মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি যোগ্যতা - মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার খরচ কেমন জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, আপনি কি মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তির যোগ্যতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনাকে সাহায্য করবে। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাকে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তির যোগ্যতা এবং মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার খরচ কেমন সে সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি যোগ্যতা
এ আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন বাংলাদেশে মেরিন একাডেমি কয়টি, মেরিন ইঞ্জিনিয়ারদের কাজ কি, মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি এবং মেরিন ইঞ্জিনিয়ারদের জীবন ইত্যাদি।

ভূমিকা

শিক্ষা জীবনে প্রত্যেকের একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকে। সে জীবনের লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করেন। ছাত্র জীবনে কেউ ডাক্তার বা কেউ ইঞ্জিনিয়ার পেশাকে বেশি বেছে নেই। ঠিক সেরকমই একটি পেশা হচ্ছে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার। জীবনে ভালো কিছু পাওয়ার লক্ষ্যে এবং উন্নত জীবনযাপন করার উদ্দেশ্যেই বেশিরভাগ শিক্ষার্থী মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার ক্ষেত্রে ঝুঁকে পড়েছে।


এ পেশাকে কেন্দ্র করে একজন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার গোটা বিশ্ব ভ্রমণের সুযোগ পেয়ে থাকে। মেরিন ইঞ্জিনিয়ার প্রতি মাসে ভালো পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে পারে। বর্তমানে এই পেশাটি অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় তরুণদের কাছে বেশি জনপ্রিয়। সেজন্য অনেকেই মেরিন ইঞ্জিনিয়ারদের কি ধরনের কাজ করতে হয়, তাদের বেতন কত এবং ইঞ্জিনিয়ার হতে কি কি যোগ্যতা প্রয়োজন এ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী।


বিভিন্ন ধরনের পণ্য এক দেশ থেকে আরেক দেশে সরবরাহ করা হয় জাহাজের মাধ্যমে এবং এর জাহাজের সম্পূর্ণ রক্ষণাবেক্ষণ করা এই ইঞ্জিনিয়ারদের কাজ। এছাড়াও যে জাহাজের মাধ্যমে এগুলো সরবরাহ করে থাকে সেই জাহাজ ইঞ্জিনের কোন সমস্যা দেখা দিলে তা পর্যবেক্ষণ করার দায়িত্ব থাকে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারদের উপর।

মেরিন একাডেমিতে ভর্তি যোগ্যতা

মেরিন একাডেমিতে ভর্তি হতে কি কি যোগ্যতার প্রয়োজন এ সম্পর্কে বিস্তারিত আপনাদের সামনে তুলে ধরব। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক-
  • ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩ সর্বোচ্চ বয়স ২২ বছর হতে হবে
  • মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ হতে হবে
  • উভয় পরীক্ষায় ন্যূনতম জিপিএ ৩.৫০ থাকতে হবে
  • উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পৃথকভাবে গণিত এবং পদার্থ বিষয়ে ন্যূনতম জিপিএ ৩.৫০ থাকতে হবে এবং ইংরেজিতে ৩.০০ থাকতে হবে
  • ও লেভেলের শিক্ষার্থীদের পাঁচটি বিষয়ের মধ্যে নূন্যতম তিনটি বিষয়ে এ গ্রেড এবং দুইটি বিষয়ে বি গ্রেড থাকতে হবে
  • এ লেভেলের জন্য দুটি বিষয়ের ন্যূনতম বি গ্রেড উত্তীর্ণ হতে হবে এবং উভয় পরীক্ষায় গণিত ও পদার্থ বিজ্ঞানসহ হতে হবে
  • শারীরিক যোগ্যতার ক্ষেত্রে নূন্যতম উচ্চতা পুরুষদের ক্ষেত্রে ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি এবং মহিলাদের ৫ ফুট ২ ইঞ্চি হতে হবে
  • আবেদনকারীকে অবশ্যই অবিবাহিত হতে হবে
  • নাগরিকত্ব বাংলাদেশের পুরুষ ও মহিলা নাগরিক হতে হবে

বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি কয়টি

বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি পাঁচটি। এর মধ্যে চারটি নতুন এবং একটি পুরাতন। চারটি নতুন মেরিন একাডেমি রয়েছে বরিশাল, রংপুর, সিলেট এবং পাবনা। চট্টগ্রামে রয়েছে পুরনো মেরিন একাডেমি। সবগুলো মিলিয়ে বাংলাদেশের সর্বমোট পাঁচটি মেরিন একাডেমী রয়েছে। এসব মেরিন একাডেমির মাধ্যমে দক্ষ নাবিক গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।


দেশে যদি দক্ষ নাবিক তৈরি করা সম্ভব হয় তাহলে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। দক্ষ নাবিকরা শুধুমাত্র বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে না বরং তারা দেশের বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবেলায় মানবিক ভূমিকা পালন করে।

উদাহরণস্বরূপ সাম্প্রতিক সিলেটে ভয়াবহ বন্যায় মেরিন একাডেমীগুলো বন্যার্তদের আশ্রয় দিয়ে মানবিক ভূমিকা পালন করেছে।

মেরিন ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন কেমন

মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করার পর প্রথম অবস্থাতেই তারা ভালো বেতনের চাকরি পেয়ে থাকে। দেশী জাহাজে চাকরি হলে বেতন পায় ২০০ থেকে ৩০০ ডলার। বিদেশি জাহাজে চাকরি হলে ৪০০ থেকে ৫০০ ডলারের মত প্রাথমিক বেতন পেয়ে থাকে। এরপর অভিজ্ঞতা অনুযায়ী এ বেতন বৃদ্ধি পেতে থাকে। শুরুর দিকে চাকুরী পেতে কিছুটা সময় লাগে।

কিন্তু একবার যে কোন জাহাজে চাকরি হলে সে অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে অন্যান্য জাহাজে মোটা অংকের বেতনের চাকরি পেয়ে থাকে। এসব চাকরি নির্দিষ্ট মেয়াদের হয়ে থাকে। মেয়াদ শেষ হলে সেখান থেকে অন্য জাহাজের চাকরিতে যোগ দিতে পারবে। তবে চাকরির বয়স যত বৃদ্ধি পাবে মেইন ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন তত বেড়ে যাবে।

মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং একটি উন্নত পেশা যে পেশার মাধ্যমে দেশ বিদেশে যেমন ভ্রমণ করা যায় তেমনি মোটা অংকের টাকা ইনকাম করা যায়।

মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার খরচ কেমন

পেশাগত স্বাচ্ছন্দ এবং ভ্রমণ প্রিয় তরুণদের কাছে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং খুবই পছন্দের। তবে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অনেকেই এর খরচ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। সরকারিভাবে যদি আপনি মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ পান তাহলে এর খরচ খুবই সামান্য। সর্বসাকুল্যে খরচ এক লক্ষ বা তার কিছু কম বেশি হতে পারে।

মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য বাংলাদেশে বেশ কিছু প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি রয়েছে যেগুলোতে পড়তে গেলে খরচ সরকারি তুলনায় অনেক বেশি। বেসরকারিতে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে গেলে খরচ হবে ১৫ থেকে ২০ লক্ষ টাকার মত। তবে এর খরচ কম বা বেশি হতে পারে।

মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং এর কাজ কি

বর্তমান সময়ে বহু কাঙ্ক্ষিত ক্যারিয়ার হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং। মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং হচ্ছে একই সাথে দুঃসাহসিক এবং চ্যালেঞ্জের পেশা। এ পেশার বেশির ভাগ সময় নৌপথে কাটাতে হয়। একজন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার এর কাজ মূলতঃ সমুদ্রগামী জাহাজ, নেভিগেশন সরঞ্জামের নকশা, জাহাজের রক্ষণাবেক্ষণ, নির্মাণ ইত্যাদি।

জাহাজের পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ, বিভিন্ন ধরনের যান্ত্রিক সমস্যার সমাধান করার লক্ষ্যেই মেরিন ইঞ্জিনিয়ার নিয়োজিত হয়ে থাকে। কারণ একজন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার জাহাজের সব ধরনের যান্ত্রিক সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে খুবই অভিজ্ঞ। কথা বলা হয়ে থাকে জাহাজের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নের দায়িত্ব মেরিন ইঞ্জিনিয়ারদের উপর অর্পিত থাকে।

মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি

ভর্তি পরীক্ষায় সর্বমোট নম্বর হচ্ছে ৩০০। এগুলোর মধ্যে মাধ্যমিকের প্রাপ্ত জিপিএতে ৭৫ নম্বর উচ্চ মাধ্যমিকের প্রাপ্ত জিপিএ-তে ১২৫ নম্বর এ নিয়ে সর্বমোট ২০০। ভর্তি পরীক্ষায় নৈব্যক্তিক বা এমসিকিউ পদ্ধতিতে ১০০ নম্বরের হবে। পরীক্ষায় সর্বমোট ২০০টি প্রশ্ন থাকবে পাস মার্ক হচ্ছে ৪০%। এ পরীক্ষা পদার্থবিজ্ঞান, গণিত, বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ের উপর প্রশ্ন তৈরি হবে।

ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদেরকে মৌখিক এবং শারীরিক পরীক্ষার জন্য ডেকে নেওয়া হবে। শারীরিক পরীক্ষাতে দৌড়, পুষ আপ, সাতার, রোপ আহরণ ইত্যাদি বিষয়ের উপর হবে। সবগুলো পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর আপনি মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবেন।

আপনি যদি মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে ইচ্ছুক হন তাহলে পরীক্ষার পদ্ধতিগুলো ভালোভাবে জেনে তারপর প্রস্তুতি নেওয়ার আপনার জন্য সঠিক হবে।

মেরিন ইঞ্জিনিয়ারদের জীবন

মেরিন ইঞ্জিনিয়ারদের বেশিরভাগ সময় পানিতে কাটাতে হয়। যারা সাগর পাড়ি দিতে ইচ্ছুক, কঠোর পরিশ্রমে আগ্রহী, সাহসী এবং বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্যিক জাহাজের কাজ করতে ইচ্ছুক তাদের জন্য এ পেশা খুবই পছন্দের। এ পেশায় যেমন সুবিধা রয়েছে তেমনি অসুবিধা রয়েছে। সুবিধা হচ্ছে এই চাকরিতে বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করা যায় এবং মোটামুটি পরিমাণ অর্থ উপার্জন করা যায়।

সেইসাথে পানিতে জীবন কাটানো যায়। কারণ অনেকেই পানির উপর ভেসে ভেসে জীবন কাটাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ মনে করেন। অসুবিধা হচ্ছে এ পেশায় অন্যান্য চাকরির মত ছুটি পাওয়া যায় না। দীর্ঘদিন কাজে নিয়োজিত থাকার পর ছুটি পাওয়া যায়। তবে ছুটি কাটানোর সময় বেশ দীর্ঘ হয়।

তবে এ পেশায় অসুবিধার তুলনায় সুবিধা অনেক বেশি সেজন্য বর্তমানে তরুণরা এ পেশাকে পছন্দের পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছে। মেরিন ইঞ্জিনিয়াররা পড়াশোনা শেষে চাকরী জীবনে এরকম জীবন ব্যবস্থায় অভ্যস্ত হয়ে উঠছে।

লেখক এর মন্তব্য

মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং মূলত দুঃসাহসিক এবং চ্যালেঞ্জিং একটি পেশা। যাদের সাহস অনেক বেশি বা অনেক সাহসী তারা এ পেশাকে স্বাচ্ছন্দে গ্রহণ করবে। আপনারা নিশ্চই এই আলোচনার মাধ্যমে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারদের জীবন ব্যবস্থা বা অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেয়েছে। এ বিষয়গুলো জেনে আপনি যদি এ বিষয় নিযুক্ত হতে আগ্রহী হন তাহলে মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পরতে পারেন।

প্রিয় পাঠক, এ আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url