যষ্টিমধু খেলে কি হয় - যষ্টিমধুর উপকরিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, আপনি কি যষ্টিমধু খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনাকে সাহায্য করবে। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে যষ্টিমধু খাওয়ার উপকারিতা এবং যষ্টিমধু খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত ধারনা দেওয়ার চেষ্টা করব।
যষ্টিমধু খাওয়ার উপকারিতা এবং নিয়ম
এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। এ আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন যষ্টিমধু কোথায় পাওয়া যায়, ত্বকের যত্নে যষ্টিমধু এবং যষ্টিমধুর অপকারিতা ইত্যাদি।

ভূমিকা

মধুর নাম শুনলে অনেকে মনে করতে পারেন মধু জাতীয় কোন কিছু। কিন্তু আসলে সেটি নয়। যষ্টিমধু হচ্ছে মূলতঃ গাছের মূল বা শিকড় যা অনেক স্বাস্থ্য উপকারী। এটি মধুর মত না হলেও স্বাস্থ্য উপকারিতা দিক দিয়ে মধুর চেয়ে কোন অংশে কম নয়। প্রাচীনকাল থেকে যষ্টিমধুর মাধ্যমে ঘরোয়া উপায়ে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করা হয়।


আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা ওষুধ তৈরি করতে অন্যতম এবং প্রধান উপাদান হিসেবে যষ্টিমধু ব্যবহার করে থাকেন। গ্লাইসাইররিজা গ্লাবরা গাছের শিকড় হচ্ছে যষ্টিমধু। যষ্টিমধু এক ধরনের শিকড় এবং এই শিকর থেকে এক ধরনের মিষ্টি স্বাদ পাওয়া যায়। যষ্টিমধু খাওয়া শরীরের জন্য অনেক উপকারী।


এর সম্পূর্ণ উপকারিতা পাওয়ার জন্য কিভাবে খেতে হবে বা কতটুকু খেতে হবে এ সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার জন্যই আমাদের এই আর্টিকেলটি।

যষ্টিমধু খাওয়ার উপকারিতা

যষ্টিমধু স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারি। পরিমাণমতো খেলে এর বিভিন্ন ধরনের বিস্ময়কর উপকারিতা পাওয়া যায়। তাহলে চলুন এর উপকারিতাগুলো জেনে নেওয়া যাক -

পেটের সমস্যা দূর করেঃ যষ্টিমধু পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে যেমন বুক জ্বালাপোড়া, পাকস্থলীর আলসার, পরিপাকতন্ত্রের উপরে স্থলে প্রধান জনিত সমস্যা ইত্যাদি। পেটের সমস্যা দূর করে পেটকে আরাম দিয়ে থাকে এ মধু। ডিগ্লাইসিরাইজিনেটেড যষ্টিমধু পাকস্থলীর আলসার নিরাময় করে পেটকে সুস্থ রাখে।

শ্বাসতন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ স্বাস্থ্যের বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় ঔষধ হিসেবে যষ্টিমধু ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ঠান্ডা জড়িত সমস্যা দূর করে শ্বাসতন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে যষ্টিমধু। এটি ফুসফুস ভালো রাখে এবং ব্যাকটেরিয়ার কারণে সৃষ্ট হওয়া শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন ধরনের প্রদাহজনিত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।

দাঁতের জন্য উপকারীঃ দাঁতের স্বাস্থ্য উন্নত করতে ভূমিকা অনেক। কারণ এটি হচ্ছে একটি মাল্টিপারপোজ হার্ব যা দাঁত ও মাড়ি সম্পূর্ণভাবে সুস্থ রাখে। যষ্টিমধুতে রয়েছে দুইটি এন্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান যেগুলো দাঁতের ক্ষয় এবং মাড়ির বিভিন্ন রোগ থেকে মানিককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ যষ্টিমধু লিম্ফোসাইট ও ম্যাক্রোফেজ উৎপাদন বৃদ্ধি করে মাইক্রোব্রিয়াল আক্রমণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এটি ইমিউনিটি সিস্টেমকে উন্নত করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করেঃ স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে যষ্টিমধু। দুধের সাথে যষ্টিমধুর গুঁড়া মিশিয়ে পান করলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং দুধের পুষ্টিগুণ দ্বিগুণ বেড়ে যায়।

অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল হিসেবে কাজ করেঃ যষ্টিমধু ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক এর বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং এগুলোর আক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করে যষ্টিমধু। কারণ যষ্টিমধুতে রয়েছে গ্লিসারিন যা ছত্রাক এবং ব্যাকটেরিয়ার  বিরুদ্ধে লড়াই করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

হজম শক্তি বৃদ্ধি করেঃ যষ্টিমধু হজমের সমস্যা দূর করে হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে এবং পেটের এসিডিটির সমস্যা দূর করে।

হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখেঃ হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে নারীদের শরীরে বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হয়। নিয়মিত যষ্টিমধু খেলে হরমোনের ভারসাম্য বজায় থাকে এবং হরমোনজনিত সমস্যা দূর করে।

এলার্জি প্রতিরোধ করেঃ যষ্টিমধু এলার্জি প্রতিরোধে সক্ষম। সেজন্য একে এলার্জি প্রতিরোধক বলা হয়ে থাকে। কারণ যষ্টিমধুতে রয়েছে গ্লিসারাইসিক অ্যাসিড যা মাস্টকোষ থেকে হিসটামিন নিঃসরণ কমিয়ে এলার্জি দূর করতে সক্ষম হয়।

লিভার সুস্থ রাখেঃ যষ্টিমধু লিভার সুস্থ রাখতে ও সক্ষম। উচ্চ কোলেস্টরে কমিয়ে লিভার সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।

ত্বকের সুস্থতা বজায় রাখেঃ শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি ত্বকের সুস্থতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যষ্টিমধু যেমন খাওয়া যায় তেমনি এটি ত্বকে ব্যবহার করা যায়। নিয়মিত ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বক প্রাণবন্ত এবং উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। এছাড়াও ত্বকের ফোলা ভাব চুলকানি থেকে মুক্তি পেতে যষ্টিমধু ব্যবহার করতে পারেন।

ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করেঃ মানসিক চাপ কমিয়ে শান্তি যোগাতে যষ্টিমধু সাহায্য করতে পারে। এটি অতিরিক্ত ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করে শরীরকে সুস্থ রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কারণ এটি স্ট্রেস হরমোন করটিসল নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম।

পুষ্টিহীনতা দূর করেঃ শরীরে অপুষ্টি থাকলে বিভিন্ন ধরনের রোগ বাসা বাঁধে। যাদের পুষ্টিহীনতার সমস্যা রয়েছে তারা প্রতিদিন অল্প করে যষ্টিমধু সেবন করতে পারেন তাহলে ভালো ফলাফল পাবেন।

মৃগী রোগ প্রতিরোধ করেঃ মৃগী রোগে যষ্টিমধুর উপকার ভালো পাওয়া যায়। অল্প পরিমাণ যষ্টিমধু নিয়ে পাকা চাল কুমড়ার আধা কাপ রসের সাথে মিশিয়ে কয়েকদিন খেলে এ ধরনের রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

মুখের দুর্গন্ধ দূর করেঃ মুখে দুর্গন্ধ হলে মানুষের সামনে কথা বলা বিব্রতকর অবস্থা তৈরি করে। যষ্টিমধু মুখে দুর্গন্ধ দূর করতে খুবই কার্যকরী। এছাড়াও এটি মুখের রুচি ফিরিয়ে আনতে সক্ষম। যাদের মুখে রুচি কম তারা এটি সেবন করতে পারেন।

চুলের যত্নেঃ চুল পড়া কমাতে, খুশকি দূর করতে এবং নতুন চুল গজাতে যষ্টিমধু খুবই কার্যকরী। তিলের তেল ও আমলকির সাথে মিশিয়ে নিয়ম করে চুলে ব্যবহার করলে চুল পড়া বন্ধ হয় এবং মাথার ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে।

টিউমার প্রতিরোধকঃ গ্লাইসিরাইটিনিক অ্যাসিড যষ্টিমধুতে রয়েছে যা টিউমার প্রতিরোধক হিসাবে কাজ করে।

যষ্টিমধু খাওয়ার নিয়ম

যষ্টিমধু অনেকেই চিনেন না আবার চিনা থাকলেও খাওয়ার সম্পর্কে জানেনা। আমরা এখানে যষ্টিমধু খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনাদের সামনে আলোকপাত করবো। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক-
  • যষ্টিমধু গুড়াদুধের সাথে মিশিয়ে পান করা যায়
  • যষ্টিমধুর শিকড় ফুটন্ত পানিতে ভিজিয়ে রেখে ঠান্ডা করে খাওয়া যায় তবে স্বাদ  বাড়ানোর জন্য মধু যুক্ত করতে পারেন।
  • যষ্টিমধুর গোড়া সরাসরি খাওয়া যায় তবে সেটি পরিমাণ মতো
  • চায়ের সাথে মিশিও মধু খাওয়া যায়
  • এগুলো ছাড়াও সরাসরি যষ্টিমধুর শিকড় কি দিয়া রস খাওয়া যায়।

যষ্টি মধু কোথায় পাওয়া যায়

যষ্টিমধু মূলত একটি ঔষধি গাছের শিকড়। এটি বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া যায়। যষ্টিমধু বাজারে গিয়ে মশলার দোকানে খোঁজ করলেই পেয়ে যাবেন। আয়ুর্বেদিকের ওষুধের দোকানেও এটি পাওয়া যায়। দশ টাকা থেকে শুরু করে যত টাকার ইচ্ছা কিনতে পারেন। যষ্টিমধু খাওয়া খুবই উপকার কারণ এতে কিছু উপকারি উপাদান রয়েছে।


তবে কিনতে গেলে ভালো মান যাচাই করে কিনবেন কারণ খারাপ জিনিস কিনে ঠকে যেতে পারেন। এছাড়াও খারাপ জিনিসের গুনাগুণ তেমন একটা ভালো হয় না।

ত্বকের যত্নে যষ্টিমধু

যষ্টিমধু ব্যবহারে ত্বকের বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা পাওয়া যায়। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং ত্বক সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। এক কাপ চায়ে যষ্টিমধুর গুড়া মিশিয়ে খেলে বা যষ্টিমধুর গুড়া মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করলে ত্বক উজ্জ্বল এবং মসৃণ দেখায়। এছাড়াও এটি ব্যবহারে ত্বকের দাগছোপ কমায়। ত্বকের কালচে এবং পোড়াভাব দূর করতে সাহায্য করে।

কারণ ত্বকের ক্ষতিকর এনজাইম প্রতিহত করে ত্বককে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ রাখে। যষ্টিমধুর সাথে এলোভেরা জেল, শসার রস এবং টক দই একসাথে মিশিয়ে মুখে ও গলায় লাগালে ভালো ফল পাওয়া যায়। ভালো ফলাফলের জন্য এটি সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করতে পারেন। স্কিনের ব্রাইটনেস বৃদ্ধি করে ফলে ত্বক অনেক লাবণ্যময়ী হয়ে ওঠে।

যষ্টিমধু খাওয়ার অপকারিতা

জেনে রাখা ভালো যষ্টিমধুর স্বাস্থ্য জন্য উপকারী হলেও কিছু ক্ষেত্রে এর অপকারিতা রয়েছে। এটি অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে যেমন হাটের সমস্যা, পেশীর দুর্বলতা , কিডনির সমস্যা ইত্যাদি। কারণ পরিমাণমতো সবকিছু স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এবং মাত্রাধিক সবকিছুই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

যষ্টিমধু পরিমাণের অতিরিক্ত খেলে শরীরে পটাশিয়ামের পরিমাণ অনেক কমে গিয়ে বিপদজনক পর্যায়ে চলে যেতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে যষ্টিমধু খেলে শরীরের ওজন অতিরিক্ত বেড়ে যেতে পারে । সেজন্য এর উপকারিতা পেতে হলে পরিমাণ মতো খেতে হবে। পরিমাণের অতিরিক্ত খেয়ে শরীরকে হুমকির দিকে ঠেলে দিবেন না।

যষ্টিমধু গাছ কোথায় পাওয়া যায়

যষ্টিমধু বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাওয়া যায়। উৎপাদনকারী দেশগুলির মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান, ইরান, ইতালি, উজবেকিস্তান, ভারত, পাকিস্তান, আজারবাইজান, ইরাক ইত্যাদি। এই যষ্টিমধুর গাছ বাংলাদেশেও জন্মে থাকে। সম্পূর্ণভাবে সূর্যের আলো পায় এরকম জায়গাতে যষ্টিমধু গাছ জন্মে। এর চারা রোপনের পর দুই থেকে তিন বছর সময় লাগে এর ফসল পেতে।

আপনি যদি যষ্টিমধুর গাছ কিনতে চান তাহলে আপনার নিকটস্থ নার্সারিতে খোঁজ করতে পারেন। কারণ সেখানে বিভিন্ন ধরনের ঔষধি গাছ বিক্রয় করা হয়ে থাকে।

লেখকের মন্তব্য

পরিমানমতো যষ্টিমধু খেলে শরীরে অনেক উপকারিতা পাওয়া যাবে। কারণ এটি বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আমরা বন্ধু বান্ধব এবং পরিবার-পরিজনের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url