মধু দিয়ে ত্বক ফর্সা করা যায় কিভাবে - মধু দিয়ে ঠোঁট গোলাপি করার উপায়

প্রিয় পাঠক, আপনি কি মধু দিয়ে ত্বক ফর্সা করার উপায় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনাকে সাহায্য করবে। এ আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে মধু দিয়ে ত্বক ফর্সা করার উপায় এবং মধু দিয়ে ঠোঁট গোলাপি করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
মধু দিয়ে ত্বক ফর্সা করার উপায়
এ আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন প্রতিদিন মুখে মধু দিলে কি হয়, ছেলেদের মুখে মধু ব্যবহার, ঠোঁটে মধু দিলে কি হয় এবং ত্বকে মধু ব্যবহারে সর্তকতা।

ভূমিকা

প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত মধু সকলের কাছে খুবই জনপ্রিয়। এই জনপ্রিয়তা গোটা বিশ্ব জুড়ে। কারণ মধুর রয়েছে নানা ধরনের উপকারিতা তবে আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে একটি ফুলের মধুর চেয়ে বিভিন্ন ফুলের মধুর সমন্বয়ে যে মধু তৈরী হয় সেটি বেশি কার্যকরী। মধু থেকে আরও বেশি উপকারিতা পাওয়া যায়। মধু যেমন পুষ্টিগুণে অনন্য তেমনি রূপচর্চায়ও অতুলনীয়।


মধু দিয়ে রূপচর্চা করলে ত্বক হয়ে উঠে উজ্জ্বল ও লাবণ্যময়। বর্তমান সময়ে বাজারের ত্বকের উজ্জলতার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রোডাক্ট বের হয়েছে, সেগুলো ব্যবহারে ত্বকের রং উজ্জ্বল হয় এবং সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। তবে এগুলো ব্যবহারের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে কারণ এগুলো তৈরি হয় বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল মিশিয়ে।

মধু দিয়ে রূপচর্চা করলে একদিকে যেমন কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে না অপরদিকে এ সৌন্দর্য দীর্ঘস্থায়ী হয়। মধুর মধ্যে এমন গুনাগুণ রয়েছে যা আমাদের বিভিন্ন সমস্যায় অত্যন্ত কার্যকরী। এটি নিয়ম করে মধু খেলে বা ত্বকে মাখলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে এবং শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

মধু দিয়ে ত্বক ফর্সা করার উপায়

মধু হচ্ছে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এমন একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে ত্বককে ফর্সা ও উজ্জ্বল করে তোলে। এটি ব্যবহারের ফলে ত্বকের যেমন উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় সেই সাথে ত্বক নরম করে বলিরেখা ও কালচে ভাব দূর করে। অল্প সময়ে প্রাকৃতিক উপায়ে ফর্সা হতে চাইলে মধু খুবই কার্যকরী উপাদান। তাহলে চলুন মধু দিয়ে কিভাবে ত্বক ফর্সা করা যায় জেনে নেই-

ত্বকের রং উজ্জ্বল করতেঃ ত্বকের রং উজ্জ্বল পেতে চাইলে প্রথমে এক চা চামচ মধুর সঙ্গে এক চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে মুখে মেখে ২০ মিনিট ধরে মেসেজ করুন। তারপর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে কয়েকদিন ব্যবহার করলে ত্বক দ্রুত ফর্সা এবং উজ্জ্বল হবে।

মুখের ব্রণ দূর করতেঃ এক চামচ মধুর সাথে এক টেবিল চামচ টক দই ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। তারপর সেটি মুখে মেখে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে ব্যবহার করলে মুখের ব্রণ খুব সহজেই দূর হয়ে যাবে।

ত্বকের শুষ্কতা দূর করতেঃ ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে হলে মধুর সাথে নিয়ে নিতে হবে এক টুকরো পেঁপে। ২ চা চামচ মধুর সাথে এক টুকরা পাকা পেঁপে ভালো করে পেস্ট করে নিতে হবে। তারপর এই পেস্টটিকে মুখে লাগিয়ে হালকাভাবে মেসেজ করতে হবে। ১৫ থেকে ২০ মিনিট মেসেজ করার পর ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি ব্যবহারের ফলে ত্বকের শুষ্কতা দূর হবে এবং বয়সের ছাপ পড়া থেকে রক্ষা করবে।

ত্বক ড্যামেজের হাত থেকে রক্ষা করতেঃ ত্বক ডেমেজের হাত থেকে রক্ষা করতে মধু ও চিনির সমন্বয়ে একটি স্ক্রাব তৈরি করতে হবে। সেজন্য প্রথমে এক টেবিল চামচ মধুর সঙ্গে এক চা চামচ চিনি মিশিয়ে নিতে হবে তারপর সেটি ১০ মিনিট ধরে মুখে মেসেজ করতে হবে। তারপর সেটি ধুয়ে মুখে ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে। এভাবে ব্যবহার করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে এবং ত্বকের মরা কোষ পুর্নগঠিত করবে।

ত্বক মসৃণ করতেঃ মধু ও বেসন একসাথে ব্যবহার করলে ত্বক মসৃন হয়ে যায়। সেজন্য প্রথমে এক চামচ মধুর সাথে এক থেকে দেড় চামচ বেসন ও পরিমাণমত হলুদের গুড়া যোগ করে ভালোভাবে পেস্ট করে নিতে হবে। তারপর এটিকে মুখে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করার পর মুখে টানটান ভাব হলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এই মিশ্রণটি ব্যবহার করলে ত্বক যেমন মসৃণ হবে তেমনি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।

ত্বকের কালচে ভাব দূর করতেঃ ত্বকের কালচে ভাব দূর করতে হলে মধু ও কলার একটি মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। এক চা চামচ মধুর সাথে এক টুকরো কলা ভালোভাবে পেস্ট করে তারপর এটি মুখে মেখে ১৫ থেকে ২০ মিনিট হালকা করে মেসেজ করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে ব্যবহার করার ফলে ত্বকের কালচে ভাব দূর হয়ে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।

ত্বকের রং দ্রুত ফর্সা করতেঃ ত্বকের রং ফর্সা করতে প্রথমে এক টেবিল চামচ মধু কয়েক ফোঁটা গোলাপ জল এবং সামান্য পরিমাণ হলুদের গোড়া একসাথে ভালোভাবে মিশিয়ে পেস্ট করতে হবে। তারপর এই মিশ্রণটি মুখে ভালোভাবে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে ব্যবহার করলে খুব দ্রুত ত্বকের রং উজ্জ্বল হবে এবং ত্বকের বিভিন্ন ধরনের দাগ দূর হবে।

ত্বকের বলিরেখা দূর করতেঃ ত্বকের বলিরেখা দূর করতে হলে মধু ও মিল্ক ক্রিম একসাথে ব্যবহার করতে হবে। তারপর ১৫ মিনিট রাখার পর কুসুম কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে ব্যবহার করলে ত্বকের বলি রেখা দূর হয়ে যাবে এবং ত্বক উজ্জ্বল দেখাবে।

প্রতিদিন মুখে মধু দিলে কি হয়

প্রতিদিন মুখে মধু মাখলে ত্বকের বেশ উপকারিতা লক্ষ্য করা যায়। প্রতিদিন মুখে মধু মাখার ফলে ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর হয়ে যায় এবং ত্বকের রং উজ্জ্বল দেখায়। কারণ মধুতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণ। এটি ত্বকের ভিতর থেকে পরিষ্কার করে ত্বক ফর্সা করে তোলে। মধু ত্বকের শুষ্কতা দূর করে এবং বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না।


মধুতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিসেপটিক এবং অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা মুখের ব্রণ দূর করতে অধিকার কার্যকরী। মধু লোমকূপ এর ভিতর থেকে ময়লা বের করে এবং ত্বকের ব্ল্যাকহেড দূর করে। ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতে মধু খুবই কার্যকরী। মধুতে এমন সব গুনাগুণ রয়েছে যা শুষ্ক ত্বকের জন্য উপকারী এবং তৈলাক্ত ত্বকের জন্যও উপকারী।

ছেলেদের মুখে মধু ব্যবহার

মধু শুধুমাত্র মেয়েদের রূপচর্চার কাজে ব্যবহৃত হয় না বরং এটি ছেলেদের ক্ষেত্রেও অনেক উপকারী। সারাদিন কাজের ক্ষেত্রে বাইরে থাকার কারণে ছেলেদের মুখে অতিরিক্ত ময়লা জমে। সেজন্য তাদের ত্বক মেয়েদের তুলনায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু মধু ব্যবহারের ফলে ছেলেদের ত্বক রিপেয়ার করা সম্ভব হয়।

কারণ এটি ত্বকে ড্যামেজের হাত থেকে রক্ষা করতে সক্ষম। ছেলেদের ত্বকের প্রাণ ফিরিয়ে আনতে মধু যেভাবে ব্যবহার করবেন সে সম্পর্কে জেনে নিন-

এক চা চামচ মধু, একটি ডিম, এক চা চামচ কফি, এক চা চামচ অলিভ অয়েল এবং সামান্য পরিমাণ লেবুর রস মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করে নিতে হবে। এটি তৈরি করার পর মুখে ভালোভাবে মাখিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিন রেখে দিতে হবে। তারপর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। এই ফেসপ্যাকটি সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন ব্যবহার করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরে আসবে এবং ড্যামেজের হাত থেকে রক্ষা পাবে।

ত্বকে মধু ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা

মধু ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী তবে মনে রাখতে হবে যাদের অ্যালার্জি সমস্যা রয়েছে তাদের মধু ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা উচিত। যাদের ত্বকে এলার্জি সমস্যা রয়েছে তারা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে মধু ব্যবহার করবেন। মধু লাগানোর পর ত্বক ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে তাছাড়া লোমকূপে মধু আটকে থাকলে ব্ল্যাকহেডস বা ব্রণের সমস্যা দেখা দিতে পারে।


ত্বকে মধু ব্যবহারের পর আলতোভাবে মেসেজ করতে হবে জোরে জোরে ত্বকে ঘষা যাবেনা, এতে করে ত্বকের সমস্যা হতে পারে। মধুর সাথে যে মিশ্রণগুলি ব্যবহার করতে চান সেক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে সেটা আপনার ত্বকের জন্য উপযুক্ত কিনা।

ঠোঁটে মধু দিলে কি হয়

মধু মুখের ত্বক যেমন ভালো রাখে তেমনি ঠোঁটের জন্যও অত্যন্ত উপকারী। এটি ঠোঁটের কালচে ভাব দূর করে ঠোঁটের রং হালকা গোলাপী করতে সক্ষম। মধু এমন একটি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক উপাদান যা ঠোঁটের রং গোলাপি করে এবং ঠোঁট নরম তুলতুলে করে তোলে। মধুর সাথে লেবু মিশিয়ে ঠোঁটে দিলে ভালো কার্যকারিতা পাওয়া যায়।

মধু দিয়ে ঠোঁট গোলাপি করার উপায়

মধু ঠোঁটের কালচে দাগ দূর করে ঠোঁটকে গোলাপি করে তোলে। ঠোঁট কালচে হওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো লিপস্টিক ব্যবহার, টুথপেস্ট এর কারণে বা সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মির কারণে। কিন্তু মধু দিয়ে এই কালচে ভাব দূর করা যায় সে সম্পর্কে অনেকেই জানে না। তাহলে চলুন মধু দিয়ে কিভাবে ঠোঁট গোলাপি করা যায় সে উপায় জেনে নেই-
  • একটি বাটিতে ২ চা চামচ পরিমাণ লেবুর রস এবং তার সাথে এক চা চামচ পরিমাণ মধু নিতে হবে।
  • তারপর সেটিকে ভালোভাবে মিশাতে হবে।
  • এরপর এই মিশ্রণটি ঠোটের উপর একটু পুরো করে লাগিয়ে দিতে হবে।
  • লাগানো হয়ে গেলে ঘন্টাখানেক রেখে নরম ভেজা কাপড় দিয়ে ধীরে ধীরে তুলে ফেলতে হবে।
  • লেবুতে থাকা সাইট্রিক এসিড ঠোঁটের কালচে ভাব দূর করে গোলাপি রঙ এনে দিতে সাহায্য করে।

লেখক এর মন্তব্য

মধু স্বাস্থ্যের জন্য যেমন উপকারী তেমনি ত্বক ও ঠোঁটের জন্যও অনেক উপকারী। এটি ত্বকে বিভিন্ন উপায়ে ব্যবহার করা যায়। ঠোঁটের রং ফিরিয়ে আনতেও সক্ষম এই উপকারীর মধু। তবে মধু ব্যবহারের ক্ষেত্রে কতগুলো সতর্কতা রয়েছে সেগুলো অবলম্বন করে ব্যবহার করতে হবে বা মধু ব্যবহার করার ফলে ত্বকের কোনরকম সমস্যা দেখা দিলে সে ক্ষেত্রে মধু ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।

প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url