ফিটকিরি কি চুলের জন্য ক্ষতিকর - ফিটকিরির উপকারিতা জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, আপনি কি ফিটকিরির উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে আপনার জন্য এই আর্টিকেলটি। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে ফিটকিরির উপকারিতা এবং ফিটকিরি কি চুলের জন্য ক্ষতিকর এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ফিটকিরির উপকারিতা
এই আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন ফিটকিরি খেলে কি হয়, ত্বকের যত্নে কিভাবে ফিটকিরি ব্যবহার করা হয়, ফিটকিরি ব্যবহার নিয়ম ইত্যাদি।

ভূমিকা

ফিটকিরি আমাদের কাছে অনেক সুপরিচিত একটি শ্বেত পাথর। প্রায় মানুষের বাড়িতে এই পাথরটি রয়েছে। ফিটকিরি বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। ফিটকিরি আমরা সবাই চিনি কিন্তু এর উপকারিতা সম্পর্কে আমরা কজন জানি। ফিটকিরির উপকারিতা জানলে আপনি নিজেও অবাক হবেন। আপনি যদি এই শ্বেত পাথর সম্পর্কে সম্পূর্ণ না জানেন তাহলে অবশ্যই জেনে নিন এর গুনাগুণ সম্পর্কে।
কারণ বাড়িতে থাকে এই জিনিসটি কি কি কাজে লাগে তা জানা আমাদের আবশ্যক। প্রায় মানুষ এটি পানি জীবাণ মুক্ত করার জন্য ব্যবহার করে থাকে। ফিটকিরি কেবল এই কাজই করেনা বরং আরো বিভিন্ন ধরনের কাজে আসে। তাহলে চলুন ফিটকিরির উপকারিতা ও গুনাগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।

ফিটকিরির উপকারিতা

আমাদের কাছে অতি পরিচিত এবং দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত এই জিনিসটি রয়েছে নানা ধরনের উপকারিতা। আমরা এখন ফিটকিরির উপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের সামনে আলোকপাত করবো। তাহলে চলুন এ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক -

প্রস্রাবের ইনফেকশন দূর করেঃ বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ মানুষের মূল সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে প্রস্রাবের ইনফেকশন। এ সমস্যা বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। ফিটকিরিতে রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল উপাদান যা এ সমস্যাগুলোতে খুবই কার্যকরী। আপনি যদি এই সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে ফিটকিরি পানির সাথে মিশিয়ে সেই পানি ব্যবহার করুন। তাহলে কিছুদিনের মধ্যেই সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

ক্ষত সারাতেঃ চলাফেরার সময় হঠাৎ করেই বিভিন্ন হাতে-পায়ে বা শরীরের যে কোন অংশে চোট লাগে এবং ক্ষত তৈরি হয়। এ সমস্যা ছোট থেকে বড় সব মানুষেরই হতে পারে। ক্ষতস্থান থেকে রক্ত পড়া বন্ধ করে ফিটকিরি। এছাড়াও এতে এন্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে যা ক্ষতস্থানে সংক্রমণ হতে প্রতিরোধ করে এবং ক্ষত সারাতে সাহায্য করে।

ত্বকের জন্য উপকারীঃ ফিটকিরি ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে ত্বক দাগ মুক্ত করতে সাহায্য করে। যারা ত্বকের ক্ষেত্রে সচেতন তারা ফিটকারি ব্যবহার করতে পারেন। কারণ ফিটকিরিতে যে সকল ত্বকের জন্য উপকারী উপাদান রয়েছে যা অন্য কোথাও নেই। এটি ত্বককে দাগমুক্ত করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

চর্মরোগ সারাতে করেঃ চর্মরোগে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে ফিটকিরি। ফিটকিরির পানি ব্যবহার করলে চর্ম রোগের সমস্যা অনেক দূর হয়ে যায়। কেননা ফিটকিরিতে রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিসেপটিক উপাদান যা চরমে রোগের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন।

ফাঙ্গাসজনিত সমস্যা দূর করেঃ ফিটকিরি ফাঙ্গাসজনিত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। হাতে বা পায়ের আঙ্গুলের মাঝখানে পা আঙুলে অনেক সময় ফাঙ্গাসের সমস্যা দেখা দেয়। এগুলো সমস্যায় ফিটকারি ব্যবহার করলে এ সমস্যাগুলো সমাধান হয়ে যায়।

মুখের দুর্গন্ধ দূর করেঃ ফিটকিরি মুখের অভ্যন্তরে স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে। ফিটকিরি মেশানো পানি দিয়ে গার্গল করলে দাঁতের ব্যথা দূর হয়ে যায়। এছাড়াও ফিটকিরি মুখের দুর্গন্ধ ও নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ দূর করতে অত্যন্ত কার্যকরী।


স্কালপ পরিষ্কার করেঃ শ্যাম্পু করার পরেও অনেক সময় আমাদের মাথার ত্বকে ময়লা আটকে থাকে। এ ময়লা থেকে মাথার ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা এবং উকুন হয়ে থাকে। ফিটকিরির পানি দিয়ে গোসল করলে মাথার ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার হয় এবং বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়ে যায়।

মুখের ঘা নিরাময় করতেঃ ভিটামিনের অভাবে বা অন্যান্য কারণে মুখের ভিতর অনেক সময় ঘা হয়ে থাকে। সে ঘা দূর করতে ফিটকারির রয়েছে অন্যান্য ক্ষমতা। মুখের যে স্থানে ঘা হয়েছে সেখানে ফিটকারি লাগিয়ে দিলে খুব তাড়াতাড়ি ঘা ভালো হয়ে যায়। ফিটকিরি লাগানোর পর জ্বালা করতে পারে এতে ভয়ের কোন কারণ নেই।

উকুন নাশক হিসেবেঃ বিভিন্ন কারণে মাথায় উকুন হতে পারে। উকুন দূর করতে ফিটকিরির গুড়া ভালো কাজ করে। সেক্ষেত্রে ফিটকিরির গুঁড়া মিশানো পানির সাথে চা গাছের তেল ভালোভাবে মিশিয়ে মাথায় মেসেজ করতে হবে। এরপর শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে ব্যবহার করলে খুব সহজে উকুনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

বয়সের ছাপ দূর করতেঃ আমাদের শরীরে বিভিন্ন কারণে বা অধিক পরিশ্রমের কারণে মুখে অল্প বয়সেই বয়সের ছাপ পড়ে যায়। যা বাহ্যিক সৌন্দর্যকে নষ্ট করে। চেহারায় তারুণ্য ফিরে আনতে এক টুকরো ফিটকারি পানিতে মিশিয়ে মুখে ভালো করে ঘষে নিতে হবে। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ক্রিম অথবা লোশন লাগাতে হবে।

ফিটকিরি খেলে কি হয়

ফিটকিরি খেলে বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কারণ ব্যাকটেরিয়া ও প্যারাসাইট ধ্বংস করার ক্ষমতা  ফিটকিরিতে রয়েছে। তবে ফিটকিরি খেলে ভাইরাস ধ্বংস হয় না। ফিটকিরি বিভিন্ন ধরনের রোগের হাত থেকে রক্ষা করে যেমন- টাইফয়েড, আমাশয়, ডায়রিয়া, এবং কৃমি সংক্রমণ।

তবে উপকারিতা পাওয়ার জন্য পরিমাণ মতো পান করতে হবে। অতিমাত্রায় পান করার ফলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

ত্বকের যত্নে কিভাবে ফিটকিরি ব্যবহার করা হয়

ত্বকের যত্নে ফিটকিরির অনন্য কার্যকারিতা রয়েছে। এটি সকালে ঘুম থেকে উঠে ক্লিনজার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। আবার বাইরে গেলে ধুলাবালি ময়লা মুখে আটকে যায়। এটি পরিষ্কার করার জন্য ফিটকারি ব্যবহার করতে পারেন। এতে ত্বকের ময়লা খুব সহজেই দূর হয়ে যাবে। ফিটকিরি পানিতে ভিজিয়ে রেখে সেই পানি মুখে ব্যবহার করুন।

তারপর কিছুক্ষণ ধরে মেসেজ করুন। ভালোভাবে মেসেজ করা হয়ে গেলে হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। এভাবে ত্বকের ময়লা পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে ময়লা আটকে গেলে যে সমস্যাগুলো হয় সে সমস্যা থেকে ত্বককে রক্ষা করে।

ফিটকিরি ব্যবহার নিয়ম

ফিটকিরি উপকারিতা পেতে হলে জানতে হবে ব্যবহারে সঠিক নিয়ম। সঠিক নিয়ম না মেনে ব্যবহার করলে সম্পূর্ণ উপকারিতা নাও পেতে পারেন বরং সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাহলে চলুন ফিটকিরি ব্যবহারে সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিই-
  • মুখের ব্রণ দূর করতে ব্যবহার করে। মুখের ব্রণ দূর করতে এক চামচ মুলতানি মাটি, দুই চামচ ডিমের সাদা অংশ তার সাথে এক চামচ ফিটকিরি গুড়ো দিয়ে প্যাক করতে হবে। এ প্যাক মুখে ১৫ মিনিট রেখে দিতে হবে। তারপর মুখ ভালোভাবে ধুয়ে নিতে। এভাবে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন ব্যবহার করলে মুখে ব্রণ দূর হয়ে যাবে।
  • দাঁতের ফাঁকে ব্যাকটেরিয়া জমে থাকে। এর ফলে মুখে দুর্গন্ধ তৈরি হয়। এই জমে থাকা ব্যাকটেরিয়াগুলো দূর করতে এক গ্লাস পানি ভালোভাবে ফুটিয়ে তার মধ্যে এক চিমটি পরিমাণ লবণ এবং ফিটকিরি গুঁড়া মিশিয়ে দিনে দুই থেকে তিনবার কুলকুচি করলে মুখের দুর্গন্ধ দূর হবে এবং ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয়ে যাবে।
  • মুখের ঘা দূর করতে যে অংশে ঘা হয়েছে সেখানে ফিটকারি গুড়ো লাগালে মুখের ঘা খুব সহজেই ভালো হয়ে যাবে বয়সের ছাপ মুখ থেকে দূর করতে হলে ফিটকিরি পানিতে ভিজিয়ে তা মুখে ভালোভাবে ঘষতে হবে। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ভালো করে মুখ ধুয়ে নিতে হবে তারপর ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে। এভাবে ব্যবহার করলে বয়সের ছাপ কমে যাবে।

ফিটকিরি কি চুলের জন্য ক্ষতিকর

এটা নিয়ে অনেকে অনেক রকম প্রশ্ন করে থাকেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ফিটকির চুলের জন্য ক্ষতিকর কিনা। চুলের জন্য ক্ষতিকর নয় বরং চুলের জন্য এটি অনেক উপকারী। ফিটকিরি দিয়ে চুল পরিষ্কার করলে মাথার ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পায়। মাথার ত্বকের ভিতরে থাকা ময়লাগুলো ডিটক্সিফাই করে চুলের পুষ্টি এবং বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকায় মাথার ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ হাত থেকে রক্ষা করে এবং মাথার ত্বকেকে সুস্থ রাখে।

ফিটকিরির অপকারিতা 

উপরের আলোচনার মাধ্যমে আমরা ফিটকিরির ব্যবহার ও উপকারিতা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেয়েছি। ফিটকিরি মূলত পানি পরিশোধিত করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি ব্যবহারে পানি জীবাণুমুক্ত হয়। এগুলো ছাড়াও ফিটকিরির অনেক উপকারিতা রয়েছে। এর উপকারিতা অনেক বেশি থাকলেও সামান্য কিছু অপকারিতা রয়েছে।

ফিটকিরির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া তখনই ঘটবে যখন আপনি এটি পরিমাণের অতিরিক্ত ব্যবহার করবেন। পরিমাণের অতিরিক্ত ব্যবহার করার ফলে শরীরের বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হতে পারে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পেটব্যথা, বমি বমি ভাব, পেটের আরো অন্যান্য সমস্যা এর সাথে এটি শরীরে বিষক্রিয়া তৈরি করতে পারে।

সেজন্য আপনি যদি ফিটকিরি ব্যবহার করতে চান তাহলে অবশ্যই পরিমাণমতো ব্যবহার করুন। অতিরিক্ত ব্যবহার করে নিজের স্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিবেন না।

মন্তব্য 

ফিটকিরি আমরা প্রত্যেকেই চিনি কিন্তু এর সব গুনাগুণ সম্পর্কে আমরা জানিনা। উপরের আলোচনার মাধ্যমে ফিটকিরি সম্পর্কে এবং এর ব্যবহার সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেয়েছেন। প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধু বান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url