ত্বকের যত্নে বিটরুট পাউডারের উপকারিতা এবং ব্যবহারের নিয়ম

প্রিয় পাঠক, আপনি কি ত্বকের যত্নে বিটরুট পাউডারের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনাকে এ বিষয়ে জানতে সাহায্য করবে। এ আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে ত্বকের যত্নে বিটরুট পাউডারের উপকারিতা এবং ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেয়ার চেষ্টা করবো। এ সম্পর্কে জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ত্বকের যত্নে বিটরুট পাউডারের উপকারিতা
এটি পড়লে আরও জানতে পারবেন চুলের যত্নে বিটরুট পাউডারের উপকারিতা, ত্বকের যত্নে বিটরুট পাউডারের ব্যবহার, বিটরুট পাউডার খাওয়ার অপকারিতা।

ভূমিকা

বিটরুট পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এবং লোভনীয় একটি সবজি জাতীয় খাদ্য। বিটরুট পছন্দ করেন না এমন কেউ নেই। বিটরুট বাছাই করে শুকিয়ে তারপর সেগুলোকে গুড়া করা হয়। আর এগুলোকে বলা হয় বিটরুট পাউডার। বিটরুট যেমন শরীরের জন্য অনেক উপকারী তেমনি এর পাউডারও স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ভালো। বলা হয়ে থাকে একটি গোটা বিটরুটের সমান পুষ্টিগুণ রয়েছে এক চামচ বিটরুট গুড়াতে।


বিটরুট গুঁড়া সালাদ, কেক, বিস্কুট, মাখেন, নুডুলস ইত্যাদি খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি এবং রঙের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটি যেমন খাবারের পুষ্টি যোগান দিয়ে থাকে অপরদিকে খাবারের সুন্দর রঙও তৈরি করে। এছাড়াও বিটরুটের গুড়ায় রয়েছে নানাবিধ উপকারিতা।

বিটরুট পাউডারের উপকারিতা

বিটরুট পাউডার স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। এটি স্বাস্থ্যের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে শরীরের সুস্থতা বজায় রাখতে সক্ষম। তাহলে চলুন বিটরুট পাউডারের উপকারিতা-

রক্তচাপ কমায়ঃ বিটরুট পাউডার রক্তচাপ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যারা উচ্চ রক্তচাপ সমস্যায় ভুগছেন তারা বিটরুট পাউডার পানির সাথে মিশিয়ে পান করতে পারেন। তাহলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আসবে।

রক্তস্বল্পতা দূর করেঃ বিটরুট পাউডারে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন যা হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এটি নিয়মিত খেলে রক্তস্বল্পতার ঝুঁকি কমায়। যাদের শরীরের রক্তের পরিমাণ কম তারা এই পাউডারটি নিয়মিত খেতে পারেন।

গর্ভাবস্থায় অনেক উপকারীঃ গর্ভকালীন সময়ে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি হয়। বিটরুট পাউডার খেলে অনেক সমস্যা দূর হয়ে যায়। কারণ বিটরুট পাউডারে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ যা গর্ভবতী মহিলার পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। এটি গর্ভে থাকা বাচ্চার জন্যও অনেক উপকারী।

হার্ট সুস্থ রাখেঃ বিটরুট পাউডার নিয়মিত সেবন করলে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল দূর করে ভালো করে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে। যা হার্টের সুস্থতার জন্য খুবই প্রয়োজন। এটি যেমন হার্ট সুস্থ রাখে তেমনি হার্ট এটাকের ঝুঁকিও কমিয়ে আনে।

হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ বিটরুট পাউডারে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এটি সেবনের ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হয়ে যায় এবং কোলন সুস্থ রাখে।

ত্বকের যত্নে বিটরুট পাউডারের উপকারিতা

বিটরুট পাউডারে রয়েছে নানা ধরনের উপকারিতা। এর উপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। তাহলে চলুন প্রিয় পাঠক এর উপকারিতাগুলো জেনে নেই-

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করেঃ বিটরুট পাউডার এ রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটিমিন। সেজন্য এটি মাস্ক বা টোনার হিসেবে ব্যবহার করে ত্বকের উজ্জ্বলতার বৃদ্ধি করা যায়। এটি ব্যবহারের ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বহুগুণে বৃদ্ধি পায় এমনকি এটি ত্বকের ভিতর থেকে ফর্সা করতে সক্ষম।

ব্রণ নিরাময়েঃ বিটরুট পাউডার ব্রণ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এমনকি এটি ব্রণের দাগ দূর করতেও অত্যন্ত কার্যকরী।

ডার্ক সার্কেল দূর করেঃ অনেকের ত্বকে ডার্ক সার্কেল থাকে যা চেহারার সৌন্দর্য নষ্ট করে দেয়। বিটরুট পাউডার ডার্ক সার্কেল দূর করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ঠোঁটের কালচে দাগ দূর করেঃ বিভিন্ন কারনে ঠোঁটে কালচে দাগ পরে যা ত্বকের সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তুলতে বাধা তৈরি করে। বিটরুট পাউডার ঠোঁটের কালচে দাগ দূর করে গোলাপি রং ফিরিয়ে দিতে সক্ষম।

চোখের নিচের কালো দাগ দূর করেঃ ঘুম কম হওয়া বা অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে। চোখের নিচের এই কালো দাগ দূর করা যায় বিটরুট পাউডার ব্যবহারের ফলে।

ত্বকে বয়সের ছাপ কমায়ঃ নিয়মিত বিটরুট পাউডার ব্যবহার করলে ত্বকের বয়সের ছাপ পড়ার প্রক্রিয়াকে কমাতে থাকে। অনেকের অল্প বয়সে ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে যা চেহারার সৌন্দর্যকে নষ্ট করে দেয়।

ত্বক নরম করে তোলেঃ বিট রোড পাউডারে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ যা ত্বকের সুস্থতা বজায় রাখে এবং ত্বক কোমল ও দ্বিপ্তময় করে তোলে।

ত্বকের যত্নে পাউডারের ব্যবহার

বিটরুট পাউডার ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তবে কিভাবে ব্যবহার করলে এর সম্পূর্ণ উপকারিতা পাওয়া যাবে সে সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা আমাদের প্রত্যেকেরই অবশ্যক। তাহলে চলুন বিটরুট পাউডার কিভাবে ত্বকের জন্য ব্যবহার করা হয় সে সম্পর্কে জেনে নেই-
  • বিটরুট পাউডারের সাথে দুই চা চামচ টমেটোর রস মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুখে ব্যবহার করলে ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না।
  • এক চা চামচ লেবুর রসের সাথে বিটরুট গুঁড়ো মিশিয়ে পেস্ট করে ঠোঁটে লাগানে ঠোটের কালো দাগ দূর হয়ে যায়।
  • বিটরুট গুড়া, হলুদের গুঁড়া এবং নারিকেল তেল একসাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে ডার্ক থাকে দূর করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
  • বিটরুট গুঁড়া এক কোয়া রসুন এবং সামান্য পরিমাণ টক দই ভালোভাবে পেস্ট করে ব্রণের স্থানে ব্যবহার করলে ব্রণ দূর হয়ে যায়, সেই সাথে ব্রণের দাগও দূর হয়ে যায়।
  • বিটরুট গুড়ার সাথে হাফ চা চামচ মধু ও টক দই মিশিয়ে মাস্ক বানিয়ে ব্যবহার করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় এবং মসৃন করে তোলে।
  • এছাড়াও বিটরুট গুড়া টোনার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এভাবে ব্যবহার করলে ত্বকের বিভিন্ন দাগ দূর হয়ে যায় এবং ত্বক ফর্সা হয়।

চুলের যত্নে বিউটি পাউডারের উপকারিতা

বিটরুট শুধুমাত্র ত্বকের জন্য উপকারী তা নয় বরং এটি চুলের জন্য অনেক উপকারী। চুলের যত্নে অনেকেই বিটরুটের পাউডার ব্যবহার করে থাকে। বিটরুট পাউডার চুলের কি কি উপকারিতা নিয়ে আসে এই পাউডার সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যায়-

বিটরুট পাউডার চুল পড়া কমাতে খুবই কার্যকরী। এটি সম্পূর্ণভাবে চুলের গোড়ায় পুষ্টি যুগিয়ে চুলের গোড়া মজবুত করে যে কারণে চুল পড়া কমে যায়। এই পাউডার ব্যবহারের ফলে চুল বড় হয়। মাথার ত্বকের সুস্থতা বজায় রাখে বিটরুট পাউডার। এতে চুলের খুশকি দূর করে চুলকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করে তোলে। চুলের অকালপক্কতা রোধ করতে বিটরুট পাউডারের অত্যাধিক কার্যকারিতা।


অতএব বলা যায় চুলের যাবতীয় সমস্যা দূর করা যায় এই পাউডারের মাধ্যমে। চুলের উপকারিতা পেতে হলে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন ব্যবহার করতে হবে। বিটরুটের সাথে অলিভ অয়েল এবং আদার রস মিশিয়ে ব্যবহার করতে হয়। এভাবে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

বিটরুট পাউডার ব্যবহারের নিয়ম

বিটরুট পাউডার বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যায়। এটি খাওয়ার জন্য ব্যবহার করা যায় এবং ত্বক ও চুলের জন্য ব্যবহার করা যায়। বিটরুট পাউডার পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি খাবারে পুষ্টির চাহিদা মেটাতে এবং রং তৈরিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আবার এতে ত্বকের সমস্যা দূর করতেও বিভিন্ন উপায়ে ব্যবহার করা হয়।


চুলের যত্নেও বিটরুট পাউডার ব্যবহারের গুরুত্ব অপরিসীম। চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি ও বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে বিটরুট পাউডার।

বিটরুট পাউডার খাওয়ার অপকারিতা

বিটরুট পাউডার শরীরের জন্য যেমন উপকারী তেমনি এর সামান্য কিছু অপকারিতাও রয়েছে। তাহলে চলুন বিটরুট পাউডারের অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-
  • বিটরুট পাউডার ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য না খাওয়াই ভালো কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে শর্করা রয়েছে যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীরা যদি বিটরুট পাউডার খেতে চান তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তারপর খাবেন।
  • যাদের কিডনিতে পাথরের সমস্যা রয়েছে তাদের বিটরুট পাউডার না খাওয়াই ভালো। এছাড়াও অক্সালেট বেশি থাকায় এটি কিডনির পাথরও তৈরি করে।
  • বিটরুট পাউডার খেতে হলে পরিমাণমতো খেতে হবে। অতিরিক্ত খেলে ত্বকে চুলকানিও এলার্জি ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • যাদের নিম্ন রক্তচাপে সমস্যা রয়েছে তারা বিটরুট পাউডার খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। কারণ এটি উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সক্ষম। সেক্ষেত্রে বিটরুট পাউডার বেশি খেলে নিম্ন রক্তচাপ আরও কমে যেতে পারে যা বিপদজনক আকার ধারণ করতে পারে।

লেখকের মন্তব্য

প্রত্যেকটি খাবারেরই ভালো এবং খারাপ দিক রয়েছে। পরিমাণমত খাবার খেলে সেটি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, আর বেশি খেলে সেটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিটরুট পাউডারের ক্ষেত্রেও ঠিক একই রকম। প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধু বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url