কোকোপিট ব্যবহারের উপকারিতা - ঘরে যেভাবে কোকাপিঠ তৈরি করবেন

প্রিয় পাঠক, আপনি কি কোকোপিট ব্যবহারের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনাকে এ সম্পর্কে জানতে সাহায্য করবে। এ আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমরা আপনাকে কোকোপিট ব্যবহারের উপকারিতা এবং ঘরে বসে কোকোপিট তৈরির নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
কোকোপিট ব্যবহারের উপকারিতা

এই আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন কোকোপিট ব্যবহারের নিয়ম, কোকোপিট ব্যবহারের গাছের উপকারিতা ইত্যাদি।

ভূমিকা

মানুষের অনেকগুলো শখের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য সব হচ্ছে বাগান করা। কিন্তু শহরের বাসা বাড়িতে বাগান করার জন্য অতিরিক্ত কোন জায়গা থাকে না। সেজন্য শখ মেটাতে ছাদবাগান তৈরি করতে হয়। ছাদবাগান তৈরি করতে গেলেও প্রয়োজন হয় মাটি। কিন্তু এই মাটি সময় পাওয়া যায় না। সেজন্য মাটির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হয় কোকোপিট।

কোকোপিট তৈরি করা হয় শুকনো নারিকেলের আঁশ এবং কয়ার এর গুড়া দিয়ে। কোকপিট মূলত একটি জৈব উপাদান। কোকোপিটের উপাদান গুলো স্বয়ংক্রিয় আধুনিক মেশিনের মাধ্যমে ইলেকট্রিক চাপ প্রয়োগ করে বিভিন্ন আকারের ব্লক সাইট তৈরি করা হয়। তবে এই ব্লক সাইজটি গাছ লাগানোর পূর্বে পানি দিয়ে আলগা করে নিতে হয়।


তবে এটি যদি ব্লক আকারে না থাকে তাহলে আলগা করার প্রয়োজন হয় না। ছাদ বাগান করতে গিয়ে অনেক সময় মাটি পাওয়া দুর্লভ বা মাটি পেলেও মাটির বিভিন্ন সমস্যা যেমন মাটির শক্ত হয়ে যায় বা ওজন বেশি হয় এগুলোর সমস্যার সমাধান হিসেবে ব্যবহার করা হয় কোকোপিট। মাটির তুলনায় এর ওজন অনেক কম এবং পানি ক্ষমতা অনেক বেশি।

কোকোপিটে গাছের জন্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস প্রতিরোধের উপাদান বিদ্যমান থাকে। কোকোপিট ঝুরঝুরে হওয়ার কারণে গাছের খাদ্য তৈরির জন্য অক্সিজেন সরবরাহ সহজ হয়। এটি ব্যবহার ফলে গাছের বৃদ্ধি দ্রুত হয় এবং ফুল বা ফল ভালো ধরে।

ঘরে যেভাবে কোকাপিঠ তৈরি করবেন

ঘরে বসে খুব সহজে তৈরি করা যায় ককোপিট। এটি তৈরি করার জন্য তেমন কোন ঝামেলা হয় না। এটি গাছের জন্য অনেক উপকারী। তাহলে চলুন কপির তৈরি করার পদ্ধতি জেনে নেই-

কোকোপিট তৈরি করতে হলে প্রথমে নিতে হবে নারিকেলের ছোবড়া এবং সেগুলোকে পরিচ্ছন্ন পরিবেশে শুকাতে হবে। তারপর এর উপরের আশ তুলে ফেলতে হবে। তারপরে এগুলোকে ছোট ছোট করে কেটে মেশিনের সাহায্যে গুড়া করে নিতে হবে। গুড়া করা হয়ে গেলে চালনি দিয়ে ভালোভাবে চেলে নিতে হবে যাতে করে আঁশগুলো না থেকে যায়।


এরপর আলাদা করে রাখা পিটকে লবণ ও র‍্যাডিকেল মুক্ত করার জন্য পানিতে মেশাতে হবে। তারপর সেটি পানি থেকে তুলে ভালো করে চিপে নিতে হবে। চিপা হয়ে গেলে আপনি যে সাইজের ব্লক তৈরি করতে চান সেই সাইজের কন্টেইনারে এগুলো ভালোভাবে ভর্তি করে নিতে হবে। এরপর একদিনের জন্য রোদে শুকাতে দিতে হবে।

এভাবেই উপযুক্ত কোকোপিট তৈরি করা হয়ে থাকে। তবে আপনি যদি আপনার নিজের বাগানে ব্যবহার করতে চান সে ক্ষেত্রে ভেজা কোকপিট ব্যবহার করতে পারেন।

কোকোপিটের ছবি

কোকোপিট

কোকোপিট

কোকোপিট ব্যবহারের নিয়ম

কোকোপিট ব্যবহার করতে হলে জানতে হবে ব্যবহারের সঠিক নিয়ম। সঠিক নিয়মে ব্যবহার না করতে পারলে এর ভালো সুফল পাওয়া যাবে না। তাহলে চলুন কোকোপিট ব্যবহারের নিয়মাবলী জেনে নেওয়া যাক-

কোকোপিট ব্যবহার করতে হলে প্রথমে সেটি প্রস্তুত করতে হবে। প্রতি কেজি কোকোপিটে ৫ লিটার পরিমাণ পানি মিশাতে হবে। এই পানি অল্প অল্প করে ঢালতে হবে। আস্তে আস্তে দেখবেন এটি ফুলে যাবে। যে অংশ ফুলে যাবে সে অংশ হাত দিয়ে ঝুরঝুরা করে নিতে হবে এবং শক্ত অংশের উপর আবার পানি ঢালতে হবে। তবে পানি দেওয়ার ক্ষেত্রে একটু সতর্ক থাকতে হবে কারণ অতিরিক্ত পানি দেওয়া যাবে না।


অতিরিক্ত পরিমাণ পানি দিলে কাপড়ের মাধ্যমে আবার ছেঁকে নিতে হবে। এটি সম্পূর্ণ ঝুরঝুরে হয়ে গেলে পরিমাণমত গাছে ব্যবহার করুন। টবের গাছের জন্য কোকোপিট যেভাবে ব্যবহার করবেন তা হলো একটি টবের ৫০ভাগ কোকোপিঠ এবং ৫০ভাগ ভার্মি কম্পোস্ট আপনি চাইলে মাটিও মিশাতে পারেন। এ মাটি এবং কোকোপিট ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে তারপরে সেটি টবে ভরে গাছ লাগাতে হবে।

কোকোপিট ব্যবহারের গাছের উপকারিতা

  • কোকোপিট ব্যবহারের ফলে গাছের শিকড় দ্রুত বাড়তে থাকে এবং সে কারণে গাছও দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এটি ব্যবহারের ফলে গাছ দেখতে অনেক সুন্দর ও শক্তিশালী হয়।
  • কোকোপিট ব্যবহারের ফলে দ্রুত পানি ও বাতাস আসা-যাওয়া করে যার ফলে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক গাছের ক্ষতি করতে পারে না
  • গাছে কোকোপিট ব্যবহার করলে অন্যান্য রাসায়নিক সার ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না।
  • ভার্মি কম্পোস্ট এবং জৈব সার মিশিয়ে চাষ করা যায় বলে রাসায়নিক মুক্ত সবজি, ফল, ফুল ইত্যাদি পাওয়া যায়। রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হয় না বলে এটি ব্যবহার করে অন্যান্য বিভিন্ন গাছ লাগাতে পারবেন।
  • কোকোপিটে রয়েছে পানি ধারণ করার অনেক ক্ষমতা সেজন্য এটি ব্যবহারের ফলে গাছ খুব তাড়াতাড়ি বড় হয় এবং ফুল ও ফল ধরে।
  • কোকোপিট ছাদের জন্য বেশি উপকারী কারণ এর ওজন অনেক কম এবং মাটির চেয়ে অনেক বেশি উপকারী ও শক্তিশালী।
  • মাটির তুলনায় এটি অনেক পরিষ্কার বলে এটি ব্যবহার করে গাছ লাগালে ঘর, বারান্দা এবং ছাদ নোংরা হয় না।
  • কোকোপিটে আদ্রতা ধরে রাখার ক্ষমতা রয়েছে অনেক যা প্রায় ৬০০ থেকে ৮০০ ভাগ। এছাড়াও এটি গাছের জন্য শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় পানি ধরে রাখতে সক্ষম।
  • এতে পানি ধরে রাখা ক্ষমতা অনেক বলে যে কোন ঋতুতে কাছে পানি দেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হয় না।
  • টবে বিভিন্ন গাছ লাগালে গাছে কোন কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না কারণ এটি ব্যবহারের ফলে কোন পোকামাকড় গাছ বা ফলে আক্রমণ করতে পারে না।
  • এটি হালকা হওয়ার কারণে গাছের শিকড়ের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে যা গাছকে শক্তিশালী করে তোলে।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক, এ আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধু বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনের সাথে শেয়ার করুন৷

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url