দারুচিনির যত ঔষধি গুনাগুণ - প্রতিদিন কতটুকু দারুচিনি খাওয়া যাবে

প্রিয় পাঠক, আপনি কি দারুচিনির ঔষধি গুনাগুনণ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে আপনার জন্য এই আর্টিকেলটি। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে দারুচিনির ঔষধি গুনাগুণ এবং প্রতিদিন কতটুকু দারুচিনি খাওয়া যাবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
দারুচিনির ঔষধি গুনাগুণ
এই আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন দারুচিনি খাওয়ার নিয়ম, কিভাবে দারুচিনির চা তৈরি করা যায়, দারচিনি খেলে কি ওজন কমে, ব্রণ দূর করতে দারচিনি ইত্যাদি।

ভূমিকা

দারুচিনি একটি মসলা জাতীয় খাবার যা মসলা হিসেবে বিভিন্ন রান্না বান্নায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটি খাবারে দারুন সুগন্ধ নিয়ে আসে। এ মশলা সম্পর্কে আমরা কতটুকুইবা জানি। এই মসলা শুধুমাত্র খাবারের রান্না কাজে ব্যবহৃত হয় সেটা না বরং এটি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হওয়ায় বিভিন্ন চিকিৎসার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।


দারুচিনির রয়েছে চমৎকার উপকারিতা যা জানলে আপনি নিজেও অবাক হবেন। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে দারুচিনিতে রয়েছে অতি উপকারী সকল উপাদান যা আমাদের শরীরের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত। আমরা বেশিরভাগ সময় মসলা হিসেবে এটি ব্যবহার করে থাকি কারণ এর উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই জানেন।

আপনি যদি এর উপকারিতা না জেনে থাকেন তাহলে অবশ্যই জেনে নেন কেননা ঘরে থাকা এই মশলাটি আপনার কতটা উপকারে আসতে পারে তা জানা অতি জরুরী।

দারুচিনির ঔষধি গুনাগুণ

দারুচিনিতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ঔষধি গুনাগুণ সেগুলো জানা আমাদের জন্য অতি প্রয়োজন। কারণ ঘরে থাকা এই মসলা আমাদের শরীরে কি কি উপকার বয়ে আনতে পারে সে সম্পর্কে জেনে থাকা অত্যাবশক। তাহলে চলুন দারুচিনির ঔষধি গুনাগুণ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য অতি প্রয়োজনীয় উপাদান। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর অভাব হলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ তৈরি হয় এবং শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। দারুচিনি শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর পরিমাণ বাড়িয়ে শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং বিভিন্ন রোগের মোকাবেলা করতে সহায়তা করে।
  • দারুচিনি ডায়াবেটিস রোগীদের উপর দারুন প্রভাব ফেলে। এতে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমিয়ে স্বাভাবিক রাষ্ট্রের কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
  • দারুচিনি রক্তের কোলেস্টরলের মাত্রা কমাতে খুবই কার্যকরী। রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে হৃদযন্ত্র ঝুঁকির সম্মুখীন হয়। নিয়মিত এবং পরিমাণমতো দারুচিনি খেলে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রেখে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
  • দারুচিনি রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সক্ষম। এটি কোষের অকালমৃত্যু প্রতিহত করে এবং কোষের অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়া প্রতিহত করতে সাহায্য করে।
  • উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অধিক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে দারুচিনি। যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত দারুচিনি খেতে পারেন তাহলে ভালো ফলাফল পাবেন।
  • দারুচিনি অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে যা সিনামালডিহাইড নামক একটি উপাদান রয়েছে যা ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হতে শরীরকে রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • দারুচিনিতে রয়েছে প্রিবায়োটিক বৈশিষ্ট্য যা নিয়মিত খেলে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। ফলে পেটের সমস্যা এবং হজমের সমস্যা দূর হয়ে যায়।
  • দাঁতের সমস্যায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে দারুচিনি। এটি দাঁতের ব্যথা দূর করতে খুবই কার্যকরী এবং মুখে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি প্রতিহত করতে ও দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • দারুচিনিতে রয়েছে পলিফেলোন নামক উদ্ভিদ যৌগ যা প্রতিরক্ষামূলক এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। সেজন্য দারুচিনি খেলে শরীরের সুস্থতা বজায় থাকে
  • সর্দি কাশি এবং ঠান্ডা জনিত সমস্যায় অতি কার্যকরী উপাদান হিসেবে কাজ করে থাকে দারুচিনি। সর্দি কাশি খুব তাড়াতাড়ি উপশম করে থাকে এটি।
  • শরীরের বিভিন্ন ধরনের প্রদাহজনিত সমস্যা দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে দারুচিনি।
  • মানুষের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমতে থাকে। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে দারুচিনির ভালো গুনাগুণ রয়েছে।
  • চর্ম রোগে দারুচিনির কার্যকারিতা রয়েছে অনেক। এটি মুখের ব্রণ সারাতে এবং যে কোন ধরনের ক্ষতস্থান শাড়িতে তুলতে খুবই কার্যকরী।
  • শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে দারুচিনি। কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার ধীর গতিতে হজমে সহায়তা করে ওজন কমাতে গুরুত্বপূণ ভূমিকা পালন করে।
  • দারুচিনিকে খনিজ লবনের উৎস বলা হয়ে থাকে। কারণ দারুচিনিতে রয়েছে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফেটসহ আরো অন্যান্য খনিজ পদার্থ যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং স্নায়ুর প্রদাহ কমিয়ে শরীর সুস্থ রাখে।

প্রতিদিন কতটুকু দারুচিনি খাওয়া যাবে

আমরা জানি দারুচিনি মসলা জাতীয় খাবার। সেজন্য এটি খাওয়ার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। পরিমিত পরিমাণ দারুচিনি খেলে শরীরের বিভিন্ন ধরনের উপকার সাধিত হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতিদিন দশমিক এক মিলিগ্রাম দারুচিনি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এর বেশি খেলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে।

দারুচিনি খাওয়ার নিয়ম

দারুচিনি বিভিন্নভাবে খাওয়া হয়ে থাকে। বাঙালিরা মূলতঃ দারুচিনি রান্না বান্নার জন্যই বেশি ব্যবহার করে থাকে। কারণ দারুচিনিতে রয়েছে সুন্দর গন্ধ যা খাবারের সুন্দর ঘ্রাণ তৈরি করে। কম-বেশি প্রায় রান্নাতেই দারুচিনি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে রান্না বান্না ছাড়াও দারুচিনি অন্যান্য ভাবে খাওয়া যায় সে নিয়ে আপনাদের সামনে আজ আলোকপাত করবো।

দারুচিনির গুড়া বা দারুচিনির ছাল দিয়ে চা তৈরি করে খাওয়া যায় তবে সেটি সামান্য পরিমাণ। এছাড়াও দারুচিনি ছাল সরাসরি চিবিয়ে খাওয়া যায়। সর্দি কাশি উপশম করতে দারুচিনির ছাল সরাসরি চিবিয়ে খেলে ভালো উপশম পাওয়া যায়। দারুচিনির চা খেলেও সর্দি কাশিতে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।


বর্তমান সময়ে দারুচিনি চা সবার কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কারণ দারুচিনি চা পানে রয়েছে দারুন উপকারিতা।

কিভাবে দারুচিনি চা তৈরি করা যায়

দারুচিনি চা তৈরি করতে হলে প্রথমে আপনাকে এক কাপ পরিমাণ পানি নিয়ে নিতে হবে। তারপর এক চামচের চার ভাগের একভাগ মিশিয়ে ভালোভাবে জাল করতে হবে। এরপর সে পানিতে মধু এবং পুদিনা পাতা দিয়ে খেতে পারেন তাহলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। তবে এইটা দিনে দুইবারের বেশি খাওয়া উত্তম নয়। যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তারা চায়ের সাথে মধু বাদ দিয়ে খাবেন।

দারুচিনি খেলে কি ক্ষতি হয়

আমাদের জানা উচিত প্রতিটি জিনিসেরই ভালো এবং মন্দ উভয় দিক রয়েছে। তবে এটি ভালো এবং খারাপ উভয় হয় খাবারের পরিমাণ ভেদে। অতিরিক্ত কোন খাবার খাওয়ায় স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো নয় এতে উপকারের চেয়ে ক্ষতি বেশি হয়। দারুচিনির ক্ষেত্রেও একই রকম। দারুচিনি খাওয়ার একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ রয়েছে যে পরিমাণ খেলে আপনার শরীরের উপকারিতা বয়ে আনবে।

কিন্তু এই দারচিনি আবার পরিমাণের অতিরিক্ত খেয়ে ফেললে শরীরে বিভিন্ন সমস্যা জটিল ভাবে তৈরি করবে। অতিরিক্ত দারুচিনি খেলে লিভারের সমস্যা হতে পারে সেইসাথে ফুসফুস কিডনি এমনকি লিভারের ক্যান্সারও দেখা দিতে পারে। দারুচিনি মসলা জাতীয় খাবার হওয়ার কারণে এটি খেলে মুখে ঘাও তৈরি হতে পারে।

আবার ডায়াবেটিস রোগীরা অতিরিক্ত খেয়ে ফেললে তাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা একেবারেই কমে যেতে পারে যা তাদের জন্য বিপদজনক।

দারুচিনি খেলে কি ওজন কমে

অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন যে দারুচিনি খেলে ওজন কমে কিনা। দারুচিনি খেলে শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমে ওজন নিয়ন্ত্রণে আনে। দারচিনির গুঁড়া মেশানো পানি পান করলে পেটের ক্ষুধা কমে যায়। যার ফলে দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকা যায়। এটি মেটাবলিজম বাড়াতে সহায়তা করে সেজন্য খুব সহজেই ওজন কমে যায়।

দারুচিনি মেশানো পানি ওজন কমাতে খুবই কার্যকরী। এক গ্লাস পানিতে সামান্য পরিমাণ দারুচিনি দিয়ে ফুটিয়ে নিতে হবে তারপর সেই পানিটি দিনে তিন থেকে চারবার পান করতে হবে। এভাবে কয়দিন এরকম করে খেলে শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমে তা নিয়ন্ত্রণে আসবে।

ব্রণ দূর করতে দারুচিনি

মুখের ব্রণ দূর করতে দারুচিনি ব্যবহার করতে পারেন। মুখের ব্রণ দূর করতে এক চামচের চার ভাগের একভাগ দারুচিনি নিয়ে তার সাথে মধু মিশাতে হবে এবং এটি ভালোভাবে পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগাতে হবে। তারপর ১০ মিনিট রেখে হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে কয়েকদিন ব্যবহার করলে মুখে ব্রণ অনেক কমে যাবে।

ব্রণের দাগ দূর করতে হলে দারুচিনির গুড়ার সাথে হলুদ এবং টক দই মিশিয়ে মুখে মাখতে পারেন তাহলে ব্রণের দাগ ধীরে ধীরে দূর হয়ে যাবে।

পরিশেষে

দারুচিনি মসলা জাতীয় খাবার হলেও এটি শরীরের জন্য অনেক উপকারী। তবে দারুচিনি খেতে হলে আপনাকে কিছু বিষয় সতর্ক থাকতে হবে। অতিরিক্ত দারুচিনি খাওয়া শরীরের পক্ষে কখনোই স্বাস্থ্যসম্মত নয় সেজন্য দারুচিনির উপকার যদি পেতে চান তাহলে পরিমিত পরিমাণ খেতে পারেন।

প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধু বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনের সাথে শেয়ার করুন৷

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url