মাইক্রোওয়েভ ওভেনএর সুবিধা ও অসুবিধা - মাইক্রোওয়েভ ওভেনের ব্যবহার জেনে নিন

সুপ্রিয় পাঠক, আপনি কি মাইক্রোওয়েভ ওভেনের সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে মাইক্রোওয়েভ ওভেনের সুবিধা, অসুবিধা ও মাইক্রোওয়েভ ওভেন ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
মাইক্রোওয়েভ ওভেনএর সুবিধা ও অসুবিধা
এই আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন মাইক্রোওয়েভ ওভেনের খাবার গরম করার সঠিক নিয়ম ও মাইক্রোওয়েভে ওভেনে খাবার গরম করতে কত সময় লাগে ইত্যাদি।

ভূমিকা

মাইক্রোওয়েভ ওভেন আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে অনেক সহজ করে দিয়েছে। যদি আমাদের ব্যস্ত জীবনের বিরাট সঙ্গী। মাইক্রোওয়েভ ওভেন ব্যবহারের সুবিধা এবং অসুবিধা দুটোই রয়েছে। বর্তমান সময়ে যারা দ্রুত খাবার গরম এবং রান্না করতে চান তারাই মূলত মাইক্রোওয়েভ ওভেন ব্যবহার করে থাকেন। স্বাদ ও গুণাগুণ অটুট রেখে সহজে রান্না করার পদ্ধতি হচ্ছে মাইক্রোওয়েভ ওভেন।


এটি দিয়ে যেমন ঝটপট খাবার গরম করা যায় তেমনি বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু রান্নাও করা যায়। অনেক ধরনের সুবিধা হয়ে থাকে এই যন্ত্রটি দিয়ে। সৌখিন এবং কর্মব্যস্তময় মানুষরাই ওভেন ব্যবহারে আগ্রহী। এতে কোন কালি বা ধোয়া কোন কিছুই হয় না বলে যেকোনো জায়গায় এটি রাখা যায়। মাইক্রোওয়েভ ওভেন বিভিন্ন ডিজাইন এবং বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে।

এগুলো দেখতেও অত্যাধুনিক। এ আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা মাইক্রো ওয়েব ওভেনের সুবিধা এবং কিছু অসুবিধা রয়েছে সেগুলো আলোচনা করব। আপনি যদি মাইক্রোওয়েভ ওভেন সম্পর্কে না জেনে থাকে তাহলে অবশ্যই জেনে নিন-

মাইক্রোওয়েভ ওভেন এর সুবিধা

মাইক্রোওয়েভ ওভেনের সবগুলো সুবিধা সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানিনা। যারা এই সুবিধাগুলো সম্পর্কে আমরা আপনাদের সামনে আলকপাত করব। তাহলে চলুন জেনে নেই-

অল্প সময়ে খাবার গরম করাঃ ঠান্ডা খাবার খেতে অনেকেই পছন্দ করেন না। সেজন্য খাবার গরম করা জরুরী হয়ে পড়ে। এছাড়াও ঠান্ডা খাবারে যেমন ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয় সেই খাবার গরম করলে তা ধ্বংস হয়ে যায়। মাইক্রোওয়েভ ওভেন খুব তাড়াতাড়ি খাবার গরম করে থাকে। অল্প সময়ের মধ্যে খাবার গরম হয় বলে সময় অনেক সাশ্রয় হয়

রান্নায় সময় কম লাগেঃ মাইক্রোওয়েভ ওভেনে বিভিন্ন ধরনের খাবার রান্না করা যায়। বাসায় ওভেন থাকলে রেস্টুরেন্টের অনেক খাবারই সহজে তৈরি করা যায়। ওখানে যে খাবারগুলো রান্না করা যায় সেগুলো রান্না করতে খুবই কম সময় লাগে। কেননা মাইক্রোওয়েভ ওভেনের প্রতিফলিত রশির মাধ্যমে রান্নার উপাদানগুলোতে অনেক কম্পন হয় এবং সেই সাথে দ্রুত রান্না সম্পন্ন হয়।

পুষ্টিগুণ ও স্বাদ অটুট থাকেঃ ওভেনে খাবার রান্না করলে বা গরম করলে পুড়ে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকে না। নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রান্না হয় বলে স্বাদ এবং পুষ্টিগুণ অটুট থাকে। খাবারের স্বাদও নষ্ট হয় না।

ডিফোস্ট করেঃ অনেক সময় সময়ের স্বল্পতার কারণে অতিরিক্ত খাবার রান্না করে ডিপ ফ্রিজে রেখে দেওয়া হয়। সেই খাবারগুলো অনেক সময় দ্রুত গরম করে খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে । সে সময় সবচেয়ে ভালো কার্যকরী উপায় হচ্ছে মাইক্রোওয়েভ ওভেন। কারণ এটি অল্প সময়ের মধ্যে বরফ গলিয়ে খাবারগুলো গরম করে ফেলে।

বিদ্যুৎ শাস্ত্রয়ীঃ অল্প সময়ে রান্না হয় বলে এটি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। এছাড়াও শক্তি কম খরচ হয় এটিতে। মাইক্রোওয়েভ ওভেনের শক্তি থাকে ৬০০ থেকে ১২০০ ওয়াটের মাঝখানে।

সহজে পরিষ্কারযোগ্যঃ মাইক্রোওয়েভ ওভেনে রান্না করার পর খুব সহজেই পরিষ্কার করা যায়। এটি পরিষ্কার কোন ঝামেলা নেই। এছাড়াও এখানে যে পাত্রতে রান্না হয় সে পাত্র পরিষ্কার করার কোন ঝামেলা নেই কারণ তাতে কোন খাবার লেগে যায় না।

সময় নির্দিষ্টকরনঃ যতক্ষণ সময় আপনি খাবারে তাপ দিতে চান বা রান্না করতে চান তা নির্ধারণ করে দেওয়া যায় এখানে। নির্দিষ্ট সময় পার হলে অটোমেটিকভাবে তাপ দেওয়া বন্ধ করবে।

মাইক্রোওয়েভ ওভেনের অসুবিধা

মাইক্রোওয়েব ওভেনের যেমন সুবিধা রয়েছে তেমনি কয়েকটি অসুবিধাও রয়েছে। তাহলে চলুন এর অসুবিধাগুলো জেনে নেওয়া যাক -
  • মাইক্রোওয়েভ ওভেনে রান্না করতে গেলে নির্দিষ্ট পাত্রের প্রয়োজন হয়। যেগুলো পাত্রকে মূলত ওভেন প্রুফ বলা হয়। ওভেন প্রুফ পাত্র ছাড়া ওভেন না ব্যবহার করাই ভালো। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় পড়তে পারেন।
  • ওভেনের কোন সমস্য দেখা দিলে সেখানে রেডিয়েশন লিকেজ তৈরি হয়। আর এই রেডিয়েশন লিকেজ শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। যেমন ইমিউনিটি দুর্বল, হার্ট রেট বৃদ্ধি, দৃষ্টিশক্তি সমস্যা এবং ক্যান্সারের কোষ গঠন করতে পারে।
  • মাইক্রোওয়েব ওভেনে গরম করা খাবারের ক্ষেত্রে অনেক সময় ফুড পয়জেনিং দেখা দিতে পারে। বড় সাইজের খাবারগুলো এখানে গরম করা উচিত নয়। সে খাবারগুলো সম্পূর্ণভাবে গরম হয় না। যার ফলে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • এর সবচেয়ে বড় অসুবিধা হচ্ছে এখানে সব ধরনের খাবার তৈরি করা যায় না। নির্দিষ্ট কয়েকটি খাবার তৈরি করা যায় বলে অনেকের কাছে এটি সুবিধাজনক নাও হতে পারে।
  • মাইক্রোওয়েভ ওভেনে গরম করা খাবার শিশুদের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়। শিশুদের খাবার সবসময় চুলায় তৈরি করে খাওয়ানো উচিত।
  • খাবার রান্না বা গরম পরার সাথে সাথে এটি পরিষ্কার করতে হবে। তা না হলে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া এর মধ্যে বাসা বাঁধবে বা অন্য খাবার গরম করতে চাইলে তার মধ্যে প্রবেশ করবে। সব সময় পরিষ্কার করে রাখা একদিক ঝামেলার বিষয়।

মাইক্রোওয়েভ ওভেনের ব্যবহার

রান্নার কাজ সহজ করার জন্য কয়েকটি ইলেকট্রনিক যন্ত্র রয়েছে তার মধ্যে মাইক্রোওয়েভ ওভেন ওভেন অন্যতম । এটি যেমন দ্রুত খাবার গরম করে তেমনি রান্না তৈরি করতেও সক্ষম। মাইক্রোওয়েভ ওভেন ওভেনে যেগুলো খাবার রান্না করা যায় সেগুলো হচ্ছে কেক, পুডিং, ডেজার্ট, চিকেন তন্দুরি, গ্রিল ইত্যাদি। এখানে যেগুলো ফাংশন রয়েছে সেগুলোর কারণে রান্না করা আরও সহজ হয়ে ওঠে।

যে অপশনগুলো রয়েছে- ডি ফ্রস্ট, প্রি হিট এবং অটোকুক ইত্যাদি। তবে বেশিরভাগ মানুষ অটোকুক অপশনটি ব্যবহার করে রান্না করে। আপনি যে খাবার রান্না করতে চান সেই খাবারের প্রয়োজন অনুযায়ী অপশন গুলোতে সিলেক্ট করে স্টার্ট বাটনে চাপ দিতে হবে। তাহলে আপনার রান্না খুব সহজেই হয়ে যাবে। তবে ওভেনে রান্না করার আগে আপনাকে অবশ্যই ফাংশনগুলো সম্পর্কে অবগত হতে হবে।

তাহলে ওভেনে রান্না করা আপনার জন্য সহজ হবে। অনেক ধরনের মাইক্রোওয়েব ওভেনে চাইল্ড লক রয়েছে যেগুলো ব্যবহার করে নিশ্চিন্তে রান্না কাজ সেরে নেওয়া যায়। কারণ প্রতিটি বাসাতে ছোট বাচ্চা বা শিশু থাকে। সেজন্য চাইল্ড লক ব্যবহার করা অতি জরুরী।

মাইক্রো ওভেনে খাবার গরম করার সঠিক নিয়ম

রান্না করা খাবার গরম করার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে ওভেন। অতি তাড়াতাড়ি খাবার গরম হয়ে যায় এই যন্ত্রে। তবে ওভেনে খাবার গরম করার জন্য সঠিক নিয়ম জানা আমাদের জন্য জরুরী। তাহলে চলুন ওভেনে খাবার গরম করার সঠিক নিয়ম জেনে নেই-

যে খাবারটি ওভেনে গরম করতে চান সে খাবারটি ওভেনের ভিতরে থালার উপরে রাখুন। খাবার গরম করতে গিয়ে খাবারটি অনেকে থালার মাঝখানে রাখে। কিন্তু খাবারটি রাখা উচিত থানার একটি কিনারায়। থালার মাঝখানে খাবার রাখলে খাবারের কোন অংশ অনেক গরম হয় আবার কোন অংশ ঠান্ডা থেকে যায়। সেজন্য পুষ্টিবিদরা থালার এক কিনারায় খাবারটি রেখে দেওয়ার কথা বলেন।


ওভেনের মধ্যে যে থালাটি রাখা থাকে সেটি ঘোরার ব্যবস্থা করা আছে। যাতে করে মাইক্রোওয়েভ ওভেন খাবারের সবদিকে বা চারপাশে সমানভাবে তাপ পড়তে পারে। কিন্তু থালার মাঝখানে খাবারটি রাখলে তা সমানভাবে পড়ে না, বরং এটি থালার একটি কিনারায় রেখে দিলে খাবারটি সমানভাবে এবং ভালোভাবে গরম হয়।

ওভেনে খাবার গরম করে খেতে হলে ভালোভাবে গরম করে খেতে হবে। তাছাড়া এটি স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। কারণ আবার ভালোমতো গরম না হলে ফুড পয়জনিং হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।

মাইক্রোওয়েব ওভেন সম্পর্কিত কয়েকটি প্রশ্ন এবং উত্তর

প্রশ্নঃ মাইক্রোওয়েব ওভেনে খাবার গরম করতে কত সময় লাগে?

উত্তরঃ মাইক্রোওয়েব ওভেন খাবার গরম করতে সাধারণত এক থেকে তিন মিনিট সময় লাগে তবে খাবারে ধরন অনুযায়ী এর সময় কিছুটা কম বা বেশি লাগতে পারে। যেমন কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো কম তাপমাত্রা হলেই গরম হয়ে যায় সেগুলোতে কম সময় দিলেই হবে। আবার যেগুলো খাবার বেশি তাপমাত্রার প্রয়োজন সেগুলোতে বেশি সময় দিতে হবে।

প্রশ্নঃ মাইক্রোওয়েভ ওভেনে স্যুপ গরম করতে কত সময় লাগে?

উত্তরঃ মাইক্রোওয়েভ ওভেনে খাবার গরম করতে দুই থেকে তিন মিনিট সময় লাগে। তবে স্যুপ গরম করতে হলে কিছু নিয়ম অবলম্বন করতে হবে যেমন স্যুপ গরম করতে দেওয়ার পর এক মিনিট হয়ে গেলে অফ করে নেড়ে দিয়ে আবার অন করে দিতে হবে। এরূপ এক মিনিট পর পর থেমে থেমে নেড়ে দিতে হবে।

প্রশ্নঃ মাইক্রোওয়েভ ওভেন কি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর?

উত্তরঃ মাইক্রোওয়েভ ওভেন সবচেয়ে সুবিধাজনক, নিরাপদ এবং কার্যকরী উপায়। মাইক্রোওয়েভ ওভেনে খাবার রান্না করা বা গরম করা খাবারের ক্ষতিকর কোন কিছু প্রমাণ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে পুষ্টিবিদরা বলেন এই খাবার অতিরিক্ত গরম করা বা কম গরম করে খাওয়া উচিত নয়। সঠিক নিয়মে গরম করে বা রান্না করে খেলে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক নাও হতে পারে।

লেখক এর মন্তব্য

রান্না করার বা খাবার গরম করার সবচেয়ে সহজ ও সুবিধাজনক পদ্ধতি হচ্ছে মাইক্রোওয়েব ওভেন। এ সম্পর্কে আমরা উপরের আলোচনায় কিছুটা ধারণা পেয়েছি। তবে ওভেন ব্যবহারের সঠিক নিয়ম জেনে তারপরে রান্না করা উচিত। সুপ্রিয় পাঠক, এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধু বান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url