মেহগনি বীজের উপকারিতা - মেহগনি বীজ খাওয়ার নিয়ম

প্রিয় পাঠক, আপনি কি মেহগনি বীজের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনাকে সাহায্য করবে। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে মেহগনি বীজের উপকারিতা এবং মেহগনি বীজের অপকারিত সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
মেহগনি বীজের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম
এই আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন মেহগনি বীজ খাওয়ার নিয়ম, মেহগনি ফলের বীজের উপকারিতা ইত্যাদি।

ভূমিকা

মেহগনি একটি দ্বি-বীজপত্রী ও গুপ্তজীবী উদ্ভিদ। উত্তর আমেরিকার ক্রান্তীয় অঞ্চলে এ উদ্ভিদের আদি নিবাস। অনেকে ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জকে এর আদি নিবাস হিসেবে চিহ্নিত করে থাকেন। ইউরোপীয় বণিকরা যখন বিভিন্ন দেশে বাণিজ্য করতে গিয়ে এই গাছটি ছড়িয়ে দিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। বর্তমানে এটি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রচুর পরিমাণ চাষ করা হয়ে থাকে।


কারণ এই গাছের অত্যন্ত গুনাগুণ রয়েছে এবং এর ফলেরও অনেক ঔষধিগুণ রয়েছে। এই গাছের কাঠ দিয়ে খুব ভালো এবং সুন্দর আসবাবপত্র তৈরি করা হয়। এই গাছ কাঠের জন্য বেশি পরিচিত হলেও এর বেশ কিছু ভেষজ গুনাগুণ রয়েছে যা অনেকেই জানে না। এ গাছ এবং এই গাছের ফল বিভিন্ন রোগের সমাধান হিসেবে কাজ করে থাকে।

মেহগনি বীজের উপকারিতা

নাম শুনলেই যেন মনে হয় অতি পরিচিত। এই গাছটি সাধারণত কাঠের জন্য পরিচিত। তবে এর বীজের কিছু ঔষধি গুনাগুণ রয়েছে যা আমাদের অনেকেরই অজানা। তাহলে চলুন মেহগনি গাছের বীজের উপকারিতাগুলো জেনে নেওয়া যাক-
  • ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী মেহগনি বীজ। মেহগনি ফলের বিচির ভিতর যে সাদা শ্বাস থাকে সেটি পানিতে ভিজিয়ে নিয়মিত খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
  • মেহগনি গাছের নির্যাস হজম শক্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি নিয়ম করে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়।
  • পোকা দমনকারী হিসেবে মেহগনি গাছের বীজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এটি পোকা প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে থাকে। পোকা প্রতিরোধ করার জন্য মেহগনি গাছের বীজ গুড়া করে বোতলে পানির সাথে প্রে করলে যে কোন ধরনের পোকামাকড় দমন হয়ে যায়।
  • মেয়েদের ঋতুস্রাবের সময় অনেকেরই প্রচন্ড ব্যথা অনুভব হয়। এই ব্যথা দূর করার অন্যতম উপায় হতে পারে মেহগনির বীজ। ঋতুস্রাব এর শুরুতে মেহগনির বীজ ব্যবহার করলে ব্যথা অনেকাংশে কমে যায়।
  • যাদের মুখে রুচি নেই বা কম ক্ষুধা লাগে তাদের জন্য এটি অনেক উপকারী। একটি করে বীজ গ্রহণ করলে ক্ষুধা বাড়ায় সেই সাথে মুখে রুচিয়ে ফিরিয়ে আনে।
  • সর্দি জ্বর নিরাময়ের ক্ষেত্রে মেহগনি বীজ অত্যন্ত কার্যকরী। আধা চা চামচ মেহগনি বীজের গুঁড়া এক চা চামচ মধুর সাথে এক কাপ গরম পানিতে দিতে হবে, তারপর সেই পানি কুসুম কুসুম গরম করে পান করতে হবে। এভাবে দিনে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করলে সর্দি জ্বর খুব সহজেই সেরে যাবে।
  • রক্ত জমাট বাঁধতে মেহগনি বীজে রয়েছে অন্যান্য ক্ষমতা। এছাড়াও অনিদ্রাজনিত সমস্যায় মেহগনি বীজ অধিক কার্যকরি। যাদের অনিদ্রাজনিত সমস্যা রয়েছে তারা সেবন করলে এ সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
  • উচ্চ রক্তচাপে মেহগনি বীজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাদের উত্তর রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তারা মেহগনি বীজ নিয়মিত খেতে পারেন তাহলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আসবে। রক্তচাপ বৃদ্ধি পেলে মাথার পিছনে ব্যথা করে এ সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় হচ্ছে মেহগনি বীজ।
  • যাদের হোমরিউমাটয়েড আর্থাইটিস সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য এটি মহৌষদ হিসেবে কাজ করে থাকে। এ রোগের কারণে পায়ের গিরায় অত্যন্ত ব্যথা করে এবং ব্যথার কারণে অনেক সময় পা ফুলে যায়। তাদের জন্য এই মেহগনি বীজ অত্যন্ত উপকারী। এ সমস্যায় মুক্তি পেতে প্রতিদিন মেহুগুনি বীজ খেতে পারে অথবা মেহগনি বীজ ভালো করে থেক্লিয়ার তেল বানিয়ে সেটি ব্যাথার স্থানে ব্যবহার করতে পারেন। এভাবে কয়েক দিন ব্যবহার করলে এই সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
  • কৃমি দূর করতে মেহগনি বীজ কার্যকরী। এ বীজ ব্যবহারের ফলে গুড়া কৃমি দূর হয়ে যায়।
  • অর্শ বা পাইলস এগুলো সমস্যায় অত্যন্ত উপকারী। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রতিদিন খালি পেটে এর বীজ ভেজানো পানি পান করতে হবে তাহলে এর সমস্যা ধীরে ধীরে কমে যাবে।

মেহগনি বীজ খাওয়ার নিয়ম

মেহগনি বীজ মানুষের শরীরের জন্য বিভিন্ন উপকার বয়ে আনে। তবে এর উপকারিতা পাওয়ার জন্য জানতে হবে খাওয়ার সঠিক নিয়ম। সর্দি জ্বর ভালো করতে মেহগনি বীজের গুড়া খুবই উপকারী। সর্দি কাশি বা জ্বর ভালো করতে হলে হাফ চা চামচ মেহগনির গুঁড়োর সাথে মধু মিশিয়ে এক কাপ পানিতে দিয়ে কুটুম কুসুম গরম করে খেলে সর্দি-কাশি এবং জ্বর ভালো হয়ে যাবে।

মুখের রুচি বা ক্ষুধা বৃদ্ধি করার জন্য মেহগনির একটি করে বীজ প্রতিদিন সকালে খেলে ক্ষুধা বেড়ে যাবে সেই সাথে মুখের রুচিয়ে ফিরে আসবে।

মেহগনি গাছের ফল খেলে কি হয়

মেহগনির ফলে রয়েছে ঔষধি ভেষজ গুনাগুণ যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগের মোকাবেলা করতে সক্ষম। এই ফল শুধুমাত্র মানবদেহের জন্য উপকারী তা নয় বরং এটি উদ্ভিদের জন্য অনেক উপকারী। মেহগনি বীজ দিয়ে কীটনাশক তৈরি করা হয় যা পোকামাকড় দমন করতে সক্ষম। মেহগনির বাকলের নির্যাসও শরীরের জন্য অনেক উপকারী।


এটি শরীরকে সম্পূর্ণরূপে শক্তি যোগায় এবং হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। রোগ প্রতিরোধ বৃদ্ধি করতে রয়েছে অনন্য গুণাগুণ।

মেহগনি ফল থেকে কিভাবে কীটনাশক তৈরি করা যায়

মেহগনি ফল দিয়ে বিভিন্ন উপায়ে কীটনাশক তৈরি করা যায়। আমরা এখানে মেহগনি ফল দিয়ে কীটনাশক তৈরি করার নিয়ম আলোচনা করব। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক-
  • দুই থেকে আড়াই কেজি মেহগনির ফল নিয়ে ভালোভাবে থেতো করতে হবে। তারপর সেটি বড় পাত্রে যেখানে দশ লিটার পানি রাখা যায় সেরকম পাত্রে ১০ লিটার পানি দিয়ে তার মধ্যে থেত করা মেহগনি ফলটি ভিজিয়ে রাখতে হবে। এভাবে তিন থেকে চার দিন রাখার পর এটি কীটনাশক হিসেবে ব্যবহার উপযোগী হবে।
  • মেহগনির ফল শুকিয়ে তারপর গুড়া করে পানির সাথে মিশিয়ে কীটনাশক হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
  • মেহগনি গাছের গুঁড়া পানির সাথে মিশিয়ে বোতলে নিয়ে গাছে স্প্রে করলে পোকামাকড় মরে যাবে।
  • ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম মেহগনি ফলের গুড়ার সাথে ৫০০ গ্রাম পরিমাণ পাতা নিয়ে একটি হাড়িতে ৫ লিটার পরিমাণ পানি দিয়ে দিতে হবে তারপর সেটি চুলায় জাল করতে হবে। ৩০ থেকে ৪০ মিনিট চুলায় জাল দিতে হবে। তারপর এর সাথে ৫০ গ্রাম কাপড় কাঁচার ডিটারজেন্ট, ১০ গ্রাম তুঁতে এবং ৫ গ্রাম পরিমাণ সোহাগা জাল করা পানির মধ্যে দিতে হবে। এরপর সেই পানি ঠান্ডা হলে তার সাথে ৫ গুন পরিমাণ পানি মিশিয়ে আক্রান্ত গাছে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।

মেহগনি গাছের অপকারিতা

মেহগনি গাছের যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি এর অপকারিতা রয়েছে। মেহগনি গাছের পাতায় যে ক্ষতিকারক বা বিষাক্ত রস রয়েছে তা মাটির সাথে মিশে গেলে মাটির উর্বরতা হারিয়ে ফেলে। এ পাতার রসের কারণে কোন কীটপতঙ্গ বেঁচে থাকতে পারে না। মেহগনি গাছের ফল কোন পশুপাখিও খেতে পারেনা সেজন্য এই গাছে কোন পাখি বাসা বাধে না।

এই গাছের পাতা পানিতে পড়লে সেই পানি প্রচন্ডভাবে দূষিত হয়ে যায় যেখানে মাছ সুস্থভাবে টিকে থাকতে পারে না। হাঁস মুরগির জন্য এই গাছটি অনেক ক্ষতিকর।

মেহগনি গাছের দাম কত

মেহগনি গাছ সৌখিন মানুষরা বিভিন্ন ধরনের কাঠের আসবাবপত্র তৈরি করতে ব্যবহার করে থাকে। মেহগনি গাছের দাম বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকম। গাছের যোগান এবং চাহিদা অনুযায়ী এই দামের তারতম্য হতে পারে। মেহগনি গাছের কাঠ প্রতি কেবিতে সর্বনিম্ন ৭০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা ধার্য করা হয়ে থাকে।

তবে গাছের গুণগত মান ভালো হলে এর দাম আরো বাড়তে পারে। মেহগনি কাঠ দিয়ে সুন্দর সুন্দর আসবাবপত্র তৈরি করা হয়। মেহগনি কাঠ অন্যান্য কাঠের তুলনায় অনেক টেকসই হয়ে থাকে। সেজন্য সবাই মেহগনি কাঠের আসবাবপত্র ব্যবহার করতে আগ্রহী।

মেহগনি গাছ জন্মাতে কত সময় লাগে?

মেহগনি একটি বৃক্ষ জাতীয় গাছ। এটি বড় হতে এবং পরিপক্ক হতে সময় লাগে ২০ থেকে ২৫ বছর। দীর্ঘ সময় পর এই গাছ পরিপক্ক হয়। পরিপক্ক হওয়ার পর এই গাছের কাঠ ব্যবহার করার উপযোগী হয়। এই গাছ বাংলাদেশের প্রত্যেক জেলাতেই জন্মে থাকে। কেননা মেহগনি গাছের চাহিদা বাংলাদেশের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে।

এই গাছের কাঠ ভালো হওয়ার কারণে এর জনপ্রিয়তা রয়েছে অনেক। বৃক্ষ জাতীয় গাছ হওয়ায় তেমন একটা পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। তবে এটি পরিচর্যা করলে খুব তাড়াতাড়ি বেড়ে উঠে এবং শক্তিশালী হয়।

মেহগনি গাছ লাগানোর নিয়ম

মেহগনি গাছ লাগানোর জন্য সব সময় উষ্ণ, আদ্র এবং যেখানে পূর্ণাঙ্গ সূর্যের তাপ লাগে সেখানে। অর্থাৎ দিনের মধ্যে ৫ থেকে ৬ ঘন্টা সূর্যের তাপ থাকবে সেই জায়গায় বেছে নিতে হবে মেহগনি গাছ লাগানোর জন্য। এরকম জায়গায় মেহগনি গাছ ভালোভাবে বেড়ে ওঠে। তবে মেহগনি গাছ লাগানোর আগে মাটির সাথে কম্পোস্ট বা জৈব সার মিশিয়ে মাটিকে উর্বর করে নিতে হবে।

মাটির উর্বরতা থাকলে গাছের বৃদ্ধি তাড়াতাড়ি করবে। মেহগনি গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে সব সময় খেয়াল রাখতে হবে জায়গা আদ্র কিনা। কেননা ভেজা বা স্যাঁতসেতে জায়গায় মেহগনি গাছ ভালোভাবে বেড়ে ওঠে না।

লেখক এর মন্তব্য

মেহগনি বীজ আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এটি বিভিন্ন সমস্যায় কার্যকরী ঔষধ হিসেবে কাজ করে থাকে। মেহগনি গাছের বীজ খেতে হলে অবশ্যই আয়ুবেদিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাবেন। প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধু বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url