অর্জুন গাছের ছাল খেলে কি হয় - অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, আপনি কি অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন তাহলে এ আর্টিকেলটি আপনাকে জানতে সাহায্য করবে। আমরা আপনাকে অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা এবং অর্জুন চায়ের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা
এই আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন অর্জুন ছালের ব্যবহারের নিয়ম অর্জুন ছালের অপকারিতা এবং অর্জুন চা বানানোর নিয়ম ইত্যাদি।

ভূমিকা

পৃথিবীতে যে সকল ঔষধি গাছ রয়েছে অর্জুন গাছ সেগুলোর মধ্যে একটি ৷ প্রধান প্রধান ঔষধি গাছগুলোর মধ্যে অর্জুন গাছ হচ্ছে অন্যতম। অর্জুন গাছ হচ্ছে চির হরিৎ ধরণের বৃক্ষ। এর পাতা পেয়ারা পাতার অনুরূপ এবং আকারে অনেক বড়। অর্জুন গাছের বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে টার্মিনালিয়া অর্জুন। প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করে আসছে অর্জুন।


অর্জুনের ছাল বিশেষ করে হার্টের রোগীদের জন্য অনেক উপকারী। এছাড়াও অর্জুনের ছালে রয়েছে নানা ধরনের উপকারিতা যেগুলো জানলে আপনি নিজেও অবাক হবেন। আপনি যদি অর্জনের ছালের উপকারিতা সম্পর্কে না জেনে থাকেন তাহলে অবশ্যই এ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ে নিবেন।

কারণ অর্জুন আমাদের অনেক সুপরিচিত একটি গাছ যা আমাদের বাড়ির আশেপাশে হয়ে থাকে। যেহেতু এই গাছ আমাদের নাগালের মধ্যেই রয়েছে সেহেতু এর উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের জানা আবশ্যক। এই গাছের কি কি উপকারিতা আছে এ বিষয়ে জানলে উপকারিতাগুলো অবশ্যই কাজে লাগানো যাবে।

অর্জুন গাছের সম্পূর্ণ অংশই ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয় তবে বেশি ব্যবহার করা হয় অর্জন গাছের ছাল।

অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা

অর্জুন গাছের ছালে রয়েছে নানামুখী উপকারিতা যা আমরা অনেকেই জানিনা। মূলত সেইজন্য আমাদের এই আর্টিকেলটি। এখানে আমরা অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতাগুলো আপনাদের সামনে আলোকপাত করব। তাহলে চলুন অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতাগুলো জেনে নেওয়া যাক-

উচ্চ রক্তচাপ কমায়ঃ অর্জুন গাছের ছাল শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এটি উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। যার ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ অর্জুনের ছাল লিপিড ট্রাই গ্লিসারাইড স্তর হ্রাস করার মাধ্যমে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এই ছাল ব্যবহারের ফলে রক্ত প্রবাহের বাধা দূর করে এবং রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক করে।

চর্মরোগ ভালো করেঃ অর্জুন গাছের ছাল চর্ম রোগের জন্য অত্যন্ত উপকারী। অর্জুনের ছালে থাকা ঔষধি গুনাগুণ চর্ম রোগের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে কার্যকরী। বহু যুগ ধরে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা চর্মরোগ সারাতে এই ছাল ব্যবহার করে আসছে।

চুলের বৃদ্ধিতেঃ চুলের বৃদ্ধিতে অর্জুন গাছের ছালও কিন্তু কার্যকরী। এটি ব্যবহারে চুলের বৃদ্ধি দ্রুত ঘটে সেই সাথে সুস্থতা বজায় রাখে।

মেদ কমাতেঃ বর্তমান সময়ে অতিরিক্ত মেদ প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতিরিক্ত মেদ কমাতে অর্জুন গাছের ছালে রয়েছে অন্যান্য ক্ষমতা। যাদের অতিরিক্ত মেদ রয়েছে তারা এটি নিয়মিত ব্যবহার করলে মেদ একবারে ঝরে যাবে।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যঃ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অর্জুন গাছের ছাল অনেক উপকারী। এটি রক্তের সুগার কমিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করে।

ত্বকের জন্য উপকারীঃ অর্জুনের ছাল ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। এটি ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে ত্বকের সুস্থতা বজায় রাখতে সক্ষম।

প্রস্রাবের সমস্যা দূর করেঃ প্রস্রাবের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থাকে যেমন প্রস্রাব সম্পূর্ণ না হওয়া বা আটকে থাকা প্রস্রাবের রাস্তায় বাধা তৈরি হওয়া ইত্যাদি। এ সমস্যাগুলো অর্জুন ছালের মাধ্যমে দূর করা সম্ভব।

হার্টের সুস্থতা বজায় রাখেঃ অর্জুন গাছের ছাল হার্টের সুস্থতা বজায় রাখতে সক্ষম। হার্টের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর করে হার্ট সুস্থ রাখতে খুবই কার্যকরী। এ ছাল ব্যবহার করলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেক অংশে কমে যায়।

ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ অর্জুন গাছের ছালে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সক্ষম। এটি নিয়মিত খাওয়ার ফলে মরণাঘাতি ক্যান্সার হতে শরীরকে রক্ষা করা যায়।

ক্ষত সারাতেঃ শরীরের ক্ষত সারাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে অর্জুনের ছাল। খোস-পাচড়া এবং ক্ষতস্থানে এই ছাল লাগালে খুব দ্রুত ক্ষত সরে ওঠে।

হজম শক্তির বৃদ্ধি করেঃ হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে অর্জুনের ছাল। খাদ্য পরিপাক স্বাভাবিক রাখে এবং হজম ক্ষমতা বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।

মুখের ব্যথায়ঃ মুখের ব্যথা বা মাড়ির ব্যথা খুব তাড়াতাড়ি উপশম করে। এটি মাড়ির ব্যথা দূর করার সাথে সাথে মাড়ি রক্ত পড়া বন্ধ করতে সাহায্য করে।

রক্ত পড়া বন্ধ করেঃ কাটা স্থান হতে রক্ত পড়া বন্ধ করে অর্জুনের ছাল। অনেক ক্ষতস্থান রয়েছে যেখান থেকে রক্ত পড়া অনেক সময় বন্ধ হয় না সেখানে অর্জনের ছাল ব্যবহার করলে খুব তাড়াতাড়ি রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়।

হাড় ভাঙ্গায়ঃ ভাঙ্গার স্থান জোড়া লাগাতে অর্জুনের ছাল ব্যবহার করে থাকে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা। তবে এটি প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহার করে। অনেক সময় এটি ব্যবহারে ভাঙ্গা হাড় ভালো হয়ে যায়।

পেটের সমস্যায়ঃ পেটের সমস্যায় কার্যকরী ঔষধ হিসেবে কাজ করে অর্জুনের ছাল। পেটে নানা ধরনের সমস্যা যেমন বদহজম, পেট ফাঁপা, অগ্নি মন্দা ইত্যাদি সমস্যায় ভালো কাজ দেয়। পেটের সমস্যা দূর করে পেট সুস্থ রাখতে এই ছালের ভূমিকা অনেক।

জ্বর সারাতেঃ জ্বর উপশমকারী কাজ হিসেবে কাজ করে থাকে। দীর্ঘদিন ধরে হওয়া জ্বর খুব সহজেই দূর হয়ে যায় এই ছাল ব্যবহারের ফলে।

শরীরকে শক্তিশালী করতেঃ শারীরিক দুর্বলতা দূর করে অর্জুনের ছাল সেই সাথে এটি হাটের দুর্বলতা দূর করে শরীরকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলে।

অর্জুনের ছাল ব্যবহার করার নিয়ম

অর্জুনের ছালের রয়েছে নানা ধরনের উপকারিতা তবে এই উপকারিতা পেতে হলে জানতে হবে এটি ব্যবহারে সঠিক নিয়ম তাহলে চলুন অর্জুনের ছাল ব্যবহার করার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-
  • প্রসাবের সমস্যা দূর করতে অর্জুন গাছের ছাল নিয়ে ভালোভাবে পেস্ট করতে হবে তারপর এটি দুই গ্লাস পানিতে দিয়ে ভালোভাবে ফুটাতে হবে ফুটানো হয়ে গেলে ঠান্ডা করে খেতে হবে তাহলে প্রস্রাবের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
  • ত্বকের সমস্যা দূর করতে হলে অর্জুনের গাছের ছাল তার সাথে বাদাম কাঁচা হলুদ এবং কর্পূর একসাথে মিশিয়ে ভালোভাবে পেস্ট করে নিতে হবে তারপর এটি মুখে মেখে নিতে হবে তারপর ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বকের বিভিন্ন ধরনের দাগ দূর হবে এবং ত্বকের সুস্থতা বজায় থাকবে।
  • শরীরের মেদ কমাতে হলে অর্জুন গাছের ছাল মিশ্রিত পানি সকালে এবং রাতে পান করতে হবে তাহলে এই সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
  • অর্জুন গাছের ছালের সাথে হেনা মিশ্রণ করে চুলে লাগালে পাকা চুল কালো হয়ে যাবে এবং চুল শক্তিশালী হবে ও দ্রুত চুল বড় হবে।
  • রক্তচাপ কমাতে হলে এক চামচ অর্জুন চালের গুঁড়ো দুই গ্লাস পানিতে দিয়ে ভালোভাবে ফুটাতে হবে। এমন ভাবে ফুটাতে হবে যেন পানি অর্ধেক হয়ে যায়। তারপর ঠান্ডা হলে সেই পানি সকাল এবং বিকাল দিনে দুইবার পান করতে হবে।

অর্জুন গাছের ছালের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

অর্জুন গাছের ছালের বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা রয়েছে তা আমরা সবাই জানি। তবে এর সামান্য কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও রয়েছে। তাহলে চলুন অর্জুন গাছের ছালের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে-
  • অর্জুন গাছের ছাল গর্ভবতী মহিলাদের ব্যবহার করা উচিত নয়। এটি ব্যবহারের ফলে গর্ভের বাচ্চার উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
  • অর্জুন গাছের ছাল ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে সাবধানতার সাথে ব্যবহার করতে হবে। অতিরিক্ত পরিমাণ অর্জুনের ছাল ব্যবহারের ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
  • অর্জুনের ছাল ব্যবহার করতে হলে পরিমাণমতো ব্যবহার করতে হবে। অতিরিক্ত পরিমাণ ব্যবহার করলে পেটের বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হতে পারে।

অর্জুন চা-এর উপকারিতা

অর্জুন চা অর্জুন গাছের ছাল দিয়ে তৈরি করা হয়। এইটা সবার কাছে তেমন একটা পরিচিত নয়। এইটা পান করার মাধ্যমে আরোগ্যলাভ করা সম্ভব হয়। কারণ এইটাই রয়েছে নানা ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা। বিভিন্ন ধরনের জটিল ও কঠিন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এ চা পানের মাধ্যমে। অর্জুনের চা নিয়মিত পান করলে হৃদরোগীদের জন্য খুবই ভালো।


এটির হৃদরোগের বিভিন্ন জটিল ধাপ থেকে হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখে যার ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়।

অর্জুন চা বানানোর নিয়ম

অর্জুন গাছের ছাল দিয়ে তৈরী করা হয় অর্জুন চা। অর্জুনের চা বানানো খুব সহজ, কারণ বাজারে অর্জুনের টি ব্যাগ পাওয়া যায়। অর্জুন চা বানাতে হলে আপনাকে প্রথমে ১ কাপ পানি ফুটিয়ে নিতে হবে। তারপর সেই ফুটানো পানিতে ২ চা চামচ চিনি এবং অর্জুন চা-এর একটি টি ব্যাগ দিয়ে নাড়তে হবে। এ ভাবেই তৈরী করা হয় অর্জুন চা।


এ চা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। এই চা দেহের বিভিন্ন সমস্য দূর করে শরীরকে সুস্থ্য রাখতে সহায়তা করে। এই চা যদি আপনি কিনতে চান তাহলে অনলাইনের মাধ্যমে অথবা ডিপার্টমেন্ট স্টোরে পেয়ে যাবেন।

লেখকের মন্তব্য

অর্জুন গাছ আমরা সবাই চিনি। এর যেসব ভেষজ ঔষধি গুনাগুণ রয়েছে এ সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি। এ আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদের অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দিতে পেরেছি। প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধু বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url