গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা - বিটরুট খাওয়ার নিয়ম

প্রিয় পাঠক, আপনি কি গর্ব অবস্থায় বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনাকে জানতে সাহায্য করবে। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা এবং বিটরুট খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা
আর্টিকেলটি পড়লে আপনি আরো জানতে পারবেন গর্ভবতী মহিলাদের বিটরুট খাওয়া কি ঝুঁকিপূর্ণ, বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা এবং বিটরুট খাওয়ার অপকারিতা ইত্যাদি সম্পর্কে।

ভূমিকা

বিটরুট দেখতে লোভনীয় এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি সবজি। যা অনেকেই পছন্দ করে থাকেন। এ সবজিটি সব ধরনের মানুষ খেতে পারবে এমনকি গর্ভাবস্থায় এটি অনেক উপকারী। এই গাছের মূল বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে তবে বেশি দেখা যায় মেজেন্ডা বা বেগুনি রংয়ের। এর রঙে কারণে মানুষের খাওয়ার প্রতি আকর্ষণ জন্মে।


বিটরুটে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ যা শরীরের জন্য অনেক উপকারী। গর্ভাবস্থায় এই সবজিটি আরো অনেক বেশি উপকারী। এর পুষ্টিগুণ মানুষকে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। আপনি যদি একজন স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই এটি নিয়মিত খাবেন। কারণ এতে রয়েছে নানা ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা যা শরীরকে সুস্থ রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা

বিটরুট শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এটি শরীরের পুষ্টি যোগান দিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। তাহলে চলুন বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যায়-

শরীরকে শক্তিশালী করে তোলেঃ বিটরুট শারীরিক শক্তি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ বিটরুটে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি গুনাগুণ যা শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। আপনি যদি শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে থাকেন বা শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করতে চান তাহলে অবশ্যই খাবারের তালিকায় বিটরুটে রাখতে পারেন।

হজম শক্তি বৃদ্ধি করেঃ হজম শক্তি বৃদ্ধি করার ক্ষমতা বিটরুটে রয়েছে। এটি আঁশযুক্ত খাবার যা হজমে সহায়তা করে। নিয়মিত বিটরুট খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে কোষ্ঠকাঠিন্য বা পেটের অন্যান্য সমস্যা দূর করে থাকে।

মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ মানুষের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যেতে থাকে। আপনি যদি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ধরে রাখতে চান তাহলে অবশ্যই আপনার খাবারের তালিকা বিটরুট রাখবেন। কারণ বিটরুটে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়ঃ ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বিটরুট। এই বিটরুট কোলন ক্যান্সারের মত মরণঘাতী রোগ থেকে শরীরকে রক্ষা করতে সক্ষম। কারণ বিটরুটে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরকে ক্যান্সার হতে রক্ষা করে।

দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতেঃ বিটরুট শুধু শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে না বরং এটি চোখের জন্য অনেক উপকারী। মানুষের দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া বর্তমান সময়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি চোখের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে এবং দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়ক ভূমিক পালন করে থাকে। কারণ বিটরুটে রয়েছে এমন এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা লুটেইন নামে পরিচিত।

উচ্চ রক্তচাপ এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ উচ্চ রক্তচাপ এবং রক্তের শর্করা শরীরের প্রধান প্রধান সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি। এ সমস্যাগুলো থেকে শরীরকে রক্ষা করতে পারে বিটরুট। যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত বিটরুট খেতে পারেন। এটি খাওয়ার ফলে যেমন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ আসবে তেমনি রক্তের শর্করার মাত্রা কমাবে।

রক্তশূন্যতার ঝুঁকি কমায়ঃ প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে বিটরুটে। সেজন্য এটি নিয়মিত খেলে রক্তের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং রক্তস্বল্পতার ঝুঁকি কমায়। যাদের শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা অনেক কম তারা এই বিটরুট অবশ্যই খাবেন।

ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেঃ বিটরুট শরীরের জন্য যেমন উপকারী তেমনি ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং বয়সের ছাপ পড়া থেকে ত্বককে রক্ষা করে। নিয়মিত বিটরুট খাওয়ার ফলে ত্বকের লাবণ্য চলে আসে।

প্রদাহ দূর করেঃ বিটরুটে রয়েছে টালাইন নামক প্রদাহ বিরোধী এক ধরনের যৌগ, যা প্রদাহ সৃষ্টিকারী রোগের হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করে। প্রদাহজনিত সব ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে নিয়মমত বিটরুট খেতে হবে।

গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা

স্বাভাবিক অবস্থায় বিটরুট খাওয়া অনেক উপকারী তবে গর্ভাবস্থায় এটি বিশেষভাবে উপকারী। বিটরুটে অনেক বেশি পুষ্টিগুণ থাকায় গর্ভাবস্থায় এটি খাওয়ার চাহিদা অনেক বেশি রয়েছে। তাহলে চলুন গর্ভাবস্থায় বিটরুট খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায় জেনে নেওয়া যাক-

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ গর্ভকালীন সময় মেয়েদের প্রধান প্রধান সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে কোষ্ঠকাঠিন্য৷ এই সময় মহিলাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা অনেক বেশি দেখা যায়। বিটরুট কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে সেজন্য এই অবস্থায় যদি আপনি বিটরুট খান তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়ে যাবে।

আয়রনের ঘাটতি পূরণ করেঃ গর্ভাবস্থার মহিলাদের মধ্যে আয়রন ঘাটতিজনিত সমস্যা দেখা দেয়। এ সমস্যা দূর করতে হলে প্রতিদিন বিটরুট খাওয়া উচিত কারণ বিটরুটে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন।

শরীরে শক্তি জোগাতেঃ একটি পুষ্টিগুণে ভরপুর সবজি হচ্ছে বিটরুটে। এটি শরীরের ক্লান্তি ও অবসাদ দূর করে, সেই সাথে শরীরের দুর্বলতা কমায়। এতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকার কারণে শরীরে শক্তি জোগাতে সাহায্য করে।

ওজন স্বাভাবিক রাখেঃ গর্ভবতী মায়েদের ওজন স্বাভাবিক থাকা খুবই জরুরী। ওজন কমও ভালো না আবার অতিরিক্ত ওজনও ভালো না। বিটরুট খেলে ওজন স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে।

প্রি এক্লেমসিয়ার ঝুঁকি কমায়ঃ বিটরুট রক্তচাপ কমাতে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেজন্য গর্ভবতী মহিলাদের প্রি এক্লেমসিয়ার ঝুঁকি কমে যায়। এ সমস্যা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য অনেক মারাত্মক। সেজন্য নিয়মিত বিটরুট খেতে পারেন যাতে প্রি এক্লেমসিয়ার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

গর্ভবতী মহিলাদের বিটরুট খাওয়া কি ঝুঁকিপূর্ণ

অনেকে প্রশ্ন করেন গর্ভবতী মহিলাদের বিটরুট খাওয়া নিরাপদ কিনা। গর্ভবতী মহিলাদের বিটরুট খাওয়ার ফলে কোন পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার প্রমাণ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। কারণ বিটরুট পুষ্টির একটি ভালো উৎস। বিটরুট পরিমাণমত খাওয়া গর্ভবতী মহিলাদের এবং গর্ভের বাচ্চার জন্য খুবই ভালো।


যেহেতু বিটরুট দেখেতে গোলাপি রঙের সেহেতু এটি খাওয়ার পর প্রস্রাবের রং গোলাপি হতে পারে, এতে ভয়ের কিছু নেই। সেজন্য পরিমাণ মতো বিটরুট খেতে পারেন গর্ভবতী মহিলারা। কারণ বিটরুটে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ যা তাদের শরীরের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করবে।

তবে বিটরুটে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে শর্করা যাদের রক্তে শর্করা বেশি রয়েছে তারা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বিটরুট খাবেন। কারণ এটিতে শর্করা বেশি থাকার ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

বিটরুট খাওয়ার নিয়ম

বিটরুট বিভিন্ন উপায়ে খাওয়া যায়। বিটরুট খাওয়ার জন্য একাধিক উপায় রয়েছে। বিটরুট সরাসরি পিস করে কেটে বা স্লাইস করে কেটে খাওয়া যায়। এটি সবজির মতো করে রান্না করে খাওয়া যায়। বিটরুটের সালাদ বানিয়েও খাওয়া যায়। মাইক্রোওভেনে রোস্ট করে খাওয়া যায়। এছাড়াও বিটরুট রস করে খাওয়া যায়। বিটরুটের রস গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খুবই উপকারী।


বিটরুট এবং বিটরুটের রস খাওয়ার জন্য কোন নির্দিষ্ট সময় নেই এটি দিনের যেকোনো সময় খাওয়া যায়। কারণ এটি শরীরের জন্য অনেক উপকারী। আপনি যদি নিয়মিত বিটরুট খেতে পারেন তাহলে আপনার শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে শরীর সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

বিটরুট খাওয়ার অপকারিতা

বিটরুট খাওয়া যেমন উপকারী এমনি অতিরিক্ত খাওয়ায় হতে পারে কিছু সমস্যা। তাহলে চলুন বিটরুট খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-
  • বিটরুটের রং গোলাপি তাই বিটরুট খাওয়ার ফলে প্রস্রাবের রং পরিবর্তিত হয়ে গোলাপি রং ধারণ করে। এটা এমন কোন সমস্যা না শুধুমাত্র দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে।
  • অক্সালেট জাতীয় খাবার হওয়ার কারণে এটি অতিরিক্ত খেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
  • এটি কারো কারো ক্ষেত্রে এলার্জি সমস্যা দেখা দিতে পারে। এতে করে জ্বর, চুলকানি এবং সর্দি হতে পারে।
  • অতিরিক্ত পরিমাণ খাওয়ার ফলে পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • বিটরুটে অক্সলেট থাকার কারণে এটি শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণের বাধা তৈরি করে।
  • গর্ভাবস্থায় বিটরুট খাওয়া উপকারী তবে বেশি পরিমাণ খেলে মাথা ঘোরা বা ক্লান্তি ভাব দেখা দিতে পারে।

লেখকের মন্তব্য

প্রতিটি খাবারের যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি অপকারিতাও রয়েছে। বিটরুটের ক্ষেত্রেও তেমনি, সেজন্য আপনার শরীরের প্রতিক্রিয়া অনুযায়ী এটি খাবেন। পরিমাণের অতিরিক্ত বিটরুট খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। এতে করে শরীর সুস্থ থাকবে এবং মনও ভালো থাকবে। প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধু বান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url