আমরুল পাতার রস কোন রোগের জন্য উপকারী

প্রিয় পাঠক, আপনি কি আমরুল পাতার রস কোন রোগের জন্য উপকারী সে সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনাকে সাহায্য করবে। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে আমরুল পাতার রস কোন রোগের জন্য উপকারী এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এই সম্পর্কে জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে করুন।
আমরুল পাতার রস কোন রোগের জন্য উপকারী
এই আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন আমরুল পাতা কোথায় পাওয়া যায়, আমরুল পাতা রান্না করার পদ্ধতি কামরুল শাকের ভেষজ গুনাগুণ ইত্যাদি।

ভূমিকা

আমরুল পাতা শাক হিসেবে বহু পরিচিত। সরু লতানো আকৃতির এ উদ্ভিদটি রাস্তার আশেপাশে এবং ঝোপ ঝাড়ে জন্মে থাকে। বাড়ির আনাচে-কানাচে দেখা যায় এই শাকটিকে। এই শাক সাধারণত সারা বছরই পাওয়া যায় তবে বেশি পাওয়া যায় বর্ষাকালে। কারণ বর্ষাকালে ভেজা মাটিতে বেশিরভাগ উদ্ভিদ সতেজ হয়ে ওঠে। আমাদের দেশের সব জায়গায় পাওয়া যায় এই পাতাকে।

আমরুল পাতা বা আমরুল শাক বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন নামে পরিচিত যেমন অম্লিকা, আমরুক, আংবতি, অম্বলি শাক, চাংগেরি, চুকাশাক ইত্যাদি নামে পরিচিত। আমরুল পাতায় একসাথে তিনটি পাতা জোড়া লেগে থাকে। এই গাছে হলুদ রঙের ছোট ছোট ফুল ফুটে। এই ফুল সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরে মাঝামাঝিতে ফুটে থাকে।


আমরুল ফল দেখতে অনেকটা জবের মত এবং এর প্রতিটি ফলের মধ্যে অনেকগুলি বিষ থাকে। এই পাতার রয়েছে নানা ধরনের ঔষধিগুণ। মুখে রুচি, পেটের সমস্যা সর্দি কাশি আমাশা ইত্যাদি দূর করতে অত্যন্ত কার্যকরী। ঔষধি গুণাগুণ ছাড়াও এই পাতা রয়েছে নানা ধরনের পুষ্টিগুণ যেমন ভিটামিন সি, ক্যারোটিন, ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়াম ইত্যাদি।

আমরুল পাতার রস কোন কোন রোগের জন্য উপকারী

আমরুল পাতার রয়েছে অনেক ঔষধি গুনাগুণ যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগের জন্য অনেক উপকারী। তবে কি কি রোগের জন্য এটি উপকারী সে বিষয়ে জানা অত্যাবশ্যক। তাহলে চলুন আমরা আমরুল পাতার রস কোন কোন রোগের জন্য উপকারী সে বিষয়ে জেনে নেই-

শিশুদের সর্দি দূর করতেঃ সর্দি কাশি দূর করতে অত্যন্ত কার্যকরী আমরুল পাতার রস। বিশেষ করে ছোট বাচ্চা বা শিশুদের সর্দি কাশি উপশম করতে এর কার্যকারিতা অনেক বেশি। সর্দি কাশি ছোট বাচ্চাদের নাজেহাল অবস্থা তৈরি করে এবং এই সর্দি কাশি থেকে তৈরি হয় নিউমোনিয়া। সেজন্য বাচ্চাদের সর্দি কাশি দেখা দিলে দ্রুত যে কোন চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।


আমরুল পাতার রস বাচ্চাদের সর্দি কাশিতে বিশেষভাবে কার্যকরী। এই পাতার এক চামচ পরিমাণ রস হালকা গরম করে দিনে এক থেকে দুইবার খাওয়ালে সর্দি কাশি নিরাময়ে ভালো কাজ দিয়ে থাকে। সরিষার তেলের সাথে এই পাতার রস মিশিয়ে শিশুদের বুকে পিঠে মালিশ করলেও ভালো কাজ দিয়ে থাকে।

মাইগ্রেনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতেঃ মাইগ্রেনের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে আমরুল পাতার রস বিশেষভাবে কার্যকরী। এক চামচ পেঁয়াজের রসের সাথে এক চা চামচ আমরুপ পাতার রস মিশিয়ে কপালে লাগিয়ে ভালোভাবে মেসেজ করলে মাইগ্রেনের ব্যথার আরাম পাওয়া যায়। সাইনাসের জন্য এটি অনেক উপকারী।

দাঁত ও মাড়িকে সুস্থ রাখেঃ দাঁত ও মাড়ির সুস্থতার জন্য আমরুল পাতা নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন। এই পাতার ভালোভাবে পেস্ট তৈরি করে হলুদ এবং নুন মিশিয়ে নিয়মিত ব্যবহার করলে দাঁত ও মাড়িকে সুস্থ্য এবং জীবাণুমুক্ত রাখবে। যাদের মুখে দুর্গন্ধ রয়েছে তারা এটি ব্যবহার করতে পারেন। দুর্গন্ধ দূর করতে তিন থেকে চারটি পাতা নিয়ে চিবাতে হবে। এভাবে কয়েকদিন ব্যবহার করলে মুখে দুর্গন্ধ দূর হয়ে যাবে।

পুরনো আমাশয় অধিক কার্যকরীঃ আমাশয় এমন একটি রোগ যা দীর্ঘদিন বা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকে। এ আমাশয় থাকলে খাদ্য ঠিক মতো খাওয়া যায় না। পুরনো আমাশয় দূর করতে হলে মাখন তুলা দুধের সাথে আমরুল পাতা সিদ্ধ করে দিনে একবার খেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

এসিডিটি দূর করেঃ অনেকেই টক খেতে পছন্দ করেন বিশেষ করে মেয়েরা টক খেতে খুবই পছন্দ করেন। কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণ টক খাওয়ার ফলে পেটে এসিডিটির সমস্যা তৈরি হয়। এ ক্ষেত্রে আমরুল পাতা ব্যবহার করা অতি উত্তম। এটি এসিডিটি কমে মুখে রুচি ফিরাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করেঃ প্রতিটি মানুষের উচ্চ রক্তচাপ এবং নিম্ন রক্ত চাপ সমস্যা লেগেই রয়েছে। তবে বেশিরভাগ মানুষের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে। আমরুল পাতার রস উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আখের গুড়ের সাথে আমরুল পাতার রস মিশিয়ে শরবত খেলে উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রে ভালো ফল পাওয়া যায়।

এছাড়াও আমরুল পাতা থেঁতো করে গরম জলে সিদ্ধ করে রসুনের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে আরো ভালো উপকার পাওয়া যায়।

লিভার সুস্থ রাখেঃ যাদের লিভারে দুর্বলতা রয়েছে তাদের জন্য এটি বিশেষ প্রয়োজনীয়। দুর্বল লিভার শক্তিশালী করতে চাইলে তিন থেকে চারটি আমরুল পাতা চিবান। প্রতিদিনের পাতা বা পাতার রস গ্রহণ করলে শরীরকে ডিটক্সিফাই করে ফলে লিভার সুস্থ থাকে।

আমরুল শাকের ভেষজ গুণ

আমরুল শাকের রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভেষজ গুণ যা শরীরকে বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষা করে। এটি বিভিন্ন রোগের মোকাবেলা করে শরীরকে সুস্থ রাখতে খুবই কার্যকরী। পৃথিবীর সব রোগের মহৌষধ বলা হয়ে থাকে এই পাতাকে। টক স্বাদযুক্ত লতানো এই উদ্ভিটি শরীরে এমন কিছু উপকার বয়ে আনে যা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন।

এই শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যা শরীরের ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এছাড়া যাদের পেটের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য এই শাক অনেক উপকারী। ডায়াবেটিস, মুখে অরুচি, লিভারের সমস্যা ইত্যাদি দূর করতে এই শাকের অনেক ভেষজ গুণ রয়েছে।

আমরুল শাক রান্না পদ্ধতি

আমরুল পাতা রান্না করতে হলে প্রথমে ভালো পাতাগুলো উঠিয়ে নিতে হবে। তারপর সেই পাতাগুলোকে পরিষ্কার পানি দিয়ে দুই থেকে তিনবার ধুয়ে নিতে হবে। ধোয়া হয়ে গেলে স্বাদমতো লবণ দিয়ে পাতাকে ভালোমতো সিদ্ধ করতে হবে। সিদ্ধ করা হলে চুলা থেকে নামিয়ে আরেকটি পাত্র চুলায় বসিয়ে দিতে হবে। পাত্রে ২ টেবিল চামচ পরিমাণ তেল দিয়ে দিতে হবে।

তেল কিছুটা গরম হলে তার মধ্যে ৫ থেকে ৬ টুকরা রসুন থেঁতে করে এবং পরিমাণ মতো কাঁচা মরিচ এবং কাঁচা পেঁয়াজ তেলে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। এগুলো ভাজা হয়ে গেলে সিদ্ধ করে রাখা শাক তেলের মধ্যে দিয়ে দিতে হবে। এভাবে আমরুল পাতার শাক রান্না করা হয়ে থাকে।

আমরুল পাতা খাওয়ার নিয়ম

আমরুল পাতা বিভিন্ন উপায়ে খাওয়া যায় ভেষজ গুনাগুণ পেতে আমরুল পাতার রস খাওয়া হয়। এ পাতা থেঁতো করে পানিতে দিয়ে সিদ্ধ করে সেই পানি পান করা যায়, আমরুল পাতা শাক হিসেবে খাওয়া যায় এছাড়াও এই পাতা দিয়ে বিভিন্নভাবে রান্নার রেসিপি তৈরি করেও খাওয়া যায়।

আমরুল পাতা কোথায় পাওয়া যায়

আমরুল পাতাকে আমাদের দেশে বিভিন্ন নামে চেনে প্রত্যেক অঞ্চলে এর আলাদা আলাদা পরিচিতি রয়েছে অত্যন্ত ঔষধি গুণসম্পন্ন এই পাতা রাস্তার ধারে, বাড়ির আনাচে-কানাচে, বিভিন্ন জায়গায় আগাছা হিসেবে জন্মায়। এ পাতা বাংলাদেশের সব জায়গায় পাওয়া যায় বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে এটি বেশি পাওয়া যায়।



যেহেতু এটি বিভিন্ন জায়গা বিভিন্ন নামে পরিচিত সেহেতু আপনি অবশ্যই গাছ এবং পাতা চিনে রাখবেন যা দেখে আপনি বুঝতে পারেন এটি আসল আমরুল পাতা। কেননা আসল আমরুল পাতা খেলে এর সম্পূর্ণ ঔষধি পাওয়া যাবে। আমরুল পাতা ভেবে অন্যান্য পাতা খেলে সেটি শরীরে ক্ষতিকারক প্রভাবও ফেলতে পারে।

লেখক এর মন্তব্য

উপরের আলোচনার মাধ্যমে আমরুল পাতার যত ঔষধি গুনাগুণ বা উপকারিতা রয়েছে সে সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেয়েছেন। তবে এর উপকারিতা সবার শরীরের ক্ষেত্রে নাও করতে পারে। আপনি যদি কোন সমস্যা সমাধান নিয়ে আমরুল পাতা খেতে চান তাহলে অবশ্যই আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাবেন।

প্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url