ঘুম কম হওয়ার কারণ ও প্রতিকার - ছোট বাচ্চাদের ঘুম কম হওয়ার কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

প্রিয় পাঠক, আপনি কি ঘুম কম হওয়ার কারণ ও প্রতিকার এ বিষয়ে খুজে পান নাই? আমরা আজকে ঘুম কম হওয়ার কারণ এবং কোন ভিটামিনের অভাবে ঘুম কম হয় তা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে বিস্তারিত ধারনা দেওয়ার চেষ্টা করব। আপনি যদি এই বিষয় সম্পর্কে জানতে চান এই পোষ্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন।
ঘুম কম হওয়ার কারণ
এটি পড়লে আরও জানতে পারবেন রাতে ঘুম কম হওয়ার কারণ, রাতে ঘুম না হলে কি কি সমস্যা হয় এবং রাতে ঘুম না হলে করনীয়, কি খেলে ঘুম ভালো হয় ইত্যাদি

ভূমিকাঃ

ঘুম একজন মানুষের সুস্থ্য থাকার সবচেয়ে বড় নিয়ামক। স্বাভাবিকভাবে একজন মানুষের প্রতিদিন ৮ ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন। ঘুম প্রতিদিন যদি ৬ ঘন্টার কম হয় তাহলে তা স্বাস্থ্যের জন্য বিরাট ক্ষতিকর। ঘুম মানুষের শরীরে ঔষধের মতো কাজ করে। ঘুম শরীর ও মস্তিকের পূর্ণঙ্গ বিশ্রাম দিয়ে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, মানুষ না খেলে যে পরিমাণ ক্ষতি হয় ঠিকমত ঘুম না হলে তারচেয়ে বেশী ক্ষতি হয়। তহলে বুঝতেই পারছেন যে ঘুম শরীরের জন্য কতটা প্রয়োজন।

ঘুম কম হওয়ার কারণ

ঘুম শরীর ও মস্তিস্ককে শান্ত করে। ঘুম মানুষকে পরিপূর্ণভাবে সুস্থ্য রাখতে সাহায্য করে। পরিপূর্ণ ঘুম মানুষের সুস্থ্যতার জন্য অন্যতম নিয়মক। রাতের ঘুম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। রাতে ঠিকঠাক ঘুম না হলে শরীরের মধ্যে অশান্তি তৈরী হয় যা পরবর্তী দিনে কাজ কর্মে বাধা তৈরী হয়। রাতে ঘুম না হওয়ার অনেক কারণ আছে। বিশেষজ্ঞরা ঘুম না হওয়ার কারণ হিসেবে একটি রোগকে চিহ্নিত করেছেন যার নাম ইসনোমিয়া বা অনিদ্রা।


ইসনোমিয়া থাকলে রাতে ভালোভাবে ঘুম না বা হালকা ঘুম হয় আবার একটু ঘুম হওয়ার পর ভেঙ্গে যায়। ইসনোমিয়া হলো এক ধরণের স্লিপ ডিজঅর্ডার। শিশু থেকে বৃদ্ধ এই ইসনোমিয়া রোগ সবার মধ্যেই হতে পারে। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এ রোগের পরিমাণ বাড়তে থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন ৩০% প্রাপ্ত বয়স্করা ইসনোমিয়ায় ভোগেন। রাতে ঘুম কম হওয়ার কারণগুলোর মধ্যে প্রধান কারণ হলো ইসনোমিয়া।

ইসনোমিয়া বা অনিদ্রায় যারা ভোগেন তাদের ঘুমের পরিমাণ অনেকাংশে কমে যায় এবং ঘুম হলেও ফ্রেস অনুভব করেন না। কিছু মানুষ রাত জেগে কাজ করে এবং মোবাইল/ল্যাপটপে সময় দেয়ায় রাতে না ঘুমিয়ে দিনে ঘুমায়। যারা রাতে না ঘুমিয়ে দিনে ঘুমায় তারা  ইসনোমিয়ায় আক্রান্ত। পরবর্তীতে বাড়তে বাড়তে এ রোগ প্রকোট আকার ধারণ করে যা মানুষের অভ্যাসে পরিনত হয়। এছাড়া মানুষের অভ্যাসগত কারণেও রাতে ঘুম কম হয়।

কোন ভিটামিনের অভাবে ঘুম কম হয়

আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরণের ভিটামিনের প্রয়োজন হয়। প্রতিটি ভিটামিনের কাজ আলাদা আলাদা।  কোন ভিটামিনের অভাবে ঘুম কম হয় তা আমাদের জানা দরকার। ঠিকমতো ঘুমের জন্যও ভিটামিনের প্রয়োজন। ভিটামিন-ডি এর অভাবই ঘুম কম হওয়ার কারণ এবং ঘুম না হওয়া বা কম হলে চোখের নিচে কালি পড়ে। ভিটামিন-ডি শরীরকে রেস্ট দিয়ে পরিপূর্ণ ঘুম হতে সাহায্য করে। ভিটামিন-ডি ছাড়াও আরও ৪টি ভিটামিনের অভাবে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে সেগুলো হলো-
  • ম্যাগনেসিয়াম
  • ক্যালসিয়াম
  • ভিটামি বি-১২
  • ওমেগা-3 ফ্যাটি এসিড ইত্যাদি।

এগুলো ভিটামিনের অভাবে শরীরে নানা রকম সমস্য তৈরী হয়। যা থেকে ঘুম ঠিকমত হয় না বা কম হয়।

রাতে ঘুম না হলে করনীয়

  • দৈনন্দিন জীবনে কিছু কিছু অভ্যাস আছে যা ঘুমে বাধা তৈরী করে সে অভ্যাসগুলো আমাদের ত্যাগ করতেহবে
  • ঘুমাতে যাওয়ার আগে চা, কফি পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে
  • একটি নির্দিষ্ট সময়ে বিছানায় যেতে হবে এবং ঘমানের চেষ্টা করতে হবে
  • ঘুমানো জন্য নিবিবিলি এবং ঠান্ডাস্থান নির্বাচন করতে হবে
  • ঘুম না ধরলে ১৫/২০ মিনিট হাটাহাটি করতে হবে। হাটাহাটির ফলে শরীর ক্লান্ত হয় ফলে তাড়াতাড়ি ঘুম ধরে
  • ঘুমানোর সময় মোবাইল/ল্যাপটপ ব্যবহার থেকে দূরে থাকতে হবে
  • যেগুলো খাবারে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন-ডি, ভিটামিন বি-১২ আছে তা গ্রহণ করতে হবে
  • ঘুমানোর আগে দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকতে হবে
  • ঘুমাতে যাওয়ার আগে ১ঘন্টা বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে

রাতে ঘুম না হলে কি কি সমস্যা হয়

মানুষের সুস্থ্যতার জন্য ঘুম অতিব প্রয়োজন। রাতে পরিমিত ঘুম না হলে মানুষের সাস্থ্যহানির সমস্যা তৈরী হয়। রাতে ঘুম না হলে শরীরে বিভিন্ন রোগ বাসা বাধে যেমন- ডায়বেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, হজম ক্ষমতা লোপ পায় বা কমে যায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমাতা হ্রাস পায়, ওজন বেড়ে যায়, রক্তে কোলেস্টোরেল বেড়ে যায়, শারীরিক দুর্বলতা বৃদ্ধি পায়, মস্তিস্কের ধারণ ক্ষমতা কমে যায়, এছাড়া অনিদ্রার কারণে শরীরে আরও বড় ধরণের সমস্যা তৈরী হতে পারে।

কি খেলে ঘুম ভালো হয়

আধুনিক গবেষনায় দেখা গেছে কিছু কিছু খাবার খাওয়ার ফলে ভালো ঘুম হয়। ঘুমানোর আগে এক গ্লাস দুধ, শাকসবজি, ডিম, মিষ্টি আলু, কলা, লেটুস পাতা, সবজির স্যুপ, আপেল, বাদাম, আখরোট, কিসমিস, মধু এসব স্বাস্থ্যকর খাবার খেলে ঘুম ভালো হয়। ভিটামিন-ডি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি-১২ সহ ইত্যাদির অভাবে ঘুম কম হয়। এসব খাবার খেলে উল্লিখিত ভিটামিনগুলোর ঘাটতি পুরণ হয়ে যায়, ফলে ঘুম ভালো হয়।

ছোট বাচ্চাদের ঘুম কম হওয়ার কারণ

ঘুমের সমস্যা প্রায় মানুষের মধ্যেই দেখা যায় এমনকি ছোট বাচ্চাদের মধ্যেও ঘুমের সমস্যা হয়ে থাকে। বাচ্চাদের ঘুমের সমস্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেলে তখন তা পিতা-মাতার দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বাচ্চাদের ঘুম কম বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হয় যেমন পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে ওঠে, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, ক্লাসে ঘুমিয়ে পড়ে এমনকি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে।

গবেষণায় দেখা গেছে ১ থেকে ৬ বছরের শিশুদের মধ্যে ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়। এ বয়সের শিশুদের ২৫ পার্সেন্ট ঘুমের সমস্যায় ভুগে থাকেন। শিশু হোক বা প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিটি মানুষের সুস্থ থাকার জন্য পরিমিত ঘুম অপরিহার্য। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীরকে বিভিন্ন রোগের দিকে ঠেলে দেয়। শিশুদের ঘুম কম হলে মস্তিষ্কে অস্থিরতা দেখা দেয় এবং স্মৃতি শক্তি দুর্বল হয়ে যায়।

 শিশুদের ঘুমের সমস্যা হলে করণীয়

ঘুমের সমস্যা হলে মানসিক বিকাশ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে থাকে। সেই জন্য পরিমিত পরিমাণ ঘুম অবশ্যই প্রয়োজন। ঘুমের সমস্যা দূর করতে কি করণীয় এ সম্পর্কে বিস্তারিত আপনাদের সামনে তুলে ধরবো। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক-
  • শিশুদের ঘুমের সমস্যা দূর করতে প্রাথমিক উপায় হচ্ছে নির্দিষ্ট সময় বিছানায় নিয়ে যাওয়ার অভ্যাস তৈরি করতে হবে।
  • ঘুমের পরিবেশ তৈরি করতে হবে যেমন পরিছন্ন এবং আরামদায়ক বিছানা ও ঘর পুরোপুরি অন্ধকার রাখতে হবে।
  • শিশুদের ঘুমের সমস্যা দূর করতে শারীরিক ব্যায়াম বা খেলাধুলা করতে দিতে হবে।
  • শিশুর ঘুম ঘুম ভাব হলে সাথে সাথে তাকে বিছানায় শুইয়ে দিতে হবে এবং ঘুম ভাঙ্গানোর চিন্তা করা যাবে না।
  • দিনের বেলায় অতিরিক্ত ঘুমাতে দেওয়া যাবে না।
  • শারীরিক কোন সমস্যার কারণে ঘুম না হলে সেটি চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করতে হবে।
  • নিয়মিত ভিটামিনযুক্ত খাবার খাওয়াতে হবে।

অটিজম বাচ্চাদের ঘুম সমস্যা দূর করার উপায়

অটিজম বাচ্চারা অন্যান্য বাচ্চাদের চেয়ে আচরণগত দিক থেকে আলাদা। এসব বাচ্চাদের ঘুমের সমস্যা স্বাভাবিক বাচ্চাদের তুলনায় অনেক বেশি। অটিজম বাচ্চাদের ঘুমের সমস্যা অনেক সময় দীর্ঘ হয়ে থাকে। আমরা এখানে অটিজম বাচ্চাদের ঘুমের সমস্যা দূর করার কয়েকটি উপায় আপনাদের সামনে আলোকপাত করবো। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক-
  • অটিজম বাচ্চাদের ঘুমের সমস্যা দূর করতে প্রতিদিন ঘুমের একটি রুটিন তৈরি করতে হবে এবং নির্দিষ্ট টাইমে বিছানায় যাওয়ার অভ্যস্ত তৈরি করতে হবে।
  • এ ধরনের বাচ্চাদের বাবা-মার সঙ্গ ছাড়া একা ঘুমাতে অভ্যস্ত করতে হবে।
  • ঘুমানো এবং ঘুম থেকে জাগার একটি রুটিন তৈরি করতে হবে। কেননা তারা রুটিন মত চলতে বেশি পছন্দ করে।
  • অটিজম বাচ্চারা যে সকল ওষুধ সেবন করে সে ওষুধ নিয়ে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে কারণ সেগুলো অনেক ক্ষেত্রে ঘুমের সমস্যা তৈরি করতে পারে।
  • এখনো সময় ঘর অন্ধকার করে দিতে হবে এবং বাইরের আলো ঘরে প্রবেশ যাতে না করে সে ব্যবস্থা করতে হবে।
  • শারীরিক ব্যায়াম ঘুমের সমস্যা দূর করার প্রধান উপায়। সে জন্য এসব বাচ্চাদের নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করানোর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

ঘুম সম্পর্কিত কয়েকটি প্রশ্ন এবং উত্তর

প্রশ্নঃ দুই মাসের শিশুর কত ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন?

উত্তরঃ দুই মাসের শিশুদের কমপক্ষে ১৫ থেকে ১৮ ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন।

প্রশ্নঃ দুই বছরের বাচ্চার ১১ ঘণ্টা ঘুম কি যথেষ্ট?

উত্তরঃ ১ থেকে ২ বছরের বাচ্চাদের ১১ থেকে ১৪ ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে বলা যায় দুই বছরের বাচ্চা ১১ ঘন্টা ঘুম যথেষ্ট।

প্রশ্নঃ সর্বনিম্ন কত ঘন্টা ঘুমানো উচিত?

উত্তরঃ একদম সুস্থ মানুষের কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে যেমন শারীরিক অসুস্থতার কারণে এর পরিমাণ বাড়তে পারে।

প্রশ্নঃ রাতে ঘুমানোর সঠিক সময় কখন?

উত্তরঃ রাতে ঘুমানোর সঠিক সময় হচ্ছে দশটা। তবে নয়টার দিকে ঘুমাতে পারলে আরো বেশি ভালো হয়।

প্রশ্নঃ ঘুম থেকে ওঠার সঠিক সময় কখন?

উত্তরঃ একজন মানুষের শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠা প্রয়োজন। সকালে ঘুম থেকে উঠার আদর্শ সময় হচ্ছে ভোর ০৫:০০ মিনিট থেকে ০৫:৩০ মিনিট। সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠলে শরীরের সুস্থতা বজায় থাকে এবং বিভিন্ন সমস্যাও দূর হয়ে যায়।

প্রশ্নঃ সকাল দশটায় ঘুম থেকে উঠে কি খারাপ?

উত্তরঃ চিকিৎসকরা বলেন সকালে ঘুম থেকে তাড়াতাড়ি উঠা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। সকাল দশটায় ঘুম থেকে উঠা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী নয়। তাই শরীরটা সুস্থ রাখতে সকালে ঘুম থেকে উঠার চেষ্টা করতে হবে।

মন্তব্য

উপরের আলোচনার বিষয়বস্তু বিবেচনা করে আমি মনে করি মানুষের সুস্থ্য থাকার জন্য প্রতিদিন নিয়ম করে ৭-৮ ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন। প্রিয় পাঠক, আপনি যদি এই আর্টিকেল পড়ে উপকৃত হন এবং আপনার যদি ভালো লাগে তাহলে দয়া করে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url