সর্পগন্ধা গাছের উপকারিতা - সর্পগন্ধা গাছ কোথায় পাওয়া যায়

প্রিয় পাঠক, আপনি কি সর্পগন্ধা গাছের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনাকে সাহায্য করবে। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে সর্পগন্ধা গাছের উপকারিতা এবং সর্পগন্ধা গাছ কোথায় পাওয়া যায় এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
সর্পগন্ধা গাছের উপকারিতা
এই আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন সর্পগন্ধা খাওয়ার নিয়ম, সর্পগন্ধা গাছ বিপন্নতার কারণ, সর্পগন্ধার ব্যবহৃত অংশ, সর্পগন্ধা গাছের বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি

ভূমিকা

সর্পগন্ধা গাছের আরেকটি নাম হল সর্পমূল। এটি একটি গুল্মজাতীয় ভেষজ গুনাগুন সম্পূর্ণ একটি উদ্ভিদ। সর্পগন্ধা গাছ আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সর্পগন্ধার বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে রাউলভলফিয়া। এই উদ্ভিদের পাতার ডগা সরু ও লম্বা। এই গাছের ফুল সাদা ও লাল রঙের হয় এবং ফল প্রথমদিকে সবুজ রঙের এবং পাকলে বেগুনি ও কালো রং ধারণ করে।


এই গাছের সম্পূর্ণ অংশ জুড়ে ঔষধি গুনসম্পন্ন। সর্পগন্ধা গাছের প্রত্যেক অংশই কোন না কোন রোগের প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বন জঙ্গলে এই গাছটি ঝোপাঝারে জন্ম নিয়ে থাকে। বিভিন্ন গবেষণার পর এই উদ্ভিদকে জাদুকরে ঔষধিগুণ সম্পন্ন বলে চিহ্নিত করেছেন।

সর্পগন্ধা গাছের উপকারিতা

ঔষধি গুনসম্পন্ন অনেক গাছকে আমরা চিনি। এগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে সর্পগন্ধা।। এই গাছের বিভিন্ন অংশের মাধ্যমে শরীরে বিভিন্ন রোগের মোকাবেলা করা সম্ভব হয়। তাহলে চলুন সর্পগন্ধা গাছের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-

অনিদ্রা দূর করেঃ প্রায় মানুষের মধ্যে যে সমস্যা দেখা দেয় তা হচ্ছে অনিদ্রা বা ঘুমের সমস্যা। ঠিকমতো ঘুম না হলে শরীর বিভিন্ন ধরনের রোগের দিকে ঝুঁকে পড়ে। শরীর সুস্থ থাকার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম অপরিহার্য। এই ঘুমের সমস্যা দূর করতে সর্পগন্ধা গাছের কার্যকারিতা অনেক।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণঃ সর্পগন্ধা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করে। যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত এক মাস সর্পগন্ধা গাছের চূর্ণ দিনে ১ থেকে ২ বার পানির সাথে মিশিয়ে খেলে এ সমস্যা দূর হয়ে যাবে। এছাড়াও সর্পগন্ধা পাতার রসে অ্যালকালয়েডস থাকার কারণে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।

উত্তেজনা কমায়ঃ পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীরে ও মস্তিষ্কে উত্তেজনা তৈরি হয়। এ সমস্যা দূর করতে হলে সর্পগন্ধা খাওয়া অতি প্রয়োজন। এটি খেলে ঘুম পরিমাণ মতো হবে এবং উত্তেজনা নাশক হিসেবে কাজ করবে।

হৃদ যন্ত্রের ক্রিয়া স্বাভাবিক রাখেঃ সর্পগন্ধা গাছের মূল বায়ুর বুদ্ধগতিকে দমন করতে সাহায্য করে। বিষধর সাপ বা পোকায় কামড় দিলে বায়ুর বুদ্ধগতির কারণে অল্প সময়ের মধ্যে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। সর্পগন্ধা বায়ু চাপ দমন করার মাধ্যমে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে।

পেটের সমস্যায়ঃ বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ মানুষেরই কারণে অকারণে পেটের সমস্যায় ভোগেন। এই সমস্যা যেন নিত্য দিনের তালিকাভুক্ত। সর্পগন্ধা গাছের নির্যাস পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে পেট সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। ডায়রিয়া, আমাশয় এবং পেটের ব্যথার খুবই কার্যকরী ওষুধ হিসেবে কাজ করে থাকে।

বার্ধক্য জনিত রোগ থেকে মুক্তি দেয়ঃ বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের শরীরে বার্ধক্য জনিত বিভিন্ন রোগ শরীরকে আঁকড়ে ধরে। সবগুলো রোগ থেকে সেরে ওঠা একবারে অসম্ভব হয়ে ওঠে। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে একটি কার্যকরী উপায় হচ্ছে সর্পগন্ধা।

মানসিক অবসাদ দূর করেঃ মানসিক চাপ বা অবসাদ শরীরকে মৃত্যু ঝুকির মধ্যে ঠেলে দিতে পারে। সর্পগন্ধা মানসিক অবসাদ দূর করে শরীরকে মানসিক চাপ থেকে মুক্ত রাখতে সহায়তা করে।

সর্দি কাশি উপশম করেঃ জ্বর সর্দি কাশি উপশমে খুবই কার্যকরী এটি। এগুলো সমস্যায় উল্লেখযোগ্য প্রতিষেধক হিসেবে সর্বাধিক পরিমাণ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

চোখের ছানি কাটায়ঃ বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের দৃষ্টি শক্তি কমে যায় এবং চোখে ছানি পড়ে। সর্পগন্ধা পাতার নির্যাস চোখের ছানি কাটাতে সাহায্য করে। এছাড়াও চোখে দৃষ্টি শক্তি কমে যাওয়া থেকে চোখ কে রক্ষা করে।

চর্মরোগ সমস্যায়ঃ সর্পগন্ধা গাছের ঔষধ চর্মরোগ সমস্যার সমাধান হিসেবে কাজ করে থাকে। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা চর্মরোগ সারাতে সর্পগন্ধা গাছের ওষুধ ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়ে থাকে।

বিষাক্ত পোকার কামড়ের ক্ষত সারাতেঃ বিষাক্ত প্রকার কামড়ের ক্ষত সারাতে এবং বিষের প্রতিষোধক হিসেবে কাজ করে থাকে সর্পগন্ধা। বিষাক্ত পোকা কামড়ের ফলে শরীরে বিষক্রিয়া তৈরি হয় তা থেকে রক্ষা করে সর্পগন্ধা।


সাপ বা অন্যান্য পোকামাকড়ের উপদ্রব কমায়ঃ এই গাছ বাড়িতে থাকলে বিষাক্ত সাপ বা বিষাক্ত পোকামাকড় বাড়িতে ঢুকতে পারে না। কারণ এই উদ্ভিদে রয়েছে বিষাক্ত পোকামাকড় দমন করার শক্তি।

সর্পগন্ধা গাছ বিপন্নতার কারণ

সর্পগন্ধা গাছ বর্তমানে বিভিন্ন কারণে বিলুপ্তির পথে। এর বিলুপ্তি বা বিপন্নতার প্রধান কারণ হিসেবে এই গাছের অতিরিক্ত ব্যবহারকে দায়ী করা হয়। এ গাছের ঔষধি গুনাগুন অতিমাত্রায় থাকার কারণে বিভিন্ন রোগের সমস্যা সমাধানে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ঔষধ হিসেবে ভালো ফলাফল পাওয়ার কারণে প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করা হয় এই গাছ।

যার কারণে ধীরে ধীরে এই গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এছাড়া অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় ঝোপ বা আগাছা দমন করার সময় এই গাছ কেটে ফেলা হয়। কারণ এই গাছ সাধারণত ঝোপ হিসেবে জন্মায়। যারা এই গাছ সম্পর্কে জানেনা তারা বিশেষ করে এই কাজটি উচ্ছেদ করে থাকে। তবে আমাদের প্রত্যেকেরই এই গাছ সংরক্ষণের ব্যাপারে সচেতন হওয়া অতি জরুরী।

এই গাছে যে পরিমাণ গুনাগুন রয়েছে যা অন্যান্য গাছের তুলনায় অনেক বেশি। গাছ একদিকে যেমন প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখে এবং অন্যদিকে ঔষধি গুন থাকায় বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

সর্পগন্ধার ব্যবহৃত অংশ

সর্পগন্ধা গাছের কোন কোন অংশ ব্যবহার করা হয়ে থাকে এ সম্পর্কে অনেকে জানে না। সর্পগন্ধা পাতা এবং মূল ঔষধ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। শারীরিক দুর্বলতা দূর করতে এর মূলের চূর্ণ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সর্পগন্ধা গাছের পাতার রস পেটের বিভিন্ন সমস্যায় এবং চর্ম রোগে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

যাদের ঘুমের সমস্যা রয়েছে তারা সর্পগন্ধা মূলের চূর্ণ ব্যবহার করে থাকে। সর্পগন্ধা গাছের ছাল ও বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের ব্যবহার করা হয়।

সর্পগন্ধা খাওয়ার নিয়ম

সর্পগন্ধা গাছ বিভিন্ন রোগ সারাতে সাহায্য করে । তবে এর ভালো ফলাফলের জন্য অবশ্যই খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানা জরুরী। তাহলে চলুন কোন সমস্যায় কিভাবে খেতে হবে সে সম্পর্কে ধারণা না নেওয়া যাক-
  • সর্দি কাশি এবং শ্বাসকষ্ট দূর করতে সর্পগন্ধা গুড়ো অত্যন্ত কার্যকরী। এক গ্রাম সর্পগন্ধা গুড়োর সাথে মধু মিশিয়ে খেলে সর্দি কাশিতে ভালো আরাম পাওয়া যায়।
  • পেটের সমস্যা দূর করতে তিন থেকে চার গ্রাম সর্পগন্ধা গুঁড়ো কুসুম কুসুম গরম পানির সাথে মিশিয়ে পান করলে পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
  • মেয়েদের অনিয়মিত মাসিকের ক্ষেত্রে এটি খুবই কার্যকরী। মাসিক নিয়মিত করতে শুকনো সর্পগন্ধা গুঁড়ো কালো গোলমরিচ এবং আদা একসাথে পিষে ব্যবহার করতে হবে।
  • অনিদ্রজনিত সমস্যা দূর করতে 1 থেকে 3 গ্রাম সর্পগন্ধা গুঁড়ো পানির সাথে মিশিয়ে সেবন করুন। এভাবে নিয়মিত এক মাস সেবন করার ফলে অনিদ্রা সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

সর্পগন্ধা গাছের বৈশিষ্ট্য

  • সর্পগন্ধা একটি চিরহরিৎ গুল্ম জাতীয় ঔষধি গুণাগুণ সম্পন্ন ভেষজ উদ্ভিদ
  • এই গাছের উচ্চতা সর্বনিম্ন ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে
  • এই গাছের পাতা লম্বা সরু আকৃতির
  • এই গাছের ফুল দুই ধরনের হয়ে থাকে যেমন লাল ও সাদা

সর্পগন্ধা গাছের ছবি

সর্পগন্ধা গাছ কোথায় পাওয়া যায়

সর্পগন্ধা গাছ অনেকেই চিনেন কিন্তু এর গুনাগুন অনেকেই জানেন না। তবে কিছু কিছু মানুষের গুনাগুন সম্পর্কে অনেক ধারণা রয়েছে। সর্পগন্ধা গাছ বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাওয়া যায়। যেমন ভারত, শ্রীলংকা, মায়ানমার, ভুটান, থাইল্যান্ড এবং ইন্দোনেশিয়া সহ আরো অন্যান্য দেশে এই গাছ দেখা যায়।

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এ গাছ দেখা যায় এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ময়মনসিং জেলা। ময়মনসিংহ জেলায় এই গাছ প্রচুর পরিমাণে দেখা যায় এবং এই জেলাগুলোতে এই গাছ প্রচুর পরিমাণে জন্মায়। এছাড়াও অন্যান্য জেলায় কমবেশি এই গাছ দেখা যায়।

এ গাছ মূলত বনে জঙ্গলে এবং পাহাড়ি অঞ্চলে বেশি জন্মে থাকে। নিচু জায়গায় এই গাছ তেমন একটা জন্মায় না।

সর্পগন্ধা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

প্রতিটি ঔষধি গুন সম্পূর্ণ গাছের ব্যবহারের নির্দিষ্ট মাত্রা রয়েছে । পরিমাণে তুলনায় অতিরিক্ত ব্যবহারের যে সকল পার্শ্বপ্রতিকরা দেখা দিতে পারে সেগুলো জেনে নেওয়া যাক-
  • উচ্চ রক্তচাপ কমাতে এটি অনেক কার্যাবলী কিন্তু অধিক ব্যবহারের ফলে উচ্চ রক্তচাপ নিম্ন রক্তচলের পরিণত হয় যা শরীরে জন্য ক্ষতিকর
  • অতিরিক্ত পরিমাণ সর্পগন্ধার গুড়া ব্যবহারের ফলে পেটের বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হতে পারে যেমন এসিডিটি,বদহজম, পেট ব্যথা সহ আরো অন্যান্য সমস্যা।
  • অতিরিক্ত ব্যবহারে ফলে মাথাব্যথা ও বমি বমি সমস্যা দেখা দিতে পারে।

লেখক এর মন্তব্য

সর্পগন্ধা গাছ বহু উপকারী আমাদের শরীরের জন্য। এটি বিভিন্ন সমস্যায় কার্যকরী ঔষধ হিসেবে কাজ করে থাকে তবে সবার শরীরের প্রতিক্রিয়া এক নয়। সর্পগন্ধা গাছের ওষুধ খেতে হলে অবশ্যই চিকিৎসার পরামর্শ নিয়ে খাবেন। প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url