বিছুটি পাতার ঔষধি গুনাগুণ - বিছুটি পাতার চায়ের উপকারিতা

প্রিয় পাঠক, আপনি কি বিছুটি পাতার ঔষধি গুনাগুণ সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে আপনার জন্য এই আর্টিকেলটি। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে বিছুটি পাতার ঔষধি গুনাগুণ এবং বিছুটি পাতার চায়ের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেল মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
বিছুটি পাতার ঔষধি গুনাগুণ
এ আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন বিছুটি পাতার চা কিভাবে বানাবেন, বিছুটি পাতা কোথায় পাওয়া যায়, বিছুটি পাতা গায়ে লাগলে চুলকায় কেন এবং বিছুটি পাতায় কোন অ্যাসিড থাকে।

ভূমিকা

বিছুটি পাতার নাম শুনলে অনেকে আঁতকে ওঠে। কারণ এই গাছের পাতা ডাল রস বা যে কোন অংশ মানুষের শরীরের কোন অংশে যদি লেগে যায় তাহলে সেই জায়গায় তীব্র চুলকানি শুরু হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর শরীরের সেই স্থান ফুলে ওঠে। গাছটির কান্ড জুড়ে অতি সূক্ষ্ম ট্রাই ক্রম বিস্তৃত থাকে। বিছুটির গায়ের যে ট্রাইকম থাকে সেটি ভেঙে গেলে এক প্রকার রাসায়নিক উপাদান বের হয়।


এই উপাদানের কারণেই বিছুটি পাতা বা যে কোন অংশ কারো গায়ে লেগে গেলে সে জায়গায় প্রচুর চুলকানি শুরু হয়। বিছুটি এমন একটি উদ্ভিদ যার বিভিন্ন ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে। এছাড়াও এই উদ্ভিদটি বিভিন্ন চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে বিছুটি গাছ শুধুমাত্র শরীরে চুলকানি তৈরি করেনা বরং এটি শরীরের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে উপকারে আসে।

বিছুটি পাতার ঔষধি গুনাগুণ

প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন চিকিৎসা ক্ষেত্রে যেমন- এলার্জি বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ এবং অর্থাইটিস রোগে ব্যবহার করা হয়ে আসছে এই বিছুটিকে। এছাড়াও এটি বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে এর পাতা বিভিন্নভাবে ব্যবহার হয়ে আসছে। এছাড়াও বিছুটি পাতা দিয়ে চা তৈরি করে খেলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগের মোকাবেলা করে থাকে-
  • লিভার হচ্ছে আমাদের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা সুস্থ রাখা অতি জরুরী বয়স। বৃদ্ধির সাথে সাথে আমাদের শরীরে বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হতে থাকে যে কারণে লিভারের দুর্বলতা ও দেখা দেয়। লিভারের সুস্থ্যতার একটা বিছুটি পাতা অত্যন্ত কার্যকরী এ পাতা সেবন করলে লিভারের সমস্যা দূর হবে এবং লিভার সুস্থ থাকবে। বিছুটি পাতা শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উৎপাদন করে থাকে যার ফলে শরীরের ভারসাম্য বজায় থাকে এবং লিভারের বিভিন্ন জটিলতা দূর হয়ে যায়।
  • বিছুটি পাতায় যে বিশেষ গুনাগুণ রয়েছে তা আমাদের শরীরের হাইপার টেনশন প্রতিরোধে সহায়তা করে যা আমাদের তাপীয় ব্যবস্থাকে সুস্থ করতে সাহায্য করে।
  • বিছুটি পাতা প্রোস্টেটের সমস্যা দূর করতে অত্যন্ত কার্যকরী। যাদের এই সমস্যা রয়েছে তারা এই পাতাটি ব্যবহার করতে পারেন তাহলে ভালো ফল পাবেন।
  • মরণঘাতি ক্যান্সার প্রতিরোধের সক্ষম বিছুটি পাতা। এ পাতায় যে গুনাগুণ রয়েছে তা মানবদেহের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে এবং ক্যান্সার কোষ তৈরিতে বাধা তৈরি করে।
  • শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে বিছুটি পাতার রয়েছে অন্যান্য ক্ষমতা। এ পাতা নিয়মিত খেলে শরীরের বিষাক্ত টক্সিন বের করে দিয়ে শরীরকে সুস্থ সবল রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি অন্ত্রের পুষ্টি ক্ষমতা উন্নত করতে সহায়তা করে।
  • বিছুটি পাতার রস রক্ত পরিষ্কারক হিসেবে কাজ করে থাকে। এটি রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দেয় এবং লোহিত রক্ত কণিকা উৎপাদনকে বহুগুণে বৃদ্ধি করে।
  • জ্বর শ্বাসকষ্ট এবং এলার্জি চিকিৎসায় এটি অত্যন্ত কার্যকরী। এলার্জি মূলত তৈরি হওয়ায় বিভিন্ন ময়লা ধুলাবালি হয়ে থাকে। পরবর্তীতে এই এলার্জি এমন আকার ধারণ করে যা থেকে জ্বর ও শ্বাসকষ্ট সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়াও এমন কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো খেলে এল যে সমস্যা দেখা দেয় এলার্জির সমস্যায় বিছুটি পাতা খুবই ভালো কাজ দেয়। কারণ বিছুটি পাতার মধ্যে রয়েছে এন্টিইনফ্লেমেটরি ও আন্টি এলার্জিক উপাদান যা আমাদের শরীরের এলার্জি দূর করতে সক্ষম।
  • শরীরের যেকোনো ধরনের প্রদাহ দূর করতে বিছুটি পাতার রয়েছে অনন্য গুনাগুণ কারণ একে প্রদাহ বিরোধী ঔষধ বলা হয়ে থাকে।
  • মহিলাদের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে সক্ষম এই বিছুটি গাছ যাদের অনিয়মিত মাসিক রয়েছে বা পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম সমস্যা রয়েছে এবং অনেকেরই গর্ভধারণ সমস্যা রয়েছে এগুলো সমস্যায় বিছুটি গাছের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
  • বিছুটি গাছের বিভিন্ন অংশ শরীরের প্রজনন ক্ষমতাকে বহুগুণে বাড়িয়ে তোলে। এছাড়াও ডিম্বাশয়ের রক্তপাতকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং ডিম্বাশয়ের ভিতরে সিস্ট তৈরিতে বাধা তৈরি করে।
  • ক্ষত নিরাময়ে ও প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। মূলত এটি ক্ষত নিরাময়ের জন্য প্রয়োজনীয় অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি উপাদান বিছুটি পাতার মধ্যে রয়েছে যা শরীরের যেকোন স্থানে ক্ষত হলে তা নিরাময়ে সাহায্য করে।
  • বিছুটি গাছের তৈরি ওষুধ শরীরের কোষগুলোকে পুনর্গঠন করে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে।
  • বিছুটি পাতায় বিভিন্ন ধরনের খনিজ, ভিটামিন এবং ফ্যাটি এসিড রয়েছে যা শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। এই উপাদানগুলো শারীরিক সুস্থতা বজায় রেখে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। দীর্ঘদিন না খেয়ে থাকার পরে বা অধিক তেল মশলা জাতীয় খাবার খাওয়ার ফলে পেটে গ্যাস্টিক আলসার তৈরি হয়। যার ফলে পেটে বিভিন্ন ধরনের ক্ষত তৈরি করে, পেটের এই ক্ষত দূর করতে বিছুটি গাছ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • কিডনির জন্য অনেক উপকারী বিছুটি পাতা। এ পাতার চা করে নিয়মিত খেলে কিডনি পাথর অপসারণ হয়ে যায়।
  • ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এ পাতার রস শরীরে ইনসুলিন হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দিতে সক্ষম। এটি রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

বিছুটি পাতার চায়ের উপকারিতা

বিচুটি পাতা দিয়ে চা তৈরি করে খাওয়া যায়। সে চায় রয়েছে অনেক উপকারিতা। তাহলে এবার চলুন বিছুটি পাতার চায়ের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-
  • আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে বিছুটি পাতার নির্যাস দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ব্যাথা নাশক ওষুধ তৈরি করা হয়ে থাকে। এ পাতার চা দাঁতের ব্যথার জন্য খুবই উপকারী। নিয়মিত বিছুটি পাতার চা খেলে দাঁতের ব্যথায় খুব আরাম দিয়ে থাকে।
  • বিছুটি পাতায় রয়েছে অ্যান্টি ফাঙ্গাস ও আন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা শরীরের বিভিন্ন সংক্রমণ দূর করতে সহায়তা করে। মহিলাদের ইউরিনারি ইনফেকশন দূর করতে খুবই কার্যকরী।
  • গরমের সময় অনেকে ঘামাচির সমস্যায় ভোগেন। ঘামাচির থেকে আরাম পেতে হলে বিছুটি পাতার রস ব্যবহার করতে হবে। নিয়মিত বিছুটি পাতার চা খেলে ঘামাচি, র‌্যাস, চুলকানি এগুলো সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
  • কিডনির পাথরের ক্ষেত্রেও বিছুটি পাতার চা অনেক উপকারী। বিছুটি পাতার চা খেলে কিডনি পাথরের ক্ষেত্রে ভালো উপকার পাওয়া যাবে।
  • হাড়ের জন্যেও অনেক ভালো বিছুটি পাতার চা। আরে স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে এই পাতা অত্যন্ত গুণসম্পন্ন। হাড়ের ক্ষয় রোধ করতে এটি অনেক কার্যকরী।

বিছুটি পাতার চা কিভাবে বানাবেন

বিছুটি পাতার চা কিভাবে বানাতে হয় এ আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করব তাহলে চলুন জেনে নেই-
  • প্রথমে বিছুটি পাতা একটি পাত্রে নিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। তারপর এটিকে কয়েকদিন রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। এরপর শুকনো পাতাগুলো ভালোভাবে গুঁড়ো করে নিতে হবে। সেই গুড়ো একগ্লাস পানির সাথে মিশিয়ে ১০ মিনিট ফুটিয়ে ছেকে নিয়ে পান করতে হবে।
  • বিছুটির ফল ও শিকড় প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, কুষ্ঠ রোগ, চর্মরোগ, মাথা ঘোরা ইত্যাদি সমস্যায় ভালো কাজ দিয়ে থাকে। সর্দি-কাশি, জ্বর উপসমে ভালো কাজ দিয়ে থাকে বিছুটি শিকড়ের রস। এছাড়াও ঠান্ডাজনিত সমস্যা দূর করতে বিছুটি শিকড়ের রসের কোন তুলনা নেই। বিছুটি শিকড়ের রস দুই থেকে তিন দিন পান করলে ঠান্ডাজনিত সব সমস্যা দূর করে শরীরকে আরাম দিয়ে থাকে।

বিছুটি পাতা গায়ে লাগলে চুলকায় কেন?

বিছুটি পাতার নাম শুনলে আমরা সবাই ভয় পায়। কেননা এই পাতা ও কাণ্ডে সর্বত্রে সূচালো রুয়া থাকে যাকে বলা হয় ট্রাইক্রোম। এই ট্রাইক্রোমগুলিতে থাকে হিসটামিন, সেরোটোনিন, আ্যসিটাইল কোলিন ইত্যাদি রাসায়নিক উপাদান। এ উপাদানগুলির কারণে মূলত বিছুটি গাছ কারো সংস্পর্শে আসলে ট্রাইক্রোমগুলো শরীরে ঢুকে যায় এবং চুলকাতে থাকে।


এই গাছ মানুষের শরীরের সংস্পর্শে আসলে এমনভাবে চুলকানি তৈরি হয় যেখানে পরবর্তীতে ফুলে যায়। এই গাছের তীব্র চুলকানির কারণে সবাই এই কাজ দেখলে ভয় পায়। তবে এই গাছে চুলকানি সমস্যা থাকলেও এ রয়েছে নানা ধরনের উপকারিতা। এই উপকারিতা গুলো আমাদের শরীরের জন্য অনেক ভালো।

বিছুটি পাতা কোথায় পাওয়া যায়

বিছুটি পাতা কোথায় পাওয়া যায় সে সম্পর্কে অনেকেই জানেনা। বিছুটি গ্রাম অঞ্চলে আগাছা হিসেবে জন্মে থাকে। তবে এর সংস্পর্শে শরীরে তীব্র চুলকানি সমস্যা হয় বলে এটিকে বেশিরভাগ মানুষ নিধন করে ফেলে। বিছুটি গাছের নাম একেক অঞ্চলে একেক রকম। উত্তরবঙ্গের লোকেরা এটিকে ছোতারা পাতা হিসাবে চিনি, ময়মনসিংহ অঞ্চলে আবার এই গাছটি চোতরা হিসেবে পরিচিত।


এই গাছ যারা চিনে থাকে তারা এই গাছ থেকে দশ হাত দূরে থাকে এবং যারা চিনে না তারা এই গাছ সংস্পর্শে করলেই বুঝতে পারে।

বিছুটি পাতার ছবি

বিছুটি পাতায় কোন অ্যাসিড থাকে

বিছুটি পাতায় যেমিথানুয়িক এসিড থাকে। এ উদ্ভিদটি এক ধরনের বিরুৎ উদ্ভিদ যা বন জঙ্গলে জন্মায়। এই উদ্ভিদের গায়ে যে রোম বা রোয়া থাকে তাতে খুবই যন্ত্রণাদায়ক চুলকানি রয়েছে। বিছুটি পাতায় যেমিথানুয়িক এসিড রয়েছে তা ফর্মিক এসিড নামেও পরিচিত। এই এসিড থাকার কারণে দুর্ঘটনাবসত এ গাছ কারো সংস্পর্শে আসলে ভীষণ চুলকানি শুরু হয়।

লেখক এর মন্তব্য

বিছুটি পাতা সম্পর্কে অনেকেরই ভ্রান্ত বা খারাপ ধারণা রয়েছে। অনেকেই মনে করেন এ পাতা শরীরের জন্য ক্ষতিকর কারণ এর সংস্পর্শে চুলকানি তৈরি হয় সেজন্য। কিন্তু এর অভ্যন্তরীণ কিছু গুনাগুণ রয়েছে যা আমরা জানিনা। উপরের আলোচনার মাধ্যমে বিছুটি পাতা গুনাগুণ সম্পর্কে কিছুটা জানতে পেরেছেন।

যে সকল সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকে এই পাতা সে সমাধানগুলো যদি পেতে চান তাহলে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url