স্যাকারিন খেলে কি হয় - স্যাকারিন এর উপকারিতা জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, আপনি কি স্যাকারিন এর উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে এ আর্টিকেলটি আপনাকে সাহায্য করবে। এ আর্টিকেলটির মাধ্যমে আমরা আপনাকে স্যাকারিনের উপকারিতা এবং স্যাকারিনের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
স্যাকারিন খেলে কি হয়
এ আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন স্যাকারিন কোথায় পাওয়া যায়, স্যাকারিন কি দিয়ে তৈরি এবং স্যাকারিন খেলে কি হয় ইত্যাদি।

ভূমিকা

যাদের রক্তে অতিরিক্ত সুগার বা যারা ডায়েট করতে চান তাদের কাছে খুবই সুপরিচিত জিনিস হচ্ছে স্যাকারিন। দৈনন্দিন জীবনে আমরা যে ধরনের মিষ্টি খেয়ে থাকি তার যথার্থ সাপ্লিমেন্ট হচ্ছে সেকারিন। স্যাকারিন তো সবাই খায় কিন্তু এর স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে ধারণা আছে কি? বা এর ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে সবাই অবগত কিনা।


সেজন্য স্যাকারিন সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা থাকা দরকার। স্যাকারিন একটি কৃত্রিম খাবার তাই স্যাকারিন কিসের জন্য ব্যবহার করা হয় বা এটি স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ভালো বা ক্ষতিকর সে সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন। দোকানে আমরা যেসব জিনিস কিনে থাকি তার বেশির ভাগই স্যাকারিন মিশ্রিত। স্যাকারিনে মিষ্টির পরিমাণ চিনি তুলনায় ৪০০ গুণ বেশি।

এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে স্যাকারিনের এর কয়েকটি উপকারী এবং ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে আলোকপাত করব। সেজন্য এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।

স্যাকারিন এর উপকারিতা

চিনির চেয়েও অধিক মিষ্টি স্বাদযুক্ত খাবার হচ্ছে স্যাকারিন। এই স্যাকারিন খেলে কি কি উপকার হয় তা আপনাদের সামনে তুলে ধরব। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক -

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ আমরা জানি চিনির সাপ্লিমেন্ট হচ্ছে স্যাকারিন সেজন্য এটি ডায়েটের জন্য অত্যন্ত ভালো। স্যাকারিন কেমিক্যাল যুক্ত প্রোডাক্ট যা ল্যাবরেটরীতে তৈরি করা হয়, সেজন্য এর মধ্যে কোন জৈব পদার্থ থাকে না। যে কারণে ফ্যাট তৈরি হওয়ার কোন লক্ষণও থাকেনা। ছ্যাকারিন খেলে মানুষের ওজন বৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবে এর উপকারিতা সম্পূর্ণ পাওয়া যাবে পরিমিত ব্যবহারের ফলে।


ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যঃ ডায়াবেটিকস রোগীদের জন্য স্যাকারিন খুবই ভালো কারণ এটি চিনির বিকল্প ব্যবহার করা হয়। এটি রক্তের সুগারের পরিমাণ বাড়ায় না বলে ডায়াবেটিস রোগীরা এটি নিশ্চিন্তে খেতে পারে। যাদের রক্তে ব্লাড সুগারের পরিমাণ অনেক বেশি তারা যেকোন খাবারে চিনির পরিবর্তে স্যাকারিন ব্যবহার করতে পারেন।


দাঁত এর সুরক্ষা দেয়ঃ চিনি খাওয়ার ফলে দাঁতের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয় যেমন দাঁতে ক্যাভিটি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যার ফলে দুর্বল হয়ে দাঁত পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। চিনি দাঁতের জন্য খুবই ক্ষতিকর, তাই চিনির পরিবর্তে বেছে নিতে পারেন স্যাকারিন কারণ এটিতে দাঁতের ক্যভিটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।

স্যাকারিন এর ক্ষতিকর দিক

কয়েকটি উপকারিতার পাশাপাশি স্যাকারিনের ক্ষতিকর দিক রয়েছে যা আমাদের প্রত্যেকেরই জানা প্রয়োজন। এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে আপনি না জেনে থাকেন তাহলে অবশ্যই জেনে নিন। কেননা না জানলে অতিরিক্ত স্যাকারিন খেয়ে শরীরকে হুমকির দিকে ঠেলে দিতে পারেন। তাহলে এবার স্যাকারিন এর ক্ষতিকর দিকগুলো জেনে নেওয়া যাক -

স্যাকারিন পরিমিত খেলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো কিন্তু অপরিমিত খাওয়ার ফলে শরীরে বিভিন্ন রোগের সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে। যারা অতিরিক্ত পরিমাণ স্যাকারিন খায় তাদের রক্তে সুগারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে। এটি প্রমাণ করার জন্য কয়েকজন মানুষকে টানা ১১দিন অতিরিক্ত পরিমাণ স্যাকারিন খাওয়ানো হয়।

কিন্তু তাতে দেখা গেছে তাদের শরীরে ব্লাড সুগারের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। এছাড়াও স্যাকারিন খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীরে কয় ধরনের ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধে যার ফলে ওবেসিটি টাইপ টু ডায়াবেটিস এমনকি মরণঘাতি ক্যান্সারের সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে। এটি অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে হাইপারগ্লাইসেমিয়ার বিকাশ ঘটে।

অনেক সময় বলা হয়ে থাকে স্যাকারিন খাওয়ার মাধ্যমে মূত্রথলিতে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। গর্ভাবস্থায় এবং স্তন্যদানের সময় স্যাকারিন খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। দৈনিক স্বাভাবিক মানুষের প্রতি কেজিতে পাঁচ মিলিগ্রাম স্যাকারিন গ্রহণ করতে পারবে এবং সেটি স্বাভাবিক হারে গ্রহণ করা হবে।

স্যাকারিন কি দিয়ে তৈরি হয়

স্যাকারিন কৃত্তিম মিস্টি জাতীয় খাদ্য যা কৃত্তিম উপায়ে তৈরি করা যায়। টলিউইনসালফোনামাইট বা থ্যালিক অ্যানহাইড্রাইকে অক্সিডাইস করে তৈরি করা হয়ে থাকে স্যাকারিন। স্যাকারিন হলো দ্রবনীয় এবং সাদা স্ফটিকপাউডারের মতো দেখতে। তৈরিতে মূল উপাদান হিসেবে টুলুইন ব্যবহৃত হয়। তবে স্যাকারিনে কোন খাদ্যশক্তি বা পুষ্টি উপস্থিত থাকেনা।

এটি অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যের সাথে বিক্রিয়া তৈরি করে না। দোকানে যেসব পণ্য পাওয়া যায় যেমন ক্যান্ডি, কুকি আইসক্রিম বা ওষুধ ইত্যাদি পণ্যগুলোকে মিষ্টি স্বাদ দেওয়ার জন্য স্যাকারিন ব্যবহার করা হয়। এটি ২৩০ থেকে ২৫০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় গলে যায়।

স্যাকারিন কোথায় পাওয়া যায়

স্যাকারিন অধিক মিষ্টি জাতীয় কৃত্রিম খাদ্য। যার মধ্যে তেমন কোন খাদ্য শক্তি উপস্থিত থাকে না। খাদ্যে মিষ্টান্নভাব তৈরি করতে চিনির বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়। কিন্তু স্যাকারিন কোথায় পাওয়া যায় এ সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। স্যাকারিন যে কোন মুদিখানা দোকানে পাওয়া যায় বা সুপার শপে পাওয়া যায়।

যারা চিনি খেতে পারেনা বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীরা চিনির বিকল্প হিসেবে এটি ব্যবহার করে থাকেন। চিনির তুলনায় অনেক মিষ্টি হলেও ক্যালরির পরিমাণ অত্যন্ত কম রয়েছে বলে নিশ্চিন্তে খেতে পারেন।

স্যাকারিন খেলে কি হয়

স্যাকারিন বিষাক্ত না আবার পুষ্টি করো না। তারপরও এটি খাদ্যে না মিশানোই ভালো। স্যাকারিন পরিমাণমতো খেলে শরীরের কোন ক্ষতি হয় না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্যাকারিন খাওয়া অনেক উপকারী। আমাদের মধ্যে এমন অনেকে রয়েছেন যারা মিষ্টি পছন্দ করেন কিন্তু ডায়েটে থাকার কারণে বা ডায়াবেটিস থাকার কারণে চিনি খেতে পারছেন না।

সেজন্য চিনির পরিবর্তে স্যাকারিন খাওয়া যেতে পারে। এটি খেলে ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে সুগারের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে সেই সাথে ওজন বৃদ্ধি হওয়ারও কোনো সম্ভাবনা থাকে না। চিনি যুক্ত খাবার দাঁতের জন্য ক্ষতিকর হয়ে থাকে কিন্তু চিনির পরিবর্তে স্যাকারিন খেলে দাঁতের ক্ষতি হয় না।

এজন্য বলা হয় যে স্যাকারিন খেলে তেমন কোনো ক্ষতিও হয় না বা পুষ্টিগুণ পাওয়া যায় না। চিনি খেলে যে ধরনের ক্ষতি হয় স্যাকারিন খেলে সে ধরনের ক্ষতি হয় না বিধায় এটি খাওয়া হয়।

স্যাকারিন সম্পর্কিত কয়েকটি প্রশ্ন এবং উত্তর

প্রশ্নঃ স্যাকারিন কি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর

উত্তরঃ বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞরা স্যাকারিন সম্পর্কে একমত পোষণ করেন যে মানুষের জন্য নিরাপদ তবে তা পরিমাণমত। এটি খেলে মানুষের স্বাস্থ্যের কোন ক্ষতি হয় না।

প্রশ্নঃ স্যাকারিনে সুগারের পরিমাণ কত

উত্তরঃ চিনির চেয়ে ২০০ থেকে ৭০০ গুণ বেশি মিষ্টি। সেজন্য যতটুকু পরিমাণ চিনিতে মিষ্টি সেই তুলনায় স্যাকারিনে পরিমাণ অনেক কম লাগে।

প্রশ্নঃ স্যাকারিনে কি কিডনির জন্য ক্ষতিকর

উত্তরঃ স্যাকারিন পরিমাণ মতো খেলে তা দ্বারা কোন শরীরের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না এমন কি কিডনিরও। একটি মানুষের ওজন অনুযায়ী স্যাকারিন গ্রহণ করার নিয়ম রয়েছে। এর অতিরিক্ত খেলে শরীরের এবং কিডনির সমস্যা তৈরি করতে পারে। তবে এর কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

লেখক এর মন্তব্য

স্যাকারিন একটি কৃত্রিম মিষ্টি জাতীয় খাদ্য যা পরিমাণমতো খেলে শরীরে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে না। তবে এটি কেমিক্যাল যুক্ত খাবার হওয়ায় অতিরিক্ত পরিমাণ না খাওয়াই উত্তম। প্রিয় পাঠক, এ আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধু বান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url