তরমুজের বীজের উপকারিতা - তরমুজ কোন জেলায় বেশি হয়

প্রিয় পাঠক, আপনি কি তরমুজের বীজের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনাকে সাহায্য করবে। এ আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে তরমুজের বীজের উপকারিতা এবং তরমুজ কোন জেলায় বেশি হয় এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
তরমুজের বীজের উপকারিতা
এই আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন তরমুজের বীজ খাওয়ার নিয়ম, তরমুজের বীজের দাম, উন্নত জাতের তরমুজের নাম, বারোমাসি তরমুজের বীজ কোথায় পাওয়া যায় এবং তরমুজের বীজের অপকারিতা ইত্যাদি।

ভূমিকা

তরমুজ সবারই পছন্দের একটি ফল। এই ফলটি আমরা কম বেশি সবাই পছন্দ করি। প্রায় সকলে আমরা তরমুজ খেয়ে থাকি কিন্তু তরমুজের বীজ আমরা সবাই ফেলে দিয়ে। এই বীজ ফেলে দেওয়ার আগে কখনো কি ভেবে দেখেছেন এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। তরমুজের বীজে রয়েছে নানান ধরনের পুষ্টি উপাদান। এই বীজের পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই ধারণা নেই।

আর সেজন্য তরমুজ খাওয়ার পর বীজগুলো ফেলে দেওয়া হয়। আপনি এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে যদি না জেনে থাকেন তাহলে অবশ্যই জেনে নিন। তরমুজের বীজে রয়েছে নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান যেমন প্রোটিন, ফ্যাটি এসিড, ম্যাগনেসিয়াম,  আয়রন, ফাইবার, পটাশিয়াম এবং খাদ্য আঁশ।

তরমুজের বীজ খাওয়ার উপকারিতা

তরমুজের মধ্যে যার বীজ বা দানায় রয়েছে বিভিন্ন প্রকারের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা। যা শরীরের জন্য অত্যাবশ্যকে। এখানে আমরা তরমুজের বীজ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের সামনে তুলে ধরব তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক -

হার্ট ভালো রাখেঃ তরমুজের বীজের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম। যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে ফলে হাটের সুস্থতা ও বজায় থাকে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ তরমুজের বীজে রয়েছে জিংক এর উপস্থিতি যার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এটি বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ জনিত রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে শরীরকে সুস্থ রাখ। শরীরের সবকিছু সামঞ্জস্য রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

হজম শক্তি বৃদ্ধি করেঃ হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে তরমুজ বীজে রয়েছে অনন্য গুনাগুণ। এতে থাকা ফাইবার এবং যা হজম প্রক্রিয়া ঠিক রাখতে সাহায্য করে। পেট সুস্থ থাকে এবং পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়ে যায়।

ত্বকের যত্নেঃ তরমুজ যেমন ত্বকের জন্য উপকারী তেমনি তরমুজের বীজও ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি ত্বকের সমস্যা দূর করে ত্বকে উজ্জ্বল ও মসৃণ করে তোলে।

চুলের বৃদ্ধিতেঃ তরমুজের বিজ চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি চুলের গোড়ায় পুষ্টি জোগায় এবং চুলের গোড়া মজবুত করে। তরমুজের বীজ চুলের গোড়ায় নিয়মিত ব্যবহার করলে চুলের বৃদ্ধি ও তাড়াতাড়ি ঘটে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ তরমুজের বীজে রয়েছে লাইসিন নামক উপাদান যা ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত তরমুজের বীজ খেলে ডায়াবেটিস রোগীরা খুবই উপকার পাবে।

গর্ভবতী মহিলাদের জন্য উপকারীঃ তরমুজের বীজে রয়েছে এমন কতগুলো রাসায়নিক উপাদান ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে খুবই কার্যকরী। এছাড়াও এই যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের খনিজ উপাদান যা গর্ভ হতে মহিলাদের জন্য অনেক ভালো। এই বীজ খেলে গর্ভের বাচ্চার জন্য অনেক উপকারী।

কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ ক্ষতিকর কোলেস্টেরল শরীরকে হুমকির মধ্যে ঠেলে দেয়। তরমুজের বীজ ক্ষতিকর কোলেস্টরেল অপসারণ করতে সাহায্য করে। ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে যায় এবং শরীর সুস্থ ও সবল থাকে।

ক্ষত সারিয়ে তোলেঃ তরমুজের বীজ ক্ষত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। কারণ তরমুজের বীজে রয়েছে অনেক পরিমাণ অ্যামিনো এসিড। তরমুজের বীজ ব্যবহার করলে ক্ষত দ্রুত সেরে উঠে।

হাড় সুস্থ রাখেঃ হাড় সুস্থ রাখতে তরমুজের বীজ খুবই কার্যকর। কারণ তরমুজের বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম যা হাড়ের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। হাড় ক্ষয় রোধ করে পেশির কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে এবং স্নায়ু সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

মস্তিষ্কের কার্য ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ তরমুজের বীজে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম যা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। কারণ শরীরে ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি থাকলে স্মৃতিশক্তি কমে যেতে পারে। সে জন্য স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে তরমুজের বীজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

রক্তশূন্যতা দূর করতেঃ তরমুজের বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন যা শরীরের রক্তশূন্যতা দূর করতে সহায়তা করে। আয়রনের সরবরাহ সঠিকভাবে থাকলে চুল পড়া কমে যায় চুলের গোড়ায় শক্তি বৃদ্ধি পায়।

তরমুজের বীজ খাওয়ার নিয়ম

তরমুজের বীজ বিভিন্ন উপায়ে খাওয়া যায়। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল রান্না করে খাওয়া। এছাড়াও তরমুজের বীজ রোদে শুকিয়ে তারপর ওভেনে বেইক করে লবণ এবং অন্যান্য উপাদান মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। তরমুজের বীজ গুড়া করে যে কোন খাবারের সাথে এবং সালাদের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়। এছাড়াও তরমুজের বিচি সরাসরি খাওয়া যায়।

তরমুজের বিচির স্বাদ অনেকটাই সূর্যমুখী বিচির সাধের মত। নিয়মিত নির্দিষ্ট পরিমাণ তরমুজের বীজ খাওয়া যায়। কারণ তরমুজের বীজে রয়েছে পুষ্টিগুণ সম্পন্ন উপাদান যা শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। তবে এই বীজ অতিরিক্ত পরিমাণ না খাওয়াই ভালো কেননা এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি রয়েছে। যা অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে।

তরমুজের বীজের দাম

তরমুজের বীজে রয়েছে অনেকগুলো খনিজ উপাদান যা শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। তরমুজের বীজে যে সকল পুষ্টি উপাদান রয়েছে তা পুষ্টি চাহিদা মেটাতে সক্ষম। তরমুজের বীজ কোন জায়গায় কিনতে পাওয়া যায়। এটি ড্রাই ফুড হিসেবে বিক্রি করা হয়ে থাকে। এর দাম গুণগত মানের কারণে বিভিন্ন রকমের হতে পারে।

আড়াইশো গ্রাম তরমুজের বীজের দাম ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। ৫০০ গ্রাম তরমুজের বীজে দাম ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। ১ কেজি তরমুজের বীজের দাম ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকা। এই বীজের গুণগত মান ভালো হলে এর দাম আরো কিছুটা বেশি হতে পারে। কেননা ভালো জিনিসের দাম সবসময় একটু বেশিই হয়।

আপনি যদি ভালো মানের তরমুজের বিচি পেতে চান তাহলে গুণগতমান যাচাই করে কিনুন। তাহলে ভালো জিনিস কিনে আপনি লাভবান হতে পারবেন।

বারমাসি তরমুজের বীজ কোথায় পাওয়া যায়

বারোমাসি তরমুজের বীজ সারা বছর চাষ করা হয়ে থাকে। ৬০ থেকে ৬৫ দিনের মধ্যে এই গাছের পরিপূর্ণতা পায়। এই তরমুজের ওজন অনেক বেশি হয়। সর্বনিম্ন চার থেকে সাত কেজি ওজন হয়ে থাকে। বারোমাসি তরমুজের বীজ সাধারণত থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করা হয়ে থাকে। বারোমাসি তরমুজের বীজ আপনার শহরের নিকটস্থ যেকোনো বিজ ভান্ডার থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন।

এছাড়াও এটি অনলাইনের মাধ্যমেও পেতে পারেন। অনলাইনের মাধ্যমে যে সকল পেজ এ ধরনের বিক্রয় করে থাকে সে ধরনের পেজে গিয়ে যোগাযোগ করতে পারেন।

তরমুজের বিয়ের সম্পর্কিত কয়েকটি প্রশ্ন এবং উত্তর

প্রশ্নঃ কোন তরমুজের বীজ ভালো?

উত্তরঃ তরমুজের সবচেয়ে ভালো বীজ হচ্ছে সিনজেনটা সুগার কুইন তরমুজের বীজ। এটি খাস্তা, মিষ্টি এবং রসালো হয়ে থাকে। উচ্চমানের ফলনের কারণে এই বীজ সকলের কাছে পরিচিত।

প্রশ্নঃ তরমুজের চারা কখন রোপন করতে হয়?

উত্তরঃ তরমুজ একটি মৌসুমী ফল সে কারণে এটি রোপন করার জন্য নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত তরমুজ চাষ উপযোগী। আগাম তরমুজ পেতে চাইলে নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে তরমুজের চারা রোপণ করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে সময়ের আগে তরমুজ পেয়ে থাকবেন।

প্রশ্নঃ তরমুজ কতদিনে পাকে?

উত্তরঃ তরমুজের পরিপক্কতা নির্ভর করে সাধারণত প্রাকৃতিক আবহাওয়ার উপরে। তরমুজের ফল পাকতে সর্বোচ্চ ৮০ থেকে ১০০ দিন সময় লাগতে পারে।

উন্নত জাতের তরমুজের নাম

আমাদের দেশের কয়েক ধরনের তরমুজ পাওয়া যায়। সেগুলোর মধ্যে কতগুলো রয়েছে অন্যতম। উন্নত জাতের তরমুজগুলো হচ্ছে- ভিক্টর সুপার , বঙ্গলিংক, ওশেন সুগার, banglalink, সুগার এম্পেরোর, ভিক্টরি, গ্রীন ড্রাগন ইত্যাদি। এ জাতের তরমুজগুলো উৎপাদনের জন্য খুবই ভালো। এছাড়াও এগুলোর ফলনও অত্যন্ত ভালো হয়।

আপনি যদি তরমুজ চাষ করতে চান তাহলে অবশ্যই উন্নত জাতের তরমুজ চাষ করুন। এর ফলে অল্প সময়ে বেশি লাভবান হতে পারবেন।

তরমুজ কোন জেলায় বেশি হয়

অনেকের প্রশ্ন করেন তরমুজ কোন জেলায় বেশি হয়? কৃষিবিদরা গবেষণা করে বলেছেন বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলগুলোতে তরমুজ চাষের জন্য অনেক বেশি উপযোগী। সেজন্য বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলে তরমুজ বেশি চাষ করা হয়ে থাকে। বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি তরমুজ উৎপাদন হয়ে থাকে বরিশাল অঞ্চলে। সারাদেশে বরিশাল অঞ্চলের তরমুজের বেশ চাহিদা রয়েছে। এছাড়াও পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, ভোলা, বরগুনা এই জেলাগুলোতেও অনেক বেশি তরমুজ উৎপাদন হয়ে থাকে। তবে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলগুলোতে তরমুজ চাষ বেশি হলেও অন্যান্য অঞ্চলেও তরমুজ চাষ করা হয়ে থাকে। মোট কথায় বাংলাদেশের প্রায় জেলাতেই তরমুজ চাষ করা হয়।

তরমুজের বীজের অপকারিতা

তরমুজের বীজের অনেক উপকারিতা রয়েছে। যেগুলো পরিমাণমত খেলে শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর করবে। কিন্তু তরমুজের সামান্য কিছু অপকারিতা রয়েছে যা শরীরকে বিপদের দিকে ঠেলে দিতে পারে। তরমুজের বীজ অতিরিক্ত পরিমাণ খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই বিপদজনক।

এছাড়াও তরমুজের বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি যা অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে ওজন বৃদ্ধি করতে পারে। বিভিন্ন ধরনের পেটের সমস্যা যেমন- বমি বমি ভাব, পেট ফুলে যাওয়া এবং অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেজন্য অতিরিক্ত তরমুজের বিচি খাওয়া কোন ব্যক্তিরই উচিত নয়।

লেখকের মন্তব্য

তরমুজের বীজের গুনাগুণ সম্পর্কে বেশিরভাগ মানুষেরই ধারণা নেই। সেজন্য এই আর্টিকেলের মাধ্যমে তরমুজের বীজের গুণাগুণ সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করছি কিছুটা হলেও ধারণা পেয়েছেন। তরমুজের বীজ যদি খেতে চান তাহলে অবশ্যই নিয়মিত ও পরিমাণমত খেতে পারেন। পরিমাণ মতো খেলে শরীরে পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে।

কিন্তু পরিমাণের বাইরে খেলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে। প্রিয় পাঠক, এ আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধু বান্ধব আত্মীয়-স্বজনের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url