রসভরি ফল খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা - রসভরি ফলের পুষ্টিগুণ

প্রিয় পাঠক, আপনি কি রসভরি ফল খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনাকে সাহায্য করবে। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে রসভরি ফল খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা এবং রসভরি ফলের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
রসভরি ফল খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
এ আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন রসভরি গাছের উপকারিতা, রসভরি ফলের অপকারিতা এবং রসভরি খেলে কি হয় ইত্যাদি।

ভূমিকা

রসভরি বা গোল্ডেন বেরি জন্ম নেয় আগাছা হিসেবে রাস্তার ধারে। এই গাছটি সাধারণত খুবই অযত্নে বেড়ে ওঠ। কিন্তু আপনি জানেন কি অযত্নে বেড়ে ওঠা গাছটির উপকারিতা। এর উপকারিতাগুলো জানলে আপনি নিজেও অবাক হবেন।  রসভরি ফল আমরা অনেকেই চিনি কিন্তু এর নাম একেক জায়গায় একই রকম।


কেউ চিনে ফটকা গাছ নামে, আবার কেউ চিনে বনটোপরা আবার অনেকে এটিকে রসভরি গাছ বলে জানি। অনেকে এই ফলটিকে ফটকা ফল নামে চিনেন। এই গাছটি আগাছা মনে করে কেউ ফিরেও তাকায় না। গ্রাম-গঞ্জের মানুষ এই ফলটিকে অনেকেই চিনেন। এই গাছ চিনে না এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।


এ ফলটি সাধারণত শীতকালে বেশি হয়। অন্য ঋতুতেও এই গাছ জন্মে তবে শীতকালেই বেশি জন্মে থাকে। ফটকা ফলের পাতা মাঝারি ধরনের হয়। এ ফটকা ফল পেকে গেলে হলুদ বা লালচে রংয়ের হয়। এই ফলের মাঝে মধ্যে থাকে একটি বীজ ধরনের ফল।

রসভরি ফলের উপকারিতা

ক্লান্তি দূর করেঃ রাসবেরি ফল শরীরকে সম্পূর্ণরূপে এনার্জি দেয়। যাদের শরীর ম্যাজ ম্যাজ করে বা ক্লান্তিবোধ দেখা দেয় তাদের এই ফল খাওয়া প্রয়োজন। কারণ এই ফলটিতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা ক্লান্তি বা অবসাদ দূর করে শরীরকে সম্পূর্ণরূপে এনার্জি দেয়।

মূত্রথলির ইনফেকশনঃ মূত্রনালীর ইনফেকশনে এটি খুবই কার্যকরী। মূত্রনালীর ইনফেকশন বিশেষ করে মহিলাদের হয়ে থাকে। রসভরি ফল মূত্রনালীর ইনফেকশন দূর করতে সহায়তা করে। টানা সাত দিন যদি এই ফল খাওয়া যায় তাহলে খুব সহজেই এই সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ রসভরি ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে কোলন পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতেও খুবই কার্যকরী এই ফল।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে রসভরি ফলের গুরুত্ব অত্যাধিক। যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে তারা নিয়মিত এই ফল খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ রসভরি ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ফলে বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে খুব সহজে মোকাবেলা করা যায়।

ইমিউনিটি সিস্টেমকে উন্নত করেঃ প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন থাকায় এটি শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেমকে উন্নত করে। শরীরের দুর্বলতা দূর করে এবং শরীরকে সম্পূর্ণ এনার্জি ফিরিয়ে দেয়।

ডায়াবেটিকস রোগীদের জন্য ভালোঃ রসভরি ফল ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক ভালো । এটি টক এবং মিষ্টি বলে অনেক মানুষ পছন্দ করেন না। কিন্তু যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের জন্য এটি খুবই উপকারী। ফাইবারের পরিমাণ বেশি হওয়ার কারণে এটি ব্লাড সুগার ইনসুলিন এবং লিপিডের মাত্রা উন্নতি করে থাকে। ফ্রকটোজ থাকে এই ফলে বিধায় এটি খেলে ডায়াবেটিস রোগীদের ইনসুলিন এর প্রয়োজন হয় না।

চুলের জন্য ভালোঃ চুলের জন্যও রসভরি ফল অনেক ভালো। কারণ এতে রয়েছে ভিটামিন সি এবং ফলিক অ্যাসিড যা চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এছাড়াও চুল ঘন ও স্বাস্থ্য উজ্জ্বল করতে এই ফলের গুনাগণ অনন্য।

দৃষ্টিশক্তি ভালো করেঃ রসভরি ফলে রয়েছে ভিটামিন এ যা চোখের দৃষ্টি শক্তির জন্য খুবই ভালো। এটি চোখে দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করে এবং চোখ সুরক্ষিত রাখতে সহায়তা করে।

হার্টের জন্য উপকারীঃ রসভরি ফলে ফাইটোকেমিক্যাল রয়েছে যা হার্টের জন্য অনেক উপকারী। এটি নিয়মিত খেলে হার্টের স্বাস্থ্য বজায় রাখবে এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাবে।

লিভার ও কিডনি সুস্থ রাখেঃ রসভরি ফলের থাকা ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লিভার ও কিডনি সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। এছাড়াও এটি শরীরের বিষাক্ত টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে।

কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ এই ফল শরীরে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে শরীর সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। এছাড়াও এটি কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

মানবদেহের কোষের ক্ষতি প্রতিরোধঃ রসভরি মানবদেহের কোষের ক্ষতির প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে এবং কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমকে শক্তিশালী করতেও সাহায্য করে।

মুখের ঘা দূর করেঃ মুখের ঘা দূর করার জন্য রসভরি গাছের ফল খুবই কার্যকরী। মুখের ঘায়ের সাথে শরীরের চামড়ার ঘাও দূর করে থাকে রসভরি ফল। এছাড়া ও শরীরের কোন অংশ কেটে গেলে কাটা অংশে রসভরি পাতার রস করে দিলে রক্ত পড়া বন্ধ হয়।

ত্বকের জন্য রসভরির উপকারীতা

ত্বকের যত্নে রসভরি ফলের অনেক উপকারিতা রয়েছে সেগুলো নিচে আলোচনা করা হলো । তাহলে চলুন ত্বকের যত্নে রসভরির উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-
  • রসভরিতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান যা ত্বকের সুস্থতার জন্য প্রয়োজন। এটি ত্বক সুস্থ রাখে এবং ময়শ্চারাইজ করতে সাহায্য করে।
  • ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতে এই ফলের গুরুত্ব অত্যাধিক। প্রচুর পরিমাণে পানি রয়েছে যা ত্বককে হাইডেড রাখতে সাহায্য করে।
  • খনিজ ভিটামিন নিউট্রিয়েন্টের মতো বিভিন্ন ধরনের পুষ্টির উপস্থিতি থাকায় এটি ত্বকের গঠন উন্নত করে এবং ত্বককে নরম ও মসৃণ রাখে।
  • ত্বকের বিভিন্ন ধরনের দাগ বলিরেখা ইত্যাদি দূর করতে সক্ষম। এটি ত্বকের শুষ্কতা দূর করে ত্বককে মসৃণ ও কমল করে তুলতে সহায়তা করে।
  • রসভরি ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বৃদ্ধি করে। কারণ কোলাজেন ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা রক্ষা করতে সাহায্য করে। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দিতে এবং উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে খুবই কার্যকরী এই ফল।

রসভরি খাওয়ার নিয়ম

রসভরি ফল অনেকে চিনেন কিন্তু এটি খাওয়া যায় বা কিভাবে খেতে হয় সে সম্পর্কে জানেনা। রসভরি ফল ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত ভালো। যারা ডায়াবেটিস টাইপ টু-তে রয়েছেন তারা প্রতিদিন কমপক্ষে দুইটি করে রসভরি খেতে পারেন। ফলগুলি দুই কাপ পানিতে ভালো করে সিদ্ধ করে নিন যতক্ষণ না পানি অর্ধেক পরিমাণ হচ্ছে ততক্ষণ ফুটাতে থাকুন।


ফুটানো হয়ে গেলে পানি দিয়ে ঠান্ডা করে প্রতিদিন সকালে পান করতে হবে। তাহলে ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে অনেক উপকার পাবেন। এটি সরাসরি কাঁচাও খাওয়া যায় কাঁচা খেলে একটু তিতা লাগে।

রসভরি ফলের পুষ্টি উপাদান

রসভরি ফলে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান রয়েছে পুরো শরীরের সুস্থতা বজায় রাখতে খুবই প্রয়োজন। রসভরিতে থাকা পুষ্টি উপাদানগুলো হল কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে , ভিটামিন ই, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, থায়োমিন, ফসফরাস, আয়রন, বিটাকারোটিন, লুটেইন, ফাইবার, ইত্যাদি। একজন মানুষের সম্পূর্ণ সুস্থতা বজায় রাখতে এগুলো পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করা খুবই প্রয়োজন।

আমাদের দেশের মানুষগুলো এই ফলগুলোকে না চিনে ফেলে দিয়ে থাকে। এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে যদি জানত তাহলে এগুলো ফেলে দিত না বরং সংরক্ষণ করত।

রসভরি ফল খাওয়ার অপকারিতা

রসভরি ফল খাওয়া অনেক উপকারী সেটি আমরা সবাই জানি কিন্তু এর সামান্য কিছু অপকারিতাও রয়েছে তা সম্পর্কে আমাদের অবগত হওয়া প্রয়োজন। কাঁচা অবস্থায় ফল খাওয়া উচিত নয় কেননা কাঁচা রসভরি ফলে সোলানাইন থাকে যা মানুষের শরীরে বিষক্রিয়া তৈরি করতে পারে। তবে অল্প পরিমাণ খেলে সেগুলো মানুষের সহনশীলতার মাত্রার মধ্যেই থাকবে।

কিন্তু অতিরিক্ত বা অধিক পরিমাণ খাওয়ার ফলে মানুষের শরীরে বিভিন্ন ধরনের বিষক্রিয়া তৈরি করতে পারে এবং অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ডায়রিয়া, জ্বর, শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা কমে যাওয়া, পেট ব্যথা, মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাব ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেজন্য রসভরি ফল পাকা অবস্থায় খান এবং নিরাপদে থাকুন।

রসভরি গাছের উপকারিতা

রসভরি গাছকে আমরা আগাছা মনে করি কিন্তু এর যে পরিমাণ ঔষধি গুনাগুণ রয়েছে তা জানলে সবাই অবাক হবেন। রসভরি গাছের পাতা মূত্রনালী সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে এবং এই পাতা ভেজে খেলে চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি পায়। এটি নিয়মিত সেবন করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং শক্তিপদ হিসেবে কাজ করে।

কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। হাঁপানি শ্বাসকষ্ট দূর করতে এ গাছের শিকড় তুলে নিয়ে রস করে নিতে হবে তারপর এক থেকে দেড় চামচ করে ৭ থেকে ১০ দিন খাওয়াতে হবে। তবে এটি খাওয়ার সাবধানতা হচ্ছে রসভরি শিকড়ের রস খাওয়ার ৩ থেকে ৪ ঘন্টা মধ্যে কোন পানি খাওয়া যাবে না।

ডায়াবেটিকস ও হার্ট অ্যাটাক রোগীদের জন্য এই গাছের তিনটি অংশ ব্যবহার করা যাবে যেমন- পাতা, ফল এবং শিকড়। এগুলোর প্রতিটি রস করে খেতে হবে এবং এগুলো রস হাফ কাপ পানির সাথে মিশিয়ে খেতে হবে।

রসভরি ফল খেলে কি হয়

রসভরি ফলের গাছ আগাছা হিসেবে জন্ম নিলেও এটি অনেক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যা মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এই ফল খাওয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবংশরীরকে সুরক্ষিত রাখে। কারণ এই ফলের মধ্যে যে সকল পুষ্টি উপাদান রয়েছে তা মানবদেহের সুস্থতার জন্য খুবই প্রয়োজন।

এ ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে বিধায় এতে ভিটামিন সি এর ঘাটতি পূরণ করবে। তবে রসভরি ফল পাকা অবস্থায় খেতে হবে কাঁচা অবস্থায় খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ কাঁচা অবস্থায় মানুষের শরীরে কিছু সমস্যা তৈরি করতে পারে।

লেখকের মন্তব্য

রসভরি বা ফটকা ফল সম্পর্কে আমরা অনেকেই চিনে থাকি কিন্তু এর কোন উপকারিতা সম্পর্কে জানিনা। এই সম্পর্কে উপরে আলোচনা এবং গুনাগুণ সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা পেয়েছেন। তবে এটি সেবন করার পূর্বে ভালোভাবে জেনে বুঝে সেবন করবেন। কেননা আমাদের প্রত্যেকের শরীরের প্রতিক্রিয়া আলাদা আলাদা।

প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধু বান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url