সুইস ব্যাংকে একাউন্ট খোলার নিয়ম - সুইস ব্যাংকে সর্বনিম্ন কত টাকা রাখা যায় জেনে নিন

সুপ্রিয় পাঠক, আপনি কি সুইস ব্যাংকে একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে সুইস ব্যাংকে একাউন্ট খোলার নিয়ম এবং সুইস ব্যাংকে সর্বনিম্ন কত টাকা রাখা যায় এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
সুইস ব্যাংকে একাউন্ট খোলার নিয়ম
এ আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন সুইস ব্যাংক কি, সুইস ব্যাংকে কোন দেশের টাকা বেশি রয়েছে এবং সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের টাকা জমার রেকর্ড ইত্যাদি।

ভূমিকা

সুইস ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৫৪ সালে। কিন্তু ১৯৯৮ সালের পরপরই সুইস ব্যাংক ইউনিয়ন ব্যাংক অফ সুইজারল্যান্ডের সাথে একত্রিত হয়ে যায়। বর্তমানে এই ব্যাংকটি গোটা ইউরোপ মহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বৃহত্তম এবং গোটা বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম হিসেবে স্বীকৃত। সুইস ব্যাংক নামে কোন একক ব্যাংক এখন আর সুইজারল্যান্ডে নেই।


Financial Market Supervisory Authority (FINMA) অধীনে সুইজারল্যান্ডের সবগুলো ব্যাংকের রূপকে সুইস ব্যাংক বলা হয়। সুইস ব্যাংকগুলো বর্তমান বিশ্বে খুবই জনপ্রিয়। এগুলোর জনপ্রিয়তা অর্জন করার মূল কারণ হচ্ছে স্থিতিশীল ব্যাংকিং সিস্টেম। সুইস ব্যাংকগুলো গ্রাহকের গচ্ছিত অর্থ সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিয়ে আসছে।

সেজন্য অনেকেই এই ব্যাংকগুলোতে অ্যাকাউন্ট খুলতে চায়। এই ব্যাংকে একাউন্ট খোলার জন্য কিছু যোগ্যতা ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে যেগুলো সম্পর্কে অবগত হওয়া খুবই জরুরী। অনেক বাংলাদেশী সুইস ব্যাংকগুলোতে টাকা রাখে। এখানে টাকা রাখার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদের টাকার মূল হিসাব কাউকে না জানানো।

সুইস ব্যাংক গ্রাহকের টাকার হিসাব কখনোই অন্যকে দিবেনা। সম্পূর্ণভাবে গোপনতা নীতি বজায় রাখে।

সুইস ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলার নিয়ম

টাকা বা অর্থ নিরাপদে রাখার জন্য অনেকেই সুইস ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে চায়। কিন্তু তারা অ্যাকাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পূর্ণভাবে জানেনা। সুইস ব্যাংকে একাউন্ট কিভাবে খোলা যায় সে সম্পর্কে আপনাদের সামনে আলোকপাত করবো। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক-
  • সুইজারল্যান্ড ব্যতীত অন্য কোন দেশের নাগরিক সুইস ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে হলে তাকে অবশ্যই সশরীরে উপস্থিত হতে হবে।
  • গ্রাহককে অবশ্যই নূন্যতম বয়স ১৮ বছর হতে হবে।
  • বৈধ পাসপোর্ট এবং অর্থের ঠিকঠাক সার্টিফিকেট থাকতে হবে।
  • অ্যাকাউন্ট খুলতে গ্রাহকে অবশ্যই ৫০০০ সুইচ ফ্র্যাঙ্ক জামানত দিতে হবে। তবে ব্যাংক ভেদে এর পরিমাণ আলাদা হতে পারে।
  • ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য গ্রাহককে তার আসল পরিচয় দিতে হবে। তবে গ্রাহকের পরিচয় অল্প কয়েকজন ব্যাংক কর্মকর্তা জানবে।
সুইস ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে চাইলে উপরে সবগুলো ডকুমেন্টস নিয়ে সরাসরি আবেদন করতে হবে। তারপর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সবকিছু যাচাই করে অ্যাকাউন্ট খোলার অনুমতি প্রদান করবে। তবে কিছু কিছু বিষয় ব্যাংক দেখবে যেমন সম্পদের উৎস। বড় অংকের ডিপোজিট করতে চাইলে সে ক্ষেত্রে অন্য ব্যাংকের হিসাবের স্টেটমেন্ট দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।

সুইস ব্যাংকে কোন দেশের টাকা বেশি

সুইস ব্যাংকের সবচেয়ে বেশি অর্থ জমা হয় যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের। যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় যুক্তরাজ্যের ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের টাকা এই ব্যাংকগুলোতে বেশি। সে অর্থের পরিমাণ সুইজারল্যান্ডের মুদ্রায় কনভার্ট করলেই হয়ে দাঁড়ায় ৩৭ হাজার ৫৫১ কোটি সুইস ফ্রাঁ।


দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অর্থ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের। এই অর্থের পরিমাণ সুইজারল্যান্ডের মুদ্রায় ১৬ হাজার ৭৭৩ কোটি সুইচ ফ্রাঁ। যুক্তরাজ্যের টাকার পরিমাণ বাংলাদেশী টাকায় হিসাব করলে দাঁড়ায় ৩৫ লাখ ৬৪ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা। যা বাংলাদেশের প্রস্তাবিত ৫টি বাজেটের চেয়ে অনেক বেশি। এত পরিমাণ টাকা সুইস ব্যাংকে রেখেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এই ব্যাংকে প্রচুর পরিমাণে অর্থ জমা রাখে।

সুইস ব্যাংকে সর্বনিম্ন কত টাকা রাখা যায়

সুইস ব্যাংকে সর্বনিম্ন কত টাকা পর্যন্ত ডিপোজিট করা যায় সে বিষয়ে অনেকেই জানে না। আমরা এখানে সুইস ব্যাংকের সর্বনিম্ন কত টাকা রাখা যায় সে সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দিব। তাহলে চলুন নেই-সুইস ব্যাংক যেহেতু কয়েকটি ব্যাংকের সম্মিলিত রূপ। সেহেতু বিভিন্ন ধরনের ব্যাংকের ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম কানুন।

তবে সুইস ব্যাংকের প্রধান প্রধান ব্যাংকগুলোতে টাকা রাখার ক্ষেত্রে কিছুটা সীমাবদ্ধ রয়েছে। যেমন এই ব্যাংকগুলোতে যদি বিদেশী নাগরিক টাকা রাখতে চায় তাহলে সর্বনিম্ন ওয়ান মিলিয়ন মার্কিন ডলার রাখতে হবে। এর নিচে হলে এই ব্যাংকগুলোতে টাকা রাখতে পারবেনা। এছাড়াও কয়েক ধরনের অ্যাকাউন্ট রয়েছে যেগুলোর উপর নির্ভর করে টাকার সীমাবদ্ধতা নির্ধারণ করা হয়।

এই ব্যাংকগুলো ছাড়া আরও যেগুলো ব্যাংক আছে সেগুলো ব্যাংকের কোন সীমাবদ্ধতা বা নির্ধারিত নিয়ম নেই। সেজন্য আপনি যে ব্যাংকে সুবিধা মনে করবেন সেখানেই টাকা রাখতে পারেন।

সুইস ব্যাংক সম্পর্কিত কয়েকটি প্রশ্ন এবং উত্তর

প্রশ্নঃ সুইস ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করতে কত টাকা লাগে?

উত্তরঃ সুইস ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের সমন্বয়ে গঠিত। সুইজারল্যান্ড এর সবগুলো ব্যাংককে একত্রে সুইস ব্যাংক বলা হয়। সেজন্য একেক ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট করতে এক এক রকম টাকা লাগে। কোন কোন ব্যাংকে একাউন্ট করতে ১০ সুইচ ফ্রাঁ জামানত রাখতে হয়। আরো ব্যাংক আছে যেগুলোতে জামানত হিসেবে ৫ সুইচ ফ্রাঁ দিতে হয়। তবে বিভিন্ন ব্যাংক ভেদে এর কিছুটা কম বেশি হতে পারে।

প্রশ্নঃ সুইস ব্যাংকে একাউন্ট খোলা যায়?

উত্তরঃ হ্যাঁ সুইস ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। Financial Market Supervisory Authority (FINMA) এর অধীনে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একজন ব্যক্তিকে সুইস ব্যাংকে একাউন্ট খোলার অনুমতি দিয়ে থাকে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত ডকুমেন্ট এবং একাউন্ট খোলার যোগ্যতা থাকলে এ ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে পারবেন।

প্রশ্নঃ সুইচ ব্যাংকের সবচেয়ে বেশি টাকা কার আছে?

উত্তরঃ সুইস ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি টাকা রাখা আছে যুক্তরাজ্যের ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের। সুইস ব্যাংকে টাকা রাখার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

প্রশ্নঃ সুইস ব্যাংকে টাকা নিরাপদ?

উত্তরঃ বিশ্বের যে সকল প্রধান প্রধান ব্যাংক রয়েছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সুইস ব্যাংক। বিশ্বে এর জনপ্রিয়তা অনেক। সুইস ব্যাংকে টাকা সম্পূর্ণভাবে নিরাপদ। কেননা সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোর নিরাপত্তা, গোপনীয়তা, নিরপেক্ষতা এবং স্থিতিশীলতার কারণে বিশ্বখ্যাত।

প্রশ্নঃ মার্কিন নাগরিকরা কি সুইস ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে পারবে?

উত্তরঃ মার্কিন নাগরিকরা সুইস ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে পারবে। কারণ এখানে বিশ্বের যে কোন দেশের নাগরিকদের একাউন্ট খোলার অনুমতি প্রদান করা হয়। বিদেশি নাগরিকদের একাউন্ট খোলার জন্য যেগুলো ব্যাংক রয়েছে সেগুলোর মধ্যে সুইস ব্যাংক অন্যতম একটি।

সুইস ব্যাংক মানে কি

সুইস ব্যাংক বলতে অনেকে একটিমাত্র ব্যাংক বুঝে থাকে। কিন্তু আসল কথা হচ্ছে বর্তমানে সুইস ব্যাংক নামে কোন একক ব্যাংক সুইজারল্যান্ডে নেই। সুইজারল্যান্ডে যতগুলো ব্যাংক রয়েছে সবগুলো ব্যাংকে একত্রে সুইচ ব্যাংক বলে। এই ব্যাংকগুলো মূলত সুইস Financial Market Supervisory Authority (FINMA) এর অধীনে।

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের টাকা জমার রেকর্ড

গত ২০ বছরের মধ্যে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের সর্বোচ্চ অর্থ জমা হয় গত ২০২১ সালে। এদেশের অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে অর্থগুলো জমা হয়েছে সে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে। সে সময় সুইস ব্যাংকের একাউন্টে বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ ৮৭ কোটি ১১ লক্ষ ফ্রাঁ। বর্তমানে প্রতি সুইস ফ্রাঁর বিনিময় মূল্য ১২৫ টাকা হিসাবে এ টাকার পরিমাণ ১০ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা। ২০২০ সালে সে ব্যাংকে বাঙ্গালিদের অর্থের পরিমাণ ছিল ৫৬ কোটি ২৯ লাখ সুইস ফ্রাঁ বা বাংলাদেশি মূদ্রায় ৫ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা। সে অর্থে ১ বছরের ব্যবধানে সুইস ব্যাংকে জমা রাখা অর্থের পরিমাণ ৫৫ শতাংশ বেড়েছে।

লেখক এর শেষ কথা

উপরের আলোচনার মাধ্যমে আপনারা সুইস ব্যাংক সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেয়েছেন। সুইস ব্যাংকে টাকা রাখার ক্ষেত্রে অনেকে নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে। গোপনীয়তা, নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ইত্যাদির ক্ষেত্রে এ ব্যাংকগুলো বিশ্বের ভালো অবস্থানে রয়েছে। সেজন্য বলা যায় নিরাপত্তার দিক দিয়ে অন্যতম ব্যাংক হচ্ছে সুইস ব্যাংক। প্রিয় পাঠক, আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধু বান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url