গোক্ষুর খাওয়ার উপকারিতা - গোক্ষুর কাটার কাজ কি

প্রিয় পাঠক, আপনাকে গোক্ষুর খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনাকে সাহায্য করবে। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে গোক্ষুর খাওয়ার উপকারিতা এবং গোক্ষুর কাটা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
গোক্ষুর খাওয়ার উপকারিতা
এ আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন গোক্ষুর কোথায় পাওয়া যায়, গোক্ষুরার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এবং গোক্ষুর কাটার কাজ কি ইত্যাদি।

ভূমিকা

গোক্ষুরা কে প্রায় মানুষ ট্রিবিউলাস টেরেস্ট্রিস নামে চিনে। ঔষধি ভেষজ হিসেবে সারা বিশ্বের পাওয়া যায় গোক্ষুরাকে। এটি একটি শক্তিশালী ঔষধি ভেষজ যা আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই উদ্ভিদের ফল এবং শিকড় ভারতের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় এবং চীনে প্রথাগত চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।


গোক্ষুর আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় খুবই কার্যকরী। এতে বিভিন্ন রোগের সমাধান হয়ে থাকে। এই উদ্ভিদটি অত্যন্ত কঠিন অবস্থায় বেঁচে থাকতে পারে যে অবস্থায় অন্য কোন উদ্ভিদ টিকে থাকতে পারে না। সমগ্র ট্রিবিউলাস প্লান্টের প্রত্যেক অংশে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক উপাদান রয়েছে যা রোগ নিরাময়কারী এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ

ঔষধি গুণসম্পন্ন হওয়ার কারণে বহু যুগ ধরে এটি আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাশাস্ত্রে ব্যবহার করে আসছেন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা। গোক্ষুর ভিটামিন মিনারেল এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ।

গোক্ষুর খাওয়ার উপকারিতা

উচ্চ ঔষধি গুনসম্পন্ন এই উদ্ভিদের প্রচলিত আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার বিভিন্ন রোগের প্রতিকার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। গোক্ষুরের যে সকল স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে সেগুলো আপনাদের সামনে আলোকপাত করা হলো-

মূত্রনালীর সংকরণ দূর করেঃ গোক্ষুর মূত্রনালী সংক্রমণ দূর করতে সফলভাবে কাজ করে। কারণ এর মধ্যে রয়েছে মুত্র বর্ধক গুণ যা প্রস্রাবের পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং প্রসাবের সাথে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াগুলো বের করে মূত্রনালীর সংক্রমণ হতে রক্ষা করে।

টক্সিন দূর করেঃ গোক্ষুর খেলে শরীরের বিষাক্ত টক্সিন বের করে শরীরকে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। কারণ বিষাক্ত টক্সিন শরীরে বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করে থাকে।

মেয়েদের জন্য উপকারীঃ মেয়েদের শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়ে যায় গোক্ষুর খেলে। বিশেষ করে যে সকল মহিলারা পিসিএসের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য এটি অনেক উপকারী। এ সমস্যা থাকলে মেয়েদের অনিয়মিত মাসিক, ব্রণ, মেজাজের ঘনঘন পরিবর্তন, চুল পড়া, ওজন বৃদ্ধি ইত্যাদি সমস্যা তৈরি হয়। এ সমস্যায় গোক্ষুর সেবন করলে খুব ভালো ফল পাওয়া যায়।

হার্টের জন্য উপকারীঃ হার্টের জন্য অনেক উপকারী গোক্ষুরা। এটি দেহে এটুকির মাত্রা বৃদ্ধি করে, হার্টে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে সেই সাথেই হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা ও বৃদ্ধি করে। যার ফলে হাড় সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকে এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে যায়।

কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ শরীরে এলডিএল বা ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখে। এটি নিয়ম করে সেবন করলে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করবে।

উদ্বেগ ও অবসাদ কমায়ঃ প্রায় সব বয়সের মানুষের মধ্যে এই দুই সমস্যা দেখা যায়। বেশিরভাগ মানুষের এ সমস্যায় ভোগেন। গোক্ষুরা উদ্বেগ ও অবসাদের অবসান ঘটাতে পারে। এ সমস্যায় এর চিকিৎসা হিসেবে গোক্ষুরাকে ব্যবহার করা যেতে পারে।

শারীরিক গঠনে ভূমিকা রাখেঃ শরীর চর্চার ক্ষেত্রে বর্তমান সময়ে গোক্ষুর খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এটি পেশির শক্তিকে উন্নত করে এবং ভালো শরীর গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি নিয়মিত খাওয়ার ফলে শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং পেশী বৃদ্ধি পায়। এতে থাকার নাইটিক অক্সাইড রক্তনালী কে প্রসারিত করে এবং যে কারণে পেশীতে অক্সিজেনের সরবরাহ ভালোভাবে হয়ে থাকে।

ব্রণের সমস্যা দূর করেঃ অল্প বয়সি মেয়েদের ত্বকে বিভিন্ন কারণে ব্রনের সমস্যা দেখা দেয়। এ সমস্যা দূর করতে পারে গোক্ষুর। এছাড়াও মেয়েদের ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন চুলকানি, ফুসকুড়ি, ত্বকের জালা, একজিমা দূর করতে অত্যন্ত কার্যকরী এটি।

অকাল বার্ধক্য প্রতিরোধ করেঃ অনেক মানুষের শরীরে অকালে বার্ধেকের ছাপ পড়ে যায়। এটি নিয়মিত খেলে অকাল বার্ধক্য প্রতিরোধ করে চেহারা তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করবে। এটি বলিরেখা দূর করে এবং বেশি নষ্ট হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে।

চুল পড়া রোধ করেঃ গোক্ষুর বীজের গুঁড়া নিয়মিত চুলে লাগালে চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুল পড়া রোধ করে। এটি চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে খুবই কার্যকরী। এছাড়াও এটি মাথার ত্বক ভালো রাখতে সহায়তা করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাঃ গোক্ষুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এটি চোখে দৃষ্টি শক্তি কমে যাওয়া প্রতিরোধ করে দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। এটি শরীরের জটিল ও কঠিন রোগের সমাধান হিসেবে ব্যবহার করে আসছে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা। নিয়মিত সেবনের ফলে শারীরিক দুর্বলতা দূর করে শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। এতে প্রদাহ বিরোধী গুনাগুন থাকায় অশ্ববা ফিস্টুলা রোগের ও চিকিৎসা করা হয়ে থাকে।

মাথাব্যথা উপশম করেঃ মাথাব্যাথা উপশমে খুব ভালো কাজ দিয়ে থাকে। মাইগ্রেনের ব্যথা সহ বিভিন্ন ব্যথায় খুবই কার্যকরী।

প্রস্রাবের সমস্যা দূর করেঃ প্রস্রাবের বিভিন্ন ধরনের জটিলতা দূর করে। প্রস্রাবের সমস্যার সাথে জরায়ুর সমস্যারও সমাধান করে থাকে।

কিডনিতে পাথর অপসারণ করেঃ কিডনিতে পাথর অপসারণ করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় গোক্ষুরকে। কারণ গোক্ষুর কাটা কিডনি পাথর অপসারণ খুবই ভালো কাজ করে থাকে।

গোক্ষুরের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

গোক্ষুরের অনেক ভালো দিক থাকলেও এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি খাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যেমন-

গর্ভকালীন সময়ঃ গর্ভকালীন সময়ে গোক্ষুর খাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কারণ গর্ভপূরণের সময় এটি খেলে গর্ভপূরণের ক্ষতিসাধন করে থাকে। স্তন্যদায়ী মহিলাদের ক্ষেত্রেও এটি খাওয়া বারণ করা হয়ে থাকে। কেননা মায়েরা যদি এটি খায় দুধ পানের মাধ্যমে বাচ্চাদের শরীরেও প্রবেশ করে সে ক্ষেত্রে বাচ্চাদের ক্ষতি হতে পারে।

এলার্জির ক্ষেত্রেঃ যে সকল ব্যক্তির শরীরে এলার্জি রয়েছে তারা গোক্ষুর না খাওয়াই ভালো। যদিও এটি এলার্জি নিরাময় করে তারপরও বিভিন্ন ধরনের এলার্জি রয়েছে যেগুলোর ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

শিশুদের ক্ষেত্রেঃ ছোট ছোট শিশুরা বা যারা সংবেদনশীল তাদের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা যাবে না। এদের সেবোন করতে হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তারপরে সেবন করতে হবে।

উচ্চ রক্তচাপের রোগীদেরঃ যে সকল রোগীদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে তাদের ক্ষেত্রে এটি চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত।

অন্যান্য অসুস্থতাঃ আপনি যে রোগের জন্য এটি সেবন করতে চাচ্ছেন সেটি ছাড়া অন্যান্য অসুখ শরীরে থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে। কেননা অন্যান্য অসুখের ক্ষেত্রে এটি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে।

গোখর কাটার কাজ কি

গোক্ষুরা একটি শক্তিশালী ভেষজ যা বিভিন্ন চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। শরীরের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে গোক্ষুরার কাটা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমন- রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে, প্রস্রাবের বিভিন্ন ধরনের সমস্যায়, কিডনির পাথর অপসারণ শরীরের দুর্বলতা কমাতে, হৃদ যন্ত্রের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর করতে এবং শরীরের মাসল বৃদ্ধিতে খুবই কার্যকরী। এতে রয়েছে উচ্চমানের ঔষুধি গুনাগুণ যা মহিলাদের বিভিন্ন সমস্যা ও দূর করতে সক্ষম। এটি চুলের এবং ত্বকের জন্য অনেক উপকারী।

গোখরার পুষ্টিগুণ

গোক্ষুরা ঔষধি গুণসম্পন্ন একটি ভেষজ উদ্ভিদ। এতে পুষ্টির পরিমাণ রয়েছে প্রচুর। গোক্ষুরার পাতায় রয়েছে ক্যালসিয়াম কার্বনেট, লৌহ, প্রোটিন ইত্যাদি। এর বিজে রয়েছে চর্বি প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, গ্লুকোজসহ আরো অন্যান্য পুষ্টি উপাদান।

গোক্ষুর কোথায় পাওয়া যায়

গোক্ষুর কাটা বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া যায় বিশেষ করে যেকোনো মুদিখানা দোকানে পাওয়া যাবে। তবে কিনার ক্ষেত্রে এটি অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ নকল বা ভেজাল জিনিস বাজারে বের হয়েছে। সেজন্য আপনি গোক্ষুর কাটা ভালোভাবে দেখে কিনবেন যাতে নকল কিনে ঠকে না যান।

গোক্ষুর কাটায় অনেক উপকার পাওয়া যায় কিন্তু নকল কিনলে কোন উপকার পাওয়া যায় না বরং ক্ষতি হয়। বাংলাদেশ ছাড়াও এটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাওয়া যায়।

গোক্ষুর কাটা খাওয়ার নিয়ম

গোক্ষুর কাটা বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। গোক্ষুর কাটা গুড়া করে পাউডার হিসেবে খাওয়া যায় এবং সরাসরি পানিতে ভিজিয়ে রেখেও সেই পানি পান করা যায়। পানিতে ভিজিয়ে খাওয়ার জন্য এক চামচ গোক্ষুর কাটা একটি বাটিতে নিয়ে তার মধ্যে পানি দিয়ে পাঁচ মিনিট ধরে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।


এরপর দুই গ্লাস পরিমাণ পানির সাথে এক চামচ ধুয়ে রাখা গোক্ষুর কাটা দিয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিতে হবে যাতে পানি অর্ধেক হয়ে যায়। ফোটানো হয়ে গেলে সেই পানি ভালোভাবে ছেঁকে নিতে হবে এবং ঠান্ডা করে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেতে হবে তবে এই পানি কুসুম কুসুম গরম করেও খেতে পারেন।

লেখক এর মন্তব্য

গোক্ষুরা এক ধরনের ছোট উদ্ভিদ যা যুগ যুগ ধরে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়ে আসছে। এর অত্যন্ত ঔধধি গুনাগুণ থাকার কারণে শরীরে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে সে ক্ষেত্রে এর বিষয়গুলো জেনে সর্তকতা অবলম্বন করা জরুরী।

প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধু বান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url