প্রতিদিন কমলা খাওয়ার উপকারিতা - কমলা খেলে কি ঠান্ডা লাগে জেনে নিন

 প্রিয় পাঠক, আপনি কি প্রতিদিন কমলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? আসুন আজকে আমরা এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে প্রতিদিন কমলা খাওয়ার উপকারিতা ও কমলার খোসার উপকারিতা সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

প্রতিদিন কমলা খাওয়ার উপকারিতা
এই আর্টিকেলটি পড়লে আরো জানতে পারবেন কমলার খোসার উপকারিতা, কমলা কখন খেতে হবে এবং কমলার জুস খেলে কি উপকার পাওয়া যাবে ইত্যাদি।

ভূমিকা

কমলা খুবই পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি ফল। কমলাতে ভিটামিন সি এর পরিমাণ অনেক বেশি। এতে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ ভাগ ভিটামিন সি আছে। ভিটামিন সি আমাদের শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। কমলালেবু ক্যান্সার প্রতিরোধ করে, হজমের সমস্যা দূর করে এবং বমি বমি ভাব হলে সেটি থেকে মুক্তি দেয়। ডায়াবেটিসের রোগীরা নিশ্চিন্তে কমলালেবু খেতে পারেন।


কমলা সব ধরনের রোগীরা খেতে পারবেন। কমলাতে আছে ভিটামিন সি, আয়রন, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, ইত্যাদি যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। মানুষের শরীরে প্রতিদিন বিভিন্ন সমস্যা লেগেই থাকে। এই সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য প্রত্যেকে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ গ্রহণ করে। কিন্তু ওষুধ গুলো যেমন সুস্থ করে তেমনি এর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে। প্রতিদিন কমলা খাওয়ার ফলে এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে দেয় না। আমাদের প্রত্যেকেরই জানা উচিত কমলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।

প্রতিদিন কমলা খাওয়ার উপকারিতা

 কমলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বলে শেষ করা যাবে না। কমলা একটি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল ফলে এটিতে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে। কমলা খেলে যে উপকার গুলো পাওয়া যায় সেগুলো হল-
  • কমলা শারীরিক দুর্বলতা কে হ্রাস করে শরীরকে শক্তিশালী সুস্থ সবল করে তোলে।
  • কমলা কোলেস্টরেল নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে খারাপ কোলেস্টেরল পরিবর্তে ভালো কোলেস্টেরল তৈরি করে।
  • কমলালেবু ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন কমলা খাওয়ার ফলে শরীরে ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধি হতে দেয় না।
  • দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধির জন্য কমলার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিশু এবং বৃদ্ধ সবারই দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • প্রতিদিন কমলা খেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় এবং ত্বককে লাবণ্যময় করে তুলে।
  • ঠাণ্ডা বা নিউমেনিয়াজ জনিত সমস্যা কমলা খেলে দূর হয়ে যায় এবং এ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রতিদিন কমলা খাওয়া প্রয়োজন।
  • কমলায় খনিজ উপাদানের পরিমাণ অনেক বেশি তাই এটি হৃদস্পন্দন নিয়মিত করে।
  • শরীরের বিভিন্ন প্রদাহ দূর করে এবং শরীরের জমে থাকা জীবাণু ধ্বংস করে।
  • প্রতিদিন একটি করে কমলা খেলে ফুসফুস সুস্থ থাকে ফলে ফুসফুস বিভিন্ন ধরনের রোগ হয় না।
  • কমলায় ৮৭ শতাংশ পানি তাই প্রতিদিন কমলা খেলে শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়।
  • কমলায় বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও মিনারেল থাকায় এটি খেলে শরীরের পুষ্টিগুণের অভাব হয় না তাই শরীরের সুস্থতা বজায় থাকে।
  • কমলালেবু উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
  • কমলালেবু রক্ত পরিষ্কার করতে সহায়তা করে।

কমলার খোসার উপকারিতা

কমলা যেমন আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী তেমনি এর খোসাও অনেক উপকারে আসে। কমলার খোসার উপকার খুবই বেশি। কমলার খোসা থেকে যে উপকার পাওয়া যায় সেটাই ত্বকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কমলার খোসার মধ্যে অধিক পরিমাণ এসেনশিয়াল অয়েল আছে যা ত্বকের ক্যান্সার হতে দেয় না। কমলার খোসার গুড়া করে মুখে মাখলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। সুন্দর্য বৃদ্ধি করার এটি একটি প্রাকৃতিক উপাদান।

কমলার খোসা ব্যবহারের ফলে ত্বকের কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয় না। তাছাড়া এটি ব্রণ মেস্তা এবং ব্ল্যাকহেড জাতীয় কালো দাগ খুব সহজেই দূর করে। কমলার খোসার সাথে হলুদ ও দই মিশিয়ে ব্যবহার করলে আরো বেশি কাজ দেয়। এই কমলার খোসা প্রতিদিন ব্যবহার করতে চাইলে আপনি এই খোশাগুলোকে রোদে শুকিয়ে ব্লেন্ডারের মাধ্যমে গুড়া করে এয়ারটাইট বক্সে রেখে দিতে পারেন। এছাড়া কমলার খোসা শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী।

এটি শরীরে ডায়াবেটিস ও স্থূলতার মত সমস্যা দীর্ঘমেয়াদি সমাধান দিয়ে থাকে। কমলার খোসা অনেক যা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যাদের ঘুমের সমস্যা আছে তারা কমলার খোসা দিয়ে পানি গরম করে গোসল করলে অনেক রাত দূর হয়ে যায়। তাছাড়াও কমলার খোসা রান্নাঘরে করে কিচেন ক্লিনার হিসেবে কাজ করে থাকে।।

কমলা খাওয়ার নিয়ম

আসুন এই পোষ্টের মাধ্যমে আমরা কমলা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেই। কমলা একটি শীতকালীন ফল। কমলালেবু কে মৌসুমী ফল বলা হয়। আমাদের প্রতিটি খাবার নিয়ম করে খাওয়া উচিত। সেটা ফল হোক বা অন্যান্য খাবার। ঠিক কমলার ক্ষেত্রেও নিয়ম করে খাওয়া উচিত। কমলালেবু সবসময় ভরা পেটে খেতে হয়। খালি পেটে কমলা লেবু খেলে এসিডিটির মতো সমস্যা হতে পারে। যে কোন ফল খাবার খাওয়ার আধাঘন্টা পর খাওয়া উচিত সে ক্ষেত্রে কমলালেবুও ঠিক তাই।

 
চিকিৎসকরা বলেন কিছু কিছু ফল খালি পেটে খাওয়া উচিত নয় সেগুলো খেলে পেটে সমস্যা তৈরি হতে পারে তাই খাবার খাওয়ার আধা ঘন্টা পর ফল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কমলা রাতের বেলা খাওয়া ঠিক নয়। কমলায় ভিটামিন সি আছে ফলে এটি রাতে খেলে এসিডিটি হতে পারে। আসুন আমরা নিয়ম করে কমলা খায় এবং সকল পুষ্টিগুণ যেন পাই।

কমলার জুসের উপকারিতা

কমলা একটি ভিটামিন সি যুক্ত ফল। তাই কমলার জুসের উপকারিতা রয়েছে অনেক। প্রতিদিন কমলার জুস খেলে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়। কমলার জুস খেতে কেবল সুস্বাদু নয় এতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণ যা শরীরকে বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে। কমলাতে ভিটামিন সি ছাড়াও মিনারেল ও ফ্লেবোনয়েড আছে যা শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য খুবই দরকারী। কমলার জুস বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে কাজ করে যেমন -
  • ঠান্ডা জনিত সমস্যা দূর করে।
  • হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমিয়ে হার্টকে সুস্থ রাখে।
  • রোগ প্রতিরোধ বৃদ্ধি করে শরীরকে সুস্থ সবল রাখে।
  • পেটের আলসার নিরাময় করে পাকস্থলী সুস্থ রাখে।
  • ত্বক সুস্থ ও লাবণ্যময় করে।
  • বিভিন্ন ধরনের ক্ষত সারাতে সাহায্য করে।
  • শারীরিক দুর্বলতা দূর করে ভিটামিন সি এর ঘাটতি পূরণ করে।
  • হজম শক্তি বৃদ্ধি করে কোলন পরিষ্কার রাখে।
  • কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ ও স্বাভাবিক রাতে সহযোগিতা করে।
  • ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে চেহারায় তারুণ্য নিয়ে আসে।
  • লিভার পরিষ্কার করতে সহায়তা করে ইত্যাদি।

কমলা খাওয়ার অপকারিতা

কমলা খাওয়ার অনেক উপকারিতা কিন্তু কমলা খাওয়ার অপকারিতা খুব সামান্য। অতিরিক্ত কমলা খাওয়ার ফলে পেট ব্যথার মত সমস্যা হতে পারে। আমরা জানি অতিরিক্ত কোন কিছু খাওয়ায় শরীরের পক্ষে ভালো নয় সে ক্ষেত্রে কমলালেবু অতিরিক্ত খাওয়া শরীরের জন্য কিছুটা ক্ষতিকর।

অতিরিক্ত কমলালেবু খেলে যে ধরনের সমস্যা হতে পারে সেগুলো হল-বমি বমি ভাব, পেট ফুলে যাওয়া বা পেটে ব্যথা শুরু হওয়া, কিডনি রোগের জন্য সমস্যা, ঘুম কম হওয়া বা অনিদ্রা, হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাওয়া এবং পেটের অন্যান্য সমস্যা তৈরি হওয়া ইত্যাদি। তাই আমরা কমলা নিয়ম করে খাব খেলে শরীরের সুস্থতা বজায় থাকবে সেই সাথে পুরোপুরি পুষ্টিগুণ ও পাওয়া যাবে।

কমলা খেলে কি ঠান্ডা লাগে

কমলা ভিটামিন সি যুক্ত ফল। ভিটামিন সি এর ভালো উৎস এটি। অনেকের মধ্যে ধারণা রয়েছে যে, কমলা খেলে ঠান্ডা লাগে কিন্তু এ ধারনাটি সঠিক নয়। বরং কমলা খেলে ঠান্ডজনিত সকল সমস্যা দূর হয়ে যায়। কারণ এটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি।

প্রতিনিদ একটি করে কমলা খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সর্দি-জ্বর সারাতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সুস্থ্য থাকতে হলে প্রতিদিন ৭৫% ভিটামিন সি গ্রহণ করা প্রয়োজন। সে জন্য প্রতিদিন একটি করে কমলা খাওয়ার মাধ্যমে ভিটামিন সি এর চাহিদা পুরণ হয়ে যায়। কারণ একটি কমলাতে রয়েছে ৭০% ভিটামিন সি।

মন্তব্য

এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি নিশ্চয়ই কমলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেয়েছেন। আমাদের প্রতিটি মানুষের শরীরের পুষ্টিগুণ বজায় রাখার জন্য নিয়মিত কমলা খাওয়া উচিত।প্রিয় পাঠক, আপনার যদি এই আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তাহলে আপনি আপনার বন্ধুদের এবং কাছের মানুষের সাথে শেয়ার করুন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url