্সার প্রতিরোধক এই করসল ফল এর গাছ। ঢাকা সিলেট চট্টগ্রাম এবং বরিশালের চাষ করা হচ্ছে এই উপকারী করসল গাছ। এছাড়া অন্যান্য জেলাগুলোতেও পাওয়া যায় এ করসল ফল।

আপনি যদি এই ফল নিতে চান তাহলে অবশ্যই এই জেলাগুলোতে খোঁজ করবেন। এছাড়াও এই ফলটি অনলাইনে বিভিন্ন পেজে বিক্রি করছে সেখান থেকে আপনি সংগ্রহ করতে পারবেন।

করসল ফলের দাম

করসল ফলের পুষ্টি উপাদান ও গুণাগুণ ঔষধি গাছের তুলনায় অনেক বেশি। এছাড়াও এটি বাংলাদেশের সব জায়গায় পাওয়া যায় না বলে এর দাম তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। এই ফল কিনতে গেলে আপনাকে খরচ করতে হবে প্রতি কেজিতে তিন থেকে চার হাজার টাকার মত। তবে এই ফলে যে পরিমাণ গুনাগুণ রয়েছে তা তুলনায় এর দাম অনেক কম। কারণ এটি ক্যান্সার রোগের কেমোথেরাপির কাজ করে থাকে।

করসল পাতার উপকারিতা

করসল ফল শুধুমাত্র শরীরের জন্য উপকারী তা নয় বরং করসল পাতাও শরীরের জন্য অনেক উপকারী। তাহলে চলুন করসল পাতার উপকারিতাগুলো জেনে নেওয়া যাক-
  • করসলের পাতা লিভারের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে লিভারের সুস্থতা বজায় রাখে বলে এটি লিভারের জন্য অনেক উপকারী।
  • করসল পাতা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক উপকারী। এটি রস খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
  • করসল পাতা দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে খুবই কার্যকরী।
  • রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে করসল পাতা।
  • করসল পাতা পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে পেট সুস্থ রাখে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • অনিদ্রাজনিত সমস্যা দূর করে ভালো ঘুম হতে সহায়তা করে।

করসল ফল খেলে কি হয়

করসল ফল অত্যাধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন হওয়ায় এটি শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এটি শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। করসল ফল শরীরের কঠিন ও জটিল রোগ থেকে মুক্তি দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দুর্বলতা দূর করে শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে ৷ এ ফলে উপস্থিত রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ যা শরীরের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম।

তবে এই ফলের উপকারিতা পেতে হলে অবশ্যই সঠিক পরিমাণে খেতে হবে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত এই ফল খেলে শরীরে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে।

করসল ফলের অপকারিতা

করসল ফল শরীরের জন্য অনেক উপকারী কিন্তু এর সামান্য কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। করসল ফল প্রয়োজনের অতিরিক্ত খেলে কিডনির সমস্যা দেখা দিতে পারে। করসল ফলের বীজ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে কারণ এর বীজে রয়েছে টক্সিন যা শরীরের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে। করসল ফল উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনে সে জন্য যাদের নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তাদের এটি না খাওয়াই উত্তম।

এটি খেলে নিম্ন রক্তচাপ রোগীদের জন্য বিপদজনক হতে পারে। এছাড়াও অতিরিক্ত করসল ফল খেলে পেটের বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হতে পারে। সেজন্য পরিমাণমতো করসল ফল খেতে হবে যা শরীরের জন্য উপকারিতা বয়ে আনে।

লেখকের মন্তব্য

করসল ফলে নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে সেজন্য এটি শরীরের জন্য অনেক উপকারী। তবে এই ফলটি খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাবেন। প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধু বান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url