২১টি ঔষধি গাছের উপকারিতা ও ব্যবহারবিধি জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, আপনি কি ঔষধি গাছের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনাকে সাহায্য করবে। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে ২১টি ঔষধি গাছের উপকারিতা এবং ব্যবহার বিধি সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে করুন।
ঔষধি গাছের উপকারিতা
এই আর্টিকেলটি পড়লে জানতে পারবেন কোন কোন গাছ কোন কোন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

ভূমিকা

বহু বছর পূর্বে মানুষ চিকিৎসার জন্য ঔষধি গাছের উপর বেশি নির্ভরশীল ছিল। বর্তমানেও এই গাছগুলোর ব্যবহার কম নয়। প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান যুগ পর্যন্ত বিভিন্ন চিকিৎসায় ঔষধি গাছ ব্যবহার করার প্রচলন হয়ে আসছে। পৃথিবীতে অনেক ভেষজ উদ্ভিদ রয়েছে যেগুলো বিভিন্ন রোগের মহৌষধ হিসেবে কাজ করে থাকে।


বাংলাদেশের কিছু গবেষক গবেষণা করে বলেছেন আমাদের আশেপাশে এমন অনেকগুলো গাছ রয়েছে যেগুলো ঔষধি গুনাগুণ সম্পন্ন। গ্রামাঞ্চলের মানুষগুলো প্রাচীনকাল থেকে এখন পর্যন্ত এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে এই গাছগুলো বিভিন্ন চিকিৎসায় ব্যবহার করে আসছে। ঔষধি গুনাগুণ সম্পন্ন হওয়ায় এ গাছগুলোর ব্যবহার দিন দিন আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বেশিরভাগ ঔষধি গাছগুলো অনেক অযত্নে এবং অবহেলায় আমাদের ঘরের আশেপাশে বেড়ে উঠছে। এছাড়াও এই গাছগুলো সংরক্ষণের অভাবে বিলুপ্তপ্রায়। সেজন্য আমাদের প্রত্যেকেরই উচিৎ গাছগুলো সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং যথাযথভাবে সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা।

২১টি ঔষুধি গাছের উপকারিতা ও ব্যবহারবিধি

পৃথিবীতে প্রায় পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি উদ্ভিদ রয়েছে যা বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ পোষ্টের মাধ্যমে আমরা আপনাদের সামনে ঔষধিগুণ সম্পন্ন কয়েকটি উদ্ভিদের গুনাগুণ তুলে ধরব। তাহলে চলুন জেনে নেই -

নিম

নিম ঔষধিগুণে ভরা একটি উদ্ভিদ। নিম ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এছাড়াও চর্ম রোগের চিকিৎসা করা হয় নিম দিয়ে। বিভিন্ন ধরনের ক্ষত সাড়াতে নিমের রস ব্যবহার করা হয়। এটি চিকেন পক্সের জন্য অনেক উপকারী। কারণ নিমে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে।

ব্যবহারবিধিঃ পোকা কামড়ানোর ক্ষত দূর করতে নিমের রস এবং হলুদের রস একসাথে ব্যবহার করতে হবে। দাঁতের ব্যথার জন্য রক্ত পড়াদূর করার জন্য নিমের ডাল ব্যবহার করা হয়। দাঁত ব্রাশ করতে কয়েকদিন নিমের ডাল ব্যবহার করলে এ সমস্যাগুলো দূর হয়ে যায়। চর্ম রোগের সমস্যা দূর করতে নিমের পাতা পানিতে দিয়ে এবং সেই পানি ফুটিয়ে তারপর ঠান্ডা করে ব্যবহার করলে সমস্যা দূর হয়ে যায়। মেয়েদের মাথার উকুন দূর করতে নিমের রস মাথায় মাখতে পারেন। তাহলে খুব সহজেই উকুন দূর হয়ে যাবে।

তুলসী

তুলসী সবার কাছে অতি পরিচিত একটি ঔষধি গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ। প্রায় বাড়িতে এই উদ্ভিটি দেখা যায়। সর্দি কাশি দূর করতে তুলসী অতুলনীয়। এটি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।

ব্যবহারবিধিঃ সর্দি কাশি দূর করার জন্য তুলসীর রস খেতে হবে। তুলসীর রস মধুর সাথে যুক্ত করে খেলে দ্রুত উপশম পাওয়া যায়। তুলসী পাতা ভাজি করে ঘি মিশিয়ে খেলে মস্তিষ্কের ক্ষমতা অনেকগুণ বেড়ে যায়।

চিরতা

চিরতার আরেকটি নাম হচ্ছে কালো মেঘ। অনেক জায়গায় কালো মেঘ নামে এটি পরিচিত। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি খুবই উপকারী। এছাড়াও চিরতা পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে থাকে। জ্বর দূর করতে খুবই কার্যকরি চিরতা।


ব্যবহারবিধিঃ চিরতা পাতা গুড়া করে পানির সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পান করতে হবে। তাহলে পেটের অনেক সমস্যা দূর হয়ে যাবে। এছাড়াও এই পাতা এক গ্লাস পানির মধ্যে রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে ছেকে নিয়ে সেই পানি পান করা যায়।

মেন্দা

এই গাছটি বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন নামে পরিচিত যেমন চাপাইত্তা, খাড়াজোড়া, কারঝুকি ইত্যাদি। এটি পেটের বিভিন্ন ধরনের পিড়া দূর করতে সাহায্য করে। ক্ষতিকর ব্যাটারির বিরুদ্ধে লড়াই করে এই উদ্ভিদটি।

ব্যবহারবিধিঃ পেটের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা যেমন রক্ত আমাশয় এর পাতা বেটে পানিতে মিশিয়ে দিনে দুইবার খেলে এ সমস্যা দূর হয়ে যায়। এই গাছের বাকল ও পাতা দুটোই ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বুকের ব্যথায় এর ছাল রস করে মালিশ করলে ব্যথা দূর হয়ে যায। হাত পায়ের হাড় ভেঙে গেলে এই ছালের মিশ্রণ প্লাস্টাডিং এ ব্যবহার করা হতো ।

ভাট ফুল বা বনজুই

এই উদ্ভিদটি পেটের সমস্যা দূর করতে অধিকার কার্যকরী। পেটের বিভিন্ন সমস্যা যেমন ডায়রিয়া, বমি বমি ভাব, আমাশয় ইত্যাদি। এটি কৃমিনাশক হিসাবে ব্যবহৃত হয়। ভাট ফুল চর্মরোগ বিশেষ উপকারী।

ব্যবহারবিধিঃ পেটের সমস্যা দূর করতে ভাট ফুলের পাতার রস হলুদের রসের সাথে মিশিয়ে খেতে হবে। চর্ম রোগের ক্ষেত্রে এর ফুল বেটে ক্ষতস্থানে লাগাতে হবে এবং এর রস দিয়ে মালিশও করতে হবে। এই গাছের পাতা ও ফুল দুটোই ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

পাথরকুচি

পাথরকুচির উপকারিতা সম্পর্কে নানা ধরনের মন্তব্য শোনা যায়। যেমন পাথরকুচি পাতা খেলে কিডনির পাথর ভেঙে যায়। কিন্তু এটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়নি। তবে পাথরকুচির অন্যান্য অনেক উপকারিতা রয়েছে। জ্বর ও পেটের সমস্যা দূর করতে অত্যন্ত কার্যকর এটি। এটি শরীরের এলার্জির সমস্যাও দূর করে থাকে। ঠান্ডাজনিত সমস্যা অল্প সময়ে নিরাময় করে পাথরকুচি।

ব্যবহারবিধিঃ পাথরকুচি পাতা বেটে খেলে জ্বর ও পেট ফাঁপা দূর হয়ে যায়। এলার্জি সমস্যা দূর করতে এই পাতা বেটে শরীরে লাগালে এলার্জি সমস্যা কমে যাবে।

কালোকেশী

কালোকেশী একটি গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। এটি চুলের যত্নে বহুকাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি ব্যবহারে দ্রুত চুল পড়া কমিয়ে দেয় সেই সাথে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। চুলের যত্নে এটি নিয়মিত ব্যবহার করলে চুল অনেক স্বাস্থ্য উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। মেয়েদের মাসিকের সমস্যা ও এটি খুব কার্যকরী।

ব্যবহারবিধিঃ এ পাতার রস চুলের গোড়ায় ভালোভাবে মাখতে হবে তারপর কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে। এ পাতার রস করে খেলে মেয়েদের মাসিকের সমস্যা দূর হয়ে যায়।

অর্জুন

অর্জুন গাছকে আমরা ঔষধি গাছ হিসেবে অনেকেই চিনি। এই গাছের মূল, পাতা, ছাল, ফুল ও ফল ইত্যাদি সবকিছুই ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। হৃদরোগ ও বুকের ব্যথা উপশমে এই গাছের ছাল বিশেষভাবে কার্যকারী এবং চর্ম রোগে অনেক উপকারী। হাড় ভেঙে গেলে বা মচকে গেলে এই গাছের ছাল ব্যবহার করলে ভাল ফল দিয়ে থাকে।

ব্যবহারবিধিঃ অর্জুনের ছাল গুড়া করে খেলে বুকের ব্যথার উপশম হয়। এর ছাল বেটে মচকে যাওয়া হাড়ে বা ভেঙে যাওয়া হাড়ে রসুনের সাথে মিশিয়ে লাগাতে হবে।

বাসক

ঠান্ডা জনিত সমস্যা দূর করতে এই উদ্ভিদ খুবই উপকারী। এ পাতার রস খেলে খুব তাড়াতাড়ি সর্দি কাশি উপশম হয়। এটি ফুসফুসের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে ফুসফুসকে ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ব্যবহারবিধিঃ বাসকের পাতা পানিতে দিয়ে সেই পানি ফুটিয়ে পান করলে ঠান্ডা জনিত সমস্যা দূর হয়ে যায়। সরাসরি বাসকের পাতার রস হালকা গরম করে খেলে কাশি এবং জ্বরে ভালো ফলাফল দেয়।

জবা

মেয়েদের মাসিকের সমস্যা এবং শ্রাবজনিত সমস্যা দূর করে থাকে জবা ফুল। জন্ডিসের সমস্যা দূর করে লিভার সুস্থ রাখতে এর কার্যকারিতা অনেক।

ব্যবহারবিধিঃ মাসিকের সমস্যা দূর করতে হলে জবা ফুলের রস করে খেতে হবে। জবা ফুলের পাতার জুস করে খেলে জন্ডিসের সমস্যা দূর হয়ে যায়।

লজ্জাবতী

লজ্জাবতী একেকজনের কাছে একেক নামে পরিচিত। লজ্জাবতীকে লাজুক লতা বা অঞ্জলিকারিকাও বলে থাকেন অনেক অঞ্চলে। কারণ এই গাছে হাত দেওয়ার সাথে সাথে পাতাগুলো চুপসে যায়। এই গাছের শিকড় ফুল ও পাতা ঔষধ হিসাবে ব্যবহার করা হয়। এটি ডায়রিয়া সারাতে সক্ষম। পচা ঘা দূর করে এবং হাড়ের ব্যথা ও জ্বর নিরাময় করতে সাহায্য করে।

ব্যবহারবিধিঃ এই গাছের শিকড় বেটে রস করে খেলে ডায়রিয়ার সমস্যা দূর হয়ে যায়। শরীরের যে জায়গায় ঘা সেখানে এই গাছের পাতা বেটে লাগালে এই ঘা ধীরে ধীরে সেরে ওঠে। এই গাছের পাতা ও শিকড় একসাথে ব্যবহার করলে হাড়ের ব্যথা ও বাতজ্বর দূর হয়ে যায়। এছাড়াও এই মিশ্রণটি ব্যবহারে হাত পায়ের জালা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

দূর্বা ঘাস

এই ঘাস সব জায়গায় দেখা যায়। রাস্তার ধারে, মাঠে, বনে জঙ্গলে সব জায়গায় ঘাস দেখা যায়। এই ঘাসের ঔষধিগুণ সম্পর্কে অনেকের জানা থাকলেও সবার জানা নেই। রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে এই ঘাসের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। এছাড়াও এর চর্ম রোগের ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

ব্যবহারবিধিঃ কোন জায়গায় কেটে গেলে সেখানে রক্তক্ষরণ হলে সে রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে এই ঘাসটি ভালোভাবে বেটে ক্ষত জায়গায় লাগাতে হবে তাহলে রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়ে যাবে। চর্ম রোগের ক্ষেত্রে এই ঘাস বেটে তার রস ক্ষত জায়গায় ব্যবহার করলে ধীরে ধীরে এ সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

ধুতুরা

ধুতুরা গাছ অনেকেই চিনতে পারবেন না। কেননা এটি প্রায় বিলুপ্তির পথে। আগে এটি বিভিন্ন জায়গায় দেখা যেত কিন্তু বর্তমানে কোথাও তেমন দেখা যায় না। এটি এজমা সারাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই গাছের পাতা ঔষধ হিসাবে ব্যবহার করা হতো।

ব্যবহারবিধিঃ ধুতরার পাতা শুকিয়ে গুড়া করে সেটা আগুনে দিয়ে ধোঁয়া তৈরি করে এর গন্ধ হাঁপানি ওজমার জন্য আরাম পাওয়া যায়।

থানকুনি

থানকুনি সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি। এটি একটি ওষুধি গাছ যা পেটের বিভিন্ন রোগ নিরাময় করতে সক্ষম। এর পাতা খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়, কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, ক্ষত নিরাময় করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দেয়।

ব্যবহারবিধিঃ পেটের সমস্যা দূর করতে এ পাতা রস করে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেতে হবে। এটি ভর্তা করেও খাওয়া যায়। এ পাতা পেস্ট করে মুখে লাগালে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।

স্বর্ণলতা

এই গাছের কোন পাতা নেই। এটি আলোক লতা নামেও বিভিন্ন অঞ্চলে পরিচিত। জন্ডিস, তলপেট ব্যথ এবং ক্ষত সারাতে এর কার্যকারিতা অনেক। এটি পিত্ত নাশক ও কৃমিনাশক হিসেবে কাজ করে থাকে। এটি ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া দূর করতে খুবই কার্যকরী। তবে গবেষণা করে গবেষকরা বলেছেন এই লতার রস গর্ভপাত এবং প্রজনন ক্ষমতা কমাতে পারে।

ব্যবহারবিধিঃ এই লতা সিদ্ধ করে পানি খেলে পেটে সমস্যা দূর হয়ে যায়। ক্ষত সারাতে এই লতা রস করে ক্ষত স্থানে লাগাতে হয়।

শতমূলী

শতমূলী একটি উচ্চ মানের ফলিক এসিড ও পটাশিয়ামের মূল উৎস হিসেবে বিবেচিত। এতে প্রচুর পরিমানে ভাইবার ও ভিটামিন বি রয়েছে। এটি প্রচুর পরিমাণে শরীরে শক্তি বৃদ্ধি করে এবং বন্ধ্যাত্ব নিরাময় করে। উচ্চ রক্তচাপ কমাতেও এই উদ্ভিদের গুণ অনেক।

ব্যবহারবিধিঃ শতমূলের ছলের রসের সঙ্গে রসুন বেটে মিশিয়ে ব্যথার স্থানে লাগালে ব্যথা দূর হয়ে যায়। শতমূলের রস তিন থেকে চার চা চামচ প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে খালি পেটে খেলে আমাশয় ভাল হয়ে যায়।

বিলিম্বি

কামরাঙ্গা জাতীয় এই ফল ডায়াবেটিকস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। এটি চুলকানি নিরাময় করে এবং চামড়া ফাটাও দূর করে। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা যৌন রোগের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন এই গাছের ফল ও পাতার মাধ্যমে। তবে এর ফল ও পাতা কিডনি রোগীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

ব্যবহারবিধিঃ চুলকানি দূর করতে এর পাতা বেটে গায়ে লাগালে চুলকানি নিরাময় হয়। বিলিম্বি গাছের ফল খেলে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ কমে যায়। এই গাছের ফুল পানির সাথে ফুটিয়ে খেলে সর্দি কাশি দূর হয়ে যায়।

সজনে

উচ্চ রক্তচাপ ও লিভারের সমস্যা দূর করতে সজনে পাতা ও সজনে ব্যবহার করা হয়। সজনে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। এই গাছের পাতা ও ফল অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। এই গাছের পাতা ব্যথা নিরাময় করতে খুবই কার্যকরী। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে সজনে গাছের পাতা।

ব্যবহারবিধিঃ সজনে বিভিন্নভাবে তরকারি হিসেবে রান্না করে খাওয়া হয়। এর পাতাও রান্না করে খাওয়া হয়। এর পাতা ভেজে খেলে শরীরে বিভিন্ন ব্যাথা উপশম করে এবং মুখে রুচি ফিরে আসে। রসুনের সাথে সজনে গাছের পাতা একসাথে মিশিয়ে খেলে বাতের ব্যথা দূর হয়ে যায়।

তোকমা

তোকমা শরীরে বিভিন্ন উপকারে আসে। এটি হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। কারণ এর মধ্যে রয়েছে এমন উপাদান যেগুলো শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে শরীরকে সুস্থ রাখে। এটি শরীরে তাপমাত্রা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ব্যবহারবিধিঃ তোকমা এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়ে যায়। এছাড়াও এটি এক গ্লাস দুধের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়। তোকমাদানা ও বাদাম একসাথে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে মিশিয়ে খেলে শরীর শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

আকন্দ

আকন্দ উদ্ভিদটি আমাদের অনেকের কাছেই পরিচিত। এই গাছটি আমরা সবাই চিনে থাকলেও এর উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই জানিনা। এই গাছের রয়েছে বিভিন্ন উপকারিতা। এটি নানা ধরনের রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এটি পচা ঘা সারাতে খুবই কার্যকারী। সর্দি কাশি নিরাময়ে এর ভূমিকা অনেক। খেলতে গিয়ে পা মুচকে গেলে যে ব্যথা হয় সেই ব্যথা নিরাময় করতে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে।

ব্যবহারবিধিঃ এই গাছের আঠার সাথে চার গুণ পরিমাণ সরিষার তেল মিশিয়ে গরম করে নিতে হবে। তারপর গরম তেল কাচা হলুদের রসের সাথে মিশিয়ে পচা ঘায়ে লাগালে খুব সহজেই ঘা ভালো হয়ে যায়। দাঁতে ব্যথা করলে আকুন্দ গাছের আঠা তুলোয় নিয়ে ব্যথা স্থানে লাগালে দাঁতে ব্যথা দূর হয়ে যায়। ব্যথা দূর করতে আকন্দ পাতা গরম করে ব্যথা স্থানে শেক দিলে ব্যথা ক্রমশ কমে যায়। বিষাক্ত পোকা কামড় দিলে রস করে লাগালে পোকার কামড়ানো বিষ দূর হয়ে যায়।

নিশিন্দা

নিশিন্দা গাছটি আমরা অনেকেই চিনি। এটি একটি ঔষধি গাছ। এই গাছে ফুল ফল পাতা ও মূল সবকিছুই উপকারী। বিভিন্ন রোগ সারাতে এই গাছে ভুমিকা অতুলনীয়। সর্দি-কাশিসহ ঠান্ডা জনিত সকল সমস্যা দূর করে থাকে নিশিন্দা। এটি মরণব্যাধি ক্যান্সারের প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। রান্নাঘরে পোকা দূর করতে নিশিন্দার ডাল যথেষ্ট কার্যকরী ভূমিকা পালন।

ব্যবহারবিধিঃ পা মচকে গেলে নিশিন্দা পাতা গরম করে ব্যাথার স্থানে লাগিয়ে দিন। এভাবে কয়দিন ব্যবহার করলে ব্যথা দূর হয়ে যাবে। শরীরের কোন অংশে টিউমার দেখা দিলে নিশিদার পাতা ভালোভাবে বেটে গরম করে টিউমারের স্থানে লাগালে ভালো ফল পাওয়া যায়।

লেখকের মন্তব্য

উপরের আলোচনার মাধ্যমে আমরা আপনাকে কয়েকটি ঔষধি গাছের গুনাগুণ সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করছি কিছুটা হলেও এই গাছগুলোর উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। প্রিয় পাঠক, এ আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url